Posts

Showing posts from February, 2020

কথার পেটে কথা

Image
কিছুক্ষণ আগে ক্রিস্টিনা জানতে চাইল আমি কবে মস্কো যাব। ওরা সাধারণত কোন প্রয়োজন থাকলে এটা করে। যখন মোবাইল রিচারজ করার দরকার, স্ক্রীন শট পাঠায়, টাকার দরকার হলে জানতে চায় টাকা পাঠাতে পারব কিনা। আর এমন মেসেজের অর্থ ঘটনা অন্য। মনিকা এটা লেখে যখন কথা বলা দরকার। গেলে বলে "আমার সাথে একটু কথা বল।" কি বলি সেটা আসল নয়, কথা বলা, পাশে বসা সেটাই বড় কথা। "পাশে আছি" এর মধ্যেই নিজের সমস্যার উত্তর খোঁজে। সেভাও কথা বলতে চাইলে এভাবেই লেখে। মস্কো গেলে নিজে থেকেই বলে ঘুরতে বা দোকানে যেতে। রাস্তায় চলতে চলতে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে, সেটা কসমোলজি হতে পারে, হতে পারে কোন বিষয়ে ওর নিজের কোন ভাবনা শেয়ার করা অথবা কোন ব্যাপারে দ্বিমত প্রকাশ করা। ছোটবেলা থেকেই মনিকা আর সেভা আমার নেউটা, মায়ের চেয়ে আমার সাথেই ওরা বেশি সময় কাটাতে পছন্দ করত। ক্রিস্টিনা ছিল একেবারে উল্টো। তবে ইদানীং কোন সমস্যা আমার সাথেই শেয়ার করতে আগ্রহী। এটা মনে হয় আমি বকি না, উপদেশ দিই না, শুধু শুনি আর আমি কি করতাম সেটা বলি। তাই ওর মেসেজ পেয়ে জানালাম রবিবার রাতে বা সোমবার ক্লাসের পর। এই রবিবার আমাদের ফটো প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠা

ধর্মের রাজনীতি, রাজনীতির ধর্ম

আমাদের দেশগুলোয় রাজনীতি আর ধর্ম যাকে বলে সিয়ামিজ ট্যুইন্স মানে সংযুক্ত যমজ। যতই চেষ্টা করুক এদের আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। কেন? এটাও মনে হয় আমাদের সংস্কৃতিতেই নিহিত। প্রাচীন কাল থেকেই ধর্ম প্রচারকরা ছিলেন গুরুর ভূমিকায়, তাঁদের কথা ছিল ঈশ্বর বাক্য, তা সে যে ধর্মই হোক না কেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতারাও গুরুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন নিজেদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়। বুদ্ধ, যিনি নিজে ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না আমাদের লোকজন তাকেই ভগবান বানিয়ে ছেড়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক রাজনীতিবিদদের সাথেও। গান্ধী, নেহেরু, জিন্নাহ, সুভাষ বোস এরাও কি অনেকটা দেবতার মতই পূজিত নন। শেখ মুজিব, জিয়া এরাও তো এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। রাজনৈতিক নেতারা হয়ে যাচ্ছেন অবতার আর তাদের কথা বেদ বাক্য। আমরা নেতাদের দেবতার আসনে বসাচ্ছি, তাদের পূজা করছি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। সেটা যে কোন নেতাকে যেভাবে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় সেদিকে তাকালেই বোঝা যাবে। এমন কি যেসব ধর্মীয় নেতারা বা ধর্ম ব্যবসায়ীরা পূজা পার্বণের বিরুদ্ধে অনবরত বিষোদগার করে তারাও নিজেদের অজান্তেই সমর্থকদের ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে দেবতার আসনই গ্রহণ

মায়ের আঁচল

অনেক দিন পরে এক বন্ধুর সাথে কথা হল টেলিফোনে। প্রথমে কুশলাদি জিজ্ঞাসাবাদ, তারপর অনুযোগ এতদিন কোথায় ছিলাম, খোঁজখবর নেইনি কেন? আমি অবশ্য নিউটনের তৃতীয় সুত্র সম্পর্কে দু'কথা বলতে পারতাম, তবে আজকাল এসব আর কাজে দেয় না। আক্রমণ আত্মরক্ষার সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় এটা এখন সবাই বুঝে গেছে। এরপর পুরনো বন্ধুদের পিণ্ডি চটকানোর পালা। তবে অনেকদিন চামচ দিয়ে খেয়ে অভ্যেস, তাই আমার ওইসব চটকানো ফটকানো আজকাল আর তেমন আসে না। সবশেষে বাচ্চাদের খবরাখবর। তোমার ছেলের খবর কি? ঈশ্বরের কৃপায় ভালই আছে। তোমার ছেলেমেয়েরা ভালো? টেলিফোন যখন করছে না, ভালো আছে নিশ্চয়ই। সমস্যা হলে ঠিক জানাত। কি যে বল? নিজে ফোন কর না? দেখ, বাচ্চাদের যত ফোন করবে, ওরা তত বিরক্ত হবে। কোন দরকার হলে অবশ্যই করি। ওরা যথেষ্ট স্বাবলম্বী। তাছাড়া আমিও সাহায্য করি। বাচ্চাদের বা নিজেদের ভালমন্দের কথা কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতে হয় ঈশ্বরের কৃপায় ভালো আছে। কে জানে কে কখন চোখ লাগায়। তাই? সবচেয়ে ভালো সন্তান কে জান? কে? যে স্বাবলম্বী আর দরকারে বাবা মাকে সাহায্য করে। তোমার ঈশ্বরের বয়েস তো কম হল না। চৌদ্দ বিলিয়ন ছুঁই ছুঁই। ও

একুশের ভাবনা

১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট পৃথিবীর মানচিত্রে জন্ম নেয় দুটো নতুন দেশ। পাকিস্তানের নেতারা যতটা না নতুন দেশ গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তার চেয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন ভারত বিভাগের নীল নকশা রচনায়। সেটা প্রমাণ করে ১৯৪৭ থেকে ২০২০ পর্যন্ত পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের বিবর্তন। আর সঠিক পরিকল্পনা না থাকার ফলেই জন্মের ছয় মাসের মধ্যেই দেশের পূর্ব অংশে দেখা দেয় বিদ্রোহ। ১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি অফ পাকিস্তানের সভায় যখন উর্দুকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা করার প্রস্তাব আসে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। তখন পাকিস্তানের কোন প্রদেশেই উর্দু মাতৃভাষা ছিল না, আর পাকিস্তানের ৬ কোটি ৯০ লাখ জনগণের মধ্যে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। তাই করাচীতে জিন্নাহর সামনে দাঁড়িয়েই তিনি বাংলাকে একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা নয়, দেশের অন্যতম একটি ভাষার স্বীকৃতি দেবার দাবী জানান। তবে সে দাবীকে উপেক্ষা করে সে বছর ১১ মার্চ উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা ঘোষণা করা হয়। জ্বলে উঠে বিদ্রোহের আগুন। কিন্তু সেই দাবী কি শুধুই ভাষার দাবী ছিল? সেটা ছিল বাঙ্গালীকে শুধু ধর্মীয় নয়,

হাড় ও হারের মল্লযুদ্ধ

Image
একদা এক বাঘের গলায় হার ফুটিল। বাঘের গর্জনে সমস্ত বন মুহুর্মুহু কাঁপিয়া উঠিল। ব্যাকুল প্রাণীকুল ভয়ে সন্ত্রস্ত হইয়া এদিক সেদিক দৌড়াইতে লাগিল। ইহাতেও যখন বাঘের তর্জন গর্জন বন্ধ হইল না, তাহারা একে একে বাঘপ্রাসাদের সামনে জড়ো হইতে লাগিল। অনেক বুদ্ধি পরামর্শ করিয়া একদল পশু করজোড়ে বাঘের সম্মুখে হাজির হইয়া কারণ কি জানিতে চাহিলে বাঘ হালুম বলিয়া চিৎকার করিল। ভীত প্রানী সকল চারিদিকে ছিটকাইয়া পড়িল। কিন্তু উহারা খেয়াল করিল বাঘের মুখ হইতে উজ্জ্বল জ্যোতি বাহির হইতেছে, তাই ভয় সত্বেও উৎসাহী পশুর অভাব হইল না। তাহারা হুমড়ি খাইয়া বাঘের মুখ গহ্বর নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। বাঘের গলায় মনি মুক্তা খচিত হার দেখিয়া তাহারা যার পর নাই আনন্দিত হইল। রাজার গৌরবময় কীর্তিতে তাহাদের বুক ফুলিয়া উঠিল, তাহারা বাঘের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিল। প্রশংসার তৈলে সিক্ত গলা ও মন কিছুটা নরম হইলে  বাঘ কিছুটা উপশম বোধ করিল। বাঘ শান্ত হইল। প্রানী সকল বাঘের গলার হারের মনি মুক্তার আকার, আকৃতি, রঙ, বর্ণালি ইত্যাদির বিশ্লেষণ করিয়া নিজেদের মধ্যে তুমুল বিতণ্ডা বাধাইয়া দিল। সময়ের সাথে সাথে বাঘের গলার ব্যাথা ফিরিয়া আসিল। বাঘ আবার তর্

শ্রীলাশের আত্মা

Image
টং যেন দূর থেকে ভেসে এল শব্দটা। ঘুমের ঘোরে ওটা ঠিক শব্দ কিনা সেটা বুঝে ওঠার আগেই আবার ঘুমিয়ে পড়ল শ্রীলাশ। টং টং টং যে অন্ধকার ভেদ করে আলো পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না, অবলীলায় এই টুং টাং শব্দ কেমন করে যেন ঢুকে যাচ্ছে। অবাক হয়ে ভাবল শ্রীলাশ। টুং টং টাং না, আর পারা যায় না। একটু বিরক্তই হয়ে উঠলো শ্রীলাশ। টুং টং টিং ট্যাং শান্তিতে দেখি ওরা মরতেও দেবে না। ঘুমের মধ্যেই শ্রীলাশের মুখ ফস্কে কথাগুলো বেরিয়ে এল। আর "মরা" শব্দটা কানে যেতেই একেবারে লাফিয়ে উঠে বসে পড়ল। হ্যাঁ, সব মনে পড়ছে। সব মনে পড়ছে ওর। গতকাল পর্যন্তও ও অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করত এই সব শব্দ শোনার জন্য। এগুলো শব্দ নয়, সঙ্গীত। প্রতিটি টুং টাং ছিল জীবনের প্রতীক। এসব শব্দই ওকে জানাত আরও একজন ওর পোস্টে লাইক দিল, কমেন্ট করল। জানাত ওদের বন্ধুত্বের কথা। কিন্তু সে ছিল গতকাল। সেই আলো ভরা পৃথিবী, সেই কোলাহল, সেই আড্ডা, আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন, উজ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন। আর ছিল বিশাল নীলাকাশ। ও জানতো ওই নীলাকাশ অনেক দূরে একেবারেই কালো অন্ধকারে ভরা। কিন্তু তা যে এত কালো শ্রীলাশের সেটা জানা ছিল না। হ