Posts

Showing posts from November, 2023

উত্তরাধিকার

Image
মারা গেলেন হেনরি কিসিঞ্জার। অবশ্য এরা মরে কোথাও যায় না, গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে যুগ যুগ ধরে জ্বালিয়ে যায়। জ্বালায় সারা বিশ্বের মানুষদের। আজকে বিশ্বের যে বেহাল তার পেছনে ভদ্রলোকের অবদান মোটেই কম নয়। এমনকি নিজ দেশেও যে অরাজকতা তার দায়িত্ব তিনি এড়াতে পারবেন না। এটা ঠিক যে তার কুটনৈতিক তৎপরতা শেষ পর্যন্ত আমেরিকাকে স্নায়ু যুদ্ধে বিজয়ী করেছে। কিন্তু জয়ী হওয়া আর বিজয়মাল্য বরণ করা এক নয়। ডাকাতও লড়াইএ জেতে কিন্তু বিজয়ী হয় না। আজ আমেরিকার কুটনৈতিক দেউলিয়াপনা কিসিঞ্জারের লিগ্যাসি। ব্লিনকেন, হাস বা অন্যান্য মার্কিন কূটনীতিকদের দেখে মনে হয় দলীয় কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। স্বর্গে ওনার ঠাই হবে না, আশা করি নরকও তার দ্বার খুলবে না। সাটল ডিপ্লোম্যাসি করেই না হয় কাটিয়ে দিক আমরণ। কাজান, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

বন্ধু

Image
কনফারেন্স মানে শুধু বিজ্ঞান চর্চা নয়, অনেকের সাথে পরিচয়। বিশেষ করে রাতে কয়েকজন মিলে রেস্টুরেন্টে যাওয়া, জীবনের গল্প করা। গল্পে গল্পে দেখা যায় নিজেদের অনেক কমন পরিচিত বন্ধু। আজ এমন একজনের সাথেই প্রথম আলাপ। রাতে কোথায় খাব ভাবছি। ও বলল বিয়ার ছাড়া ওর চলবে না। শেষ পর্যন্ত ছয় জন মিলে সেখানে গেলাম। গল্পে গল্পে জানলাম দুবনার আমার পরিচিত অনেকেই ওর ক্লাসমেট। এর মধ্যে একজন যে আমার পাশের রুমে বসত ১৯৯৬ থেকে ২০০২ পর্যন্ত, মারা গেছে। কার সাথে কিভাবে কখন যে পরিচয় হয়! ও নিজে একজন নামকরা বিজ্ঞানীর ছেলে, নিজেও ভালো কাজ করছে। যাদের কথা বললাম, মানে ওর বন্ধুদের বাবারাও নামকরা বিজ্ঞানী। আমার প্রায় সমবয়সী। এটাই বলে সোভিয়েত ইউনিয়নেও এভাবেই শ্রেণী তৈরি হয়েছিল। কারণ মানুষ সাধারণত নিজের পেশার লোকজনের সাথেই মিশত, বন্ধুত্ব হত তাদের সন্তানদের। তাই শ্রেণী সংগ্রাম করলেও দিনের শেষে অটোম্যাটিক্যালি শ্রেণী তৈরি হয়ে যায়। কাজান, ২৮ নভেম্বর ২০২৩

শব্দ

Image
কাজানের ট্রেনে হঠাৎ করেই দু'জন প্রিয় মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেল। কত কথা, কত গল্প। জীবনের সব গল্প যেন আজই শেষ করতে হবে। কথা বলতে বলতে একসময় গলা দিয়ে কি এক অদ্ভুত আওয়াজ বের হতে শুরু করল। কিছুতেই থামাতে পারছি না। ভয়েই ঘুম ভেঙে উঠে বসার অবস্থা। বেশ কিছুক্ষণ ধরে পরীক্ষা করে দেখলাম ঐ শব্দটা স্বপ্ন ছিল, নাকি সত্যি। একসময় আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। বন্ধুরা আর এলো না। সাড়ে সাতটার দিকে সহযাত্রীদের একজন আরেকজনকে বলল ইয়ং ম্যানের নাক ডাকার শব্দে রাতে তার ঘুম হয়নি। আমি অবশ্য গলা দিয়ে বেরুনো সেই শব্দের রহস্য উদ্ধার করতে পেরে খুশিই হয়েছি। গুলিয়া এ রকম অবস্থায় আমাকে ডেকে তোলে। আজ পাশে ও ছিল না। কাজান, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

বাড়ি নেই

Image
কথা হচ্ছিল কয়েকজন বন্ধুর সাথে। একজনকে প্রশ্ন করা হল আপনার বাড়ি কোথায়? আমার বাড়ি নেই। মানে? জন্ম বাংলাদেশে। তবে সেখানে আমাকে বলে হিন্দু। ভারতে গেলে বলে বাঙাল। তিরিশ বছর উত্তর আমেরিকায় আছি। ওরা বলে অভিবাসী। আরেক বন্ধু বলল তাকেও এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। তখন নিজেকে সত্যি হিন্দু মনে হয়। তাহলে কি আমি সাম্প্রদায়িক? সম্যস্যাটা সারা বিশ্বের সংখ্যালঘুদের। আরেকজন বলল।  আমি আমার কোম্পানিতে একমাত্র বিদেশি। আমি কেন এই পদে সেটা অনেকেরই পছন্দ হয় না। এসব শুনে আমার মনে হল সমস্যা আবার সেই শাসক (শোষক) আর শোষিতের। যারা ক্ষমতায় আছে তারা সবসময়ই নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করে। বৃটিশরা ভারতে সংখ্যায় কম ছিল তাই বলে তো নিজেদের হীন মনে করত না। যতদিন কেউ শাসকদের কথায় সায় দেয়, নিজেদের শোষণ করার অধিকার দেয় ততদিন সে অসাম্প্রদায়িক, সমাজে সমাদৃত। কিন্তু যখনই সে নিজের হিস্যা বুঝে পেতে চায়, সে সাম্প্রদায়িক, সমাজের জন্য ক্ষতিকর কেউ। আমাদের সবাই ছোটখাটো একেক জন একনায়ক। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারব ততক্ষণ পর্যন্ত এসব চলতেই থাকবে, মানুষ একে অন্যের দ্বারা শোষিত হতেই থাকবে। অনেকেরই বাড়ি থা

যুদ্ধ ব্যবসায়ী

Image
জেলেনস্কির রাজনৈতিক দলের নেতা সংবাদ মাধ্যমকে জানাল যে গত বছর ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের এক সমঝোতায় আসে যার মূল কথা ছিল ইউক্রেনের ন্যাটোয় যোগ না দেয়া ও ফিনল্যান্ডের মত নিরপেক্ষ দেশ হওয়া। সে সময় তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কিয়েভে এসে এই চুক্তি সাক্ষর না করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ইউক্রেনের নেতৃত্বকে অনুপ্রাণিত করে। ফলাফল - পাঁচ লাখের মত ইউক্রেন সৈন্য নিহত, অনেক বেশি ভূমি হাতছাড়া, দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত, দেশ ঋণে জর্জরিত, ইউরোপের অর্থনৈতিক মন্দা আর সারা বিশ্বের মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। এর জন্য কি বরিস জনসন নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হবে নাকি তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে? আমরা প্রায়ই অন্যএর বলে বলীয়ান হয়ে প্রতিবেশি, এমনকি নিজের ভাইবোনদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হই, ভুলে যাই যে এসব তথাকথিত হিতাকাঙ্খীরা আসলে আমাদের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে নিজেরাই খেতে চায়, রেখে যায় ধ্বংস, মৃত্যু আর সীমাহীন কষ্ট। মস্কোর পথে, ২৬ নভেম্বর ২০২৩

শ্রমিকরাজ

Image
বিভিন্ন দেশে শ্রমিকদের বঞ্চিত করা হলে আমেরিকা নাকি নাকি সেসব দেশের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যাক, শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের এক যোগ্য উত্তরসূরি পাওয়া গেল। অনেক দিন থেকেই আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে খারাপ দিকগুলোর চর্চা করে আসছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নে যেমন পশ্চিমা মাধ্যমের গলা টিপে ধরা হত তেমনি এখন ওরা দ্বিগুণ উদ্যমে আরটি সহ বিভিন্ন রুশ মাধ্যম, এদের সাহিত্য, সংস্কৃতি এসব নিষিদ্ধ করছে। এখন তো ফিনল্যান্ড বর্ডার পর্যন্ত সীল করে দিতে চাইছে। সেই সময়ে শ্রমিকদের স্বার্থে কথা বলা - এ যে ভূতের মুখে রাম নাম। এখন শুধু বাকী বিভিন্ন দেশের কমিউনিস্ট ও সোস্যালিস্ট পার্টির নাম বদলিয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি রাখা আর মাঝে মধে বাইডেন, ব্লিনকিনের অতিথি হয়ে ওয়াশিংটন বেরিয়ে আসা। ওনারা যখন বলেছেন - মেহনতি মানুষের ভাগ্যে শিকে না ছিঁড়ে আর যাবে কোথায়? এরকম প্যাট্রন থাকতে শ্রমিকরাজ প্রতিষ্ঠা মনে হয় এখন সময়ের ব্যাপার। দুবনা, ২১ নভেম্বর ২০২১

সুর অসুর

Image
এ আর রহমান বিখ্যাত নজরুল গীতি কারার ঐ লৌহ কপাট গানে নতুন সুর আরোপ করেছেন। এই নিয়ে ফেসবুক তোলপাড়। একারণেই ইউটিউবে গানটি খুঁজে শুনলাম। মানুষ নতুন যে কোন জিনিস গ্রহণ করে তার অভিজ্ঞতার আলোকে। তাই চাই বা না চাই এ গানের মূল সুরের সাথে একটা তুলনা এমনিতেই চলে আসছিল। এই আপেক্ষিক মহাবিশ্বে আমরা তুলনা না করে কোন কিছু নিতে পারি না। এমনকি একই গান একাধিক শিল্পী গাইলে আমরা তাদের মধ্যেও তুলনা করি। এখানে তো একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষিত। নিজেকে প্রশ্ন করলাম যদি মূল সুরে গানটি শোনা না থাকত তাহলে এই সুর কেমন লাগত? যদি ভাষা না জানতাম হয়তো খারাপ লাগত না। কারণ গান শুধু সুর নয়, কথাও। সেই কথাগুলো কিভাবে বলছি তার উপর নির্ভর করে অর্থ। সুরের কারণে কিছু কিছু শব্দ একাধিক বার উচ্চারণ করায় আর ইনটোনেশন বা স্বর পরিবর্তন করায় বাক্যগুলো অর্থ হারিয়েছে বলে মনে হয়েছে। বাঙালি হিসেবে যে বিষয়গুলো আমার কাছে সামনে চলে এসেছে ভিনদেশীদের কাছে সেটা নাও হতে পারে। এ আর রহমানের অধিকার ছিল কি না এই গানে নতুন সুর আরোপ করার। আইনগত বাধা না থাকলে তিনি সেটা করতেই পারেন। দর্শক বা শ্রোতা গ্রহণ করবে কি না সেটা ভবিষ্যত বলতে পারবে। দিনের শেষ

ভয়

Image
ধর্ম ব্যবসায়ীরা যতটা না যুক্তি আর ভালোবাসা দিয়ে তারচেয়েও বেশি ভয় দেখিয়ে মানুষকে ধর্মের পথে আনতে চায়। আজকাল তথাকথিত গণতান্ত্রিক বিশ্ব চীন-রাশিয়ার জুজুর ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন দেশের মানুষদের পশ্চিমা গণতন্ত্রে দীক্ষিত করে। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান। আমেরিকা, ইউরোপ সর্বশক্তিমান না হলেও পেশীর জোর একেবারে কম নয়। আমাদের দেশ দুর্বল। আরও দুর্বল দেশের রাজনৈতিক দলগুলো। তবে তারাও ভয় দেখিয়েই জনগণের ভালোবাসা অর্জন করতে চায়। আর এফেক্ট যাতে তাৎক্ষণিক হয় তাই পোড়ে গাড়ি, পোড়ে মানুষের কপাল। তবে তারা ভালোভাবেই জানে যে ভয়ই মানুষের ভক্তি আর ভোট লাভের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। দুবনা, ০৪ নভেম্বর ২০২৩

নভেম্বর ০৩

Image
বাংলাদেশ আজ জেল হত্যা দিবস পালন করছে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই চার নেতার হত্যাকাণ্ড জাতিকে বিহ্বল করে তোলে। এরপর থেকে পদ্মায় অনেক জল গড়িয়েছে। দীর্ঘ সময় নিজেদের হাতে স্বাধীন করা দেশে অবহেলিত ও অনুচ্চারিত থাকার পর তাঁরা আবার মঞ্চে ফিরে এসেছেন স্বমহিমায়। এসব দিবস আমরা স্মরণ করি বা পালন করি শুধু তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্যই নয়, যাতে আর কখনও এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সেই অঙ্গীকার নিয়ে। একটা জাতির জীবনে নেতাদের ভূমিকা অপরিসীম। যখন আমরা চার নেতার কথা স্মরণ করি তখন আমরা যেকোনো ধরণের রাজনৈতিক হত্যা তো বটেই, এমনকি যেকোনো ধরণের বিচার বহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধেই মত প্রকাশ করি। তবে জাতি শুধু নেতাদের দিয়ে গঠিত হয় না, জাতির প্রধান উপাদান তার জনগণ। তাই জাতীয় নেতাদের আমরা তখনই সম্মান দিতে পারব যখন সাধারণ মানুষের জন্য সুবিচার ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে পারব। ধর্ম, বর্ণ, ভিন্নমতের কারণে বর্তমানে দেশে বিভিন্ন স্তরের মানুষের উপর যেসব অত্যাচার, অনাচার বিভিন্ন মহল থেকে ঘটান হচ্ছে সেসবের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারব। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার স্মৃতি সাধারণ মা