শিক্ষা

 


আজকাল বন্ধুদের অনেকেই ফোন করে এ দেশের অবস্থা জানতে চায়। কারণ ওরা বোঝে দেশে বা বাইরে যে খবর ওরা পায় সেটা অনেকটা সত্তরের দশকে বিয়ের উপহারের মত - মানে একটার পর একটা প্যাকেট খুলে শেষ পর্যন্ত ভেতরে যা পাওয়া যায় তাতে প্যাকেট খুলতে যে পরিশ্রম তার মূল্যই ওঠেনা। আমি যে সব সময় সত্যি ভার্সন দিতে পারি তা নয়, তবে এটা ভিন্ন ভার্সন প্লাস আমি নিজে দেখে ও লোক মুখে শুনে বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা ওদের সাথে শেয়ার করি। দেশ থেকে কেউ জানতে চাইলে তেমন সমস্যা অনুভব করি না, কারণ জানি এই যুদ্ধের ফলাফল ওদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও ঠিক ততটা নয় যতটা কিনা ইউরোপ, আমেরিকায় বসবাসকারী বন্ধুদের জন্য। কারণ আমাকে জিজ্ঞেস করে সাধারণত তারাই যারা রাশিয়ার প্রতি সমবেদনাশীল। কিন্তু রাশিয়ার জয় মানে তাদের বর্তমান দেশের পরাজয়। তাই এ প্রশ্নটা তাদের জন্য বেশ কঠিন। অন্তত আমার তাই মনে হয়।

এইতো সেদিন এক বন্ধু জিজ্ঞেস করল
- খবর কী? ভালোর দিকে?
- কঠিন প্রশ্ন। দর কষাকষি চলছে। এখন শুধু অপেক্ষা করা আর দেখার পালা।
- কিসের অপেক্ষা?
- শান্তির। আশা করি আমাকে কেউ "শান্তিতে ঘুম" পাড়ানোর আগেই শান্তি আসবে।
- আবার জোক। এদিকে এক তরফা খবর শুনতে শুনতে আমরা দিশেহারা।

যুদ্ধকালে এই এক বিরাট সমস্যা। খবর কমবেশি এক তরফা। আসলে শুধু যুদ্ধে কেন, জীবনেও তাই। কারও সাথে কারও সমস্যা থাকলে ন্যারেশনটাই এমন - আমাদের দিকে সব ঠিকঠাক, ওদের অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। কিন্তু যুদ্ধ যখন চলছে, চালিয়ে যেতে পারছে, বুঝতে হবে শত্রু পক্ষ এখনও শক্তিশালী, এখনও তার ক্ষমতা আছে লড়াই চালিয়ে যাবার। তার মানে কারও জন্যই যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। যুদ্ধ চলবে, চলবে অনেক দিন। সাধারণ মানুষ মরবে। যুদ্ধের জয় পরাজয়ের হিসেব তো আর সাধারণ মানুষ বা বসত বাড়ি দিয়ে হয় না, হয় কোন পক্ষের কত সৈন্য মারা গেল, কয়টা বিমান, ট্যাঙ্ক ইত্যাদি ধ্বংস হল - এসব দিয়ে।

তবে একটু খেয়াল করলেই অনেক মিথ্যার মধ্যেও কিছু কিছু সত্য পাওয়া যায়। যেমন প্রায়ই খবর আসে রুশ সৈন্য পালাচ্ছে বা তাদের কয়েক শ বিমান ধ্বংস হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, তাই যদি হয় তাহলে ইউক্রেন কেন বার বার অস্ত্র চাইছে, আকাশ সীমা বন্ধের কথা বলছে। অর্থাৎ দেখছি যুদ্ধের গতিবিধি নিয়ে তাদের বয়ান আর বিভিন্ন দেশের কাছে তাদের আবেদনের মধ্যে কোন মিল নেই।

পশ্চিমা দেশ থেকে বার বার বলা হচ্ছে রুশ অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে। কিন্তু প্রশ্ন জাগে তাই যদি হয় তাহলে ইউরোপ, আমেরিকায় কেন দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, কেন ইউরোপের নেতাদের মধ্যে ইঁদুর দৌড় শুরু হয়েছে, কেনই বা বিভিন্ন দেশে দেশে গিয়ে তাদের মন্ত্রীরা ভয় দেখাচ্ছে? যদি ইউক্রেনের নিজে কোন জোটে থাকবে সেটা বেঁছে নেবার অধিকার থাকে, তাহলে বাংলাদেশ, ভারত বা অন্য কোন দেশ কোন পক্ষে ভোট দেবে না দেবে সেই অধিকার তাদের থাকবে না কেন?

কলিন পাওয়েলের ঘটনা থেকে আমার মনে হয়েছিল জনগণ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়, কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় না জনগণ, না সরকার - কেউই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। আর দেশ উন্নতই হোক, আর অনুন্নতই হোক - সব দেশের জনগনই একই রকম - তাদের সব সময়ই ঠকানো যায়, সব কিছুতেই বিশ্বাস করানো যায়। এমনি এমনি তো আর রাজাকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলা হয়নি। মানুষ ঈশ্বরের মতই দেশের সরকারকেও বিশ্বাস করে বা করতে চায়। কিন্তু বার বার জনগণকে ধোঁকা দিলে চিরদিনের মত তার আস্থা হারানোর সম্ভাবনা আছে। আর সেটা হলে গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্র থাকবে কিনা সেটাও ভাবার বিষয়।

দুবনা, ০৩ এপ্রিল ২০২২ 
 

 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা