শুভ জন্মদিন

একথা সবার জানা যে মানুষ মরণশীল। কিন্তু কিছু কিছু মানুষ মরণশীল হলেও অমর হন নিজেদের কাজকর্মে, নিজেদের সৃষ্টির মাধ্যমে। আর তাদের এই অমর হওয়ায় সাহায্য করে তাদের অনুসারীরা। কেমন সে অনুসারী? 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা দিয়েই শুরু করি। রবীন্দ্র অনুরাগীদের অনেকেই কুলীন বলে বিদ্রুপ করেন। তাদের ভাষায় এদের কারণেই রবীন্দ্রনাথ তাদের লোক হতে পারেননি যাদের উদ্দেশ্যে তিনি লিখেছিলেন 
"মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক 
আমি তোমাদেরই লোক" 
হয়তোবা এর মধ্যে কিছুটা সত্য আছে। কিন্তু রবীন্দ্র অনুরাগীরা যদি তাঁকে এভাবে আগলে না রাখতেন, তাঁর রচনা, তাঁর সৃষ্টিকে অতি যত্নে দূষণের হাত থেকে রক্ষা না করতেন, তাহলে আজ যে রবীন্দ্রনাথকে আমরা জানি তিনি এভাবে আমাদের মাঝে থাকতেন কিনা সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। কাউকে জনপ্রিয় করতে গিয়ে আমরা যেন তাঁর আদর্শকে পপ কালচারে পরিণত না করি, তাঁকে যেন সস্তা করে না ফেলি সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

আজ ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এখন বাংলাদেশে তাঁকে নিয়ে সবই করা হয়। তাঁকে নিয়ে প্রতি বছর অসংখ্য বই লেখা হয়, তাঁকে স্মরণ করার জন্য বিভিন্ন স্থাপনার নাম করা হয় তাঁর নামে - যদিও তাঁকে চিরস্মরণীয় করতে একটা নামই যথেষ্ট - "বাংলাদেশ"। এক অর্থে বাংলাদেশ আর শেখ মুজিব প্রতিশব্দ। এরা একে অন্যের পরিপূরক। শুধু মাত্র স্বাধীন বাংলাদেশের মধ্য দিয়েই তিনি যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকবেন বাংলার মানুষের হৃদয়ে। কিন্তু নিয়তির পরিহাসে তিনি আজ শুধুই রাজনৈতিক ব্র্যান্ড। আর যারা তাঁকে মূলত নিজেদের ভাগ্যের উন্নতির ঝান্ডা হিসেবে ব্যবহার করে তাদের বেশির ভাগই তাঁর স্বপ্নকে এড়িয়ে যায়, নিজদের স্বপ্ন দিয়ে তাঁর স্বপ্নকে আড়াল করে রাখে। কারণ এরা যদি সত্যিকার অর্থেই শেখ মুজিবের অমরত্ব নিয়ে ভাবতেন, তাহলে তারা তাঁর স্বপ্নকে, তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে মাঠে নামতেন। কি সেই স্বপ্ন? সোনার বাংলা। জাতি ধর্ম নির্বিশেষ সমস্ত বাঙালির জন্য এমন একটা দেশ যার ভিত্তি হবে বাহাত্তরের সংবিধান। কিন্তু আজকাল খুব কম মানুষই এ নিয়ে কথা বলে। অন্তত তাঁর জন্মদিনে বাহাত্তরের সংবিধান ফিরিয়ে আনার, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে সফল করার শপথ আমরা নিতেই পারতাম।

দুবনা, ১৭ মার্চ ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা