ভুত

সকালে কথা প্রসঙ্গে স্মিতা বললো ভুত  চতুর্দশীর কথা যদিও ব্যাপারটা আমার মাথার উপর দিয়েই উড়ে গেছে।  পরে চঞ্চলকে দেখলাম ভুত চতুর্দশীর শুভেচ্ছা জানাতে।  আমি দেখি ভুতের চেয়ে ও অধম, কোন চতুর্দশী নেই, শুধুই দুর্দশা।  তবে আশার  কথা একটাই, একদিনা আমিও ভুত হবো।

বাসায় এসে দেখি টিভি কাজ করছে না।  বৌ বললো সকাল থেকে কাজ করছে না, সেভাকে কম্পিউটার না দেয়ায় ও নাকি কি সব করেছে।  বেশ খানিক চেষ্টা করে ঠিক করতে না পেরে সেভাকে জিজ্ঞেস করলাম।  বললো ও হাত দেয়নি।  তাই শুরু করলাম একে একে সব দেখা, এডাপটার, টিভি ইত্যাদি।  বৌ এর মধ্যে বললো, হেয়ার ড্রায়ার খুঁজতে গিয়েই কেউ কিছু করেছে।  আর তার কারণ কেউ এক জন গত সোমবার হেয়ার ড্রায়ারটা এখানে ফেলে গেছে। ইঙ্গিতটা না বোঝার কোনো কারণ ছিল না।

যখনি কোনো সমস্যা হয়, কারণ সেই একটাই।  যদি না আমি যেচে আলাপ করতাম, যদিনা আমাদের পরিচয় হতো, আজ আর এই সব সমস্যা হতো না।  অনেক সময়ই ভাবি ফিজিক্সটা আমার না পরে ওরই  পড়ার দরকার ছিল।  সব কিছুতে  রুট খোঁজার ইচ্ছে শুধু মনে প্রাণে যারা পদার্থবিদ তাদেরই থাকে।

বেশ কিছুদিন দুবনায় ট্র্যাফিক  জ্যামটা    শহরের থেকেও লম্বা হয়ে যাচ্ছে।  কারণ সেই পুরানো রোগ।  সোভিয়েত  আমলে এক গল্প ছিল।  রাস্তার ধারে  একলোক গর্ত খুঁড়ছে, আর তার পর পরই  আরেকজন গর্ত ভরে ফেলছে।  ওদেরকে জিজ্ঞেস করলে বললো, আসলে কথা ছিল গাছ লাগানোর। যে লোকের ওই গর্তে গাছটা লাগানোর কথা ছিল, সে অসুস্থ বিধায় আসেনি, কিন্তু তাই বলে ওদের কাজতো আর বসে থাকতে পারে না।  একই রকম ঘটনা ঘটছে দুবনায়। এদেশে সড়কের দায়িত্বে পরিবহন মন্ত্রণালয়, আর রেল লাইনের দায়িত্বে রেল মন্ত্রণালয়।  প্রতি গ্রীষ্মে রাস্তা ঠিক করে এরা।  এবারও  তার ব্যতিক্রম হয়নি।  একদল লোক এসে রাস্তা ঠিক করে গেছে।  সমস্যা হয়েছে  রেল ক্রসিং এ।  ওখানে রেল লাইনটা নিচে পরে গেছে, ফলে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত।  এর পর রেলের লোকেরা এসে তাদের মতো করে রেল লাইন ঠিক করেছে, এর পর গর্তটা উল্টো মুখী রূপ নিয়েছে।  শহরের লোকজন প্রতিবাদ করেছে, দুই দলই আবার নতুন করে রাস্তা আটকে সব করেছে, কিন্তু সবাই নিজের নিজের মতো করে।  ফলে শহরবাসীর  দুর্ভোগ  যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে।

সমাজতন্ত্র গেছে, কিন্তু তার ভুতটা  এখনো রয়ে গেছে।

মস্কো, ২৯ অক্টবর ২০১৬


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা