প্রবাসে মৃত্যু

মানুষ এক অদ্ভুত জীব। সমাজে থাকে, সামাজিকতা করে আবার কিভাবে কিভাবে যেন নিজেকে বা নিজের সমস্যাগুলো সবার চোখের আড়াল করে রাখে। নিজের সমস্যা অন্যের কাঁধে না চাপানো নিশ্চয়ই ভালো, তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্ততঃ সংবাদ দিয়ে রাখলে বিপদকালে কাউকে না কাউকে কাছে পাওয়া যায়। এতে যে সমস্যার সমাধান হবে তার কোন গ্যারান্টি নেই, তবে চেষ্টার একটা সুযোগ থাকে।

গতকাল বিকেলে এক বন্ধু ফোন করল।

দাদা, আপনি অমুককে চেনেন? প্রথম দিকে আমাদের সংগঠনে সক্রিয় ছিল।

হ্যাঁ, মনে পড়েছে। হঠাৎ?

শুনলাম ও মারা গেছে।

হুম। কি হয়েছিল?

সেটা জানি না। খবর পেলাম কিছুক্ষণ আগে। রাতে জানার চেষ্টা করব। পারলে আপনিও চেষ্টা করবেন।

যদিও বললাম মনে আছে কিন্তু মুখটা ঠিক মনে করতে পারছিলাম না। দেখেছি মাত্র কয়েক বার, তাও ১০-১১ বছর আগে। ওর কথা শেষ কবে মনে হয়েছে সেটাও মনে করতে পারব না। হয়তো যেসব দেশে অনেক বাংলাদেশী বসবাস করে সেখানে এ ঘটনা তেমন আলোড়ন তুলে না তবে মস্কোয় আমাদের সংখ্যা এত কম যে খবরটা শুনে কেমন যেন এক ধরণের শূন্যতার সৃষ্টি হল মনে। এরপর নিউ ইয়র্ক থেকে ফোন এল, ফোন এলো চট্টগ্রাম থেকে। সবার এক প্রশ্ন যার উত্তর নেই আমার কাছে।‌ তাই ঠিক করলাম রাতের দিকে ব্যাপারটা জানতে হবে।

রাতে আরেক বন্ধুকে ফোন করলাম ঘটনা জানার জন্য।

কি হয়েছিল ওর?

ক্যান্সার।

বল কি? ক্যান্সার হল, আর আমরা কেউ জানলাম না।

ও আসলে কাউকে কিছু বলেনি।

তাহলে তুমি কীভাবে জানলে।

তিন দিন আগে ফোন করে জানাল শরীর খারাপ। পেটে প্রচণ্ড ব্যথা। হাত পা ফুলে গেছে। তাই গেলাম দেখতে। ওর রিপোর্ট দেখে তো আমি থ। ক্যান্সারের রিপোর্ট। কেমো নিচ্ছে।

তারপর।

আমি সাথে সাথে ওকে নিয়ে গেলাম ক্যান্সার হাসপাতালে। হিমোগ্লোবিন খুব কম। সেটা বললাম। ডাক্তার দেখে বললেন, এখন তো ফোর্থ স্টেজ। খুব দেরি করে এসেছে। যাহোক, এম্বুলেন্সে করে পাঠিয়ে দিলেন আরেক হাসপাতালে। হিমোগ্লোবিন নরমাল করার জন্য সেখানে কয়েকদিন থাকতে হবে। আর ০৩ এপ্রিল যে কেমোর কথা ছিল সেটা হয়তো ক্যান্সেল করতে হবে।

হুম। কিন্তু কোন ফল হয়েছে বলে তো মনে হয় না।

হ্যাঁ। আজ সকালে হাসপাতাল থেকে ফোন করে জানালো ওর মৃত্যুর কথা।

দূতাবাসে জানিয়েছ?

কোন দরকার আছে কি?

মনে হয় জানানো উচিৎ। তাছাড়া ওর একটা ব্যবস্থা তো করতে হবে। এখানে তো কেউ নেই। কিছু ভেবেছ?

দেশে জানিয়েছি। তারা সিদ্ধান্ত জানাক। তারপর না হয় আমরা ঠিক করতে পারি।

কখনই কেউই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে না। আর বিদেশে মানুষ যায় তো ভাগ্যের সন্ধানে। সেখানে মৃত্যুর মত দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার নিয়ে কারও মাথা ঘামানোর সময় কোথায়? দেশে অধিকাংশ মানুষের ধারণা প্রবাসে মানুষ খুব আনন্দ ফুর্তিতে থাকে। বাস্তবে দেশের মত বিদেশেও অধিকাংশ মানুষ নিজেদের সমস্যা নিয়েই ব্যবস্ত থাকে। আর সেসব সমস্যা দেশের সমস্যার মতই - রুটি রুজি, অসুখ, বিসুখ। আর যাদের কেউ নেই এক সময় সবার অজ্ঞাতেই এভাবেই মারা যায়।

দুবনা, ১৮ মার্চ ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা