Posts

Showing posts from July, 2022

মোর ভাবনারে

Image
ফিনল্যান্ড আর সুইডেন ন্যাটোতে যোগ দিতে কাগজ পত্র জমা দিয়েছে বেশ কিছুদিন আগে। রাশিয়া বলেছে এ নিয়ে ওদের তেমন কোন মাথা ব্যথা নেই। আসলে ওদের নিরপেক্ষতা ছিল আপেক্ষিক। সবাই জানত রাশিয়া আর ন্যাটোর মধ্যে কোন ঝামেলায় ওরা ন্যাটোর পক্ষ নেবে। তাহলে লাভ? এখন বরং ওদের সব সময় রাশিয়ার মিসাইলের নিশানায় থাকতে হবে। ঘটনা কি? কেন আমেরিকা জেনে শুনে বন্ধুদের বিপদে ফেলল? আসলে মনে হয় ঘটনা অন্য জায়গায়। এই দুটি দেশ স্যোশাল ওয়েল ফেয়ার স্টেট নামে পরিচিত। সমাজতন্ত্র না হলেও সম্পদের বন্টন এসব দেশে কমবেশি ন্যায়সঙ্গত। আর এটা করা হয় পুঁজিবাদের পকেট কেটে। আমেরিকার জন্য সেটা সুখকর নয়। এই দুটি দেশ ইতিমধ্যেই রাশিয়ার কু নজরে পড়েছে। বাড়ছে তেল গ্যাসের দাম। গরীব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। আর? ঠিক ধরেছেন। ধনী হচ্ছে বৃহৎ পুঁজি। এসব দেশেও। ফলে এদের ক্ষমতা বাড়বে আর কিছু দিন পরে এরা সামাজিক খাতে ব্যয় কমাবে। এরাও হবে আর দশটা পুঁজিবাদী দেশের মত। হয়তোবা কানাডাও সে পথেই যাবে। তাই বর্তমান যুদ্ধ শুধু রাশিয়ার বিরুদ্ধে নয়, পুঁজিবাদের অবাধ্য সন্তানদের বিরুদ্ধেও। সোভিয়েত ব্যবস্থাকে ঠেকাতে যেসব ছাড় দেয়া হয়েছিল সেটাকে এখন

বিজনেস

Image
আগে নাকি লোকজন বৃদ্ধ বয়সে সন্ন্যাসী হত। এর কি কোন ব্যাখ্যা আছে? থাকবে না কেন? সব কিছুর মত এরও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে।  তাই? বলুন তো শুনি।  বিজ্ঞান যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে, ধর্ম ভক্তির উপর। ধর্মের মূল কথা তর্ক না করে মেনে নেয়া। বয়স্ক লোক মানে স্বাভাবিক ভাবে বিবাহিত বা বিবাহিতা মানুষ। সংসার করতে গিয়ে স্বামী বা স্ত্রীকে এত বেশি অযৌক্তিক জিনিস মেনে নিতে হয় যে একটা বয়সে এসে দেখা যায় এরচেয়ে ধর্মের অযৌক্তিক অনুশাসন মেনে নেয়া শুধু সোজা নয়, অনেক ক্ষেত্রে অনেক বেশি প্র্যাকটিক্যাল। কারণ স্বামী বা স্ত্রীর অযৌক্তিক দাবী মেনে স্ত্রী বা স্বামীকে এই জগতেই নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে হয়, অন্যদিকে ধর্মের অযৌক্তিক অনুশাসন মেনে ভগবানে বিশ্বাস করলে স্বর্গ লাভের একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থেকেই যায়। চতুর মানুষ তাই বৃদ্ধ বয়সে সন্ন্যাসী হয়। বিজনেস। সিম্পলি বিজনেস। রিলিজিয়ন ইজ অলসো এ বিজনেস ইন কসমিক স্কেল।  দুবনা,৩১ জুলাই ২০২২

ধারণ করুন কিন্তু ধরে রাখবেন না

Image
পরিচয় কবিতায় রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি তোমাদেরই লোক অনেক সময় মনে হয় আমরা যারা (অতি) রবীন্দ্রপ্রেমী তারাই বার বার কবিকে তাদের লোক হতে দেইনি, দিচ্ছি না। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা, তাঁর আদর্শ যদি নির্বাচিত কিছু লোকের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এ দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া যেত তাহলে সমাজ আজ এতটা উগ্র হত না। রবীন্দ্রনাথ অনেক বড় মাপে মানুষ। তাঁকে চর্চা করুন তাহলেই হবে। তবে তাঁকে রক্ষা করার দরকার নেই। তিনি নিজেকে নিজেই রক্ষা করতে পারবেন যদি আমরা সবাইকে নিজের নিজের মত করে রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করতে দিই। আসুন আমরা রবীন্দ্রনাথাকে ধরে না রেখে ধারণ করি। দুবনা, ২৮ জুলাই ২০২২

কী গাব আমি কী শুনাব

Image
  আমি গান গাই। রাস্তায়, মাঠে ঘাটে। নিজের অজান্তেই গুণ গুণ করে গেয়ে উঠি যদিও জানি গানটা আমার ঠিক আসে না। ছাত্রজীবনে আমাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাইতাম - আসলে তখন গাওয়ার মানুষ তেমন না থাকায় যাকে বলে আওয়াজ তুলতাম। এখন এমনকি ঘরোয়া আড্ডায় কেউ বললেও হয়তো সাহস করে গাইব না। কারণ জানি আর যাই হোক অন্যকে গান শোনানো আমার কর্ম নয়। এর পরেও যদি আমাকে কেউ গাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তা আমাকে প্রতিবাদী করবে। কয়েকদিন আগে হিরো আলমের গানের একটা ক্লিপ কার সৌজন্যে যেন ফেসবুকে এলো। এটা ঠিক চাইলেই সেটা অভারলুক করে চলে যেতে পারতাম যেটা ফেসবুকের অধিকাংশ লেখার প্রতিই করি, তারপরেও কি মনে করে যেন দুলাইন শুনলাম। না শুনলেই ভাল হত। মনে হয়েছে ও গানটা আপলোড না করলেই ভাল করত কেননা আমরা তো নিজেদের সবল দিকটাই অন্যদের দেখাতে চাই, দুর্বলতা নয়। তারপরেও মনে হয়নি ওর গান করার অধিকার কেঁড়ে নিতে হবে। তাহলে? জানি না বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটা কতটুকু প্রযোজ্য তবে আমাদের কিন্তু পাবলিক প্লেসে পায়খানা পেচ্ছাব করার অধিকার নেই। এর মানে এই নয় আমাদের আইন করে পায়খানা পেচ্ছাব করা বন্ধ করে দিতে হবে। বলতে হবে ওটা তুমি টয়লেটে গিয়ে কর। এখানেও তাই।

গঙ্গা

Image
ভোলগায় সাঁতার কাটতে গেলে প্রায়ই গঙ্গার কথা শুনতে হয়। এই তো আজ এক ভদ্রলোক বললেন  - গঙ্গার (ওরা বলে গাঙ্গ) তুলনায় ভোলগার তীর তো যাকে বলে রেসোর্ট।  আমি সম্মতি জানাই।  - টিভিতে দেখায়। প্রচণ্ড নোংরা জল গঙ্গার।  আমি হেসে বলি  - গঙ্গার আর দোষ কি? সে কোটি কোটি মানুষের সব পাপ ধুয়ে নিজের বুকে ধারণ করে। ভোলগা যেদিন তোমাদের পাপ ধুতে শুরু করবে দেখবে এখানেও জল কি রকম নোংরা হয়ে গেছে।   দুবনা, ২৪ জুলাই ২০২২

অধিকার

Image
  দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu) ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। যদিও ভারতের ক্ষমতার প্যান্থেনিয়নে প্রধানমন্ত্রীই প্রধান তবুও রাষ্ট্রপতিই দেশের প্রথম নাগরিক। ভারতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন আর এক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, আঞ্চলিকতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বিজেপি হিন্দু মৌলবাদী দল হিসেবে পরিচিত হলেও অটল বিহারী বাজপাই এর শাসনামলেই এ পি জি আব্দুল কালাম ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সমস্ত ভারতীয়দের অন্যতম প্রিয় রাষ্ট্রপতি। আবার এই বিজেপিই এবার আদিবাসী সাওতাল সম্প্রদায়ের একজনকে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করল। জানি এর আগে ফখরুদ্দীন আহমেদ বা এ পি জি আবদুল কালাম নির্বাচিত হলেও ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি যেমন অবস্থার পরিবর্তন আফ্রো আমেরিকানদের বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াতে। তারপরেও এটাও এক ধরণের স্বীকৃতি। এটাও রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এমন মনে করার কারণ নেই যে প্রধানত উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মনদের দ্বারা শাসিত ভারতে অন্য কোন ধর্ম বা বর্ণের কাউকে দেশের প্রধান পদের অধিষ্ঠিত

বড় প্রেম

Image
  ছাত্র জীবনে একজনকে খুব ভালোবাসতাম। এখনও বাসি। না, কখনই তেমন কিছু আশা করিনি শুধু বন্ধুত্ব ছাড়া। তবে মনে হয় আমাদের রাস্তা ছিল সমান্তরাল - যা এমনকি অসীমে গিয়েও মেলে না। মিল যেতে দেখা যায়, সেটা আসলে চোখের ভ্রম। তাই দুজনার পথ দুদিকেই চলে গেছে আজীবন। বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছি বেড়াতে বা গবেষণার কাজে। পূর্ব বাংলায় বাড়ি ছিল এমন অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। আমি বাংলাদেশ থেকে শুনে কত কথা যে তারা বলছে। জানতে চেয়েছে তাদের এলাকার সব এখন কেমন দেখতে হয়েছে। এমনকি আমি অন্য এলাকার, অনেক দিন দেশে থাকিনা জেনেও বিশ্বাস করতে চেয়েছে যে আমি তাদের এলাকা সম্পর্কে কিছু একটা হলেও বলতে পারব। সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন পড়াশুনা করতাম প্রতি গ্রীষ্মে নতুন ছাত্রদের আগমনের অপেক্ষায় থাকতাম। যদি বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসত তারপরেও একটা অন্য রকম অনুভূতি ছিল। ওদের গায়ে দেশের সোঁদা গন্ধ ছিল। আমি নিজে দেশের বাইরে ১৯৮৩ থেকে আর আমার দেশ মানে আমার গ্রাম। এমনকি এখনও ভোলগার তীরে হেঁটে আমি কালীগঙ্গার কথাই ভাবি। সেও মনে হয় দেশের মত। এমনটা শুধু আমি নিজেই ভাবি না, অনেকেই ভাবে। বিশেষ করে যারা আমাদের মত অল্প বয়সে দেশটাকে ভাল করে দেখার

সাম্প্রদায়িকতা

Image
যদি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখব সাম্প্রদায়িকতা ছিল এর চালিকা শক্তি। উপমহাদেশে যে এর আগে সাম্প্রদায়িক সমস্যা ছিল না তা নয়, তবে পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টারা এটাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। কোলকাতা কিলিং থেকে নোয়াখালী, লাহোর, দিল্লি ও অন্যান্য স্থানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার। রাজনীতির বাজারে সাম্প্রদায়িকতা এখনও হট কেকের মত বিক্রি হয়। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সাম্প্রদায়িকতা কেনাবেচা করে। শুধুমাত্র মৌলবাদী দল নয়, প্রায় সব দল পক্ষে বা বিপক্ষে বলে সাম্প্রদায়িকতা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে, সাম্প্রদায়িকতা জীইয়ে রাখে। আওয়ামী লীগ হোক আর বিএনপি হোক, কংগ্রেস হোক আর বিজেপি হোক, পিপিপি হোক আর মুসলিম লীগ হোক - উপমহাদেশের সমস্ত প্রধান প্রধান দলই ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা নিজেদের এজেন্ডায় রাখে। যুদ্ধ যেমন গঠনমূলক কাজে সমস্ত ব্যর্থতা, সমস্ত ধরণের করাপশন আড়াল করতে সাহায্য করে সাম্প্রদায়িক ইস্যুও তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর, তা সে ক্ষমতাসীন হোক আর বিরোধীই হোক, সমস্ত

লিগেসি

Image
  কে কি বিশ্বাস করত বা না করত তারচেয়েও বড় কথা ভারতীয় উপমহাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। যদি সেই তত্ত্বের ডাইরেক্ট প্রোডাক্ট হয় পাকিস্তান, ভারত হল তার বাইপ্রোডাক্ট। পাকিস্তান জন্ম নেয় দ্বিজাতি তত্ত্বকে সামনে রেখে, এই তত্ত্বকে জন্ম নিবন্ধন করে, ভারত না চাইলেও এই তত্ত্ব প্রয়োগের কারণেই জন্ম নেয়। এমনকি পরবর্তী কালে বাংলাদেশও সেই জন্মদাগ থেকে মুক্তি পায়নি। পাবে না। বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্তি পেলেও এই অঞ্চলের মূল দলগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ১৯৪৭ থেক ১৯৭১ পর্যন্ত কখনই দ্বিজাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করেনি। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণ করলেও জনগণের কাছে সেটা কখনই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করেনি। আমার ধারণা এ দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই হিন্দু মুসলমান প্রশ্ন সেই ১৯৪৭ সালেই মীমাংসিত হয়ে গেছিল। ফলে কি একাত্তরের আগে কি তার পরে সাধারণ মানুষ কথায় কথায় ভারতকেই হিন্দুদের দেশ বলে উল্লেখ করত। শুধু তাই নয়, এটা তারা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করত, এখনও করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ এ দেশে আসলে বাঙালি মুসলমানের জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়। সেটা হয় রাজনৈতিক ভাবেই। কারণ দ্বিজাতি

যুদ্ধ ও জনতা

Image
ইউক্রেনের যুদ্ধ চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো যে দিনের শেষে জনগণকেই সব ঋণ পরিশোধ করতে হয়, তা সে আমাদের দেশেই হোক আর ইউরোপ আমেরিকায় হোক। এর আগে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়ার যুদ্ধে শরণার্থী সমস্যা নানা ধরণের অসুবিধার সৃষ্টি করলেও ইউরোপ আমেরিকার মানুষ নিজেদের ভুক্তভোগী মনে করেনি, এসব যুদ্ধ বিপুলসংখ্যক মানুষের রান্না ঘরে প্রবেশ করেনি, ড্রয়িং রুম থেকেই বিদায় নিয়েছে। আজ এই যুদ্ধ সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলছে। আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের ক্ষেপনাস্ত্র যদি পর্যদুস্ত ইউক্রেন সেনারা সাধারণ নাগরিকদের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে অবাক হবার কিছু থাকবে না। আর এতে যদি রাশিয়া ও ন্যাটো নিজেদের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধ এড়িয়ে যেতে পারেও ইউরোপের মানুষ চেরনোবিলের চেয়েও বড় ধরণের বিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে। অথচ এ সমস্ত দেশের দায়িত্বহীন রাজনৈতিক নেতৃত্ব কখনোই এজন্য জবাবদিহিতা সম্মুখীন হবে না। জনগণ যত দিন রাজনীতিবিদ নামক দুষ্ট লোকের মিষ্টি কথায় ভুলে তাদের সব অন্যায়, তাদের অর্থ ও ক্ষমতা লিপ্সা সমর্থন করে যাবে ততদিন এই বোঝা জনগণকে বইতেই হবে। দুবনা, ১৩ জুলাই ২০২২

পরিবর্তন

Image
যখনই আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে ওঠে আর নিরীহ মানুষ এর শিকার হয় তখন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে প্রশাসন সবাই অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের কথা বলে। একই সময় আমেরিকা সারা বিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করে। পারস্পরিক নির্ভরশীল ও একে অন্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত এই বিশ্বের সর্বত্র নরক সৃষ্টি করে সেই নরকের মধ্যে ছোট্ট একটা স্বর্গ তৈরির স্বপ্ন দেখা আসলে নিজেদের ঠকানো। হাজার হাজার মাইল দূরে যুদ্ধের পক্ষে জনমত তৈরির জন্য নিজের দেশের মানুষকে উত্তেজিত করে তাদের কাছ থেকে সংযম আশা করা বোকামি নয় কি? শরীরের ব্যাধি সারানোর জন্য যেমন পরিবেশ বদল আবশ্যক দেশের আভ্যন্তরীণ অবস্থার পরিবর্তনের জন্য তেমনি পররাষ্ট্র নীতিতে পরিবর্তন অত্যাবশ্যক। দুবনা, ১২ জুলাই ২০২২     

লড়াই

Image
  বেশ কয়েক বছর আগে যখন পুরানো বাসায় থাকতাম সামারে কুকুরগুলো আমার এখানে বেড়াতে আসত। আসলে ঠিক বেড়াতে নয়, আসত বাধ্য হয়ে। কেননা মস্কোয় ওদের মালিকেরা মানে আমার বৌ ছেলেমেয়েরা যেত কৃষ্ণ সাগরে অথবা ককেশাসের পাহাড় এলাকায়। আমি ওদের নিয়ে ঘুরতে যেতাম। আইরিশ সেট্টার লাদা আর চিহুয়া তত্তি। লাদা বেশ বড়সড়, তখনই দাঁড়ালে আমাকে ছাড়িয়ে যেত আর তত্তি বিড়ালের মত। রাস্তায় কোন কুকুরের দেখা পেলে আমরা সাবধান হতাম, লাদাকে কাছে ডাকতাম। কিন্তু তত্তি সেই যে গালিগালাজ শুরু করত যে সম্মান রক্ষার জন্য হলেও অন্য কুকুরদের উত্তর না দিয়ে উপায় ছিল না। মনে হয় ওরা এখনও কয়েক শ বছর পিছিয়ে আছে, তাই ডুয়েলে আহ্বান জানালে আর না করতে পারে না। ফলাফল - তত্তি আমার কোলে আর লাদা অন্য কুকুরদের সাথে মারমারি গড়াগড়ি করে যাচ্ছেতাই অবস্থা। বর্তমানে বাইডেন, জিলেনস্কি, রাশিয়া আর ইউরোপের অবস্থা আমাকে সেইসব দিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। দুবনা, ১১ জুলাই ২০২২  

উন্নয়ন

Image
সোভিয়েত আমলে আমরা দেশে ফিরতাম এরফ্লতের বিমানে। তখন এরফ্লত খুব জনপ্রিয় ছিল সস্তা বলে। লন্ডন থেকে যাত্রী বোঝাই হয়ে আসত। ফলে মস্কোয় টিকেট পাওয়া ছিল ভাগ্যের ব্যাপার। সে সময়ে আমি বার তিনেক দেশে যাই। প্লেনে উঠলেই লন্ডনের যাত্রীদের সিলেটি ভাষা আসত কানে। পান জর্দা দেওয়া নেয়া। মনে হত দেশের কোন মেলায় বসে আছি। কখনও আশে পাশে বসত লন্ডন থেকে আসা কোন টিন এজার অথবা আমাদের বয়সী কেউ। চোস্ত ইংরেজিতে কথা বলছে। জামায় কাপড়ে যাকে বলে বিলেতি সাহেব। কিন্তু আসল ব্যাপারটা ঘটত দেশে ল্যান্ড করার একটু আগে। ইতিমধ্যে আমাদের হাতে কাস্টমসের ডিক্লিয়ারেশন ফর্ম দিয়ে গেছে। সেটা পূরণ করছি। এমন সময় পাশের (সামনে অথবা পেছনের) সীট থেকে বলতে শুনতাম ভাই, ফর্মটা একটু ফিল আপ করে দেবেন। আপনার কলম দরকার? - তার দিকে কলম এগিয়ে দিতাম। না, মানে লেখাপড়াটা শেখা হয়নি। আমার চোখে বিস্ময়। অনর্গল ইংরেজিতে কথা বলে যাচ্ছে অথচ লেখাপড়া জানে না। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন আর একই সাথে শিক্ষক অবমাননা, ভাষা, শিক্ষা, সংস্কৃতির প্রতি অধিকাংশ মানুষের মনোভাব দেখে আমার প্রায়ই লন্ডন ফেরত এসব টিন এজারদের কথা মনে পড়ে। দুবনা, ১০ জুলাই ২০২২

গণতন্ত্র

Image
সব কিছুর মত স্বাধীনতাও আপেক্ষিক। আসলে প্রতিটি মানুষই পরাধীন। কেউ বাইরের শক্তির কাছে, কেউ স্থানীয় মোড়লদের কাছে আবার কেউ পরিস্থিতির কাছে। মোড়ল দেশী বা বিদেশী যেই হোক সে মোড়ল, শাসক এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শোষক। তবে সে কতটুকু জনদরদী আর কতটুকু গণবিরোধী সেটা নির্ভর করে তার শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধের উপর। আজ ইউরোপে সরকার বলছে জনগণকে কৃচ্ছতা সাধন করতে। পাঁচ মিনিটের বেশি স্নান না করতে। এমনকি আশির দশকের শেষের আর নব্বুইয়ের দশকের সোভিয়েত ইউনিয়ন ও রাশিয়ায় এমনটি দেখা যায়নি। কী কারণে? রাশিয়াকে শাস্তি দিতে যাকে তারা নিজেরাই যুদ্ধে নামিয়েছে। বায়োলজিক্যাল ল্যাব সম্পর্কে নূল্যান্ডের স্বীকারোক্তি আর ২০১৪ সাল থেকে ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে এ বিষয়ে স্টলটেনবার্গের স্বীকারোক্তি এ ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ রাখে না। সেসব দেখে মনে হয় কোন দেশের সরকার আজ আর জনগণের নয়, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয় (ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আক্ষরিক অর্থেই) এবং জনগণের জন্যেও নয়। আজকাল অধিকাংশ সরকার বৃহৎ পুঁজির দ্বারা নির্ধারিত বৃহৎ পুঁজির জন্য এবং বৃহৎ পুঁজির পকেটস্থ সরকার।  দুবনা, ০৫ জুলাই