Posts

Showing posts from 2017

জন্মদিন

Image
এই বয়েসে জন্ম নেয়াটা এক বিশাল হ্যাঙ্গামার ব্যাপার। ছোট বেলার কথা আলাদা, একবার কেন, বছরে কয়েকবার জন্ম নিতেও গায়ে লাগে না। মনে পড়ে তখন ভোরে উঠে ক্ষেতে যেতাম মটর শাঁক তুলতে। সাথে থাকতো খিচুড়ি আর মিষ্টান্ন বা পায়েস। এটা ছিল আমার জন্মদিন স্পেশাল। অন্য ভাইবোনদের জন্মদিলে পোলাও আর মাংস থাকলেও আমার জন্য এটাই ছিল প্রথা। আর আসতো সবাই। আমার বন্ধুরা, ভাইবোনদের বন্ধুরা সবাই। কে জানে, বড়দিনের ছুটি থাকতো বলে কি না। তবে আমি খুব এঞ্জয় করতাম। আগের রাতেই অপেক্ষায় থাকতাম কখন সকাল আসবে আর আমি বন্ধুদের নিয়ে যাবো আমাদের সেই জমিতে যেখানে মটর চাষ হয়। মস্কো আসার পরে মটর শাঁক বিদায় নিয়েছে, সাথে খিচুড়িও। মোটরবিহীন মটর শাঁক এতটা পথ আসতে পারেনি বলেই হয়তো। সেখানে এসেছে কেক। অবশ্য এই দিন আরও কয়েকটা জন্মদিন থাকায় আর আমি অপেক্ষাকৃত বাঙ্গালীবিহীন হোস্টেলে বাস করায় জন্মদিনের আনন্দটা আমাদের রাস্তা পর্যন্ত গড়াতো না। তবে এ নিয়ে আমার মাথাব্যাথা ছিল না। আমার হোস্টেলের পাশের ছিল ট্যুরিষ্ট বিল্ডিং। প্রতি রবিবার ওখান থেকে ইভুশকা নামে কেক কিনে আনতাম ৪ রুবল দিয়ে আর বন্ধুদের আমার জন্মদিনের নেমতন্ন করতাম প্রতি রবিবার। থাকতো মূল

এক চিলতে স্বপ্ন

Image
ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ুচ্ছে অভি পাগলের মত। সোনালী হলুদ যে সর্ষে ফুলগুলো গতকালও মাথা দুলিয়ে স্বাগত জানাত আর জিজ্ঞেস করতো, “কোথায় যাচ্ছ খোকা?” আজ নিজেরাই যেন রাস্তা ছেঁড়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে পরিচিত জায়গাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে অতীতে; সামনে, ভবিষ্যতে শুধু অজানার হাতছানি।     রাস্তার ধারে বাঁশঝাড়। তার নীচে বসে একা একা মার্বেল খেলছে সে। বন্ধুরা সব কে কোথায় গেছে কে জানে? আবার রাস্তায় নামে সে। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসে কুদ্দুস ভাইয়ের তালগাছের নীচে, যেখানে উঁচু আকাশে মৃদু বাতাসে দুলছে বাবুই পাখির বাসা। হঠাৎ   সে নিজেকে আবিষ্কার করে হিজল তলায়। কুম তখনও জলে ভরে উঠেনি। ওখানে নাকি চুল প্যাচানীর বাস। ছোট বাচ্চাদের চুল দিয়ে প্যাচিয়ে ধরে নিয়ে যায় পাতালপুরীতে নিজের ডেরায়। দেখতে দেখতে খাল ভরে যায় বানের জলে। বইরাগীর চকের সবুজ মাঠ এখন অন্তহীন সাগরের মত। খালের ধারে মানুষের ভিড়। একটা লাশ নাকি ভেসে যাচ্ছে ধলেশ্বরীর দিকে। অসহায় সে মানুষটাকে ঠুকরে ঠুকরে খাচ্ছে হিংস্র মাছের ঝাঁক। হঠাৎ পুবাকাশে দেখা গেলো সহস্র সূর্যের আলো। সেই সূর্যের আলো আর তাপে শূন্যে হারিয়ে যায় চাঁদ আর তারা।   রেডিওর উপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো সবাই। কী যেন

অতি বুদ্ধির গলায় দড়ি

Image
সেদিন ছিল শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৭। সেভাকে নিয়ে মস্কো যাচ্ছি ব্লাব্লাকারে করে। আলুম্নাই গেট টুগেদারে যোগ দিতে। সেভার স্কুল, ট্রেন বাসের টাইম টেবিল সব মিলে সে এক যাচ্ছেতাই কাণ্ড। যা হক, শেষ মুহূর্তে একটা ব্লাব্লাকার পাওয়া গেল। ও যেখান থেকে আমাদের তুলে নেবে আর যেখানে নামাবে সেটা দেখে মনে হোল আমি ওর সাথে আগেও একবার গিয়েছি, তবে গাড়িতে বসে ঠিক মনে করতে পারলাম না। তাই জিজ্ঞেস করলাম -     আমরা কোন রাস্তায় যাবো?           -     দ্মিত্রভস্কয়ে শচ্ছে হয়ে। তেমন জ্যাম নেই সেখানে আজ। -     কিছুদিন আগে আমাদের ইয়ারোস্লাভকা হয়ে নিয়ে গিয়েছিলো একজন। -     হ্যাঁ, রাস্তায় জ্যাম থাকলে সেটা ঘটে। -     তুমি যেখানে আমাদের গাড়িতে তুললে আর যেখানে আমাদের নামাবে তা দেখে মনে হয়েছিলো এর আগেও এই গাড়িতে গিয়েছি। -     আমিই সেই লোক। তোমাকে কিন্তু আমি ঠিক চিনেছি। -     তাই বল। আসলে পৃথিবীর এই কর্নারে আমি রেয়ার একজামপ্লেয়ার। তাই আমাকে চেনা সোজা। -     তা যা বলেছ। যাচ্ছি, যাচ্ছি। গাড়ির সামনের স্ক্রীনে দেখছি যুদ্ধের উপর একটা মুভি। নিঃশব্দ। জানি না দিমা (ড্রাইভার) ইচ্ছে করেই মিউট করেছিলো কি না।   দিমা

একটা সত্ত্বার মৃত্যু

Image
আগামীকাল ১৪ ডিসেম্বর । জাতি পালন করবে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস । পত্রপত্রিকায়, টিভির পর্দায় এ নিয়ে কথা হবে । কথা হবে খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে, আর যাদের খ্যাতি তার বাড়ি বা এলাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে বেশি দুর যেতে পারেনি তারা থাকবেন শুধু তাদের ছেলেমেয়ে আত্মীয়-স্বজনদের স্মৃতিতে আর প্রার্থনায় ।   বিভিন্ন শহীদ সন্তানদের মধ্যে শ্রেণী বিভাজন তৈরি হবে কাকে টিভিতে কতটা ফ্লোর দেয়া হয়েছে এ নিয়ে । তবে সেটা মাত্র এক দিনের জন্য । ১৫ ডিসেম্বর আমরা আবার সবাই তাদের কথা ভুলে যাবো । বিখ্যাত, অখ্যাত সব শহীদরাই ফিরে যাবেন তাদের ঘরে, তাদের ছেলেমেয়েদের স্মৃতিতে যেমনটি তারা করে এসেছেন বিগত প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে ।   যুধিষ্ঠিরের সময় থেকে কিছুই বদলায় নি । সেদিন যেমন, আজও আমরা মানুষ মরতে দেখি, কিন্তু সে মৃত্যু যে আমাদের জন্যেও ঘাপটি মেরে বসে আছে তা ভুলে যাই । মনে হয় বিপদ আমাদের পাশ কেটে যাবে । আসলেই কী তাই? ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিয়ে চললে বারবার হোঁচট খেতে হয় । তারপরেও আমরা চাই সব ঝামেলা পাশ কাটিয়ে যেতে । তাতে সমস্যার সমাধান হয় না, সমস্যাটা বড় আকারে আসে, একটু পরে । যারা স্রোতের বিপরীতে চলে, তার