প্রসঙ্গ - যুদ্ধ
গত পরশু যখন আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত ইউক্রেন যুদ্ধের উপর আমার লেখার অংশ বিশেষ ফেসবুকে শেয়ার করলাম - কে একজন কমেন্ট করলেন এই বলে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সোভিয়েত সেনারা জার্মান মহিলাদের উপর অনেক অত্যাচার চালিয়েছে, ধর্ষণ করেছে ইত্যাদি। যেহেতু কমেন্ট দেখলাম ভোরে ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই তখন আর উত্তর দেওয়া হল না। পরে উত্তর দিতে গিয়ে দেখি ওটা উইথড্র করা হয়েছে। সেই লোক সেখানে উইকিপেডিয়ার একটা লিংকও দিয়েছিল আর লিখেছিল যে বাংলাদেশের লোকেরা কখনও কাউকে ধর্ষণ করেনি ইত্যাদি। আমি যখন এটা লিখি, তখনই বলেছিলাম অনেকেই এই প্রশ্ন তুলবে। কারণ আমরা নিজেদের ব্যাপারটা সব সময়ই স্পেশাল কেস বলে মনে করি। এটা ব্যক্তি জীবনেও।
যতদূর জানি, সোভিয়েত সৈন্যরা যাতে পরাজিত জাতির উপর অত্যাচার না করে সে ব্যাপারে স্তালিনের কড়া আদেশ ছিল। এ নিয়ে অনেককে শাস্তিও পেতে হয়েছে। জানি না সেটা স্তালিনের জার্মান বা ইউরোপীয়দের প্রতি ভালবাসা থেকে কিনা, তবে এর পেছনে যে সামরিক ভাবনা ছিল সেটা ছোট করে দেখা যায় না। কারণ যখনই সৈন্যরা লুটতরাজ, ধর্ষণ এসব কাজে লিপ্ত হয়, তখন তারা তাদের নৈতিকতা হারায়, সেনা বাহিনী হারায় যুদ্ধ করার শক্তি। নষ্ট হয় শৃঙ্খলা যা সেনাবাহিনীর জয়ের জন্য অন্যতম প্রধান শর্ত। তাই এটা কতটুকু সত্য সে ব্যাপারে সন্দেহ করা যেতেই পারে, যদিও আমি বলছি না যে এরকম ঘটনা ঘটেনি। তবে সেটা ব্যাপক আকার ধারণ করলে সোভিয়েত সৈন্যদের বিজয় কতটুকু সম্ভব ছিল সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। মনে রাখা দরকার যে একসাথে যুদ্ধ করলেও সোভিয়েত ইউনিয়ন কখনই আমেরিকা বা ইংল্যান্ডের বন্ধু ছিল না। তাই সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা থাকবে তাতে সন্দেহ নেই। তবে এই ব্যাপারটা দু দিক থেকেই ছিল। বছর তিন আগে ট্রাম্প তো স্বীকারই করতে চাননি যে সোভিয়েত ইউনিয়ন মিত্র শক্তি ছিল আর বিজয় দিবসে তার নাম পর্যন্ত নেননি। সে ক্ষেত্রে অন্তত এধরনের লেখা প্রমাণ করবে যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, ২৬ মিলিয়ন সোভিয়েত নাগরিক জীবন দিয়েছিল। আরেকটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার এই যে জাপানে আমেরিকা পারমাণবিক বোমা ফেললেও ওখানে আজকাল বলা হয় ওটা করেছিল মিত্র শক্তি, ঠিক যেমনটা ড্রেসডেন ধ্বংস করেছিল মিত্র শক্তি, যদিও সোভিয়েত ইউনিয়ন সেখানে একটা বোমাও ফেলেনি। এভাবে আমেরিকা তার খারাপ কাজগুলো অন্যদের সাথে ভাগ করে নেয়।
বাঙালি জাতি ধর্ষণ করে কিনা সেটা অন্য প্রশ্ন। এখানে অন্যান্য ব্যাপারে সাদৃশ্য দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, এটা ওয়ান টু ওয়ান আনালজি নয়। বাঙালি জাতি কখনই কোন রাজ্য দখল করেনি বলেই জানি, তাই এ ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহার কেমন হত সেটা বলা কষ্ট। তবে কিছুটা আঁচ পাওয়া যায় অন্যান্য ঘটনা থেকে। একাত্তরে দুই লাখ মা বোন ইজ্জত হারায়। মূলত পাকিস্তানীদের হাতে হলেও এই বাঙালি জাতিরই একটা অংশ তাদের সাহায্য করেছে, অনেক সময় এই নির্যাতনে অংশও নিয়েছে। তবে এরা নিজেদের বাঙালির চেয়ে পাকিস্তানি ভাবতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। বর্তমানে আমাদের রেকর্ড খুব ভাল কি? উপজাতীয় এলাকায় কি ঘটছে? বাবা মারা কেন মেয়েদের বাইরে পাঠিয়ে শান্তিতে থাকতে পারেন না। এই ইভ টিজিং, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মেয়েদের উপর হামলা - এটা কিসের আলামত? বাঙালি মেয়েদের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন এসব বিষয়ে আমরা অন্যদের চেয়ে কতটুকু এগিয়ে আছি বা পিছিয়ে পড়েছি।
Comments
Post a Comment