Posts

Showing posts from March, 2023

সত্য মিথ্যা

Image
ফেসবুকে বিভিন্ন জনের স্ট্যাটাস পড়ে জানলাম প্রথম আলোর এক রিপোর্টারকে গ্রেফতার করা হয়েছে আর পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সাংবাদিকদের কাজ জনগণকে সত্য জানানো। সেটা করতে গিয়ে তাদের যদি সরকারের পক্ষ থেকে হেনস্থা করা হয় সেটা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এ ধরণের কাজ নিন্দনীয়। তবে এখানে কী ওয়ার্ড - সত্য। কারণ বিগত কয়েক বছর যাবত দেখেছি কীভাবে ফেইক নিউজ তৈরি করে সেটা মিডিয়ায় ছেড়ে দেওয়া হয় আর সেটার ভিত্তিতে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের অপছন্দের দেশ ও সরকারের উপর চড়াও হয়। সিরিয়ার শিশুদের ব্যবহার করে রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ অনেকেরই মনে আছে। বুচার ঘটনা পশ্চিমা মাধ্যম ফলাও করে প্রচার করলেও কোন কিছুই প্রমাণ করতে পারেনি। এসব তো আজকের দিনের কথা। সেই সুদূর ১৯৭৪ সালেও এক মেয়েকে জাল পরিয়ে ছবি তুলে বিশ্ববাসীকে বাংলার দুর্ভিক্ষের ছবি দেখানো হয়েছিল। এমনটা ঘটলে দেখালে আপত্তি নেই। সমস্যা তখনই যখন সেন্সেশনের জন্য লোকজনকে দিয়ে এইসব রোলে অভিনয় করানো হয়। দীর্ঘ দিনের কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক সাংবাদিক লিখলেন যদি ভুল হয় সে দায়িত্ব সাংবাদিকের নয়, বার্তা সম্পাদক অথবা পত্রিকার সম্পাদকের। কিন

ইজমের ভূত

Image
এক বন্ধু আমার এক স্ট্যাটাসে লিখল "ইজম তো অনেক দেখলাম। কিন্তু কোন ইজমই তো নিখুঁত নয়।"  আসলে নিখুঁত বলে কিছু নেই। একজনের কাছে যা নিখুঁত অন্য জনের কাছে সেটা খুঁত সম্পন্ন। আমরা যদি জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে ভাবি তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। দুটো উদাহরণ দিচ্ছি আমাদের ছোটবেলায় বাড়িতে মাংসের প্রচলন তেমন ছিল না। মাংস খেলে লুকিয়ে খেতে হত। আমার বাবা ও জ্যাঠামশাই ছিলেন নিরামিষাশী। বাবা আমাদের মাংস খাওয়ায় আপত্তি করতেন না, বরং কিনে আনার ব্যবস্থা করতেন। জ্যাঠামশাই মাংস খাওয়া তো দূরের কথা যদি বাড়িতে কোথাও মাংস রান্না হচ্ছে সেটাই টের পেতেন তাহলে সবাইকে বকে ঝকে একাকার। আমি পছন্দ করি না বলে তুমি করতে পারবে না এই মনোভাব সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি না কোন কাজ অসামাজিক বা বেআইনি না হয় এই প্র্যাকটিস থেকে সরে আসা দরকার। অর্থাৎ আমাদের অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। উদার হতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ দেশের সরকার মিলিয়ন ডলার যে চুরি করে তার প্রতি উদার কিন্তু যে দুই টাকার ভাত চুরি করে তার প্রতি ক্ষমাহীন।  আমরা ভাত খাই। কেউ ভাতের পরিবর্তে আলু বা রুটি বা নুডলস খায়। এ নিয়ে কিন্তু আমরা খু

ধর্মের সেকাল একাল

Image
যদি ধর্ম ব্যবসায়ীদের দিকে তাকান, দেখবেন ওরা আপনাকে পরকালে স্বর্গের লোভ দেখিয়ে নিজেরা ইহকালে দিব্যি আনন্দ ফুর্তি করে জীবন কাটাচ্ছে। পশ্চিমা গণতন্ত্রের প্রবক্তাদের দিকে তাকালে দেখবেন ওরা আপনার দেশে গণতন্ত্রের বাম্পার ফলনের আশা দিয়ে যুদ্ধ লাগাবে, অস্ত্র বিক্রি করবে আর অনেক দূরে টাকার পাহাড়ে বসে আপনার দুর্দশা দেখবে আর ঋণ দিয়ে আপনাকে আরও দেউলিয়া বানাবে। সেদিক থেকে দেখলে পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আমাদের ধর্মীয় গুরু বা হুজুদের মধ্যে পার্থক্য শুধু পোষাকে। মিথ্যাচার, হঠকারিতা, দুর্নীতি এসব ক্ষেত্রে দুই দলই সমান। সেটা দেশের সাধারণ মানুষের দিকে আর আফগানিস্তান, ইরাকি, লিবিয়া এসব দেশের দিকে তাকালে স্পষ্ট বোঝা যায়। তাই যারা আধুনিকতার নামে পশ্চিমা নিওলিবারেলদের অন্ধভাবে অনুসরণ করে ভাবেন এর মধ্য দিয়ে আপনারা প্রাচ্যের ধর্মীয় ও অন্যান্য কুসংস্কার থেকে মুক্তি পেলেন তারা আসলে নতুন বোতলে পুরানো মদ কেনার মত আরেক ধর্মে দীক্ষিত হলেন। পার্থক্য হল এই ধর্মের পূজা পার্বণ যুগোপযোগী আর আরাধ্য দেবতারা খুব বেশি রকমের স্মার্ট ও আরও বেশি অনৈতিক।  সুতরাং যেকোন ধরণের অন্ধবিশ্বাস থেকে নিজেকে দূরে রা

ক্লাস

Image
গতকাল ক্লাসের পরিবেশ ছিল একটু থমথমে। গত সপ্তাহে ওরা ক্লাসে আসেনি বলে ডীন অফিস বাধ্য করেছে কৈফিয়ত দিতে। এটা আমাদের উভয় পক্ষের জন্য অস্বস্তিকর। ছাত্র - শিক্ষকের মধ্যে ভয় ও শাসনের নয়, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা জরুরি। প্রায় এক ঘন্টা একটানা লেকচার দিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জিজ্ঞেস করলাম কোন প্রশ্ন আছে? নীরবতা। সব বুঝেছ? নীরবতা। কিছুই বোঝনি? আবার নীরবতা। কিছু যে বোঝনি সেটাও বোঝনি? আবার নীরবতা।  আমার কি মনে হয় জান? একই রকম সাফল্যের সাথে আমি রাস্তার ওপাশে ক্লাস নিতে পারতাম। ওরা দেখতে পায় না। আমরা তো দেখতে পাই। শেষ পর্যন্ত এক জন বলল মুখ ফুটে।  রাস্তার ওপারে দনস্কায়া সমাধি।‌ দুবনা, ২৮ মার্চ ২০২৩

স্বাধীনতা

Image
গতকাল এক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম  গরীবের স্বাধীনতা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার স্বাধীনতার মত - লাফানোর স্বাধীনতা আছে তবে খাওয়ার স্বাধীনতা নেই। এর প্রেক্ষিতে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন স্বাধীনতা কি মানুষকে কিছুই দেয়নি? সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে দুটো কথা বলি। এক অর্থে ভবিষ্যৎ সব সময়ই অনিশ্চিত। আমাদের বর্তমান ক্ষণস্থায়ী, অতীত প্রায় এক জীবন দীর্ঘ আর অতীত থেকে শিক্ষা নিতে পারলে সেটা আরও অনেক লম্বা, ভবিষ্যৎ - শুধু আশা আর স্বপ্ন দিয়ে গড়া। তারপরেও মানুষ স্বপ্ন দেখে, নিশ্চয়তা চায়। সে চায় নিজে বাঁচুক বা নাই বাঁচুক, আগামীকালও ভাত মাংসের দাম একই থাকবে, তার চাকরিটা বহাল তবিয়তে থাকবে, অসুস্থ হলে সে হাসপাতালে সেবা পাবে, ছেলেমেয়েরা ঠিকই পড়াশুনা করে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। হয়তোবা এসব আমেরিকান ড্রিম নয়, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রায় প্রতিটি মানুষের এই নিশ্চয়তা ছিল বলেই তাদের চেহারায়, চলায় বলায় এক ধরনের প্রশান্তি ছিল। উপরের কথাটি বলার উদ্দেশ্য এই যে মানুষের সব চাওয়া পাওয়ার মূলে রয়েছে নিশ্চয়তা। যদিও সেটা শুধুই সম্ভাবনা তত্ত্ব দ্বারা পরিচালিত তারপরেও এই নিশ্চয়তার মধ্যে সে দেখে তার ন

স্বাধীনতা হোক কুসংস্কার মুক্ত

Image
আজ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ২৬ মার্চ মানে ভয়াল কালো রাত, মানে দীর্ঘ নয় মাস ব্যাপী অনিশ্চিত জীবন, মানে প্রতিনিয়ত দুঃসংবাদ শোনার আতঙ্ক আর এই তিমির অন্ধকারে এক চিলতে আশার আলোর খোঁজে রেডিওতে কান পেতে থাকা। জীবনের রেলগাড়ির হঠাৎ লাইন চ্যুত হওয়া আর সেখান থেকে কোটি কোটি মানুষের জীবন নিয়ে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা। সাধারণ মানুষ বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে সেই লড়াইয়ে বিজয়ী হলেও পরবর্তীতে তাঁর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রচন্ড রকম ব্যর্থ। বিদেশী শাসকদের শাসন থেকে মুক্তি পেলেও শোষণ আজ আগের চেয়েও তীব্র। আজ আমরা পরাধীন নিজেদের লোভ লালসার কাছে, পরাধীন নিজেদের কুসংস্কারের কাছে, অন্ধবিশ্বাসের কাছে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল এই পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি লাভের জন্য আমাদের কোন লড়াই নেই, উল্টো আমরা নিজেরাই অতি যত্নে নিজেদের এই পরাধীনতার প্রেম জালে জড়িয়ে ফেলছি। সবাইকে একাত্তরে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ও নতুন স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে নামার আহ্বান। দুবনা, ২৬ মার্চ ২০২৩

স্যার সমাচার

Image
স্যার শব্দের আক্ষরিক অর্থ জনাব বা মহাশয়। যেকোন অপরিচিত মানুষকে জনাব বা মহাশয় বলে যেমন সম্বোধন করা যায় তেমনি সম্বোধন করা যায় স্যার বলে। আমাদের সমস্যা হল স্যার শব্দটি আমাদের দেশে এসেছে ইংরেজদের হাত ধরে আর যেহেতু তখন ওরা ছিল রাজার জাতি আর আমরা প্রজা তাই এ শব্দটির শ্রেণি চরিত্র গেছে বদলে। ফলে আমাদের দেশে স্যার সম্বোধনের মধ্যে এক ধরনের রাজা প্রজা সম্পর্ক থাকে। অথচ ইংরেজি ভাষাভাষী দেশে একজন মানুষ একজন উচ্চপদস্থ কর্মচারীকে যেমন স্যার বলে সম্বোধন করে একই ভাবে একজন ভিখিরি বা গৃহহীন মানুষকে স্যার বলে সম্বোধন করে। তাই যারা স্যার ম্যাডাম এসব সম্বোধন শোনার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকে এটা তাদের মূর্খতা প্রকাশ করে। রাশিয়ায় সবাইকে নাম ধরে ডাকার নিয়ম। তবে এদেশে যেহেতু প্রত্যেকের নামের সাথে বাবার নাম যুক্ত থাকে তাই সম্বোধন করে নাম ও বাবার নাম সহ, যেমন ভ্লাদিমির ইলিচ নামের ইলিয়ার পুত্র ভ্লাদিমির। আমার মত যাদের নামের সাথে বাবার নাম নেই তাঁদের নিয়ে সমস্যা, বিশেষ করে আমরা যদি পড়াই। তবে প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তি বোধ করলেও পরে ঠিক হয়ে যায়। আমার ছাত্রছাত্রীরা আমাকে বিজন নামেই ডাকে। কিন্তু সমস্যা হয় আমাদ

ছাত্র শিক্ষক

Image
আজ ক্লাসে গিয়ে দেখি গড়ের মাঠ। কাক পক্ষীর টিকিটি পর্যন্ত নেই কোথাও। ইউরি একা দাঁড়িয়ে। ও হলের দায়িত্বে।  সকালে ছিল কয়েক জন। হয়তো খেতে গেছে। একজন ব্যাগ রেখে গেছে। আসবে নিশ্চয়ই। আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেনকে লিখলাম। ওদের আজ দুবনায় এক্সকারশন। চেয়েছিল আমি যেন থাকি। ওখানে ওদের কোলাইডার দেখাবে। ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যেহেতু গ্রুপের খুব কম সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ওখানে যাবে তাই আমি মস্কো এসেছি ক্লাস নিতে।  কি ব্যাপার? কোথায় সবাই? আমরা কয়েকজন দুবনা যাচ্ছি। অন্যদের তো থাকার কথা। আপনি অপেক্ষা করুন। আমি বলছি ওদের। প্রায় আধাঘণ্টা পরে এক ছেলে এল। নাইজেরিয়ার। ওর অবশ্য ইচ্ছে ছিল ব্যাগ নিয়ে চলে যাবার। কিন্তু আমি তো ছাড়বার পাত্র নই।  কোন ভাষায় পড়াব? রুশ না ইংলিশ? ইংলিশ।  ক্লাস শেষ হল। ওদের সাথে আমার আরও দুটো ক্লাস। অন্য হলে। তুমি ওখানে যাও। আমি আসছি। আচ্ছা।  কিছুক্ষণ পরে ক্লাসে গিয়ে দেখি কেউ নেই।   আবার অপেক্ষার পালা ‌ আসলে আমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। এরপর আমার পিএইচডি স্টুডেন্ট আসবে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যাচ্ছি ডিপার্টমেন্টের দিকে। দেখা হল ইনস্টিটিউটের ডাইরেক্টরের সাথে। কি ব্যাপার, ওরা আজ দুবনা যায়নি? গ

প্রবাসে মৃত্যু

Image
মানুষ এক অদ্ভুত জীব। সমাজে থাকে, সামাজিকতা করে আবার কিভাবে কিভাবে যেন নিজেকে বা নিজের সমস্যাগুলো সবার চোখের আড়াল করে রাখে। নিজের সমস্যা অন্যের কাঁধে না চাপানো নিশ্চয়ই ভালো, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্ততঃ সংবাদ দিয়ে রাখলে বিপদকালে কাউকে না কাউকে কাছে পাওয়া যায়। এতে যে সমস্যার সমাধান হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই, তবে চেষ্টার একটা সুযোগ থাকে। গতকাল বিকেলে এক বন্ধু ফোন করল। দাদা, আপনি অমুককে চেনেন? প্রথম দিকে আমাদের সংগঠনে সক্রিয় ছিল। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। হঠাৎ? শুনলাম ও মারা গেছে। হুম। কি হয়েছিল? সেটা জানি না। খবর পেলাম কিছুক্ষণ আগে। রাতে জানার চেষ্টা করব। পারলে আপনিও চেষ্টা করবেন। যদিও বললাম মনে আছে কিন্তু মুখটা ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। দেখেছি মাত্র কয়েক বার, তাও ১০-১১ বছর আগে। ওর কথা শেষ কবে মনে হয়েছে সেটাও মনে করতে পারব না। হয়তো যেসব দেশে অনেক বাংলাদেশী বসবাস করে সেখানে এ ঘটনা তেমন আলোড়ন তুলে না তবে মস্কোয় আমাদের সংখ্যা এত কম যে খবরটা শুনে কেমন যেন এক ধরণের শূন্যতার সৃষ্টি হল মনে। এরপর নিউ ইয়র্ক থেকে ফোন এল, ফোন এলো চট্টগ্রাম থেকে। সবার এক প্রশ্ন যার উত্তর নেই আমার কাছে।

শুভ জন্মদিন

Image
একথা সবার জানা যে মানুষ মরণশীল। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ মরণশীল হলেও অমর হন নিজেদের কাজকর্মে, নিজেদের সৃষ্টির মাধ্যমে। আর তাদের এই অমর হওয়ায় সাহায্য করে তাদের অনুসারীরা। কেমন সে অনুসারী?  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা দিয়েই শুরু করি। রবীন্দ্র অনুরাগীদের অনেকেই কুলীন বলে বিদ্রুপ করেন। তাদের ভাষায় এদের কারণেই রবীন্দ্রনাথ তাদের লোক হতে পারেননি যাদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছিলেন  "মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক  আমি তোমাদেরই লোক"  হয়তোবা এর মধ্যে কিছুটা সত্য আছে। কিন্তু রবীন্দ্র অনুরাগীরা যদি তাঁকে এভাবে আগলে না রাখতেন, তাঁর রচনা, তাঁর সৃষ্টিকে অতি যত্নে দূষণের হাত থেকে রক্ষা না করতেন, তাহলে আজ যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা জানি তিনি এভাবে আমাদের মাঝে থাকতেন কিনা সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। কাউকে জনপ্রিয় করতে গিয়ে আমরা যেন তাঁর আদর্শকে পপ কালচারে পরিণত না করি, তাঁকে যেন সস্তা করে না ফেলি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  আজ ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এখন বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে সবই করা হয়। তাঁকে নিয়ে প্রতি বছর অসংখ্য বই লেখা হয়, তাঁকে স্মরণ করার জন্য বিভিন্ন স্থাপনার নাম করা হয় তাঁর নামে - যদিও তাঁকে চি

নির্বাণ

Image
কেউ যখন নিজের চেয়ে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী কারও উপর কল্পিত নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠার নামে তার বিরুদ্ধে অনেক বেশি শক্তিশালী তৃতীয় পক্ষের সাহায্য নিয়ে অপ্ররোচিত লড়াইয়ে নামে তখন সে আসলে অতি শক্তিশালী জনের কাছে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে, আগের চেয়েও অনেক বেশি পরনির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ইউরোপের ক্ষেত্রে সেটাই ঘটেছে। রাশিয়ার উপর থেকে নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে তারা আমেরিকার উপর নির্ভরশীল হয়েছে আর সেটা হয়েছে অনেক বেশি মূল্যের বিনিময়ে যা তাদের শিল্পকে প্রতিযোগী হতে দেবে না। যদি তারা অন্য টেকনোলজির মাধ্যমে গ্যাসের ব্যবহার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারত সেটা ছিল অন্য কথা। সেটা যেহেতু পারেনি তাই উচিৎ ছিল সব অপশন খোলা রাখা, মানে সব দোকানদারদের নিজেদের জিনিস বিক্রি করার সুযোগ দেয়া যাতে দামাদামি করা যায় আর যার কাছ থেকে কম মূল্যে পাওয়া যায় তার কাছ থেকে কেনা যায়। এটাই মার্কেট ইকোনমির মূল কথা। রাশিয়ার গ্যাস তারা কিনত রাশিয়ার চাপের কারণে নয়, বাজার অর্থনীতির নিয়মে, কেননা রাশিয়ার গ্যাসের দাম কম ছিল। আর বাজার অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়মে হেরে আমেরিকা ভিন্ন উপায়ে ইউরোপিয়ান এনার্জি মার্কেট থেকে রাশিয়াকে তাড়াতে চাইল।

মৃত্যুর জন্ম

Image
আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজের কথাটাকে শেষ কথা, নিজের বিশ্বাসকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করি। অথচ আমরা তো সবাই নিজে যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে দেখি, নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ সেটা বলি। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে নিজে যা করি অন্যেরা সেটা করলে তার বিরুদ্ধে বলি। কারণ আমরা সবকিছু দেখি নিজের ভালোমন্দের বিচারে। যেটা অন্যের জন্য ভালো অথচ আমার জন্যে লাভজনক নয় (এমনকি যদি ক্ষতিকর নাও হয়) সেটাকে আমরা গ্রহণ করতে পারি না। এই যে শুধুমাত্র আমার ভালোমন্দের নিরিখে গড়ে ওঠা আমার অভিজ্ঞতা, আমার বিশ্বাস - সেটা অন্যের জন্যেও ভালো এটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। এটা যে হাজার পথের একটা মাত্র আর সেটা আমার বা আমার মত করে ভাবে এমন কিছু লোকের জন্য প্রযোজ্য সেকথা ভুলে যাই। তাই এই লোকাল তত্ত্ব গ্লোবাল হিসেবে সবার উপর, সব দেশের উপর চাপিয়ে দিতে চাই। এটাই জন্ম দেয় অরাজকতার, জন্ম দেয় মৃত্যুর।  দুবনা, ১৪ মার্চ ২০২৩

উন্নয়নের রেসিপি

Image
দেশের অসম উন্নয়নে সমতা কিভাবে আনা যায়? রাবণের হাতে দেশ চালানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে। বলেন কী? ও তো সীতা চোর! তাতে কি? দেশের মানুষ, নেতারা কি পরকীয়া করে না? আরও বেশি করে। তাই সীতা চুরি কোন বাধা নয়।  বাধা নয় বুঝলাম। কিন্তু কি যুক্তিতে তাকে রাজা করবেন।  ওর এক লাখ ছেলে আর সোয়া লাখ নাতি। দেশে এমনিতেই স্বজনপ্রীতির অভাব নেই। তার উপর এত সন্তান হলে মানুষের কি হবে। দেখ যার এত সন্তান সন্ততি দেশে তার অনাত্মীয় থাকার কথা নয়। তাই স্বজনপ্রীতি এক্ষেত্রে সর্বজনপ্রীতি হবে। আর? সত্তরের দশকের শেষের দিকে আমাদের দুই তিন গ্রাম পরে নবগ্রাম নামে এক গ্রামকে জিয়াউর রহমান আদর্শ গ্রাম ঘোষণা করেন। লোক মুখে সেটা জিয়ার গ্রাম নামে পরিচিত ছিল। আর এ কারণেই গ্রামের চেহারা বদলে গেছিল। তাই রাবণের একলাখ ছেলের সবাই যদি এক একটা গ্রাম নিজের করে নেয় দেশের ছেষট্টি হাজার গ্রামের সুরাহা হবে।‌ শুধু তাই নয়, অনেক ছেলে ও নাতির ভাগ্যে ও ভাগে আরও কোন গ্রাম পড়বে না। তখন এদের হাতে রাস্তা, ঘাট, সেতু, স্কুল, কলেজ এসবের দায়িত্ব তুলে দিলে সব দিক থেকেই উন্নয়নের জোয়ার বইবে।  সমস্যা স্বজনপ্রীতিতে নয়, সমস্যা সবাইকে স্বজন করতে না প

স্বপ্ন

Image
শুনলাম সংসদে ৫০ টি রক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন দাবি করেছে হিন্দু মহাজোট।‌ কিন্তু সমস্যা তো আর সংরক্ষিত আসন বা নির্বাচন ব্যবস্থায় নয়। সমস্যা সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে। সেটা না বদলালে এসব ব্যবস্থা কোন কাজে দেবে না। আর দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হলে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে। যদি সংসদে ৫০ আসন কাজে দিত তবে ৫০ আসন, সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা ইত্যাদি বড় বড় পদে নারীর একচ্ছত্র দখল অনেক আগেই দেশের নারীদের সমস্যা সমাধান করত। বাস্তবে কিন্তু সেটা হয়নি। কেন? সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে। তাছাড়া নারীদের সমস্যা যেমন শুধু পুরুষের কারণে নয়, নারীদের বিশাল অংশের নিজেদের পুরুষের অধীন মনে করায়, নিজেদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসায়, হিন্দুদের সমস্যাও তেমনি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানে নয়, নিজেদের সমাজে নারী পুরুষে, বর্ণে বর্ণে বিভিন্ন বিভেদের কারণেও। নিজেদের মধ্যে সাম্য না এনে বাইরে থেকে সাম্য আশা করা ভুল, ঠিক যেমন ভুল দলে গণতন্ত্র বিসর্জন দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখা। মস্কো, ১২ মার্চ ২০২৩

মানুষ ও বাঘ

Image
ইদানিং রাশিয়ার দূর-প্রাচ্যে আমুর বাঘের উৎপাত বেড়েছে। প্রায় বিলিন হয়ে যাওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বাঘদের পুনোরোদ্ধারে রুশ সরকার প্রায় এক যুগ ধরে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আজ ওরা বিপদমুক্ত। সংখ্যায় অনেক।  এবার প্রচুর বরফপাতের কারণে গহণ বনে খাদ্যাভাব। তাই ওরা মাঝেমধ্যে আশেপাশের গ্রামে ঢুকে গৃহস্থের গরু, ছাগল, কুকুর এসব চুরি করে। অবশ্য ওরা জানে না যে এটার নাম চুরি আর চুরি করা আইনত দন্ডনীয়।  সুন্দরবনে বাঘ বা হরিণ বা বানর যখন খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় ও জানে না ও কোন দেশের, জানে না কোন দেশের ঘাস ওরা খাচ্ছে বা কোন দেশের প্রাণী ওরা শিকার করছে। তেমনি সাইবেরিয়ার পাখিরা জানে না ওরা শীতে যেখানে এলো উষ্ণতার খোঁজে সেটা বাংলাদেশ বা আফ্রিকা। ওরা প্রকৃতির সন্তান, সারা পৃথিবীটাই ওদের। আমুর বাঘেরাও সেটাই মনে করে। আমুর বাঘ রাশিয়ায় লাল কার্ডধারী। না কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য নয়। রক্ষিত (এটা ওদের উপাধি নয়)। ওদের হত্যা করা কোন কোন জায়গায় গোহত্যা করার মতই অপরাধ। তাই বাঘ তাড়ানোর জন্য বিশেষ গুলি ব্যবহার করে ওদের অজ্ঞান করা হয়। এরপর বাঘের থরো মেডিক্যাল চেক আপ করে জনপদ থেকে অনেক দূরে নির্বাসন দ

দলীয় স্বাস্থ্য

Image
শীত প্রধান দেশে শীতকালে মানুষের গায়ে এত জামাকাপড়ের স্তূপ জমে যে এর নীচের মানুষটার আসল আকার বোঝা কষ্ট। কিন্তু গ্রীষ্মে যখন বাঁধা কপির পাতার মত এক এক করে পোশাক ঝরে পড়তে শুরু করে আর সবাই সমুদ্র বা জলাশয়ের পাশে শুয়ে রৌদ্র স্নানে মত্ত হয় তখন বোঝা যায় শরীরের আসল অবস্থা। আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর একই অবস্থা। ক্ষমতায় গেলে দলে এত মানুষের ভীড় জমে যে কে দলের আর কে বসন্তের কোকিল সেটা টের পাওয়া সমস্যা। তাই কারা দলের সত্যিকার কর্মী আর কারা শীত কাটাতে এসেছে সেটা জানার একমাত্র উপায় ক্ষমতার বাইরে থাকার সময় দলের জনশুমারি করা। তাতে অন্তত দলের শক্তি ও শারীরিক অবস্থার এক কমবেশি বাস্তব চিত্র পাওয়া যায়। দুবনা, ১১ মার্চ ২০২৩

রাশিয়া

Image
কথায় বলে "রাশিয়াকে বুদ্ধি দিয়ে বোঝা যায় না"। সেটা করতে গেলে সেই বোঝা বোঝা হয়ে ওঠে। প্রায় চল্লিশ বছর আগে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নে আসি তখন মনে হয়েছিল যেন একেবারে ভিন্ন জগতে, ভিন্ন সভ্যতায় পড়লাম। সেটা ভালো বা মন্দ নয়। ভিন্ন। মানুষের চলাফেরা, তাদের চিন্তাভাবনা, দৈনন্দিন জীবনের টুকিটাকি। অনেক ক্ষেত্রেই অবাক হতাম আর ভাবতাম এটা সমাজতন্ত্রের কারণে। সমাজতান্ত্রিক সমাজ ভাবনা তাদের এমন করেছে।  সমাজতন্ত্র দেশত্যাগ করে সন্ন্যাসী হয়েছে তা-ও ৩০ বছরের বেশি হল। গড়ে উঠেছে নতুন প্রজন্ম - নতুন ভাবনা, নতুন বাস্তবতা, নতুন অভিজ্ঞতার মানুষ। সোভিয়েত মানুষ নয় - একেবারেই ভিন্ন। কিন্তু এখনও দেখি এরা আমাদের চেয়ে কত ভিন্ন। এবং এটা শুধু জাতিগত ভাবে রুশরা নয়, যারা এই বিশাল দেশে গড়ে উঠেছে, এই দেশের আলোবাতাসে বেড়ে উঠেছে তারা প্রায় সবাই। এমনকি যারা জীবনের একটা সময় এদেশে কাটিয়েছে তাদের অনেকের মধ্যেও এদেশের আলো হাওয়া নিজস্ব ছাপ রেখে যায়। ইউক্রেনের যুদ্ধ রুশদের চরিত্র নতুন করে প্রকাশ করল। এটা ঠিক যুদ্ধ শুরুর পর পাঁচ থেকে দশ লাখ মানুষ দেশত্যাগ করেছে, কিন্তু ইউক্রেনের ৬০ থেকে ৭০ লাখের তুলনায় সে

ফ্যাসিবাদ

Image
জর্জিয়া ফরেন এজেন্ট সংক্রান্ত একটা আইন পাশ করতে যাচ্ছে। এটা আসলে ১৯৩৮ সালে গৃহীত আমেরিকার Foreign Agent Registration Act (FARA) এর জর্জিয়ান অনুবাদ। মজার ব্যাপার হল এ কারণে আমেরিকা ০৭ মার্চকে জর্জিয়ার কালো দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে এটা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। অথচ প্রায় একশ বছর যাবৎ এই একই আইন কার্যকর করে আমেরিকা গণতন্ত্রের হর্তাকর্তা, ভাগ্য বিধাতা। এর কারণ আমেরিকা নিজেকে অন্যদের চেয়ে আলাদা, সুপারিয়র বলে মনে করে, মনে করে সেদেশ আর সেদেশের জনগণ বাকি বিশ্বের সমস্ত আইন কানুনের ঊর্ধ্বে। আর নিজেকে অন্যদের চেয়ে উত্তম মনে করার ধারণা থেকেই জন্ম নেয় ফ্যাসিবাদ। আসলে কোন জাতির নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করাই ফ্যাসিবাদ। দুবনা, ০৯ মার্চ ২০২৩

বামেদের বিধি বাম

Image
অর্থনীতিবিদ প্রভাত পটনায়েক বলেছেন, "প্রশ্ন এটা নয় যে এদেশে বামেদের কোন ভবিষ্যৎ আছে কিনা , প্রশ্ন হল বামেদের ছাড়া এদেশের কোন ভবিষ্যৎ আছে কিনা"। সমস্যা হল সঙ্গত কারণেই দেশে বামেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আর বামেরা এই প্রশ্ন উঠতে দিয়েছে বলেই দেশের ভবিষ্যৎ আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। আজ দেশে দেশে যে উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান সেটা বামেদের দুর্বলতা ও ভুল নীতির কারণে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তারা সময়ের সাথে নিজেদের বদলাতে পারেনি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল অধিকাংশ বামপন্থী নেতা ও কর্মী ব্যক্তি জীবনে ভোগবাদ সহ বর্তমান পুঁজিবাদী অর্থনীতির সুযোগ সুবিধা পুরাদমে গ্রহণ করে নিজেদের ও ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ কমবেশি নিশ্চিত করলেও দলগত ভাবে, রাজনৈতিক প্রশ্নে তারা পরিবর্তন মেনে নেয়নি, অনেক ক্ষেত্রেই এখনও পুরানো দিনেই রয়ে গেছে। পরিবর্তনই একমাত্র সত্য এটা মুখে বললেও দলীয় বিভিন্ন প্রশ্নে তারা মৌলবাদীদের মতই অনড়। আর এটাই দল ও দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করছে। মস্কো, ০৭ মার্চ ২০২৩

সংগ্রাম

Image
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।  স্বাধীনতা মানে স্ব অধীনতা। আমরা সেটা পেয়েছি। আজ বিদেশি নয়, দেশীয় শাসক ও শোষকরা আমাদের অধীন করে রেখেছে, শাসন ও শোষণ করছে। এই শাসন ও শোষণ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদের বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিতে হবে, মুক্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। দেশীয় দুঃশাসন, দেশীয় শোষণ থেকে মুক্তি লাভ করতে হবে, দেশের সম্পদ যারা বিদেশে পাচার করে তাদের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে, যারা দেশ ও রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে শ্বাসরোধ করে হত্যা করতে চায় তাদের হাত থেকে দেশ, জাতি ও রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে। এটাই ছিল ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর আহ্বান যা এখনও ভীষণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। মস্কো, ০৭ মার্চ ২০২৩

বাটপার

Image
ইউরোপে শুনি স্বাধীনতা অবাধ হয়েছে, সে আর দায়িত্ব কর্তব্যের ধার করা ধারে না, ধার ধারে না প্রাকৃতিক নিয়ম কানুনের। এখন সেখানে মানুষের লিঙ্গ আর বায়োলজিক্যাল নয়, সেটা সাইকোলজিক্যাল। মানে চাইলে আপনি পুরুষ, চাইলে নারী অথবা অন্য যেকোন লিঙ্গের কেউ। আইন তো নয় এ যেন আলাদীনের চেরাগ। চাওয়াটাই মূল। শুনলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এর বিপক্ষে, তবুও কিছু করতে বা বলতে পারছে না। আমলারা তাদের পাত্তাই দেয় না। অথচ কত সহজেই আমলাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়। কিভাবে? ইয়েলৎসিনের আমলে কি একটা আইনের বিরুদ্ধে মানুষ প্রতিবাদ করতে গেলে তাদের জমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়। কি করা? মায়েরা তখন ছোট বাচ্চাদের স্ট্রলারে বসিয়ে জেব্রা ক্রসিং এর রাস্তায় নামে। একবার ওদিকে যায় আবার এদিকে আসে। এভাবে কয়েকজন মা আসছে আর যাচ্ছে। বিশাল ট্র্যাফিক জ্যাম। ড্রাইভাররা বিরক্ত হলেও এদের সমর্থন করছে। শেষ পর্যন্ত আমলারা বাধ্য হয়েছে এদের কথা শুনতে। এখন ভাবুন কোন শহরের সবাই নিজেদের ছেলে বা মেয়ে ভাবতে শুরু করল। কয়েকদিন পরে সেখানে সব থেমে যাবে। এক শহরে না হলে একসাথে অনেক শহরে, এমনকি দেশ জুড়ে। আইনের বাধা নেই।  আচ্ছা যে মেয়েরা নিজেদের ছেলে বল

হিংসাকে না বলুন

Image
হত্যা হত্যাই, তা সে যে নামেই হোক না কেন। এই যে এক তরতাজা তরুণ প্রকৌশলীকে গলা কেটে হত্যা করা হল তার কারণ পারতপক্ষে ধর্ম হলেও মূল কারণ হল ভিন্ন মত। হ্যাঁ সে ভিন্নমতাবলম্বী - ভিন্ন মতের, ভিন্ন পথের পথিক।আপনি নিজে কি এই হত্যাকাণ্ডের সমর্থক? না হলে ওদের চোখে আপনিও ভিন্নমতাবলম্বী। আপনিও তাদের পটেনশিয়াল শিকার। তাই খুব বেশি দেরি হবার আগেই এদের প্রতিরোধ করুন, নিজের ও নিজের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য এই আদর্শকে, এই রাজনীতিকে না বলুন। মস্কোর পথে, ০৫ মার্চ ২০২৩

একাকীত্ব

Image
একাকীত্ব ব্যাপারটা আর সব কিছুর মতই আপেক্ষিক। মানুষের যেমন সঙ্গী দরকার, তেমনি তার একাকীত্বও দরকার। কেউ কেউ একা থাকতে ভালোবাসে, একাকীত্ব উপভোগ করে। তার মানে এই নয় যে অন্যের সঙ্গ তার দরকার নেই। একজন ভালো বন্ধু সেটা বুঝতে পারে, তাই এমনকি পাশে বসে থেকেও সেই একাকীত্ব বা নির্জনতা ভঙ্গ করে না। মূল সমস্যা হল অধিকাংশ মানুষ মনে করে কারও সাথে বসে থাকলে কথা না বলাটা অসৌজন্যমূলক। তাই তারা বলার কিছু না থাকলেও বলে। ভদ্রতা দেখাতে গিয়ে অন্যের শান্তি নষ্ট করে। যে সমাজ অন্যের প্রাইভেসি রক্ষা করতে জানে সেখানে এই সমস্যাটা কম। তবে এটা শুধু সেই ক্ষেত্রে সত্য যখন একাকীত্ব ভলেন্টারি। কিন্তু কারো উপর যদি একাকীত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয় বা কেউ যদি বাধ্য হয় একা থাকতে, একাকীত্ব বরণ করতে তবে সেটা জীবন আনন্দময় না করে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে। তাই একাকীত্ব আনন্দের না বেদনার হবে সেটা শর্তসাপেক্ষ, আপেক্ষিক। দুবনা, ০৫ মার্চ ২০২৩

অপিউম

Image
ধার্মিকরা যেমন এক সময়ে ঈশ্বরের নামে নরবলী দিত বা এখনও দেয়, সভ্য দেশগুলো তেমনি মানবতার নামে দেশ ধ্বংস করে আর এর বিরুদ্ধে কথা বললেই তাকে স্বৈরাচারী, খুনী ইত্যাদি তকমা দেয়। আমরা মনের সুখে এসব ন্যারেটিভ বিশ্বাস করি। কিন্তু নরবলী যারা দিত তারা এটা করত নিজেদের স্বার্থে, অন্যদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার করে নিজেদের ক্ষমতার ভিত মজবুত করতে। এখনও সেটাই হচ্ছে। আমেরিকা বা ন্যাটো স্বৈরাচারী তকমা দিয়ে অন্যান্য দেশের শাসকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সেসব দেশের জনগণের স্বার্থে নয়, নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বেচ্ছাচারিতা টিকিয়ে রাখতে। যদি মানবতা, গণতন্ত্র এসব তাদের লক্ষ্য হত তাহলে অনুগত স্বৈরাচারীরা তাদের বন্ধু হতে পারত না, তাদের সহযোগিতায় ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর নির্যাতন চালাতে পারত না। একদল লোক যেমন ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে ঠকানোর জন্য, এরা গণতন্ত্র ও মানবতাকে ব্যবহার করে সারা বিশ্বকে ঠকানোর জন্য। গণতন্ত্র, মানবতা এসব আজ আধুনিক অপিউম।  দুবনা, ০৪ মার্চ ২০২৩

কথা

Image
মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা কর। কী হবে লেখাপড়া করে? অনেক কিছু জানতে পারবে।  জেনে কী হবে?  জ্ঞান আমাদের আলোকিত করে, পথ দেখায়। কিন্তু আজকাল তো প্রায় সব দেশেই একটাই মাত্র মত, একটাই মাত্র পথ। ওরাই পথ দেখাবে। তুমি অন্য পথের কথা জানলে, অন্য পথে চলতে চাইলে বিপদ। এমনকি সব পথই বন্ধ করে দিতে পারে।  ঠিক আছে। জ্ঞান যদি দরকার না হয়, পড়াশুনা করে ভালো চাকরি করতে পারবে। অনেক টাকা উপার্জন করতে পারবে। কিন্তু টাকা দিয়ে হবে কী? আমাদের দেশে বলে টাকা থাকলে বাঘের দুধ পর্যন্ত কেনা যায়।  কিন্তু বাঘের দুধ দিয়ে আমি করব কী? তুমি নিজে কখনও বাঘের দুধ কেনার কথা ভেবেছ? সেটা ঠিক। কখনো ভাবিনি। কিন্তু টাকা থাকলে অন্য অনেক জিনিস কিনতে পারবে।  ইংল্যান্ডে শুনলাম হাতে এক ডজনের বেশি টম্যাটো দেয় না। অনেক দেশে টাকা থাকার পরেও ঘরের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি করতে পারবে না, চাইলেই মনের সুখে অনেকক্ষণ ধরে স্নান করতে পারবে না। টাকা দিয়ে যদি এইসব অতি সাধারণ জিনিস করা না যায় তবে হবে টা কি? সোভিয়েত ইউনিয়নে শুনেছি লোকের হাতে কমবেশি টাকা ছিল কিন্তু দোকানে প্রায়ই প্রয়োজনীয় দ্রব্য থাকত না। টাকা তো কেনার মাধ্যম, কিন্তু জিনিস যদি না থাকে

জনতা

Image
বিভিন্ন দেশে যুদ্ধে ধ্বংসপ্রাপ্ত রাশিয়ান ট্যাঙ্ক প্রদর্শনীর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। উদ্দেশ্য রাশিয়া ও রুশ সেনাদের হেয় করা আর একই সাথে পশ্চিমা বিশ্বে ইউক্রেনের পক্ষে জনমত গড়ে তোলা। কারণ, সত্য যেটা তা হল, ইউক্রেন বাহিনী তথা আমেরিকা সহ তার ৫১ টা আজ্ঞাবাহী দেশ কোন ভাবেই রাশিয়াকে শায়েস্তা করতে পারছে না। যুদ্ধের ফলে এসব দেশে জ্বালানী সহ বিভিন্ন সংকট দেখা দিয়েছে। জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য, দোকানে সীমিত সরবরাহ, বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি, যুদ্ধের ফলে মানুষের মধ্যে ক্লান্তি আর ইউক্রেনের তো বটেই, এ সমস্ত দেশের এস্টাব্লিসমেন্টের প্রতি জনসমর্থন হ্রাস। তাই এই ট্যাঙ্ক দেখিয়ে আবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে ও ইউক্রেনের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করা, শেষ ইউক্রেনিয়ান পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ সেসব ট্যাঙ্ক ফুলে ফুলে ঢেকে দিচ্ছে, শ্রদ্ধা জানাচ্ছে রুশ সেনাদের। এভাবেই তারা যুদ্ধের বিরুদ্ধে নিজেদের মতামত প্রকাশ করছে। ধনী আর দরিদ্রদের মতই ইউরোপের এলিট আর জনসাধারণের মধ্যে মহাসাগর সম দূরত্ব। সেটা শুধু বাড়ছেই। গণতন্ত্রের কথা বললেও জনগণের মতামতকে সেখানে আজ পদদলিত করছে গণতন্ত্র,