Posts

Showing posts from February, 2023

মুক্তচিন্তা

Image
আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি। ২০১৫ সালে এই দিন অভিজিৎ রায়ের উপর নেমে এসেছিল মৌলবাদী শক্তির আঘাত - অন্ধকারে, পেছন থেকে। এভাবেই মৌলবাদীরা মুক্তচিন্তার পৃষ্ঠদেশে ছুরিকাঘাত করেছিল। যদিও তখন অনেকেই বিশ্বাস করত এক অভিজিৎ হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তচিন্তা রোধ করা যাবে না কিন্তু বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। সেটা শুধু এজন্য নয় যে ধর্মীয় মৌলবাদ দেশে আরো গভীরে তাদের শিকড় গেড়েছে, তার চেয়েও বড় যেটা তা হল এমনকি যারা নিজেদের মুক্তমনা মনে করে তারাও আজ অনেক বেশি মৌলবাদী। আমার ধারণা মুক্তচিন্তার মূল মন্ত্র পরমতসহিষ্ণুতা। কিন্তু আজ সেটা প্রায় সবার মধ্যেই অনুপস্থিত। সবাই নিজেকেই, নিজের মতবাদকেই একমাত্র সঠিক বলে মনে করে। উর্দু, একমাত্র উর্দুই হবে রাষ্ট্র ভাষা এই উচ্চারণ আর আমার মত, আমার পথ একমাত্র সঠিক - এই দুইয়ের মাঝে কি খুব বেশি তফাৎ আছে? ভালো বা মন্দ যেকোন কিছুতে অন্ধবিশ্বাস মৌলবাদের জন্ম দেয়। একজনের জন্য যা ভালো অন্যের জন্য সেটা মৃত্যুসম হতেই পারে। তারপরেও বাঘ আর হরিণ এক বনেই বাস করে। প্রকৃতি আমাদের অনেক কিছুই শেখায়। শিখব কি না সেটা একান্তই আমাদের ব্যাপার। মস্কোর পথে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

শিল্প ও শিল্পী

Image
কবি আল মাহমুদের কবিতায় সুর দিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। এ নিয়ে বিভিন্ন কথা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সব কিছুর মত মানুষও সময়ের সাথে বদলায়। বদলায় তার আদর্শ, ভাবনা। তাই বলে তার সৃষ্টি আদর্শহীন হয় না। ১৯৪৭ পূর্ববর্তী শেখ মুজিব আর পাকিস্তান আমলের শেখ মুজিব এক নন। তেমনি এক নন বিভিন্ন সময়ের আল মাহমুদ। তেমন এক নয় গতকালের আমি আর আজকের আমি। প্রতিদিনের নতুন অভিজ্ঞতা আমাদের নতুন করে গড়ে তুলে ঠিক তেমন ভাস্কর প্রতিটি আঘাতে বা শিল্পী তুলির প্রতি টানে নতুন রূপ দেয় ভাস্কর্য বা ছবির। শেষ জীবনের আল মাহমুদ কোন অবস্থাতেই আগের কবিতাগুলো লিখতে পারতেন বলে মনে হয় না। এসব লেখা অর্ডার দিয়ে হয় না, ভেতর থেকে আসে। তাই শিল্পী মরে কিন্তু শিল্প অমর। শিল্প কোন এক বিশেষ মূহুর্তের সৃষ্টি, সেই মূহুর্তের স্থির চিত্র। সেটা বদলায় না। কিন্তু শিল্পী বেঁচে থাকে, নতুন পরিবেশে বদলায় - কখনো আমাদের কাঙ্খিত পথে, কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত। শিল্পের সাথে শিল্পীকে গুলিয়ে ফেলে আমরা আমাদের ভাবনার দৈন্যতাকেই শুধু বাড়তে দেই যার সাথে প্রগতির কোন সম্পর্ক নেই। মস্কো, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ঘুষ নিয়ে ঘুষা-ঘুষি

Image
সেদিন এক বন্ধুর সাথে কথা হচ্ছিল। দেশ থেকে এই মাত্র ফিরেছে। জমিজমা সংক্রান্ত কিছু কাজ ছিল। বলল দলিল প্রতি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এটাই অলিখিত নিয়ম।  বেশ কয়েক বছর আগে এক প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন দেশে এমনকি চৌকিদারের চাকরি পেতে এক লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। তাই চাকরি পেয়ে সবাই প্রথমেই ঘুষের টাকা ঘুষে উসুল করতে চায়। এ যেন বহমান নদী। আমি চাকরি পেতে ঘুষ দিয়েছি এখন তোমরা ঘুষ দিয়ে আমার সেই ক্ষতি পুষিয়ে দাও।  দেশে নদী বা ব্রীজ নিলামে ইজারা দেবার প্রথা আছে। এরপর তারা সেতু দিয়ে গাড়ি গেল টোল আদায় করে। ইজারাদাররা আবার টাকার বিনিময়ে অন্যদের মাছ ধরতে দেয়। সরকার চাইলে বিভিন্ন চাকরি, বিশেষ করে যেখানে ঘুষের সুযোগ বেশি, নিলামে বিক্রি করতে পারে। তাতে ঘুষের টাকা অন্যের পকেটে না গিয়ে সরকারি তহবিলে জমা হবে। আর চাকরি হবে বিনা বেতনে। তবে সেবা (যদি সেটা সেবা বলা যায়) যাতে মানুষের সাধ্যের মধ্যে থাকে সেজন্য সরকার আগে থেকেই তার সর্বোচ্চ বাজার মূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। এতে যেমন ঘুষখোরদের সংখ্যা কমবে, কাজও অনেক স্বচ্ছ হবে। মস্কো, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

একুশ

Image
বাহান্নয় রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই সেই শ্লোগান দিয়ে  মিছিল করলেও এটা ছিল মাতৃভাষার জন্য লড়াই। এটা ছিল সারা বিশ্বে সব জাতি, উপজাতি, জাতিগোষ্ঠীর নিজ নিজ ভাষায় কথা বলার, নিজ নিজ সাহিত্য, সংস্কৃতি বিকাশের অধিকার আদায়ের লড়াই। আর এজন্যই একুশ আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তবে এটা এখনও শুধুমাত্র ঘোষণা। এখনও বিশ্বের দেশে দেশে মাতৃভাষায় কথা বলতে, মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভ করতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে অনেকেই। যেকোন ভালো সূচনা বাস্তবে রূপ দিতে চাই নিরলস পরিশ্রম। যদি মানুষ শুধুমাত্র বিবাহ বার্ষিকীর দিন ভালোবাসার কথা, সংসারের কথা ভাবত তাহলে কি সেই সংসার টিকত? মানুষ যদি শুধু পরীক্ষার হলে গিয়ে পড়াশোনার কথা ভাবত সে কি আদৌ জ্ঞান অর্জন করত? শুধু ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখে বাংলা বা মাতৃভাষা চর্চার জন্য আহ্বান জানিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে উৎসবের আমেজ হয়তো পাওয়া যাবে কিন্তু তাতে ভাষা বা সংস্কৃতির কোন লাভ হবে না। তাই আসুন আমরা বছরে ৩৬৪ দিন ভাষা নিয়ে কাজ করি, ভাষাকে সমৃদ্ধ করি, করার চেষ্টা করি, একুশকে অমর করে তুলি। তাহলেই একুশের আয়োজন সফল হবে। সবাইকে একুশের শুভেচ্ছা। দুবনা, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

একি কাণ্ড দেখি দুনিয়ায়

Image
লিজ স্ট্রাস ব্রিটেনের ফরেইন মিনিস্টার থাকাকালীন রোস্তভ রাশিয়ায় নয় সহ ভৌগলিক বিষয়ে বিভিন্ন রকম অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বায়েরবক বলেছেন অবস্থার পরিবর্তনের জন্য পুতিনকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে হবে। এতে করে তার জ্যামিতির উপর দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়। প্সাকি থেকে শুরু করে আমেরিকান প্রশাসনের প্রেস সেক্রেটারিদের কথা নাই বা বললাম। তবে এদের শিক্ষা নিয়ে তেমন কোন উচ্চ ধারণা পোষণ করতাম না বলে কিছু মনে করিনি। তবে ঋষি সুনাকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে উঁচু ধারণা ছিল। তিনিও বাল্টিক আর ব্ল্যাক সীকে গুলিয়ে ফেললেন। জানি উচ্চ শিক্ষিত মানুষকে সব যে জানতে হবে এমন কোন কথা নেই। কিন্তু যারা শুধু রাজনীতিবিদই নন, বিশ্বের হর্তাকর্তা বলে নিজেদের ভাবেন, যাদের প্রতিনিয়ত এ ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় তাঁদের জ্ঞানের সাগরে যে হাঁটু জল সেটা দেখলেই চমকে উঠি। এরা পাবলিক ফিগার, অনেকের জন্য মডেল। এদের দেখে কী শিখবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। তার চেয়েও বড় কথা এ রকম জ্ঞান নিয়ে এরা যদি বিশ্বের ভাগ্যবিধাতা হতে পারে তাহলে মানুষ পড়াশুনাই বা করবে কেন, শিখবেই বা কেন? না শিখেই তো ভালই দিন চলছে। হীরক রাজার সভ্যতা

সমবেদনা

Image
মানুষ মরণশীল। প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ জন্মায়, কেউ না কেউ মারা যায়। মৃতেরা নবজাতকদের জন্য জায়গা ছেড়ে দেয়।  পরিচিত মানুষের মৃত্যু আমাদের বিষন্ন করে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে সেই কষ্ট প্রকাশ করি। কিন্তু এসব মাধ্যমের অধিকাংশ ক্লোসড গ্রুপ ফলে আমাদের সহানুভূতি বা সহমর্মিতা যাদের উদ্দেশ্য করে সাধারণত তাদের কাছে পৌঁছে না কিন্তু গ্রুপের টাইম লাইন যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসা লাইভ রিপোর্ট বলে ভ্রম হয়। কারণ শত শত মেসেজে হয় রিপ নয়তো আত্মার শান্তি কামনা। অনেকটা সোভিয়েত আমলে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ার মত যেখানে শেষের দিকের অনেকেই জানে না কি বিক্রি হচ্ছে। কারণ এখানেও শোক সংবাদ অনেক আগেই এত দূরে চলে যায় যে কার জন্য রিপ সেটাই উদ্ধার করা অনেক সময় কষ্টসাধ্য। তাই কোন ব্যক্তিগত ব্যাপারে সমবেদনা প্রকাশ সরাসরি করা ভালো অথবা কোন গ্রুপ বা সংগঠনের নেতারা সেই দায়িত্ব নিয়ে সবার পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের সমবেদনা পৌঁছে দিতে পারেন। তাতে অন্ততঃ যাদের উদ্দেশ্যে এসব করা হচ্ছে তারা অবহিত হন। দুবনা, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

যৌবন

Image
মস্কো এলাম এক্সিবিশনের ছবি নিয়ে। ২৬ টি ফ্রেম আর ৩৬ টি ফ্রেম ছাড়া। স্মিতা অপেক্ষা করছিল লাইব্রেরীতে। ওকে সেগুলো পৌঁছে দিয়ে বাসায় যাব আর কাল ছবিগুলো ঝুলিয়ে দুবনা ফিরে যাব।  বারাভিৎস্কায়া মেট্রো থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি মানেঝের দিকে রাস্তা পার হতে। সেখান থেকে রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে পেছন ফিরে আসতে হবে। যখন লেনিন লাইব্রেরীর পাশ দিয়ে যাচ্ছি দেখি দ্স্তইয়েফ্স্কি বসে আছেন। বসে ঠিক নেই। উঠবেন না বসবেন সেই ভাবনায় আঁটকে গেছেন। রাস্তা পেরিয়ে মানেঝের ওখানে বেরিয়ে চোখে পড়ল ক্রেমলিনের আলো ঝলমল টাওয়ার। হঠাৎ মনে হল দ্স্তইয়েফ্স্কির দু'শ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাঁর একটা স্ট্যাচু স্হাপন করা হয়েছে মস্কোয়। কিন্তু কোথায় জানি না। ভাবলাম স্মিতাকে জিজ্ঞেস করব। মানেঝ আর ক্রেমলিনের দু'টো ছবি নিয়ে ছবির ব্যাগ দুটি দুহাতে নিয়ে দু'পা এগুতেই দেখি একজন পাঠক বেঞ্চে বসে কি যেন পড়ছেন। এর আগে এই স্ট্যাচু দেখিনি। ব্যাগ রেখে ছবি তুলতে গিয়ে দেখি পেছনে নেমপ্লেট। যদিও দেখে চেনার কোন উপায় নেই তবুও মনে হল "ইনি কি দ্স্তইয়েফ্স্কি?" এগিয়ে গিয়ে পড়ে দেখি ঠিক তাই। যুবক দ্স্তইয়েফ্স্কি পুশকিনের ইয়

সময়

Image
ছাত্রজীবনে আমরা ছিলাম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একদিন দেখা না হলে, কথা না হলে জীবন থেকে কী যেন হারিয়ে যেত। কর্মজীবনে সবাই যে যার মত ছড়িয়ে পড়েছি দেশে দেশে। তখন কালেভদ্রে চিঠিই ছিল একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম। এরপর এল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। নতুন করে শুরু হল আড্ডা। দিন দিন যোগাযোগের মাধ্যম যত বাড়ছে, যত সহজ হচ্ছে কথা বলা আমরা তত বেশি করে কথা না বলাকেই বেছে নিচ্ছি। প্রচন্ড আবেগে তৈরি কত গ্রুপ যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মত নামসর্বস্ব হল তার খবর কে রাখে? এক সময় ফেসবুকে যাদের স্ট্যাটাস বা লেখা পড়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকতাম এখন চোখের পলক না ফেলে সেসব পাশ কাটিয়ে চলে যাই। যুদ্ধ, বয়স, স্বপ্নভঙ্গ নাকি ক্লান্তি - কি যেন ক্রমসম্প্রসারণশীল এই মহাবিশ্বে আমাদের পরস্পর থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর সাথে সাথে আমরাও বদলে যাচ্ছি। পুরানা বাঁধন ছিঁড়ছে, নতুন সময় তৈরি করছে নতুন বন্ধন।  মস্কোর পথে, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বাদ

Image
ইজমের বাংলা হল বাদ। আবার বাদের আরেকটা অর্থ হল বাতিল বা ক্যান্সেল করা। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এই বাদ বিবাদে রূপ নেয়। আজকাল সব বাদ সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে ব্যস্ত। বিরোধী দল মনে করে তাদের কাজ শুধু সরকারের বা সরকারি দলের বিরোধিতা করা যদিও সরকার ও সরকারি দল এক নয় এবং রাজনতিক দলের মূল দায়িত্ব হল দেশের ও জনগণের স্বার্থে কাজ করা। অনেক নারীবাদী মনে করে তাদের প্রধান কাজ পুরুষদের বিরোধিতা করা যদিও পুরুষ ও পুরুষতন্ত্র এক নয় আর নারীবাদের মূল লক্ষ্য নারীদের অধিকার আদায় করা আর সেটা করা পুরুষদের সাথে নিয়েই কারণ পুরুষ না থাকলে এই নারীরা নিজেরাই নিজেদের শোষণ করবে। তাই আসল কথা শোষণ ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সবাই মিলে লড়াই করা। ছোটবেলায় পড়তাম রাত না থাকলে দিনের মর্যাদা বোঝা যায় না, দুঃখ না থাকলে সুখ উপভোগ করা যায় না। কিন্তু আমরা সব সময়ই প্রতিপক্ষকে সমূলে উৎপাটন করতে চাই আর যখন একা হয়ে যাই তখন বাঁচার তাগিদেই শত্রু খুঁজতে শুরু করি, না পেলে কাউকে শত্রু ঘোষণা করে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলি, সরাসরি নিজে অথবা অন্য কারো মাথায় কাঁঠাল রেখে। এটাই আধুনিক রাজনীতি, আধুনিক কুটনীতি - ধ্বংসের সহজ ও একমুখী পথ। দ

অনুভূতি

Image
ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার দায়ে পীরগঞ্জে এক তরুণের ১১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। উল্লেখ্য যে এ ঘটনায় দুর্বৃত্তরা জেলে পাড়ায় ৩৯ ঘর সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছিল। খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাদের কি কোন সাজা হয়েছে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যে রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক অধিকারের চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যে রাষ্ট্র তার নিরপরাধ নাগরিকদের (যদি এই তরুণ দোষী হয়ও সেই দায়িত্ব একান্তই তার, অন্য কারো নয়) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না সে কি ব্যর্থ রাষ্ট্র নয়? একদিন আসবে যখন অন্য ধর্মের (আসলে কথাটা হবে ইসলামের একটা বিশেষ ধারা বাদে অন্য যেকোনো ধর্ম বা মতের) মানুষের বাংলাদেশে বাস করাটাই হবে সেই ধর্মের অবমাননা। আমরা উটের পিঠে চড়ে দ্রুত গতিতে সেদিকেই এগুচ্ছি।  যদি দেশের মননশীল ও যুক্তিবাদী মানুষ আজ এসব ঘটনার প্রতিবাদ না করে তবে কাল বড্ড বেশি দেরি হয়ে যাবে। তখন বুদ্ধিজীবী পেশাটাই ধর্মের অবমাননা বলে গণ্য হবে। শুধু বুদ্ধিজীবী কেন যেকোন প্রশ্নেই দ্বিমত পোষণ করাটা হবে ধর্মের অবমাননা। বিচার তখনই ন্যায় যখন তা সবার উপর সমান ভাবে প্রয়োগ করা হয়। একদল লোক ধর্ম

রহস্য

Image
আজকাল পরীক্ষা মানেই হরেক রকম ফল। মিষ্টি, তেতো, কষ্টে, নোনা, এমনকি ঝালও। তবে ফেসবুকের বিশাল দেওয়ালে শুধুই এ-৫।  বিভিন্ন সময় এরকম অভিযোগ শুনি এত ভালো ভালো রেজাল্ট করেও অনেকেই অনেক সাধারণ বিষয়ে কোন জ্ঞান রাখে না। দেশের ইতিহাস জানে না। সিলেবাসের বাইরে পড়াশোনা করে না। কেন? আজ মনে হয় সেই রহস্যের সমাধান পেলাম। সবাই যদি ঈশ্বরের কৃপায় ভালো রেজাল্ট করে তাহলে তারা নিজেরা কিভাবে কি জানবে? কল্পনা করার চেষ্টা করছি হাজার হাজার ঈশ্বর পরীক্ষার হলে বসে উত্তর লিখছেন। যারা ফেল করে তারা নিশ্চয়ই এথেইস্ট। দুবনা, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ক্যালেন্ডারের জীবনচক্র

Image
ফেসবুকে প্রায়ই দেখি এই মাস বা আপনার জীবনে আর কখনই আসবে না। ৮২৩ বছর পর পর এই মাসের আগমন হয়। এ ধরণের পোস্ট অনেকেই বিশ্বাস করে শেয়ার করেন। অথচ একটু ভাবলে দেখবেন ব্যাপারটা সেরকম নয়। এটা সহজেই সমাধান করা যায়। এটা ঠিক যে সময় একমুখী, কখনও ফিরে আসে না। তাই শুধু ২০২৩ সাল নয়, এই সালের যেকোনো মাস, যেকোন দিন, যেকোনো মুহূর্ত জীবনে আর কখনই ফিরে আসবে না। তবে ঠিক এই রকম বছর বা মাস ফিরে আসতে আমাদের ৮২৩ বছর অপেক্ষা করতে হবে না। ২৮ বছর যথেষ্ট। তাছাড়া লিপ ইয়ার বাদে সব ফেব্রুয়ারি মাসই ২৮ দিনে যেখানে রবি, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র ও শনি এই বারগুলো ৪ টি করে। লিপ ইয়ারে যে বার দিয়ে ফেব্রুয়ারি শুরু হয় সেটা থাকতে ৫ বার। আসুন হিসেবটা মিলিয়ে নিই। বছরে ৩৬৫ দিন, মানে ঠিক ৫২ সপ্তাহ প্লাস ১ দিন। এর মানে বছরের শুরু আর শেষ হয় একই বারে, মানে রবিবার দিয়ে বছর শুরু হলে রবিবারেই শেষ হবে। সেটা যেকোনো তারিখের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধু লিপ ইয়ারে যখন বছরে দিনের সংখ্যা ৩৬৬, রবিবারে বছর শুরু হলে শেষ হবে সোমবারে। যেহেতু কথা হচ্ছে ফেব্রুয়ারি নিয়ে তাই আমরা ফেব্রুয়ারি মাসটাই দেখব। অন্যান্য বছর ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনে, তা

এলার্জি

Image
বাচ্চা টেমস নদীতে পড়ে গেছে। নদীর তীরে হাঁটছিল এক ট্যুরিস্ট। শীত উপেক্ষা করে সে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে বাচ্চাটাকে উদ্ধার করে। বাচ্চার মা কী বলে যে ধন্যবাদ দেবে তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে আনন্দে। চারিদিকে খুশির আমেজ। সবাই উদ্ধারকারীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিবিসি থেকে তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করতে এসেছে।  আপনি এই শীতে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন শিশুকে বাঁচাতে। একটুও ভয় পেলেন না? ভয়ের কি আছে? আমার জায়গায় অন্য যেকোন লোক সেটাই করতে। আপনি নিজেকে হিরো মনে করছেন না? দেখুন আমি বীরত্ব দেখাতে নদীতে ঝাঁপ দেইনি। এই অবস্থায় একজন মানুষ হিসেবে যা করার কথা সেটাই করেছি।  সে যে কারণেই করুন আপনি হিরো। ধন্যবাদ। আপনি কোন দেশের? ইউরোপের? আমেরিকার? না। আমি রাশান।  আমাদের ইন্টারভিউ আজকের মত এখানেই শেষ।  পরের দিন ইংল্যান্ডের সব পত্রিকার শিরোনাম দুষ্ট রাশান কুমিরের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়েছে। এই রাশানরা মানুষকে তো বটেই কুমিরকে পর্যন্ত শান্তিতে খেতে দেবে না। বিঃ দ্রঃ এটা একটা জোক। তবে রুশদের প্রতি মনোভাব পশ্চিমা বিশ্বে এখন অনেকটা এরকমই। দুবনা, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

লেখকস্ফীতি

Image
ছোটবেলায় কবি সাহিত্যিকদের মনে হত ভিন্ন গ্রহের মানুষ। এদের জন্ম হত শহরে। গ্রামে তখন কবি সাহিত্যকদের চাষ হত বলে জানা ছিল না। তাই অন্য রকম এক বিস্ময় ছিল তাদের নিয়ে। এমনকি টুকিটাকি লিখলেও নিজেদের কখনই কবি বা লেখক মনে হত না। আমার অনেক বন্ধুই লেখালেখি করতেন। লতিফ সিদ্দকী তো ছিল খুব ভাল লেখক। তবে এমনকি কলেজে পড়াকালীন সময়েও আমার চোখে অধ্যাপক সৈকত আসগর ছিলেন একমাত্র জীবিত কবি যাকে চাক্ষুস দেখেছি। আজকাল অবশ্য উন্নয়নের হাওয়া সব জায়গায়। অনেক কিছুর মত কবি সাহিত্যিকদেরও বাম্পার ফলন বাংলাদেশে। যে দিকে তাকাই শুধু কবি আর কবি, লেখক আর লেখক। এমনকি অনেকে তো নামের আগে কবি বা লেখক টাইটেল লাগান। তারপরেও অনেককে বলতে শুনি দেশে নাকি কবি সাহিত্যিকদের দাম নেই, মর্যাদা নেই। কেউ বই কিনে না। ১৭ কোটি মানুষের দেশে বই কেনতে কেউ আগ্রহী নয়। কেন? মনে হয় সবাই লেখে তাই কেউ পড়ে না। রুশ দেশে চুকচা বলে এক জাতি আছে। ওদের নিয়ে আছে বিভিন্ন চুটকি। তার একটা - চুকচা পাঠক নয়, চুকচা লেখক। মনে নয় আমরাও পাঠক নই, আমরা লেখক। অথবা এমন হতে পারে অতি ফলনে যেমন বাজারে শস্যের দাম কমে যায় লেখক কবির আধিক্যে বাজারে এদের মূল্য কমে গেছে, মুদ্রাস্