ইজমের ভূত

এক বন্ধু আমার এক স্ট্যাটাসে লিখল "ইজম তো অনেক দেখলাম। কিন্তু কোন ইজমই তো নিখুঁত নয়।" 

আসলে নিখুঁত বলে কিছু নেই। একজনের কাছে যা নিখুঁত অন্য জনের কাছে সেটা খুঁত সম্পন্ন। আমরা যদি জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বিষয়ে ভাবি তাহলে সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। দুটো উদাহরণ দিচ্ছি

আমাদের ছোটবেলায় বাড়িতে মাংসের প্রচলন তেমন ছিল না। মাংস খেলে লুকিয়ে খেতে হত। আমার বাবা ও জ্যাঠামশাই ছিলেন নিরামিষাশী। বাবা আমাদের মাংস খাওয়ায় আপত্তি করতেন না, বরং কিনে আনার ব্যবস্থা করতেন। জ্যাঠামশাই মাংস খাওয়া তো দূরের কথা যদি বাড়িতে কোথাও মাংস রান্না হচ্ছে সেটাই টের পেতেন তাহলে সবাইকে বকে ঝকে একাকার। আমি পছন্দ করি না বলে তুমি করতে পারবে না এই মনোভাব সমস্যার সৃষ্টি করে। যদি না কোন কাজ অসামাজিক বা বেআইনি না হয় এই প্র্যাকটিস থেকে সরে আসা দরকার। অর্থাৎ আমাদের অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করতে শিখতে হবে। উদার হতে হবে। কিন্তু অধিকাংশ দেশের সরকার মিলিয়ন ডলার যে চুরি করে তার প্রতি উদার কিন্তু যে দুই টাকার ভাত চুরি করে তার প্রতি ক্ষমাহীন। 

আমরা ভাত খাই। কেউ ভাতের পরিবর্তে আলু বা রুটি বা নুডলস খায়। এ নিয়ে কিন্তু আমরা খুব একটা আপত্তি করি না। জীবনের অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষ কিন্তু এরকম আপোষ করেই চলে। এর মানে আপোষ করা, অন্যের মতামতকে শ্রদ্ধা করা আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। কিন্তু ইজমের প্রশ্নে আমরা আপোষহীন। কারণ কিছু মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লাভের জন্য আমাদের ঘাড়ে ইজমের ভূত চাপিয়ে দেয়। সমস্যা ইজমে নয়, ইজমের ভূতে, ইজমে অন্ধবিশ্বাসে ও এই অন্ধবিশ্বাস থেকে অন্যদের উপর সেটা চাপিয়ে দেবার চেষ্টায়। 

দুবনা, ২৯ মার্চ ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা