Posts

Showing posts from August, 2023

বুদ্ধি

Image
১৯৯৪ সালের ১৮ মে আমি যখন দুবনায় কাজে জয়েন করি তখন এখনকার মত ঘরে ঘরে কম্পিউটার, সেলফোন বা স্মার্টফোন ছিল না। মস্কোয় বউ, বাচ্চাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল টেলিফোন। তবে সেটা ছিল ব্যয় সাপেক্ষ।‌ আমাদের ইনস্টিটিউটে তখন কিছু কিছু টেলিফোন ছিল যেখান থেকে বিনে পয়সায় মস্কো ফোন করা যেত, তবে সেটা ছিল খুব কম অফিসেই। আমি তখন যে অফিসে বসতাম তার উল্টো দিকে ছিল প্রফেসর বিলায়েভের অফিস। ওনার ওখানে এরকম একটা টেলিফোন ছিল। কখনো কখনো আমি ওখান থেকে মস্কো বাসায় ফোন করতাম।  সে বছর সামারে পের্ম থেকে কিছু কলিগ এল। আমরা বেশ রাতে ফিরতাম। একদিন দেখি ওরা বিলায়েভের অফিস থেকে ফোন করছে। তোমরা এখানে ঢুকলে কি করে?  ঐ রুমে তালা ছিল না, ছিল কোড। দীর্ঘ ব্যবহারে তিনটে নম্বর ঝকঝক করছে। বলল দেখ, এখানে মাত্র ছয়টি কম্বিনেশন। তাই তালা খোলা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। দুবনায় কখনো তেমন গরম পড়ে না। বছরে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন তাপমাত্রা ২৫ ছাড়িয়ে যায়। এসব দিনে ইচ্ছে করে এসি চালাতে। কিন্তু কুকুরদের সর্দি লাগবে বলে গুলিয়া সেটা চালাতে দেয় না। কয়েক দিন আগে গুলিয়া নীচে বাগানে কাজ করতে গেলে আমি দিব্যি সেটা চালিয়ে দ

রাজনীতি

Image
চন্দ্রায়ণ -৩ এর চাঁদে সফল অবতরণের পর সারা বিশ্ব যখন প্রশংসা মুখর তখন ভারতেরই কোন কোন রাজনৈতিক নেতা এই সাফল্যকে অবমূল্যায়ন করতে তৎপর। কেউ কেউ বলছেন এটা শিক্ষার অভাব। প্রশ্নটা শিক্ষার নয়, রাজনৈতিক সংস্কৃতির। এখন কোথাও আর কেউ প্রতিপক্ষকে সামান্যতম স্পেস দিতে চায় না। তাই অন্যদের সাফল্য যেভাবেই হোক ছোট করে। শত্রুর অবমূল্যায়ন নিজের হেরে যাবার প্রধান শর্তগুলোর একটি। আরও একটা কথা। এ রকম মেগা প্রজেক্ট কারও একক কৃতিত্ব নয়, এর সাথে জড়িত হাজার হাজার মানুষ, সত্যিকার অর্থেই উঁচু মানের বিশেষজ্ঞ। তাই নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে খোঁচা দিতে গিয়ে হাজার হাজার সফল মানুষের ইগো ও সম্মানে আঘাত করা রাজনৈতিক ভাবে অপরিণামদর্শী। তাছাড়া দেশের এ ধরণের সাফল্যে আন্তরিকভাবে খুশি হতে না পারলে এসব নেতাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে এটাই বর্তমান রাজনীতি - নাথিং পার্সোনাল, ওনলি বিজনেস। দুবনা, ২৪ আগস্ট ২০২৩

ইঙ্গিত

Image
এক বন্ধু প্রাইড প্যারেডে অংশগ্রহণের ছবি দিয়েছিল। কথা প্রসঙ্গে নিজে থেকেই বললো - তুমি যা মনে করছ তা নয়। আমি তোমাদের মতই স্বাভাবিক। তবে আমি যে তাদের অপছন্দ করি না সেটা প্রকাশ করার জন্য প্যারেডে যোগ দেই। - প্রথমত আমি কিছুই মনে করিনি। দ্বিতীয়ত আমি তাদের পছন্দ বা অপছন্দ কিছুই করি না। তবে তোমার কথায় একটা ভালো ইঙ্গিত পেলাম।  - সেটা কি? - তোমার গিন্নিকে যে আমি অপছন্দ করি না সেটা প্রমাণ করতে আমাকে তার সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে হবে।  তাই তো? - এটা আবার তুমি কি বলছ? - আমি কিছু বলছি না। তবে তোমার যুক্তি সেই ইঙ্গিত দেয়। দুবনা, ২২ আগস্ট ২০২৩

ভয়াল আগস্ট

Image
যেসব বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে ফেললে বিষয়টাই থাকে না। দেশ, দেশের ক্ষমতা এরকম একটি জিনিস যার পরিচালনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। এটাই গণতন্ত্র। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি একবার কলুষিত হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে যৌথ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা হয়। হয় নির্বাচন। জনগণ ভোট দিয়ে পছন্দের দলকে ক্ষমতায় আনে। অনেক অবিশ্বাস, অনেক অভিযোগ অনুযোগের পরেও দেশে একটা রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি হয়। কিন্তু ২০০৪ এর ২১ আগস্ট সেই রাজনৈতিক সৌজন্যবোধটুকু চিরতরে ধ্বংস করে দেয়। প্রধান দুটো দল রাজনৈতিক ক্ষমতার লড়াইয়ে পরস্পরের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকে না, একে অন্যের শত্রুতে পরিণত হয়। দু দলই শুধু ক্ষমতার লড়াইয়েই লিপ্ত হয় না, অনেক সময় পররস্পরকে ধ্বংস করার লড়াইয়েও লিপ্ত হয়। সেদিক থেকে ২১ আগস্টর ভয়াবহতা ১৫ আগস্ট বা ০৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের থেকে কোন অংশেই কম নয়। দুবনা, ২১ আগস্ট ২০২৩

পড়া

Image
প্রাথমিক ভাবে মানুষ পড়াশুনা করে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হবার জন্য যা পরবর্তীতে তার কর্মজীবনে কাজে লাগবে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ার স্কুলে পাঠ্যক্রমের বাইরেও প্রচুর বই পড়তে হয়। সেখানে যেমন রুশ সাহিত্য থাকে তেমনি থাকে বিশ্ব সাহিত্য। কিন্তু আমাদের দেশে অভিভাবকদের একটা বড় অংশই মনে করেন সিলেবাসের বাইরে কিছু পড়া মানে সময় নষ্ট করা, এতে সন্তানরা সঠিক জ্ঞান লাভ না করে পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট করে, নষ্ট হয়ে যায়। বাস্তবে তারা ভালো বিশেষজ্ঞ হলেও অনেক সময়ই পূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে না। আমার স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে যেসব মানুষ নিজেদের কাজের বাইরে কোন পড়াশুনা করে না, সব দিক থেকে নিজেদের দৃষ্টি প্রসারিত করে না, একটা বয়সের পর তাদের অনেককেই মৌলবাদী বা অযৌক্তিক চিন্তাভাবনার ধারক ও বাহক হয়। আমরা যদি সন্তানদের মুক্তমনা ও উদার মানসিকতার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই তাদের ক্লাসের বাইরের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করার বিকল্প নেই। দুবনা, ২০ আগস্ট ২০২৩

পরিবর্তন

Image
আজকাল ফেসবুকে প্রায়ই অনলাইন গেম বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন পোস্ট দেখি। এটাকে আমার মনে হয় রোগের কারণ না দেখে ওষুধ দেবার মত বা শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই না করে শোষিত মানুষদের সাময়িক সাহায্য করার মত। আমার ধারণা বর্তমানে মানব জাতি যেসব সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে তার মূলে আছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, প্রাইয়োরিটির পরিবর্তন। এক সময় লেখাপড়া করার মূল উদ্দেশ্য ছিল জ্ঞান অর্জন করা । আজ আমরা যখন ছেলেমেয়েদের কোথাও ভর্তি করি দেখি সেটা চাকরির ক্ষেত্রে তাদের কতটা সাহায্য করবে। জ্ঞান নয় নম্বর, বিদ্যা নয় অর্থ আজ সামনে চলে এসেছে। শুধু লেখাপড়া নয় বদলে গেছে খাদ্যাভাস। খাদ্য কতটুকু স্বাস্থ্যকর তার চেয়েও বড় কথা সেটা কতটুকু সু্স্বাদু।  এর মানে এই নয় যে আমাদের ভালো বেতন বা সুস্বাদু খাদ্যের প্রয়োজন নেই। তবে প্রথমত আমাদের দরকার জ্ঞান ও স্বাস্থ্যকর খাবার। আমাদের নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের প্রতিফলন পড়ছে পরবর্তী প্রজন্মে। তাই বদলাতে হবে নিজেদের। দুবনা, ১৯ আগস্ট ২০২৩

পুঁজি

Image
ফেসবুকে কে যেন জানতে চেয়েছিল "লোকজন গরীবের জন্য রাজনীতি করে এত বড়লোক হয় কি করে?" আসলে সবাই গরীবদের জন্য লড়াই করে, তবে অধিকাংশই লড়াই করে গরীবদের পুঁজি করে। আর এই পুঁজিকে পুঁজি করেই একদিন তারা পুঁজিবাদী হয়। বড়লোক হয়। জাস্ট বিজনেস। আসল কথা কে কীভাবে পুঁজি খাটায়। দুবনা, ১৭ আগস্ট ২০২৩

ক্যামেরা

Image
আমি বাসা থেকে বেড়াতে গেলে সাধারণত ক্যামেরাটা নিয়েই বেরোই।‌ তা সে ভোলগা তীর হোক আর বন হোক। সেদিন যখন নদীর তীর দিয়ে ক্যামরা কাঁধে হাঁটছি ইউরা জিজ্ঞেস করল ছবি শিকারে বেরুলে? না, ক্যামেরাকে ভিগুলিভাত করাতে এলাম।  ভিগুলিভাত মানে কুকুরকে ঘুরতে নেয়া। প্রথমে ইউরা একটু অবাক হল। আসলে অনেকেই আমার এ রকম কথা শুনে প্রথমে ভাবে আমি শব্দটার সঠিক অর্থ জানি না। তবে যখন বোঝে হেসে খুন। দুবনা, ১৬ আগস্ট ২০২৩

আগস্ট ১৫

Image
আজ ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল এ দেশেরই কিছু সেনা অফিসার আর তাঁর বিশ্বস্ত কিছু মানুষ। প্রতি বছরই এই দিনটায় কিছু কিছু কথা মনে জাগে। কেন তা বলতে পারব না। তবে নিজের অজান্তেই এই কথাগুলো মনের কোণে উঁকি মারে। এবারও ব্যতিক্রম নয়। আমাদের ভূখণ্ডের সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর সাফল্যের উজ্জ্বল প্রমাণ আমাদের স্বাধীন ভূখণ্ড, আমাদের লাল সবুজ পতাকা, সমস্ত সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়ে আজকের বাংলাদেশ। একই সাথে এই ভূখণ্ডের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতাও তাঁর। এই ব্যর্থতার সাক্ষী ১৫ আগস্ট। দেশে প্রায় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি পারেননি না নিজেকে, না নিজের পরিবারের প্রায় কাউকে বাঁচাতে। সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত সহযোগীদের প্রতি অবিশ্বাস আর সন্দেহভাজন সহকর্মীদের (যেটা তিনি অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থে নিজেই বলেছেন) উপর অগাধ বিশ্বাস শুধুমাত্র তাঁকেই সপরিবারে হত্যা করেনি, পঙ্গু করেছে বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতিকে। তাই ১৫ আগস্টকে শুধু শোকের দিন নয়, শিক্ষা নেবার দিন হিসেবে গড়ে তোলা আজ একান্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি মানেই ক্ষ

মান্থলি

Image
আমি যখন ভোলগার তীরে বিকালে হাঁটি অনেকেই ভাবে হয়তোবা সাঁতার কাটতে এসেছি। কখনো কখনো যাদের সাথে সাঁতার কাটি ওরা ডাকে জল বেশ উষ্ণ। নেমে পড়। সেদিন এক লোক সাঁতার কেটে তীরে আসছিল আর আমি নীচে নামছিলাম কোন ছবি পাওয়া যায় কি না সেটা দেখতে। সাঁতার কাটবে নাকি? জল কিন্তু এখনও ঠান্ডা হয়নি। নামবে?  না। ভোলগায় আমার মর্নিং শোর মান্থলি কাটা।  নেক্সট টাইম তুমি দুই বেলার টিকেট কিনতে ভুলো না।  ঠিক আছে। মহা ঝামেলা। দুবনা, ১৪ আগস্ট ২০২৩

স্বপ্ন

Image
সমান অধিকার আর সাম্য কেন এক নয়? এটা কি এদের মার্কেট ভ্যালু ভিন্ন বলে? কিন্তু মার্কেট ভ্যালু তো আমরা নিজেরাই তৈরি করি। তাহলে আমরা কেন সাম্যবাদের মার্কেট ভ্যালু বাড়াতে পারি না? কারণ সমান অধিকার এটা অনেকটা মৃত্যুর পরে স্বর্গ লাভের মত, অধিকারের কথা বলে আজীবন মানুষকে স্বপ্ন দেখানো যায়, শোষণ করা যায়। সাম্যবাদ বিপ্লবের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করতে হয়, সবাইকে তার সুফল দিতে হয়, আর সেটা দিতে হয় এই জীবনেই। অধিকাংশ মানুষ ভাবে যেখানে আমরা নেই সেখানেই সব সুখ, নিজের দুই বেলার ভাত কাপড়ের চেয়ে কোন এক অজ্ঞাত স্থানে স্তরে স্তরে সাজানো পোলাও কোর্মা আর মিষ্টির ভান্ডারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অপ্সরাদের বেশি বাস্তব মনে করে। আর এখানেই হয়তোবা কমিউনিজমের সাম্যবাদ পুঁজিবাদের সমান অধিকারের কাছে হার মেনে যায়। দুবনা, ১২ আগস্ট ২০২৩

যদি

Image
শেষ পর্যন্ত বুদ্ধিও আমার ঘরে বেড়াতে এলো। অন্তত সেটাই মনে হচ্ছে আপাতত।  এখানে মরিচ খুব একটা পাওয়া যায় না, গেলেও আকাশচুম্বী দাম। আমি অবশ্য খুব যে খাই তাও নয়, তবে কালেভদ্রে খেতে ইচ্ছে করে, বিশেষ করে ডিমের অমলেট। কিছুদিন আগে দেখালাম ৫০ গ্রাম মরিচের দাম ২০০ রুবলের চেয়েও বেশি মানে ৪০০০ রুবলের বেশি কেজি। পরে অবশ্য দাম অনেকটাই কমেছে, তবে কেনা হয়নি। এরপর একদিন বাজারে গেলাম ফল কিনতে, দেখি মরিচ, বেশ বড় তবে দেখে ঝাল মনে হল। এখানে বাজারে সাধারণত মধ্য এশিয়ায় লোকেরা কাজ করে, মূলত আজারবাইজানের।  মরিচ ঝাল?  খুব ঝাল।  তিনটে মরিচ নিলাম ১০০ রুবল দিয়ে, ৫০০ রুবল কেজি। মনে মনে ভাবলাম বেশ লাভ করলাম। বাসায় গিয়ে দেখি মিষ্টি না হলেও এটাকে ঝাল মরিচ বলা যায় না। পানসে মরিচ। তাই দু দিনেই শেষ। অথচ আমি যদি তখন ১২০ রুবল দিয়ে ৫০ গ্রাম মরিচ কিনতাম তাতে এক মাস চলে যেত। ৫০ গ্রামে ১০ থেকে ১৫ মরিচ - অর্ধেক হলেি আমার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া আমি প্রতিদিন মরিচ খাই না। পরে অবশ্য তাই কিনলাম। তাও অনেক দিন হল। এখনও তিনিটে মরিচ পড়ে আছে ফ্রিজে। দেশ থেকে মরিচ আনলে কয়েক দিন পরেই নষ্ট হয়ে যায়। ওরা দিব্যি বেঁচে বর্তে আছে। একেই বলে প্রাণ শক্

শক্তি

Image
ঈশ্বর কাউকে তাঁর মত হতে বলেন না, বলেন তাঁর অনুগত হতে, তাঁর কাছে নত হতে, তিনি যা বলেন সেটা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে আর সর্বদা তাঁর গুনকীর্তন করতে। কেউ সেটা না করলে তিনি নাকি তাদের নরকের আগুনে পোড়ান। আমেরিকাও চায় না কোন দেশ তার মত হোক, তাকে অনুকরণ করুক। সে চায় অন্য দেশগুলো যেন তার কথা মেনে চলে, সে যা বলে সেটা করে, আর সর্বদা যেন আমেরিকার গুণকীর্তন করে। আর এ কারণেই অনুগত বিভিন্ন আরব দেশে গণতন্ত্র আছে কি নেই সেটা সে দেখে না, কিন্তু কোন দেশ একটু স্বাধীন হবার চেষ্টা করলেই সে গণতন্ত্রের পাঁচালী হাতে সেদেশে নিজের চ্যালাচামুন্ডাদের পাঠায়। দরকারে বোমারু বিমানে করে গণতন্ত্রের ক্যাপ্সুল পৌঁছে দেয়। তাই দিনের শেষ প্রশ্নটা শক্তির আর আনুগত্যের - তাদের মুখে গণতন্ত্র, মানবতা এসব ধর্ম গ্রন্থে বলা বিভিন্ন নীতিকথার মতই লোক ঠকানোর মন্ত্র। দুবনা, ১০ আগস্ট ২০২৩

আমরা ও তারা

Image
জার আমলে শাসক শ্রেণী পুশকিনকে পছন্দ না করলেও তাঁর প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। কি জারের রাশিয়ায়, কি সোভিয়েত ইউনিয়নে, কি বর্তমান রাশিয়ায় - পুশকিন তাদের সব। এরা এভাবেই বলে। এদেশে তালস্তোই, দস্তইয়েফস্কি, চেখভের মত শক্তিশালী লেখক থাকার পরেও। পুশকিনের বন্ধুদের অনেকেই নামকরা কবি, সাহিত্যিক। একই ভাবে শেক্সপিয়ার, গেটে, দান্তে, ইকবাল এরাও নিজ নিজ দেশে পূজিত, সম্মানিত। এসব দেশে, এসব ভাষায় শক্তিশালী লেখক কবির অভাব নেই, যেমন নেই বাংলা ভাষায়। তবে আমরাই শুধু কারণে অকারণে, অপ্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে এনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান খাঁটো করতে চাই। এতে যতটা না রবীন্দ্রনাথের ক্ষতি হয় তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় বাংলা ভাষার। সাময়িক বাহবা পেতে অনেকেই এভাবে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারে। তবে নিজের মহিমায় রবীন্দ্রনাথরা বেঁচে থাকেন অনন্তকাল। দুবনা, ০৮ আগস্ট ২০২৩

সীমাবদ্ধতা

Image
অতল সমুদ্রের যেমন তলা আছে অসীম আকাশের তেমনি আছে সীমা। যেকোন বিষয়ের গভীরে ঢুকলেই শুধু তার সীমাবদ্ধতা বোঝা যায়। যেহেতু অধিকাংশ মানুষ সেটা পারে না বা করে না তাই তাদের প্রায় সব ব্যাপারেই ধোঁকা দেয়া সম্ভব। এভাবেই কেউ ধর্ম, কেউ তন্ত্র, কেউ বিজ্ঞানের নামে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে পারে। যে নিজের সীমাবদ্ধতা জানতে বা বুঝতে পারে সে সহজেই ভিন্ন মত, ভিন্ন পথকে গ্রহণ না করলেও জায়গা করে দিতে পারে। কোন কিছুর উপর অন্ধবিশ্বাস আমাদের সেই বস্তুর সীমাবদ্ধতা দেখতে না দিয়ে আমাদের জ্ঞান ও শক্তিকে প্রকৃত পক্ষে সীমাবদ্ধ করে রাখে।  দুবনা, ০৭ আগস্ট ২০২৩

চরিত্র

Image
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেগেটিভ ভূমিকার কারণে এক সময় প্রায় অন্ধভাবে আমেরিকার বিরোধিতা করলেও সোভিয়েত ইউনিয়নে এসে এদের বিভিন্ন ত্রুটি দেখে মনোভাবের পরিবর্তন হয়। আমেরিকার বিদেশ নীতি অপছন্দ করলেও মনে হত আভ্যন্তরীন ব্যাপারে আমেরিকা অত্যন্ত সফল। বিশেষ করে ব্যক্তি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে, আইনের শাসনে। তবে ২০০০ সালে নির্বাচন পরবর্তী নাটক সেই আস্থায় ফাটল ধরায়। এরপর আসে বিএলএম যা সেখানকার জাতিগত বৈষম্যের চিত্র নতুন করে তুলে ধরে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শোষণ অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবে বর্তমান আমেরিকায় সেটা যে জাতি বা বর্ণ ভিত্তিক এটা ভাবিনি। ধারণা ছিল মার্টিন লুথার কিং পরবর্তী যুগে সেসব সুদূর অতীত। ইন্টারনেট বা তথ্যের সহজলভ্যতা বিশ্ব সম্পর্কে অনেক ধারণাই পাল্টে দিয়েছে। তবে বর্তমানে ট্রাম্প ও বাইডেন (জো + হান্টার) কে কেন্দ্র করে সেদেশে বিচার বিভাগের যে চরিত্র আমরা দেখি তাতে তৃতীয় বিশ্বের যেকোন দেশের বিচার ব্যবস্থাও লজ্জিত হয়। একটা দেশ, একটা সমাজ, একজন মানুষের কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকে যা দিয়ে আমরা তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করি। কেউ যখন তার এই বৈশিষ্ট্যগুলো হারায় সে তখন আর কোনদিনই নিজে

দায়

Image
অনেক আগে আমেরিকার কোন এক শহরে এক বিড়ালকে মেয়র বা এরকম কোন পদে নির্বাচিত করা হয়েছিল বলে পড়েছিলাম। সত্য মিথ্যা বলতে পারব না, তবে তখন মনে হয়েছিল এটা সেখানকার সিস্টেমের শক্তি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলেক্ট যেমন চালকের সরাসরি হস্তক্ষেপ ছাড়াই গাড়িকে গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারে, ঐ সিস্টেম এমনকি বিড়ালকে ড্রাইভারের সীটে বসিয়েও ঠিকঠাক চলতে পারে। কিন্তু সমস্যা হয় তখন যখন সিস্টেম ফেল করে, কারণ তখন ব্যর্থতার দায়ভার নেবার কেউ থাকে না। এটা ঠিক যে ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে তাইওয়ানের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আমেরিকার অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিপুল অর্থ উপার্জনের পথ করে দিয়েছে কিন্তু তাতে না সে দেশের না বিশ্বের সাধারণ মানুষের - কারো দুর্ভোগ কমছে না, বরং বাড়ছে। হয়তো আমেরিকার জনগণ আর নিজেদের শক্তিতে বিশ্বাস করে না ভাবে যাকেই নির্বাচিত করুক না কেন দেশ কিছু লোকের মর্জি মত চলবে। তারপরেও তারা যদি কী শারীরিক কী মানসিক সব দিক থেকেই সুস্থ একজন নেতা নির্বাচন না করে তাহলে সবার কপালেই কষ্ট আছে। দুবনা, ০৩ আগস্ট ২০২৩