Posts

Showing posts from April, 2022

প্রসঙ্গ - যুদ্ধ

Image
গত পরশু যখন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ইউক্রেন যুদ্ধের উপর আমার লেখার অংশ বিশেষ ফেসবুকে শেয়ার করলাম - কে একজন কমেন্ট করলেন এই বলে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত সেনারা জার্মান মহিলাদের উপর অনেক অত্যাচার চালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে ইত্যাদি। যেহেতু কমেন্ট দেখলাম ভোরে ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই তখন আর উত্তর দেওয়া হল না। পরে উত্তর দিতে গিয়ে দেখি ওটা উইথড্র করা হয়েছে। সেই লোক সেখানে উইকিপেডিয়ার একটা লিংকও দিয়েছিল আর লিখেছিল যে বাংলাদেশের লোকেরা কখনও কাউকে ধর্ষণ করেনি ইত্যাদি। আমি যখন এটা লিখি, তখনই বলেছিলাম অনেকেই এই প্রশ্ন তুলবে। কারণ আমরা নিজেদের ব্যাপারটা সব সময়ই স্পেশাল কেস বলে মনে করি। এটা ব্যক্তি জীবনেও। যতদূর জানি, সোভিয়েত সৈন্যরা যাতে পরাজিত জাতির উপর অত্যাচার না করে সে ব্যাপারে স্তালিনের কড়া আদেশ ছিল। এ নিয়ে অনেককে শাস্তিও পেতে হয়েছে। জানি না সেটা স্তালিনের জার্মান বা ইউরোপীয়দের প্রতি ভালবাসা থেকে কিনা, তবে এর পেছনে যে সামরিক ভাবনা ছিল সেটা ছোট করে দেখা যায় না। কারণ যখনই সৈন্যরা লুটতরাজ, ধর্ষণ এসব কাজে লিপ্ত হয়, তখন তারা তাদের নৈতিকতা হারায়, সেনা বাহিনী হারায় যুদ্ধ করার শক্তি। নষ্ট হয় শৃঙ্খলা যা স

লেনিন

Image
সোভিয়েত ইউনিয়নে আমাদের নিজ নিজ স্পেশালিটির বাইরেও কিছু সাবজেক্ট পড়তে হত যা ছিল সমাজতন্ত্রের সাথে সম্পর্কিত। এর মধ্যে ছিল সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস, হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড ডায়ালেক্টিক্যাল ম্যাটেরিয়ালিজম, সায়েন্টিফিক কমিউনিজম ইত্যাদি। প্রিপারেটরি কোর্সে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাস। তখন আমরা কেবল ভাষা শিখছি, তাই এই ক্লাস হত ইংরেজিতে (স্প্যানিশ, আরাবিক, ফ্রেন্স)। আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে, পরীক্ষা দিতাম বাংলায়। জাহিদ প্রধান নামে আমাদের এক সিনিয়র ভাই সেটা টিচারকে রুশে অনুবাদ করে দিতেন। সেই পরীক্ষায় আমাদের এক বন্ধুর প্রশ্ন এসেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরে। ও বাংলায় উত্তর দিয়ে বেশ কয়েকবার লেনিনের নাম নিয়েছে (আসলে উত্তর কিছু না, লেনিন শব্দটাই ছিল উত্তরের ম্যাজিক)। টিচার বললেন, কথা হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে, ও এত লেনিন লেনিন করছে কেন? আমরা বুঝতে পারছি যে টিচার টের পেয়েছেন বন্ধুর ইতিহাসের জ্ঞানের গভীরতা। জাহিদ ভাই নীরব। উনি আবার জাহিদ ভাইকে প্রশ্ন করলেন, ও এত লেনিন লেনিন করছে কেন? জাহিদ ভাই ওনাকে বললেন, ও আসলে বলেছে যে যদি লেনিন বেঁচে থাকতেন তাহলে যুদ্ধই হত না, নিশ্চয়ই কোন কৌশলে হিটলারকে

অমানবিক মানবতা

Image
কথায় বলে যেমন জনগণ তেমন তার সরকার। আমি বরাবর জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস রেখে এসেছি। কিন্তু বর্তমানে বাইডেন, জনসনসহ পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন নেতাদের দেখে আমি এসব দেশের জনগণের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছি। আধুনিক প্রযুক্তি মনে হয় মানুষকে অভাবনীয় রকম ভাবনাহীন করে তোলে। মনে আছে কুইজের কথা? হ্যাঁ, চারটে সম্ভাব্য উত্তর থেকে সঠিক উত্তর খুঁজতে হয় এমনকি সেখানে যদি সঠিক উত্তর নাও থাকে। তার মানে আপনার নিজের অভিমতের কোন মূল্য নেই, বেঁছে নিতে হবে অন্যের দেয়া উত্তর। যেমন? ধরুন বর্তমান যুগে যা কিছু রুশ সেটাই বর্জনীয়। যদি প্রশ্ন আসে প্রথম নভোচারী কে (আর উত্তরে যদি ইউরি গাগারিনের নাম না থাকে) সঠিক উত্তর জানা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে অন্য একটা উত্তর বেঁছে নিতে হবে। এটাকে কি আমরা চয়েজ বলব? স্বাধীনতা বলব? ১৯৯৬ সালে রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় ইয়েলৎসিন আর জুগানভ মুখোমুখি হন। ইয়েলৎসিন তখন ব্যর্থতার প্রতিশব্দ, জুগানভ কমিউনিস্ট। কি স্লোগান হল - দুই খারাপের মধ্যে কম খারাপকে বেঁছে নাও। এরপর থেকে বিশ্ব জুড়ে এই একই স্লোগান। নষ্টদের হাতে চলে গেছে সব। বেঁছে নিতে হবে দুই নষ্টের থেকে কম নষ্টটাকে। তাতেই কি শেষ রক্ষা

দ্বিচারিতা

Image
  মানব সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল দ্বিচারিতা। সেটা অতীতে যতটা সত্য, বর্তমানেও ততটাই সত্য। যারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তারাই আবার এই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যে ভিন্ন রূপে ভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছে ধরা দিতে পারেন সেটা মানতে পারে না। ফলে তারা ঈশ্বরের শক্তিতেই বিশ্বাস রাখতে পারে না। যারা বিশ্বাস করে যে এক সময় সৌদি আরব বিভিন্ন ভাবে আমাদের দেশের মৌলবাদীদের মদত দিয়েছে ,যারা জানে যে আমেরিকার সার্বিক সহযোগিতায় তালেবান, আল কায়েদা, ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা ও প্রসার লাভ করেছে তারাই বিশ্বাস করতে পারে না যে আমেরিকা ইউক্রেনে বান্দেরার সমর্থনকারী নিওফ্যাসিস্টদের গড়ে তুলেছে। যারা বিশ্বাস করে যে ইউক্রেনের অধিকার আছে যে ব্লকে খুশি সে ব্লকে যোগ দেবার তারাই চীন, ভারত, বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশের রুশ বিরোধী স্যাঙ্কশনে যোগ না দেবার স্বাধীনতাকে খর্ব করতে পিছপা হয় না। এসব দেশের উপর যখন পশ্চিমা বিশ্ব অভূতপূর্ব চাপ সৃষ্টি করে তারা মুখে কুলূপ এঁটে বসে থাকে। যারা গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এসব নিয়ে বড় বড় বুলি আওড়ায় তারাই যখনই কোন দেশ স্বাধীন ভাবে চলতে চায় তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। বিশ্বের অনেক দেশ ধ্বংস হয়

টেস্ট

Image
গতকাল ছিল টেস্ট পরীক্ষা। হলে যেতে যেতে একটা বুদ্ধি মাথায় এল। ভাবলাম সেটাই কাজে লাগাব। এখন এখানে পরীক্ষা আমাদের দেশের মতই - ফুল মার্কস ১০০। আমি ২৫ মার্কস করে দুটো টেস্ট নিই আর পরীক্ষা ৫০। এই তিন মিলিয়ে যে নম্বর পায় সেটাই ফাইনাল। তবে পরীক্ষায় পাশ মার্ক ৫১ পেতে হলে পরীক্ষায় বসার পাশাপাশি কম করে হলেও একটা টেস্টে বসতে হবে। আমি পরীক্ষা বা টেস্ট নিই সোভিয়েত স্টাইলে, মানে যাই লিখুক না কেন, আসল পরীক্ষা হবে মুখে মুখে, যা লিখেছে সেটা আমাকে বুঝিয়ে বলার মধ্য দিয়ে। গতকাল পরীক্ষার হলে গিয়ে বললাম - যে ৫৫ টি প্রশ্ন ছিল তার থেকে যেকোনো দুটো বেছে নিয়ে উত্তর দাও। তবে মনে রেখো কি লিখলে সেটা আসল কথা নয়। যত সহজ প্রশ্ন বেছে নেবে তত কঠিন প্রশ্ন থাকবে এক্সট্রা কোশ্চেন হিসেবে। অব্জারভেশনঃ অধিকাংশ ছেলেমেয়েই সব চেয়ে সোজা প্রশ্ন বেছে নিয়েছে। গানিতিক জটিলতা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেছে অনেকেই। মানে ছাত্রছাত্রীরা সব সময়ই সোজা প্রশ্ন পেতে চায়। আমি নিজেও সেটা চাইতাম। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি লিখেছে। আমি কম লিখতাম। আসলে নিজেই শিক্ষককে প্রভোক করতাম এটা জিজ্ঞেস করতে। ফলে এক্সট্রা কোশ্চেন কমবেশি নিজেই তৈরি করে দিতাম। যারা ক্লাসের ভ

শিক্ষা

Image
  আজকাল বন্ধুদের অনেকেই ফোন করে এ দেশের অবস্থা জানতে চায়। কারণ ওরা বোঝে দেশে বা বাইরে যে খবর ওরা পায় সেটা অনেকটা সত্তরের দশকে বিয়ের উপহারের মত - মানে একটার পর একটা প্যাকেট খুলে শেষ পর্যন্ত ভেতরে যা পাওয়া যায় তাতে প্যাকেট খুলতে যে পরিশ্রম তার মূল্যই ওঠেনা। আমি যে সব সময় সত্যি ভার্সন দিতে পারি তা নয়, তবে এটা ভিন্ন ভার্সন প্লাস আমি নিজে দেখে ও লোক মুখে শুনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা ওদের সাথে শেয়ার করি। দেশ থেকে কেউ জানতে চাইলে তেমন সমস্যা অনুভব করি না, কারণ জানি এই যুদ্ধের ফলাফল ওদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও ঠিক ততটা নয় যতটা কিনা ইউরোপ, আমেরিকায় বসবাসকারী বন্ধুদের জন্য। কারণ আমাকে জিজ্ঞেস করে সাধারণত তারাই যারা রাশিয়ার প্রতি সমবেদনাশীল। কিন্তু রাশিয়ার জয় মানে তাদের বর্তমান দেশের পরাজয়। তাই এ প্রশ্নটা তাদের জন্য বেশ কঠিন। অন্তত আমার তাই মনে হয়। এইতো সেদিন এক বন্ধু জিজ্ঞেস করল - খবর কী? ভালোর দিকে? - কঠিন প্রশ্ন। দর কষাকষি চলছে। এখন শুধু অপেক্ষা করা আর দেখার পালা। - কিসের অপেক্ষা? - শান্তির। আশা করি আমাকে কেউ "শান্তিতে ঘুম" পাড়ানোর আগেই শান্তি আসবে। - আবার জোক। এদিকে এক তরফা খবর শুনতে