অনুভূতি

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার দায়ে পীরগঞ্জে এক তরুণের ১১ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। উল্লেখ্য যে এ ঘটনায় দুর্বৃত্তরা জেলে পাড়ায় ৩৯ ঘর সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দিয়েছিল। খুব জানতে ইচ্ছে করছে তাদের কি কোন সাজা হয়েছে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যে রাষ্ট্রের কাছে নাগরিক অধিকারের চেয়ে ধর্মীয় অনুভূতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ, যে রাষ্ট্র তার নিরপরাধ নাগরিকদের (যদি এই তরুণ দোষী হয়ও সেই দায়িত্ব একান্তই তার, অন্য কারো নয়) নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না সে কি ব্যর্থ রাষ্ট্র নয়?

একদিন আসবে যখন অন্য ধর্মের (আসলে কথাটা হবে ইসলামের একটা বিশেষ ধারা বাদে অন্য যেকোনো ধর্ম বা মতের) মানুষের বাংলাদেশে বাস করাটাই হবে সেই ধর্মের অবমাননা। আমরা উটের পিঠে চড়ে দ্রুত গতিতে সেদিকেই এগুচ্ছি। 

যদি দেশের মননশীল ও যুক্তিবাদী মানুষ আজ এসব ঘটনার প্রতিবাদ না করে তবে কাল বড্ড বেশি দেরি হয়ে যাবে। তখন বুদ্ধিজীবী পেশাটাই ধর্মের অবমাননা বলে গণ্য হবে। শুধু বুদ্ধিজীবী কেন যেকোন প্রশ্নেই দ্বিমত পোষণ করাটা হবে ধর্মের অবমাননা।

বিচার তখনই ন্যায় যখন তা সবার উপর সমান ভাবে প্রয়োগ করা হয়। একদল লোক ধর্মের নামে অন্যদের বিশ্বাসের (তা সে ধর্ম হোক আর অন্য কোন আদর্শ হোক) উপর সকাল সন্ধ্যা বিষোদগার করে পার পেয়ে যাবে আর অন্যেরা কিছু না করেও (অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এদের নামে ফেক আইডি করে বা এদের আইডি হ্যাক করে দুষ্কৃতকারীরা ইসলাম বিরোধী মন্তব্য করেছে) রাষ্ট্রের হাতে নির্যাতিত (নির্যাতন ছাড়া আর কি?) হবে সেটা আসলে রাষ্ট্রের ভিত্তি ও ভাবমূর্তি দু'টোকেই নষ্ট করে। তাই এসব বিষয়ে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা আজ সময়ের দাবি, রাষ্ট্রের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য।

দুবনা, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা