বড় প্রেম
ছাত্র জীবনে একজনকে খুব ভালোবাসতাম। এখনও বাসি। না, কখনই তেমন কিছু আশা করিনি শুধু বন্ধুত্ব ছাড়া। তবে মনে হয় আমাদের রাস্তা ছিল সমান্তরাল - যা এমনকি অসীমে গিয়েও মেলে না। মিল যেতে দেখা যায়, সেটা আসলে চোখের ভ্রম। তাই দুজনার পথ দুদিকেই চলে গেছে আজীবন।
বিভিন্ন সময়ে ভারতে গিয়েছি বেড়াতে বা গবেষণার কাজে। পূর্ব বাংলায় বাড়ি ছিল এমন অনেকের সাথে দেখা হয়েছে। আমি বাংলাদেশ থেকে শুনে কত কথা যে তারা বলছে। জানতে চেয়েছে তাদের এলাকার সব এখন কেমন দেখতে হয়েছে। এমনকি আমি অন্য এলাকার, অনেক দিন দেশে থাকিনা জেনেও বিশ্বাস করতে চেয়েছে যে আমি তাদের এলাকা সম্পর্কে কিছু একটা হলেও বলতে পারব। সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন পড়াশুনা করতাম প্রতি গ্রীষ্মে নতুন ছাত্রদের আগমনের অপেক্ষায় থাকতাম। যদি বিভিন্ন জন বিভিন্ন জায়গা থেকে আসত তারপরেও একটা অন্য রকম অনুভূতি ছিল। ওদের গায়ে দেশের সোঁদা গন্ধ ছিল।
আমি নিজে দেশের বাইরে ১৯৮৩ থেকে আর আমার দেশ মানে আমার গ্রাম। এমনকি এখনও ভোলগার তীরে হেঁটে আমি কালীগঙ্গার কথাই ভাবি। সেও মনে হয় দেশের মত। এমনটা শুধু আমি নিজেই ভাবি না, অনেকেই ভাবে। বিশেষ করে যারা আমাদের মত অল্প বয়সে দেশটাকে ভাল করে দেখার আগেই বাইরে চলে গেছে। রুশে মালাইয়া রোদিনা বা ক্ষুদ্র জন্মভূমি বলে একটা কথা আছে। এটা সেই স্থান যেখানে মানুষ জন্ম নেয় আর শৈশব কাটায়। এটা আজীবন তার সাথে থেকে যায়।
আমরা যারা বাইরে থাকি তাদের অধিকাংশই কিন্তু দেশের কথা ভাবি, দেশকে মিস করি। শুধু আমরাই না যারা দেশে থেকেও নেই বা বলা চলে নিজ দেশেও যারা পরবাসী তাদের প্রায় সবারই এই এক অবস্থা। এই যে দেশের প্রতি আমার, আমাদের ভালোবাসা দেশ সেটা তাকিয়েই দেখে না। সেটা আমি একা নই। প্রায় সব সংখ্যালঘু তা সে ধর্মীয় হোক, আদর্শগত হোক আর যাই হোক সবাই এর শিকার। এই প্রেম, এই ভালবাসা একেবারেই এক তরফা। অন্য দিক থেকে প্রায়ই দেখি শুধু অবজ্ঞা আর নির্লিপ্ততা। অনেক সময় হুমকিও। শরৎ চন্দ্র তো আর সাধে বলেননি যে বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়।
অনেক সময় মনে হয় আমার দেশও ছাত্রও জীবনের সেই ভালোবাসার মত।
দুবনা, ২১ জুলাই ২০২২
Comments
Post a Comment