একুশের আয়নায় বর্তমান বাংলাদেশ
(১)
তরল
ক্রিস্টাল ভেদ করে পোড়া মাটি আর পোড়া মানুষের গন্ধে ভারী হয়ে ওঠে বাতাস| বাংলার
মাঠ ঘাটের আগুনের সেই লেলিহান শিখা হৃদয় পুডিয়ে ছারখার করে দেয় এই সুদুর বিদেশেও|
ভ্রুষ্ট রাজনীতির দ্বারা ধর্ষিতা বাংলা মায়ের বুক ফাটানো আর্তনাদে খান খান হয়ে যায়
নিরবতা| অবরুদ্ধ মন ছুটে যায় পাগলের মতো শুধুই দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে থমকে দাড়ানোর
জন্য|
প্রথমেই
বলে নেই কেন একুশের আয়নায় – একাত্তরের নয় কেন? একাত্তরের সংগ্রাম ছিলো রাজনৈতিক
স্বাধীনতার সংগ্রাম আর একই সাথে অর্থনৈতিক স্বাধীনতারও বটে| তবে বর্তমান বিশ্বে রাজনৈতিক
ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ব্যাপারটা খুবই আপেক্ষিক| পৃথিবীর সব দেশ আজ বড় বড় কিছু
রাঘব বোয়ালের কাছে এমন ভাবে নির্ভরশীল যে এদের স্বাধীনতা অনেকটা কাগুজে ব্যাপার|
আর একুশ হচ্ছে আমাদের বাংলা ভাষাকে, বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে বাচিয়ে রাখার লড়াই| একটা
জাতির বেচে থাকার জন্য, বিকাশের জন্য ভাষা আর সংস্কৃতির গুরুত্ব তার রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক
স্বাধীনতার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ| তাইতো আমরা বার বার ফিরে আসি একুশের ডাকে, শপথ
নেই একুশের নামে| এটা অনেকটা মায়ের কোলে ফেরার মতো, মায়ের বুকে মাথা রেখে নতুন
জীবনের স্বপ্ন দেখার মতো, নতুন জীবন গড়ে তলার অঙ্গীকার নেবার মতো|
বাংলার
মাঠ ঘাট আজ জ্বলে পুড়ে ছারখার| মানুষ মরছে, শ্মশানে পরিণত হচ্ছে সোনার বাংলা| বিগত
কযেক বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা আমাদের দেশের
ক্রনিকাল ব্যাধি| কেন এমন হয়? সবার মনেই
এক প্রশ্ন| অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সরকারী দল, বিরোধী দল, তথাকথিত সুশীল সমাজ – কেউ
আর রাজনীতি করছে না| রাজনীতি করার জন্য রাজার মতো মন থাকা দরকার, কালোবাজারী মন
নিয়ে রাজনীতি করলে সেটা আর রাজনীতি থাকে না, রাজনীতির ব্ল্যাকমেইল হয়ে যায়| আমরা
শুধু মুখেই গণতন্ত্রের কথা বলি, মন থেকে আদৌ কি চেয়েছি আমরা গণতন্ত্র? ইতিহাস ঘাটলে
দেখবো, আমরা বারবার গণতন্ত্রকে বাইপাস করে
চলে গেছি|
ভারত
বিভাগের অনেক কারণ ছিলো, তবে যেটাকে সামনে এনে দেশটা ভাগ করা হয়, তা হলো সংখ্যালঘু
মুসলিম সম্প্রদাযের সংখ্যাগুরু হিন্দুদের শাষন মেনে নেবার অনিচ্ছা, যদিও কংগ্রেস
শাষনকে কোনো মতেই হিন্দুদের শাষন বলা যাবে
না| অর্থাৎ গণতন্ত্রকে বা সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে না মানার প্রতিশ্রুতি নিয়ে জন্ম
নেয় পাকিস্তান| আর বছর না ঘুরতেই পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলাকে জাতীয়
ভাষার মর্যাদা দিতে অস্বীকার (বস্তুতঃ উর্দুকে একমাত্র জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেবার
অঙ্গীকার) করে গণতন্ত্রের পায়ে আবার কুড়াল মারে পাকিস্তান সরকার| মুসলিম লীগকে
পূর্ব বাংলার মাটিতে জনপ্রিয় করার মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলকে পাকিস্তানে পরিণত করার
স্থপতি হবার পরও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী আর শেখ মুজিবকে বাইরে রেখে গঠিত হয় পূর্ব
পাকিস্তানে মুসলিম লীগ সরকার| এ প্রসঙ্গে শেখ মুজিবের লেখা কযেক লাইন তুলে ধরা যায়| অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি লেখেছেন
“মাওলানা আকরাম খা সাহেবের বিবৃতির পর আমরা আর মুসলিম লীগের সদস্য থাকলাম না|
অর্থাৎ আমাদের মুসলিম লীগ থেকে খেদিয়ে দেয়া হলো|” এ ঘটনায় উনিই আবার লিখেছেন
“দুঃখের বিষয় এই কর্মীরাই পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলো| এখন যারা
এদের উপর আক্রমন করেছিলো তাদের প্রায় সকলেই পাকিস্তান আর মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে
ছিলো|.... প্রায় সমস্ত জায়গায় মুসলিম লীগ কমিটিতে শহীদ সাহেবের সমর্থক বেশী ছিলো
বলে অনেক লীগ ও পাকিস্তান বিরোধী লোকদের এডহক কমিটিতে নিতে হয়েছিলো|” জিন্নাহ ফান্ডের নামে সরকার জোর করে মানুষের কাছ থেকে টাকা
ওঠাতে শুরু করে| “চারিদিকে জুলুম শুরু হযেছে| চৌকিদার, দফাদার নেমে পরেছে| কারো
গরু, কারো বদনা, থালা, ঘটিবাটি কেড়ে আনা হচ্ছে| এক ত্রাসের রাজত্ব|”.. এক মাঝির
সঙ্গে কথপোকথনের উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন “মাঝি বলে “পাকিস্তানের কথা তো আপনার কাছ
থেকেই শুনেছিলাম, এই পাকিস্তান আনলেন|” আমি শুধু বললাম “এটা পাকিস্তানের দোষ না|””
শেখ মুজিবের এ লেখা থেকে দুটো জিনিস পরিষ্কার বেরিয়ে আসে – সব আমলেই শেষ পর্যন্ত
সুবিধাবাদিরাই ক্ষমতা দখল করে আর এত কিছুর পরেও তিনি অনেকদিন পর্যন্ত পাকিস্তানের
মোহ ত্যাগ করতে পারেননি| আর পাকিস্তানের বিরোধিতা নয়, পাকিস্তানের আদর্শ আর কাঠামো
মধ্যে থেকেই উন্নত এক পাকিস্তান গোড়ার স্বপ্ন নিয়ে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ| কিন্তু প্রথম
থেকেই এর উপর খর্গহস্ত হয় মুসলিম লীগ সরকার|
আসলে
পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস পুরোটাই সংগ্রাম আর আন্দোলনের ইতিহাস| তবে এই সংগ্রাম
ছিলো পাকিস্তানের কাঠামোর মধ্যেই পশ্চিমের সাথে সমান অধিকারের ভিত্তিতে উন্নত
পূর্ব পাকিস্তান গোড়ার সংগ্রাম| তবে ১৯৭০ এর নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হবার পরও
আওয়ামী লীগকে সরকার গঠন করতে না দিয়ে পাক সরকার আবারও গনতন্ত্রের পিঠে ছুরি মারলে বাংলার
মানুষ বাধ্য হয় অস্ত্র হাতে নিজেদের অধিকার রক্ষা করতে| যেহেতু বাংলার মানুষ শেখ মুজিব তথা আওয়ামী
লীগকেই তাদের কান্ডারী হিসেবে ভোট দিয়েছিলো, স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্বও স্বাভাবিক
ভাবেই তাদের হাতে যায়, যদিও লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিলো দলমত নির্বিশেষেবাংলার
সাধারণ মানুষ (অবশ্যই রাজাকার, আল বদর আর পাক সেনাদের দেশির দোসরদের বাদ দিয়ে)| আর
শেখ মুজিবও তখন শুধু আওয়ামী লীগের নেতাই ছিলেন না, ছিলেন সমগ্র জাতির নেতা| তাই আজ
যখন জাতীয় নেতা আর স্বাধীনতাকে দলীয় করণ করার চেষ্টা করা হয়, তাতে না বাড়ে
দলের সম্মান, না বাড়ে নেতার সম্মান| এতে করে জাতীয় নেতা ও স্বাধীনতা
সংগ্রামকে তো বটেই, জাতিকেও হেয় করা হয়|
(২)
যাহোক,
সংখ্যাগরিষ্ঠের রায় বা গণতন্ত্রকে না মানার মধ্য দিয়ে যেমন পাকিস্তানের জন্ম হয়
১৯৪৭ এ, ঠিক একই কারণে তার ভাঙ্গন ১৯৭১ এ| আর এর মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় নতুন দেশ –
বাংলাদেশ| বাংলাদেশ জন্ম নেয় নতুন অঙ্গীকার নিয়ে, ধর্মের ভিত্তিতে গড়া দ্বিজাতীয়
তত্বকে বর্জন করে| ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র আর সমাজতন্ত্র – এই চারটি
মুল নীতির উপর গড়ে ওঠে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান| তবে মজার ব্যাপার এই পাকিস্তান
আন্দোলেন সফল হবার অল্প দিনের মধ্যেই যেমন শেখ মুজিবের মতো জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী
তরুণ নেতারা আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করে, ঠিক তেমনি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কালীন বেশ
কিছু জনপ্রিয় তরুণ নেতারা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গড়ে তুলে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক
দল|আবার যে শেখ মুজিব আওয়ামী লীগকে (তত্কালীন বিরোধী দল) কাজ করতে না দেবার জন্য
মুসলিম লীগ সরকারের সমালোচনা করেছেন, তিনিই বাকশাল গঠনের মধ্য দিয়ে মূলতঃ একদলীয়
শাসন চালু করেন বাংলাদেশে| এখানে আমি বাকশাল নিয়ে বিতর্কে যেতে চাই না| যে কারণে
কথাটা বলা টা হচ্ছে সংবিধানের একটা মূল নীতি গণতন্ত্র হবার পরও বাকশাল তৈরির
মাধ্যমে সেই গণতন্ত্রের চর্চাকে খর্ব করা হয়েছে| অনেকেই বলতে পারেন, বাকশাল তো
বহুদলের সমন্বয়েই গঠিত হইছিলো| সেটা ঠিক| তবে জোট জোটই – ওখানে মত ও পথের মিল
থাকে, শুধু মাত্র কিছু ছোটখাটো ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করা যায়| জোটের সদস্যরা কখনই
বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করে পারে না, যা কিনা গণতন্ত্রের জন্য, বিশেষ করে সংসদীয় গণতন্ত্রের
জন্য অপরিহার্য|
দীর্ঘ
রাজনৈতিক জীবনে যে সমস্ত নেতাদের সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন সময়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন
(অসমাপ্ত আত্মজীবনী) স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে কি এক অজ্ঞাত কারণে তিনি তাদের ত্যাগ
করতে পারেননি, বরং তাদের কথায় অনেক বিশ্বস্থ অনুগামীদের দুরে সরিয়ে দিয়েছেন| আর
তাই ঘরের আর বাইরের শত্রুরা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শুধু সপরিবারে তাকেই খুন করেনি,
ইতিহাসের চাকাটাই পুরোপুরি ঘুরিয়ে দিয়েছে| যে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে বার বার লড়াই
করে বাংলার মানুষ স্বাধীনতা এনেছিলো, ৭৫ এর পট পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেই সামরিক
জান্তাই ক্ষমতা দখল করে, জাতিকে আরো ১৬ বছর লড়াই করতে হয় সামরিক শাসনের কবল থেকে
বেরিয়ে আসতে| শুধু তাই নয়, যে সাম্প্রদায়িক আদর্শের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশের
জন্ম, সেই সাম্প্রদায়িক শক্তি বাংলার রাজনীতিতে পুনপ্রবেশ করে ৭৫ এর পট পরিবর্তনের
মধ্য দিয়ে| এর পরের ইতিহাস – আমাদের ৭১ থেকে দুরে সরে যাবার ইতিহাস, আর সেটা শুধু
সময়ের দিক থেকেই নয়, চেতনার দিক থেকেও|
যদিও
১৯৯১ থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২৫ বছর (মাঝ খানের দুবছরের তত্বাবধায়ক সরকার বাদে)
সরকার পরিবর্তন হযেছে মূলতঃ ভোটের মাধ্যমে, কিন্তু বাংলাদেশকে গনতান্ত্রিক দেশ বলা
খুবই প্রশ্নসাপেক্ষ| আর এর বড় কারণ আমাদের ঠিক আগের মতই সংখ্যা গরিষ্ঠের ভোটের
রায় মেনে নেবার অক্ষমতা|আসলে বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি খুব কম দেশেই দেখা যায়
যেখানে প্রধান রাজনৈতিক দল দুটো এন্টাগোনাস্তিক| ভোটের রাজনীতিতে হারজিত অতি
স্বাভাবিক| একদল হারবে, অন্যদল জিতবে, এটাই নিয়ম| আর পরাজিত দল সংসদে গিয়ে শুধু
সরকারের সমালোচনাই করবে না, বাজেট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যোগ দিয়ে দেশকে
সামনের দিকে নিয়ে যাবে, এটাই সবার আশা| পরাজয়টা যে অসম্মানের নয়, এটা নতুন করে
আত্মবিশ্লেষনের সুযোগ, সেটা আমরা মানতে রাজী নই| তাই বার বার বিরোধী দল সংসদের
বদলে পথে নামে, আর যে জনগনের সেবা করার কথা বলে আন্দোলন করে, বস্তুতঃ সেই জনতার
নাভিশ্বাস বের করে ছাড়ে তারা| আমার ধারণা এটা আসলে আমাদের জাতীয়
রোগ| আমরা যেহেতু শুধু জয়ের কথাই ভাবি, হারার চিন্তা করিনা, তাই কি পাবো এই
প্রশ্নটাই আমাদের আমাদের চেতনা জুড়ে থাকে, কি হারাবো সেটা ভাবার সময় আমাদের কোথায়?
নাকি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো এত দেউলিয়া যে তাদের হারানোর কিছুই নাই? তাইতো দেখি
এমনকি প্রতিষ্ঠিত দলগুলোও ভবিষ্যতের চিন্তা না করে শুধু বর্তমানের পাওয়াটাকে সামনে
এনে একের পর এক হরতাল আর অবরোধ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে| কৌশলটা
অনেকটা এই রকম – আমি যেহেতু পাবো না, তোকেও ভোগ করতে দেবো না| আর এই মানসিকতার ফলে
রাজনীতি ক্রমশঃ উগ্রপন্থীদের হাতে চলে যাচ্ছে যারা বুদ্ধিবলের তোয়াক্কা না করে
বাহুবলে সব সমস্যা সমাধান করতে আগ্রহী| তবে এটা শুধু বাংলাদেশের জন্যই প্রযোজ্য
নয়, সারা পৃথিবী আজ এই পথে যাচ্ছে| ভোগবাদী আদর্শের সাথে সাথে পশ্চিমা বিশ্ব আজ রঙ
বেরঙের গণতান্ত্রিক বিপ্লব রফতানি করছে দেশে দেশে, আর রফতানি করছে “জোর যার
মুল্লুক তার” আদর্শ বাণী|
(৩)
দুঃখজনক
হলেও সত্য, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে জোট এই শুন্যতা পূরণ করতে পারতো তাও গড়ে
উঠছে না| শাহবাগের ডাকে দেশের মানুষ যে ভাবে সাড়া দিয়েছিলো, তাতে সেরকম একটা
সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো| লাখ লাখ মানুষ আবার একাত্তরের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে রাস্তায়
নেমেছিলো, আর সেটা হয়েছিল শাহবাগ কোনো রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম ছিলনা বলে|
কিন্তু যখনি এতে দলীয় রাজনীতি ঢুকলো, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির দাবীর সাথে সাথে
অন্যান্য (দলীয়) ইস্যু গুলোকে যখন সামনে আনা হলো, শুরু হলো অন্তর্দলীয় কোন্দল,
মুখ থুবড়ে পরে গেলো আন্দোলন| এ ব্যর্থতার দায় সবারই, তবে আন্দোলন সংগ্রামে বিদগ্ধ
বাম দলগুলোর কাছে আমাদের আশাটা সব সময়ই বেশী বলে তাদের প্রতি আমাদের ক্ষোভও একটু
বেশী| মনে হয় আমাদের বামপন্থী নেতারা মনে হয় লেনিনের সেই বিখ্যাত উক্তি “আজ খুব
তাড়াতাড়ি হবে আর আগামীকাল খুব দেরী হয়ে যাবে” ভুলে গেছিলেন| তাই নিজেদের শক্তিতে
অতিরিক্ত বিশ্বাসী হয়ে ওঠেন| ফলে একটা সুন্দর আন্দোলন অকালেই মৃত্যু বরণ করে|
অবস্থা
দৃষ্টে মনে হয় দেশের সাথে সাথে আজকাল আন্দোলন সংগ্রামও ডিজিটাল হয়ে যাচ্ছে| তা না
হলে বাম দলের নেতারা কলে কারখানায়, হাটে মাঠে মানুষের কাতারে গিয়ে রাজনীতি করার
পরিবর্তে টক-শো নিয়ে এত ব্যস্ত থাকবেন কেন? আধুনিক মাধ্যম অবশ্যই ব্যবহার করতে
হবে, তবে তা যদি এ দল গুলোকে মানুষের কাছ থেকে দুরে রাখে, নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন করে
রাখে তাহলে আর বাম রাজনীতি করে লাভ কি? আসলে দুটিই করতে হবে, মাঝে মধ্যে টক-শো তে গিয়ে নিজেদের
অবস্থান মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, তবে এক্ষেত্রে একটা মাত্র নিশ্চয়ই থাকা
দরকার|
বাংলাদেশের
বাম রাজনীতিতে সিপিবি নিঃসন্দেহে সব চেয়ে বড় দল, যাদের আছে আন্দোলন-সংগ্রামের
ঐতিহ্য| তবে বর্তমানে সিপিবির ভুমিকা বেশ ঘোলাটে| যদি আওয়ামীলীগ, বিএনপি আর সিপিবি
কে তিন কনে রেখে একটা ত্রিভুজ আঁকা হয়, তবে সেটা হবে নিশ্চয়ই বিষম বহু ত্রিভুজ, আর
এতে সিপিবি থেকে বিএনপির দুরত্ব সিপিবি থেকে আওয়ামীলীগ-এর দূরত্বের থেকে হবে অনেক
বেশী| অন্তত দেশের শিক্ষিত জনগনের এক বিশাল তাই ভাবে| যেহেতু ত্রিভুজের পরিসীমা বলতে
গেলে ফিক্সড, তাই সিপিবি যখনই আওয়ামীলীগ থেকে নিজের দুরত্ব বাড়াতে যায়, বিএনপির
সাথে তার দুরত্ব কমে আসে| আর এই কমে আসাটা দেশের রাজনীতিতে এক ভয়ঙ্কর কালো ছায়া
ফেলে| আমার মনে হয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব তাদের কৌশল ঠিক করার সময় এই সাধারণ
সত্যটা মাথায় রাখছেন না, তাই নিজেদের অজান্তেই, নিজেদের অনিচ্ছা সত্বেও বিএনপি
জামাতের ধ্বংস লীলায় ইন্ধন যুগিয়ে যাচ্ছেন|
একটা
জিনিস যা আমাকে খুব অবাক করে, তা হলো স্বাধীনতার পক্ষের আর বিপক্ষের শক্তি নিজেদের
দাবী করা বা অন্যদের কে গালি দেওয়া| আজ দুটো বড় দলেই স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির
আনাগোনা, আবার উভয় দলেই আছে স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলার বা লড়াই করার লোকজনও| তবে
অনুপাতটা একেক দলে একেক রকম| শেখ মুজিব নিজেই লিখে গেছেন, দেশ ভাগের পরে মুসলিম
লীগ পাকিস্তান বিরোধী লোকজন দিয়ে ভরে গেছে| স্বাধীনতার পর আয়ামী লীগ এ যে
স্বাধীনতা বিরোধীরা ঢুকবে এটাই স্বাভাবিক| আসলে একদল লোক আছে, যাদের জন্য
পাকিস্তান, বাংলাদেশ – এসব শুধুই নাম, আসল ব্যাপারটা তাদের জন্য ক্ষমতাকে ব্যবহার
করে নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ভিত্তি দৃঢ় করা| তাছাড়া আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে
করি, যারাই ৭২ এর সংবিধান থেকে দুরে সরে গেছে, মৌলবাদী আর ধর্মীয় শক্তির কাছে
নতজানু হয়ে ৭২ এর সংবিধান পুনর্বহাল করেনি, তারা নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি
বলে দাবী করার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে|
গণতন্ত্র
মানে শুধু জনগনের শাষন না, গণতন্ত্র মানে বিভিন্ন মতের ও পথের অবাধ বিকাশের সুযোগ,
যদিও তা হতে হবে একটা নির্দিষ্ট অবকাঠামোর মধ্যে| আর যেকোনো দেশের জন্য সেই
অবকাঠামো হচ্ছে দেশের সংবিধান| দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের কোনো সরকারই বিরোধী
দলগুলোকে গঠনতান্ত্রিক কাঠামো মধ্যে থেকে অবাধে কাজ করার সুযোগ দেয়নি, আবার কোনো
বিরোধী দলই (প্রধান বিরোধী দল) যেটুকুবা সুযোগ ছিলো তাকে কাজে লাগিয়ে গণতন্ত্রের
ভিতকে পোক্ত না করে নেমেছে রাস্তায়, সর্বত ভাবে চেষ্টা করেছে গণতন্ত্রের ভিতটাকে
আরো নরবরে করে দেবার জন্য| যে হরতাল, অবরোধ একসময় ছিলো শক্তিশালী রাজনৈতিক
হাতিয়ার, অতিব্যবহারে ও অপব্যবহারে তা হযেছে আজ সাধারণ মানুষ মারার অস্ত্র|
(৪)
রাজনীতিতে
বিশ্বাসঘাতকতা আজকে নতুন কিছু নয়| সেই জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে শুরু করে আজো
পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা রাজনীতির সাথে পায়ে পায়ে চলছে| মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার
সুযোগে বাংলা তথা ভারতবর্ষে শুরু হয় ইংরেজ শাষন| আর ইংরেজদের কূটকৌশল আর মুসলিম
লীগের ভারতীয় মুসলিমদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার ভেতর দিয়ে জন্ম নেয় পাকিস্তান| তা
না হলে যে মুসলিম জনগোষ্ঠির জন্য পাকিস্তান তৈরী, তাদের এক বিরাট অংশ ভারতে থেকে
যাওয়ায় অবিভক্ত ভারতে মুসলিম হিসেবে তারা যে অধিকার লাভ করতে পারতো, বিভক্ত ভারতে
তাদের সেই অধিকার আর রইলো না| এ ব্যাপারে মওলানা আবুল কালাম আজাদ বার বার হুশিয়ার
করে দিয়েছিলেন| তবে বর্তমানে পাকিস্তানের অবস্থা দেখলে মনে হয়, পাকিস্তান সৃষ্টির
মধ্য দিয়ে আসলে পাকিস্তানের জনগনের প্রতিই সবচেয়ে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করা হইছিলো|
আবার এই বিশ্বাসঘাতকতার সুত্র ধরেই ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তন – সপরিবারে শেখ মুজিবকে
হত্যা| জনগনের দোহাই দিয়ে এক রাজনৈতিক জোট জনগনকে পুড়িয়ে মারছে – আর সরকার যেখানে
শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিল দিয়ে এ সমস্যার বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে
পারে, তা না করে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যাপারটা জিইয়ে রাখছে| বোমা হামলা মামলায় যদি
জেএমবিসহ অন্য জঙ্গিবাদী দলগুলো নিষিদ্ধ করা যায়, তাহলে অনেক বেশী অপরাধে অপরাধী
জামাত-শিবির কে কেন নিষিদ্ধ করা যাবে না? আসলে এই সহিংসতাকে মদদ দিয়ে বা তা দমন না
করে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোই জনগনের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করছে|
এখন
আর সময় নেই নতুন করে ভাবার| দেশ আরেকটা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে| এটা গৃহ যুদ্ধ
নয়, এটা বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চক্রের
যুদ্ধ| এ যুদ্ধের কলকারখানা নড়ছে আমেরিকা, পাকিস্তান আর আরব বিশ্বে| যদি তাই না
হত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের এত আপত্তি কেন? কি তারা তো বিনা
বিচারে গাদ্দাফি, সাদ্দামসহ যারা পশ্চিমের স্বার্থের বিরোধী ছিলো তাদের হত্যায় তো
তু সব্দটি করলো না| তবে একাত্তরে এখানে ছিলো পাক সেনারা, এখন হত্যা যজ্ঞ চালিয়ে
যাচ্ছে এদের দেশীয় দোসররা|
তাই
আজ সময় এসেছে দল মত নির্বিশেষে যারা বাংলাদেশকে, বাংলা ভাষা কে, বাংলার মানুষকে ভালোবাসেন
সবার একত্রিত হওয়ার, একত্র হয়ে যারা দেশের মানুষের বিরুদ্ধে, দেশের প্রগতির
বিরুদ্ধে বোমা যুদ্ধে নেমেছে তাদের প্রতিহত করা, পরাজিত করা| প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে
ঘৃনা দিয়ে জনগনের ভালোবাসা অর্জন করা যায় না, জনগনের আস্থা লাভ করা যায় জনগনকে
ভালোবাসে, জনগনের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে| তাই আমাদের এক হতে হবে, এক
হে হরতাল, অবরোধ, দুর্নীতি থেকে মানুষকে মুক্ত করতে হবে|
লেখাতে
বেশ কযেক জায়গায় ভারত বিভাগের কথা এসেছে| তার মানে এই নয় আমাদের আবার পুরানো দিনে
ফিরে যেতে হবে, আবার এক দেশ গর্তে হবে| সেই অবকাশ আর নেই, যদি প্রায় একই সময়ে
বিভক্ত দুই জার্মানি এক হযেছে, দুই কোরিয়া এখনো এক হবার স্বপ্ন দেখে| তবে ভারত,
বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের এক হবার কোন সম্ভাবনা নেই, যদিও পারস্পরিক সম্পর্ক
উন্নয়নের সুযোগ প্রচুর| যে কারণে কথাগুলো লেখা তার একটা হলো, মাঝে মধ্যে ইতিহাসের
দিকে তাকালে অনেক ভুল এড়ানো যায়| বাংলাদেশ তার বর্তমান ভুখন্ড পেয়েছে ১৯৪৭ এ, তার
মানে এই নয় ১৯৪৭ এর আগে আমাদের কোনো ইতিহাস ছিলো না| এমন কি সম্রাট অশোকের সময়েও,
যা ছিলো খ্রিস্টের জন্মেরও আগে, বঙ্গ অনেক উন্নতত ছিলো| তাম্রলিপ্ত তাম্র যুগের
প্রধান কেন্দ্রগুলোর অন্যতম| বিভিন্ন সময়ে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম শাসকরা শাষন
করে গেছেন| জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই একটু একটু করে আমাদের ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করে
গেছেন| আমরা যদি আমাদের কযেক হাজার বছর পুরনো ইতিহাসকে, ঐতিহ্যকে সম্মান করতে
শিখি, আমাদের আজকের অনেক সমস্যার সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে| আমরা যে এগুচ্ছি না, তা
কিন্তু নয়| আমার ছোট বেলায় পহেলা বৈশাখ, গায়ে হলুদ এসব মূলতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ের
মধেই সীমাবদ্ধ ছিলো| আজ পহেলা বৈশাখ আমাদের জাতীয় উত্সব, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে
সাড়া দেশের মানুষ পালন করে পহেলা বৈশাখ| গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছাড়া আজ কাল কোনো
বিয়ে চিন্তা করা যায় না| রবীন্দ্রনাথের চর্চা আজ ঘরে ঘরে| বাংলাদেশের কবি আর লেখকেরা
বাংলা সাহিত্যকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছেন| আবার একই সঙ্গে বাঙ্গালী বধুর শাড়ির
জায়গা দখল করেছে মাক্সি| আগে আমাদের মা বোনেরা ঘোমটা দিয়ে নিজেদের পর্দানশীন করতে
পারতেন, আজ তাদের হিজাব পড়তে হয়| এসব নিঃসন্দেহে আমাদের স্বকীয়তা থেকে দুরে নিয়ে
যায়| নিজস্ব সংস্কৃতির গন্ডীর মধ্যে থেকে যে কাজগুলো করা যায়, সে কাজগুলো বাইরে
থেকে আমদানী করা রীতিনীতি দিয়ে না করলেই ভাল| কই, আমরাতো ইউরোপিয়ান বা আরবদের মতো
করে খাইনা, তাদের মতো করে মনের ভাব প্রকাশ করি না, চলি না, ফিরি না| মানুষের চলন,
বলন, খাদ্যাভ্যেস এসজ গড়ে উঠেছে যুগ যুগ ধরে, তার ভৌগলিক অবস্থানের কারণে| তাই
আমরা যদি ভাত-মাছ খেতে ভালবাসি, মাকে মা ডাকতে পছন্দ করি, ভোরের পাখির ডাক বা নদীর
বে যাবার শব্দ যদি এখনো আমাদের শিহরিত করে, তবে আমাদের পোশাক আশাক সেটা পারবে না
কেন? তাই আসুন একুশের শপথ হোক, আমরা যেন শুধু কথায়ই না, কাজে, কর্মে, চলনে, বলনে,
পোশাকে-আসাকে বাঙ্গালী হতে পারি|
এখানেই শেষ করার ইচ্ছে ছিলো, তবে অভিজিত রায়ের
হত্যাকান্ড আরো দু কথা লিখতে বাধ্য করলো| শাহবাগের কথা উল্লেখ করেছিলাম, শাহবাগ
আন্দোলনকে নস্যাত করার মধ্য দিয়ে বাংলার মানুষ যে কি পরিমান সুযোগ তা ছাড়া করেছে
তা বলে বুঝানো যাবে না| এবং এটা যে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীরাই বিভিন্ন দলে ঢুকে করে
নাই সেটাও হলফ করে বলা যাবে না| এইতো তার পরেই নেমে এলো ব্লগারদের উপর আইনের খাড়া,
যদিও পার পেয়ে গেলো আইন শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দোষী অনেকেই| দেশ স্বাধীন হবার আগে
সবাই আওয়ামীলীগ করতো না| তবে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন দল মিলে পেরেছিলো
একের পর এক আন্দোলন করতে, দেশটাকে স্বাধীন করতে| অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় এখন আর সেই
মাপের নেতা নেই, যারা দলের উপরে দেশটাকে দেখবে, তাতক্ষণিক স্বার্থের উপরে
দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থকে স্থান দেবে| এটা শুধু বাংলাদেশের নয়, সাড়া বিশ্বেরই সমস্যা|
অনেক সময় ভাবি কেন রবীন্দ্রনাথের মতো বা পুশকিনের মতো আর কোনো কবি হলো না? এটাও
হয়তো অতীতকে বড় করে দেখার প্রয়াস| তাছাড়া পরাধীন দেশের রাজনীতি একরকম, স্বাধীন
দেশের আরেক রকম| বিরোধী দলের রাজনীতি একরকম, সরকারী দলের অন্যরকম|রাশিয়ায় একটা কথা
আছে| ঋণ শোধ করা খুব কষ্টের| মানুষ ঋণ নেয় অন্যের টাকা, আর শোধ করতে হয় নিজের
টাকা দিয়ে| বিরিধী দল সরকারের সমালোচনা করেই খালাস| ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন
প্রতিশ্রুতি দেয় জনগনকে, আর এর বিনিময়ে ধার নেয় তাদের আস্থা – বিশ্বাস, যেটা পে
ভোটের মাধ্যমে| ভোটের আগে সে তার দলের নেতা, ক্ষমতায় এলে দলমত নির্বিশেষে সে সবারই
নেতা (প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী)| তাই ঋণ শোধ করার প্রশ্ন এলে তাকে সবার কাছেই
ঋণ শোধ করতে হয়, শুধু নিজের দলের লোকদের কাছেই না| তার পর বাইরে থেকে যেটা সোজা
মনে হয় আর সোজা মনে করে প্রতিশ্রুতি দেয়া যায়, ভেতরে আসলে দেখা যায় কাজটা অনেক
অনেক কঠিন, অনেক কিছু বিবেচনায় এনে তবে কাজটা করতে হয়| আর এ জন্যেই বোধ হয় সরকারী
ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠা এত কঠিন| কেননা এখানে অনেক রকম পারস্পরিক
বিরোধী স্বার্থ থাকে| এটা ঠিক মতো না বোঝার কারণও শাহবাগ আন্দোলনের অপমৃত্যুর
পেছনে দায়ী| অভিজিত রায়ের হত্যা কান্ড আবার সবাইকে এক করতে পারে সন্ত্রাসবাদের
বিরুদ্ধে| যে যুবকেরা অভিজিতদের হত্যা করে তারা বাংলাদেশেরই, খুব সম্ভবত তাদের
জন্ম স্বাধীন বাংলাদেশেই| এই যে তারা খুনি হচ্ছে, সেটাও আমাদের রাজনীতিরই ফসল|
ভোটের চিন্তা করে আমরা জাতিকে বার বার যুদ্ধের মুখোমুখি ঠেলে দিয়েছি| বিভিন্ন
গোষ্ঠির মধ্যে ঘৃনা আজ এত বেশী যে তা সাপের বিষকেউ হার মানায়| আর ঘৃনা যখন হয় কোনো জাতির চালিকা
শক্তি, তখন সে জাতির ভবিষ্যত অন্ধকার| একুশের লড়াই ছিলো বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে,
বাংলাদেশ কে ভালোবেসে, বাংলা সংস্কৃতিকে ভালোবেসে| আর আজ আমাদের মধ্যে ভালোবাসার
থেকে ঘৃনাই বেশী| আর ঘৃনা যখন হয় একমাত্র পুজি তখন যুক্তি-তর্ক এসবের স্থান নেয়
রামদা, কিরিচ আর কালাশনিকভ| আশা করি অভিজিতের রক্ত আমাদের আবার ভালোবাসতে শেখাবে,
এক হতে শেখাবে, এই বর্বর রগকাটা আর বোমাবাজির রাজনীতির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে
শেখাবে| দেয়ালে পিঠ থেকে গেছে, আর পেছানোর পথ নেই| একুশ আমাদের আলো দেখাবে| বাকি
শুধু সামনে পথ চলা| মহান একুশ অমর হোক|
Comments
Post a Comment