Posts

Showing posts from October, 2016

যত বড় বাচ্চা তত বড় সমস্যা

Image
আজ থেকে স্কুল ছুটি, শরতের ছুটি। অবশ্য অক্টবরের শেষে  আর নভেম্বরের শুরুতে এই ছুটিটা আসলে নাম মাত্রই শরতের ছুটি, কেননা সোনালী শরৎ শীতে পালিয়ে গেছে বেশ কয়েক দিন আগেই, হলুদ লাল পাতা গুলো গাছের মাথা থেকে পায়ের নীচে  গড়াগড়ি দিচ্ছে।  কখনো বৃষ্টিতে ভিজে কখনো বা বরফের শীতল চুম্বনে। পারফেক্ট ট্রানজিশন পিরিয়ড - এই জল জমে বরফ হয় তো বরফ গলে হয় জল। গত বেশ কিছুদিন হলো ছুটিগুলো সেভা  আমার সাথেই কাটায়।  যতটা না আমার সাথে কাটাতে, তার থেকে বেশী  স্বাধীন ভাবে চলতে।  মস্কো থাকলে মা সারাদিন এটা পড়, ওটা কর বলেই যায়।  আর আমি ও কি খাবে সেটা জেনে রান্না করে ওকে রেখে চলে যাই নিজের কাজে।  ওর সাথে থাকে কম্পিউটার আর ল্যাপটপ, ঘরের চাবি।  যখন খুশি খায়, খেলে আর ঘুরে বেড়ায়। তাই শুক্রবার যখন মস্কো যাই, ভেবেছিলাম সেভাকে নিয়ে আসবো। কিন্তু ও বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে আগামীকাল, তাই আসতে  পারবে শুধু মঙ্গলবার বিকেলে।  আর আমি প্ল্যান করেছি বৃহস্পতিবার রাতে মস্কো যেতে।  শুক্রবার ৪ নভেম্বর ছুটি।  ওরা বলে  জাতীয় ঐক্য দিবস।  আর আমরা বলি আমাদের বিয়ের জন্য ছুটি। বিকেলে গুলিয়া ফোন করলো, সেভা  অনেক আগে বেরিয়ে গেছে, ফোন ধরছে না।

ভুত

Image
সকালে কথা প্রসঙ্গে স্মিতা বললো ভুত  চতুর্দশীর কথা যদিও ব্যাপারটা আমার মাথার উপর দিয়েই উড়ে গেছে।  পরে চঞ্চলকে দেখলাম ভুত চতুর্দশীর শুভেচ্ছা জানাতে।  আমি দেখি ভুতের চেয়ে ও অধম, কোন চতুর্দশী নেই, শুধুই দুর্দশা।  তবে আশার  কথা একটাই, একদিনা আমিও ভুত হবো। বাসায় এসে দেখি টিভি কাজ করছে না।  বৌ বললো সকাল থেকে কাজ করছে না, সেভাকে কম্পিউটার না দেয়ায় ও নাকি কি সব করেছে।  বেশ খানিক চেষ্টা করে ঠিক করতে না পেরে সেভাকে জিজ্ঞেস করলাম।  বললো ও হাত দেয়নি।  তাই শুরু করলাম একে একে সব দেখা, এডাপটার, টিভি ইত্যাদি।  বৌ এর মধ্যে বললো, হেয়ার ড্রায়ার খুঁজতে গিয়েই কেউ কিছু করেছে।  আর তার কারণ কেউ এক জন গত সোমবার হেয়ার ড্রায়ারটা এখানে ফেলে গেছে। ইঙ্গিতটা না বোঝার কোনো কারণ ছিল না। যখনি কোনো সমস্যা হয়, কারণ সেই একটাই।  যদি না আমি যেচে আলাপ করতাম, যদিনা আমাদের পরিচয় হতো, আজ আর এই সব সমস্যা হতো না।  অনেক সময়ই ভাবি ফিজিক্সটা আমার না পরে ওরই  পড়ার দরকার ছিল।  সব কিছুতে  রুট খোঁজার ইচ্ছে শুধু মনে প্রাণে যারা পদার্থবিদ তাদেরই থাকে। বেশ কিছুদিন দুবনায় ট্র্যাফিক  জ্যামটা    শহরের থেকেও লম্বা হয়ে যাচ্ছে।  কারণ সেই পু

গন্ডার

Image
কয়েকদিন আগে সুমিত আমাকে (আদর করে) গন্ডার বলে ডেকেছে।  ও ইঞ্জিনিয়ার মানুষ, কন্সট্রাকশনটা তাই ভালো বোঝে। ও  জানে মাংস আর চর্বির স্নেহাস্পর্শ না পেলে শুধু হাড্ডি আর চামড়ার চাপে স্নায়ুগুলোর দম বন্ধ হয়ে যায়,  আর ভোঁতা  হয়ে যায় ইন্দ্রিয়। নারে সুমিত, আমি একা  নই, আজ সারা দেশটাই গন্ডার বনে গেছে।  উদ্ভট ঊটের  পিঠে চলতে চলতে দেশটা ঠিক গন্ডার হয়ে গেছে।  বিদেশ থেকে পাঠানো রেমিটেন্সে  আর গার্মেন্টস কর্মীদের রক্ত-ঘাম ঝরানো টাকায়  সমাজটা গন্ডারের মত গায়ে-গতরে বাড়ছে ঠিকই, তবে তাতে মগজের পুষ্টি হচ্ছে না। তখন ক্লাস টুতে পড়ি।  বাংলা বইয়ে একটা প্রবন্ধ ছিল অনেক দিন আগের কথা।  আরবের লোকেরা তখন বর্বর ছিল। খুব বেশি আরবের লোক দেখার সুযোগ হয়নি, তবে মস্কোয় পড়ার সময় যে কয়জন দেখেছি, তাতেই মনে হয়েছে, সময় ওদের ওখানেই থেমে গেছে।  আজ আমরা উদ্ভট ঊটের  পিঠে চড়ে  ওদিকেই যাচ্ছি।  মগজের আর কি দরকার? কি দরকার চেতনার আর বোধের? শুনেছি, মহা সম্মেলনে অংশ নিতে আসা  পদদলিত কিছু মানুষের কান্না আর চিৎকার অনেকে সম্মেলনের প্রতি তাদের উচ্ছাসিত সমর্থন বলে মনে করে। তাই কোনো পূজার কান্না সম্মেলনের হাস্যরোল ভেদ করে আর পৌঁছে না ক

সমস্যা

Image
১৯৮৩ সনে আমি যখন সোভিয়েত  ইউনিয়নে আসি, আমাদের বৃত্তি ছিল তখন প্রতি মাসে ৮০ রুবল।  যেহেতু হোস্টেল, টিউশন, লাইব্রেরী  আর চিকিৎসা ছিল ফ্রি, আর খাবারের দাম ছিল যথেষ্ট কম, তাই টাকার অংকটা  খুব কম ছিল না।  অনেকেতো এর মধ্যে থেকে আবার জামা-কাপড়ের জন্য টাকা জমাতো। সোভিয়েত দেশে আমার হাড্ডি ঢাকার উপযুক্ত পোশাক ছিল না বিধায়  বাড়ী  থেকে নিয়মিত জামা-কাপড় পাঠাত।  সাথে ফাও হিসেবে চা, কফি পেতাম। তাই বৃত্তির টাকায়  দিন কাটতো বেশ। তবে টাকা জমতো না, বিশেষ করে ক্যামেরা কেনার পর থেকে। কেননা ক্যামেরার হাত ধরে আসতো  লেন্স, ফিল্টার,এক্সপোনোমিটার।  এ ছাড়া ফিল্ম আর আনুষঙ্গিক জিনিস  তো ছিলোই। তাছাড়া বই, এলবাম, রেকর্ড  - এসবও কিনতাম নিয়মিত।   রাশিয়া জীবনের প্রথমে খেতাম মেস করে আনোয়ার আর জালালের সাথে, পরে শামীম শুভ সহ  অনেকে মিলে  একটা বড় ফ্যামিলি গড়ে ওঠে। রান্না করতো সবাই, আমিও করতাম যদিও দেশে চা'র বাইরে কিছু করার কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না।  একদিন রাতে বড় ভাইরা এলো আজান দিতে, মানে রাতে খাবে বলে।  ওদের প্ল্যান ছিল না, আমরাই পীড়াপীড়ি করে ধরে রাখলাম।  রান্নার লঘু দায়িত্বে আমি।  রান্না বসলো, অন্যদের দেখা দেখি আমিও মু

গল্প নিয়ে গল্প

Image
আমরা যারা সোভিয়েত  দেশে পড়েছি, ছাত্র জীবনে ওই দেশ সম্পর্কে যে মতই  পোষণ করিনা কেন, এখন ওই নামটা শুনলে সবাই কেন যেন চাঙ্গা হয়ে উঠি, মনে হয় যেন নতুন করে চুমুক দিচ্ছি ভদকার গ্লাসে, এক ধরণের রোমাঞ্চে আর নষ্টালজিয়ায় ভরে উঠে মন। জানি না যারা অন্য কোনো দেশে পড়াশুনা করেছে, তাদেরও ঠিক এমন হয় কি না? হয়তো বা হয়। হয়তো বা ওরাও আমাদের মতো বলে ওঠে, "মনে আছে সেই ক্যাফেটেরিয়ার কথা, যেখানে আমরা প্রায়ই আড্ডা দিতাম, আর এক মুখ হাসি নিয়ে  আমাদের এগিয়ে আসতো "সু" নামের মেয়েটি।" কে জানে? তবে সোভিয়েত  দেশের কথা  আলাদা।  এখনো কোনো কোনো বন্ধু আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করে, "আচ্ছা বিজন, এখনো কি নাতাশার ঘুরে বেড়ায় পার্ক কুলতুরীতে?" "ঘুরবে না কেন, ঘুরে। তবে ওরা  আর আমাদের জন্য অপেক্ষা করে না।  আমাদের সামনে দিয়ে কোনো এক যুবককে বগলদাবা করে নাক উঁচিয়ে হেটে যায়। বুঝলি, সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা ক্রমাগত পিছিয়ে যাচ্ছি।" জানি না আমার বন্ধুরা অন্য প্রান্তে বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কি না। ভালোবাসা, সংসার আর কাজের মায়ায় আমার আর এ দেশ থেকে কোথাও যাওয়া হয় নি।  চোখের সামনে বদলে গেছে দেশ, বদল

তরমুজ

Image
শনিবার শেষ পর্যন্ত যখন সুপার মার্কেটে গেলাম, রাত  ৯ টা  পেরিয়ে গেছে অনেকক্ষন। স্বভাবতঃই  যেটা হয়, কিনতে যাই এক জিনিস, কিনে আনি  অন্য কিছু।  হঠাৎ দেখি এক লোক তরমুজ কিনছে।  ভাবলাম আমাদের কিনলেই বা মন্দ কি? তরমুজ আমরা সাধারণতঃ  কিনি আগস্ট আর সেপ্টেম্বরে - এর আগে তরমুজ খুব একটা ভালো হয়না, প্রায়ই রাসায়নিক উপায়ে পাকায়, আর আগস্ট থেকেই অফিসিয়াল সার্টিফিকেট দিতে শুরু করে বিক্রেতাদের।  তাছাড়া এই সময় ওদের দামও  কমে আসে আমাদের পকেটের কাছাকাছি। সেপ্টেম্বরে কেনা হয় প্রায় প্রতি সপ্তাহেই।  ছুটির দিনে।  আমরা তরমুজ কিনলে একটু বড় দেখেই কিনি, আর সেটা টানতে পারে আন্তন অথবা আমি, তাই কেনা হয় ছুটির দিনে। যা বলছিলাম, ভদ্রলোককে তরমুজ ওজন করতে দেখে আমারও  কেনার শখ হলো।  গিয়ে দেখি সবগুলো বেশ বড় বড়, একটু ভয়ে ভয়ে একটা উঠলাম।  বেশ কিছুদিন পিঠ ব্যাথা, ভাবলাম, যদি ওঠাতে না পারি, কেলেঙ্কারী  হয়ে যাবে।  কিন্তু ওয়েট মেশিনে বসিয়ে দেখি ওভার ওয়েট।  ডাকলাম দোকানের এক কর্মচারীকে।  ও ভেতরে গিয়ে ওজন করে নিয়ে এলো, ১৬ কেজি।  এতো বড় একটা তরমুজ টানা হাতি টানার চেয়েও বেশী  কষ্টের।  হাতি ব্যাটার তবু পা আছে, তরমুজ - একেবারে চাঁচাছোলা

অবাক কান্ড

Image
শনিবার সকাল। মস্কো।  ঘুম থেকে ওঠার তেমন তাড়া  নেই।  ক্রিস্টিনার ক্লাস ছিল।  ও চলে গেলো সকালে উঠেই। এর পর বেরুলো মনিকা। সেভা  আমাকে চা ঢালতে বলে সেই যে কম্পিউটারে বসলো, ওঠার আর নাম নেই।  ও প্রায়ই এটা করে।  আমাকে কাজ করতে দেখলেই "পাপা, চা খাবো বা এটা দাও, ওটা দাও" বলে বিরক্ত করতে শুরু করে, আর আমি উঠলেই বসে পরে খেলতে। আমি অবশ্য অনেক আগেই বুঝে গেছি ওর চালাকি তা, তবে ইচ্ছে করেই এখনো উঠে যাই, কেননা আর বছর-দুই পরে ও নিজেও আর এমনটা করার দরকার বোধ করবে না। এরই মধ্যে গুলিয়া  ওকে কম করে হলেও এক হাজার বার বললো ভায়োলিন আর পিয়ানো বাজাতে - আর সেভাও  এই যাচ্ছি  এই যাচ্ছি করে কাটিয়ে দিলো ঘন্টা।  এরপর আমরা বেরুলাম দুজনেই, গুলিয়া  ওর বোনের বাসায়, আমি মিউজিক্যাল স্কুলে।  কিছুটা একসাথেই যেতে হয়, পরে ও মেট্রোতে নেমে গেলো, আমি ট্রামে করে এগিযে চললাম।  নামার আগে বললো আমি যেন এক ঘন্টা পরে সেভাকে  ফোন করে বলি ভায়োলিন বাজাতে। আমি বললাম, - আমার কি দরকার, তুমি ফোন করলেইতো হয়। - আমি চাই, যে তুমি ওকে ফোন করো। - আমি করবো না। -কেন? - আমি জানি, বললেও ও এখন ভায়োলিন বা পিয়ানো বাজাবে না।  হয় ও আমাকে মিথ্য

ওলট-পালট

Image
কিছু কিছু দিন আছে, যা কিনা সব অর্থেই উল্টো পথে চলে। এসব দিনে রাশিয়ানরা বলে "не с той ноги встал" মানে ভুল পায়ে ঘুম থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিলে।গতকাল ছিল এমন একটা দিন।সকালটা কাটলো মস্কোয়, কাজের দিনগুলোতে বাচ্চারা সাধারণতঃ সবার আগে ওঠে।গতকালও ব্যতিক্রম ছিলনা।সেভা উঠলো সবার আগে স্কুলে যাবে বলে। আমি থাকলে নিজেই ওদের সকালের খাবারটা করে দেই। রান্না ঘরে গিয়ে দেখি সেভা কম্পিউটার গেইম খেলছে।গতরাতে গুলিয়া  সবার শেষে কম্পিউটার থেকে উঠেছে, ওটা অফ করার কথা। জিজ্ঞেস করা যাবেনা, তাহলে সেভার উপর এক পশলা ঝড় বয়ে যাবে এই সাতসকালে।ওরা অবশ্য কয়েকদিন থেকেই বলছে সেভা কিভাবে যেন কম্পিউটার অন করে।আমি পাসওয়ার্ড বলিনি, ওদের বলার কথাই আসেনা। গুলিয়া কয়েক দিনই বলছে ব্যাপারটা দেখতে।গতকাল চেক করে কোন কিছু পেলামনা।আগে সাধারণতঃ ও আরেকটা ইউজার তৈরি করতো, এখন তা করেনা। তার মানে ও কোনো ভাবে এটা হ্যাক করে। কিন্তু কিভাবে? আমি এক দিকে খুশি যখন বাচ্চারা নিজেরা এইসব করতে শেখে, কিন্তু মুখ খুলে বললে বৌ হবে খড়গহস্ত। আবার ওকে যে পাসওয়ার্ড  বদলাতে শেখাবো, তাতেও সমস্যা।দেখা গেলো বদলাতে বদলাতে নিজেই ভুলে গেছে, তখন আমাকে পুরো সিস্ট