Posts

Showing posts from May, 2023

প্রশ্ন

Image
ইদানীং কালে প্রায়ই এরকম খবর শোনা যায়  অমুক, যে জন্মগত ভাবে পুরুষ কিন্তু ইদানীং নিজেকে মহিলা বলে মনে করতে শুরু করেছে, মেয়েদের প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছে। যদিও এদের অনেকেই এর আগে ছেলেদের প্রতিযোগিতায় প্রথম শতকেও স্থান পায়নি। এরকম ঘটনা ঘটেছে জেলের কয়েদীদের সাথেও। আর এর ফলে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মহিলারা, বিশেষ করে মেরেদের স্পোর্টস। একদিকে আমরা নারী অধিকারের কথা বলব, অন্যদিকে মানুষের অনুভূতির স্বাধীনতা দিয়ে নারীদের পেছনে ঠেলে দেব - এটা কি করে হয়?  খবরে প্রকাশ বাইডেন প্রশাসনের একজন নিজেকে মেয়ে অনুভব করে অন্যের স্যুটকেস নিয়ে চলে গেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজেও কয়েকবার তার ছেলে ইরাকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত হয়েছে বলে বলেছেন। এসব কি ভ্রম নাকি "নিজে যা ভাবি সেটাই সত্য" তার বহিঃপ্রকাশ?  ইদানীং রাশিয়ায়ও এই প্রবনতা দেখা দিচ্ছে। অনেকেই নিজেদের মেয়ে বলে ডাক্তারের সার্টিফিকেট নিচ্ছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিয়াকাট্রিস্টের সাথে কনসাল্ট না করেই এটা করছে। ফলে এটাও এক ধরণের ব্যবসায়ে পরিণত হতে পারে বলে অনেকের ধারণা। তাই রুশ দুমায় কথা হচ্ছে এ বিষয়ে আইন পরিবর্তন করার জন্য।  ছাত

ক্ষমতার অক্ষমতা

Image
আইন দিয়ে মানুষ প্রথমে নিজেদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করে। এরপর কিছু লোক আইনকে কুক্ষিগত করে পুরা সমাজকে শৃঙ্খলিত করে। এটা হয় ক্ষমতার আস্ফালন থেকে। সমাজ হোক, রাজনীতি হোক, ধর্ম হোক যখনই একদল মানুষ এসবের ক্ষমতা নিজেদের স্বার্থ বা স্বপ্ন পূরণে নির্বিঘ্নে ব্যবহার করতে পারে তখন তারা আর পিছ পা হয় না। শক্তিকে অপশক্তি বানিয়ে তান্ডব চালায়। "আমি বা আমরা সব পারি" এই স্লোগান তাদের ঘাড়ে ভূতের মত চেপে বসে। এমনকি বিজ্ঞানও এই দোষ থেকে মুক্ত নয়। নতুন রহস্য উদঘাটনের নেশায় অনেক বিজ্ঞানীও প্রকৃতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এমন সব আবিষ্কারে মেতে ওঠে যা মানবসভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ। এটাই মনে হয় প্রকৃতির নিয়ম শুরু - বিকাশ - শেষ বা জন্ম - পরিপূর্ণতা - মৃত্যু। প্রকৃতির সব সৃষ্টিতেই ধ্বংসের বীজ শুরুতেই বপন করা হয়। দুবনার পথে, ২৯ মে ২০২৩

স্কুটার

Image
বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন অনেক এগিয়ে গেছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বিভিন্ন দেশের সরকার ও বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে ওয়াকিবহাল। তবে সাধারণ মানুষ সেটা কতটুকু জানে সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে। বিভিন্ন দেশের সাধারণ মানুষ হয়তোবা সেসব দেশে কর্মরত শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা দেখে আমাদের দেশ সম্পর্কে ধারণা গড়ে তোলে অথবা পূর্ব ইতিহাস থেকে বাংলাদেশ গরীব দেশ বলে ধারণা পোষণ করে।  কয়েকদিন আগে এক পরিচিত লোক কথা প্রসঙ্গে জানতে চাইল তোমাদের দেশে তো পদে পদে বিপদ। এই ঝড়, এই বন্যা, এই ভূমিকম্প। তার উপর বিশাল জনগোষ্ঠী। এসবের মধ্যে তোমরা থাক কি করে? দেখ আমাদের দেশে যে পদে পদে বিপদ আর সেটা শুধু প্রাকৃতিক নয়, সামাজিক, রাজনৈতিক, শিক্ষাগত ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের সে সম্পর্কে জনগণ ওয়াকিবহাল। জানই তো কারো তার পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে সে ভালোভাবে সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে। আর তাই আমাদের জনগণ সুখের ইনডেক্সে অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে।  বল কি?  এটা আমি নই জরিপ বলে। তাছাড়া আমাদের জনগণের ধারনা এসব বিপদ আপদ হয় বাই সাইকেল না হয় বৈদ্যুতিক স্কুটারে চড়ে ঘুরে বেড়ায়।  সে আবার কি কথা? জানই তো এসব বাহনের আরোহীরা সামান্

আশঙ্কা

Image
ধর্ম অবমাননার অভিযোগে টিটু রায়ের দশ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আবার এর চেয়েও গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত একজন খালাস পেয়ে গেছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির অপরাধ সে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের একজন। আমার কেন যেন মনে হয় এসব ক্ষেত্রে আদালত ব্যক্তি মানুষের বিচার না করে গড় মানুষের বিচার করে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের যেকোন মানুষের অপরাধ নগন্য হয়ে যায়। টিটু রায়ের উকিলের বক্তব্য অনুযায়ী টিটু রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে অসত্য সেই প্রমাণ হাজির করা সত্ত্বেও আদালত তাতে আমল দেয়নি। এর অর্থ দাঁড়ায় আদালত নিজেই আইন অমান্য করেছে। টিটু রায়দের মত নিরীহ লোকদের শাস্তি দিয়ে বিচার বিভাগ দেখাতে চায় দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সে অতন্দ্র প্রহরী। সমস্যা হল বিচার বিভাগ প্রায় সব সময়ই অসময়ে ঘুমায় আর অসময়ে জাগে। দুষ্ট লোকেরা বলে এটা ঘুম বা জাগরণের প্রশ্ন নয় - এটা শুধুই ভান করে থাকা। ফর্মালি এটাকে বিচার বললেও এই বিচার আসলে অবিচারের তালিকাকেই দীর্ঘায়িত করল। আমরা সবসময় সব ব্যাপারে ইউরোপ আমেরিকার পদাঙ্ক অনুসরণ করি। আমেরিকায় এখন সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই কয়েক যুগ আগে ঘটে যাওয়া অপরাধের অভিযোগে অপছন্দের লোকজনদের শাস্তি দেয়া

পাগল পৃথিবী

Image
সাফল্য বা ব্যর্থতা দু'টোই মানুষকে এমন এক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে যখন মনে হয় তাকে যেন ভূতে পেয়েছে। সে হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে আরও আরও চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। বিশেষ করে সে যদি বার বার ব্যর্থ হয়। এটা অনেকটা ক্যাসিনোর মত - যখন প্রতিবার হেরে খেলুড়ে মনে করে পরের দানেই সে হারানো সব কিছু ফিরে পাবে। এমন কি যুধিষ্ঠিরের মত মানুষও এ থেকে মুক্ত নন। বর্তমান পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বের দিকে তাকালে সেটাই মনে হয়। একদিকে তারা স্বীকার করছে যে এই যুদ্ধে ইউক্রেনের পক্ষে রাশিয়ার বিরুদ্ধে জেতা সম্ভব নয় কারণ সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিপন্ন হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত যুদ্ধের আগুনে খড়কুটা দিয়েই চলছে। এবং এটাও বিশ্বাস করছে যে রাশিয়া এক্ষুনি কেঁপে উঠবে। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার। শুনেছি ওশো তার হাজার হাজার অনুসারীদের পাগল বানিয়ে ফেলতে পারত। পুতিন কি ওশোর মতই পশ্চিমা বিশ্বের সব নেতাদের পাগল বানিয়ে ফেললেন নাকি? দুবনা, ২৭ মে ২০২৩

হাঁটু

Image
হাঁটুতে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে হাঁটু জল ভেঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে হাটে গিয়ে তিনি দেখলেন ইতিমধ্যেই কে যেন হাটে তার হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে মানে তার হাঁটুর ব্যথার খবর গ্রামময় রাষ্ট্র করে দিয়েছে। যার সাথেই দেখা হয় সেই জিজ্ঞেস করে হাঁটুর খবর কী? হাঁটুতে নাকি ভীষণ ব্যথা? এমনকি হাঁটুর বয়সী ছেলেরা পর্যন্ত যেচে উপদেশ দেয় এই হাঁটু নিয়ে এত হাঁটাহাঁটি করতে নেই। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে হাঁটাহাঁটি বাদ দিয়ে এই বুঝি হাতাহাতি করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আবার হাঁটু জল ভেঙ্গে হাঁটতে হাঁটতে হাট থেকে তিনি বাড়ি ফিরলেন। এখন শুধু হাঁটু নয় তার মনও ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো। দুবনা, ২৬ মে ২০২৩

কথা বলুন

Image
গভীর রাত। নির্জন বাসস্ট্যান্ড। সেখানে অপেক্ষা করছে দু'জন মানুষ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা অপরিচিত। নিয়তি তাদের এই অন্ধকার দুর্যোগপূর্ণ রাতে এক জায়গায় মিলিত করেছে। খুব সম্ভব একই বাসে তারা যাবে। সে অর্থে কিছুটা হলেও একই পথের পথিক তারা। আবহাওয়ার মত সময়ও এখন খারাপ। চারিদিকে সন্দেহ। কি বলতে কি বলবে, কার অনুভূতিতে আঘাত করবে, কোন আইনের প্যাচে আটকে যাবে? তাই সবাই আজকাল মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। চোখকান খোলা রেখে চললেও ভান করে যেন সেসব বন্ধ ছিল। সে কিছু দেখেনি, কিছু শোনেনি। লোকটা নিশ্চয়ই স্থানীয়। খারাপ হত না জেনে নিলে এখানকার অবস্থা কী রকম। কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় ভালো খাওয়া যায়। - ভাবছে একজন। দেখে তো আগন্তুক মনে হচ্ছে। এত রাতে কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে? এসেছেই বা কেন? - ভাবছে আরেকজন। এখন সময়ই এ রকম, সবাইকে সন্দেহ করা, সবার কাছ থেকে খারাপ কিছু আশা করা। দু' জনেই দু' জনের কথা ভাবছে কিন্তু সাহস করে আগ বাড়িয়ে কথা যে বলবে সেটা পারছে না। ইস, যদি সিগারেট খেতাম - সিগারেট চাইবার উছিলায় কথা বলা যেত। শুভেচ্ছা বিনিময় করা যেত। ভাববে একজন। হুম, মাঝে মঝে সিগারেট খাওয়া খারাপ নয়। নিজে ধরি

রাজনীতি

Image
প্রায় চল্লিশ বছর রাশিয়ায় থেকে দেখেছি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে ধর্ম আজকের মত প্রকাশ্যে না থাকলেও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে রাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিল। এখনও রাষ্ট্র থেকে ধর্ম আলাদা হলেও রাষ্ট্র ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সরকার উচ্চ পর্যায়ে এদেশের চার মূল ধর্ম রুশ অর্থডক্স চার্চ, ইসলাম, জুডাইজম ও বৌদ্ধ কমিউনিটির প্রধানদের সাথে আলোচনা করে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। যদিও জারের আমলে ইহুদিদের উচ্চশিক্ষা লাভে বিভিন্ন বাধানিষেধ ছিল, সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে ইহুদিদের সম্পর্কে বিভিন্ন রিজার্ভেশন আছে তার পরেও এখন সরকারি ভাবে কেউ তেমন ডিসক্রিমিনেশনের শিকার হয় বলে মনে হয় না। যেকোন সরকারি প্রতিষ্ঠানে বা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত মানুষের নামের দিকে তাকালেই সেটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আর এখন যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে তাকালে বোঝা যায় কিভাবে বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের লোকেরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের জন্য লড়াই করছে। এই ঐক্য পশ্চিমা বিশ্বের জন্য শুধু পাজল নয়, মাথা ব্যথার কারণ। "ডিভাইড এন্ড রুল" থিওরিতে বি

আইন ও অধিকার

Image
ফেসবুকে এখন হিন্দু আইন নিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেখছি। আগেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে কোন বিষয়ে এ আইন বা সেখানে কি বলা হয়েছে সেটা জানি না। আমার অবস্থা অনেকটা সোভিয়েত আমলে দীর্ঘ লাইন দেখে দাঁড়িয়ে পড়ার মত। লাইনে যখন এত লোক নিশ্চয়ই ভালো কিছু বিক্রি হচ্ছে। আগে তো কিনি, পরে দেখা যাবে। আসলে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কিছু স্ট্যাটাস আর তাতে বিভিন্ন কমেন্ট দেখে। কেউ এই আইনকে স্বাগত জানাচ্ছে, কেউ বিরোধিতা করছে। স্বাগত জানানোর পেছনে বড় যুক্তি প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাস থেকে। কোন দেশেই এটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করা হয় না মানে সব নাগরিক সমান অধিকার বা সুযোগ পায় না, তার পরেও আইনত অধিকার থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা বিরোধিতা করছে তারা এর ফলে হিন্দু মেয়েরা মুসলিম ছেলেদের শিকার হবে, ওরা সম্পত্তির লোভে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করবে এই যুক্তি টানছে। এতে করে তারা যে সম্পত্তি ও মেয়ের মধ্যে অসম তুলনায় সম্পত্তিকে বড় করে দেখে মেয়েদের অসম্মান করছে সেটা বুঝছে না। কেউ কেউ আবার মুসলিম আইনে যেখানে সম্পত্তিতে মেয়েদের এক তৃতীয়াংশ ভাগ সেখানে হিন্দু মেয়েরা কেন সমান ভাগ পাবে সেই প্রশ্ন তুলছে। এটা যার

আমরা কে?

Image
আজকের প্রগতির যাত্রীতে নস্টালজিয়া নামে আমার লেখায় কথোপকথনের এক জায়গায় আছে - "আমার জন্ম বাংলাদেশে হলেও আমি নিজেকে ভারতীয় বলে মনে করি।" এটা আমার বক্তব্য নয়, যার সাথে কথা বলছিলাম তার কথা। তার পূর্বপুরুষরা পশ্চিম বঙ্গ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। একজন এ সম্বন্ধে লিখল আপনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে নিজেকে ভারতীয় ভাবেন এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি তাকে লেখাটা আরেকবার পড়ে দেখতে বললাম। আসলে আমার নাম অনেককেই এ ধরণের তড়িৎ সিদ্ধান্তে আসতে লালায়িত করে। পরে আমি ভাবলাম আমার নিজেকে ভারতীয় ভাবতে সমস্যা কি? না বর্তমানের খন্ড ভারতীয় নয়, অবিভক্ত ভারতের নাগরিক ভাবতে? ২০১৯ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে এক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সময় এক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ। আমেরিকান নাগরিক। তবে গায়ের রং আর নাম (যদি ভুল না করি মিঃ করিম) বলছিল তিনি আমাদের এলাকার। "আপনি কি বাংলাদেশ থেকে?" জিজ্ঞেস করায় বললেন "আমি অবিভক্ত ভারতের নাগরিক।" এখন আমেরিকায় থাকেন। ঢাকা থেকে ১৯৬৪ সালে আমেরিকা যান। আমি অবাক হয়েছিলাম তাঁর উত্তর শুনে। আচ্ছা ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক, খাদ্য, গান, কবিতা - অনেক দিক থেকেই তো অবিভক

সেই সময় এই সময়

Image
প্রতি বছর আমাদের এখানে ইজিপ্ট, সাউথ আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশ থেকে ছেলেমেয়েরা আসে তিন সপ্তাহের একটা কোর্সে। অনেকেই আমাকে ওদের সুপারভাইজার হিসেবে বেছে নেয়। এর আগে কাজ করেছি রোমানিয়া আর ইজিপ্টের ছাত্রদের সাথে। মাঝে করোনার কারণে অকারণে বন্ধ ছিল এই প্রোগ্রাম। এবার আবার শুরু হল। ইজিপ্টের তিন জন আমার সাথে কাজ করবে বলে জানিয়েছিল। গতকাল ওদের রিসিভ করতে গিয়ে দেখি শেষ মুহূর্তে একজন আসেনি। এবং সেই একজন ছিল এক ছাত্রী। আগে জানতাম না। এতদিন পর্যন্ত যাদের সাথে কাজ করেছি সবার বয়স ছিল কুড়ি পঁচিশের মধ্যে। কেউ বা সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ারের, কেউ বা সবে শেষ করেছে। এবারের দুজন বেশ বয়স্ক। তিরিশের কোঠায় মনে হয়। ইতিমধ্যেই কাজে যোগ দিয়েছে। আহমেদ আর মনসুর ওদের নাম। মনসুর অবশ্য আগেই আমার সাথে যোগাযোগ করেছিল, লিখেছিল কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উপর কাজ করছে। যেহেতু আমার কাজ কসমোলজির উপর তাই ওকে বললাম অন্য অপশন দেখতে। পরে ঠিক হল আমরা একে অন্যের কাছে শিখব। আহমেদ কোন যোগাযোগ করেনি। জিজ্ঞেস করলাম কি করতে চায়। জয়েন্ট পাবলিকেশন। ওর কথা শুনে আমার ১৯৯৬ সালের এক ঘটনা মনে পড়ল। ট্রিয়েস্টে গেছি দু মাসের জন্য। বাংলাদেশের তিন

বিজ্ঞান

Image
আমরা যারা বিজ্ঞানে বিশ্বাস করি তাদের অনেকের ধারণা বিজ্ঞান মানেই সঠিক, বিজ্ঞান মানেই সত্য। কথাটি কতটুকু সত্য? যদি সত্য হত তাহলে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞান বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করে কেন? এরিস্টোটল, টলেমি এরা সবাই বিজ্ঞানী ছিলেন। আবার এরাই ভূ-কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের প্রবক্তা ছিলেন। অন্যদিকে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও - এরা ভূকেন্দ্রিক মডেল অস্বীকার করে সৌরকেন্দ্রিক মডেল প্রণয়ন করেন। আর আইনস্টাইন এসে বলেন - মহাবিশ্বের কোন কেন্দ্র নেই, প্রতিটি বিন্দুই তার কেন্দ্র। তার মানে কি বিজ্ঞান মিথ্যা? না! বিজ্ঞানের ভিত্তি হল প্রশ্নে, সঠিক প্রশ্নে। সে সব সময় প্রশ্ন করে, উত্তর খোঁজে। প্রাপ্ত উত্তরের ভিত্তিতে সে মডেল গড়ে তোলে। কেননা কাজ করতে গেলে খসরা হলেও একটা নকশার দরকার হয়। আপনি আনুমানিক হলেও একটা বাজেট না করে কোন কাজে নামতে পারবেন না, একটা চলনসই ছক বা নকশা ছাড়া ঘর তৈরির কাজে হাত দিতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞান বিশ্বাস করে যে বর্তমান মডেল সাময়িক, কেউ শ্রেষ্ঠতর মডেল উপস্থাপন করলে সে সেটা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না, ততক্ষণই সে বিজ্ঞান। কিন্তু যখনই বিজ্ঞান কোন মডেলকে সমস্ত যুক্তির বিপক্ষ

প্রশ্ন

Image
অনেকেই পরিহাসের ছলে বলে যে পাকিস্তান বন্দুকের মুখে বাঙালিকে উর্দু শেখাতে পারেনি অথচ বলিউড সিনেমা দেখিয়ে তাদের হিন্দি শিখিয়েছে। লেনিন জনমানসে সিনেমার গুরুত্বের কথা বিভিন্ন সময়ে উল্লেখ করেছেন। আর সে কারণেই বিপ্লবের পর পর আইজেনস্টাইনের মত পরিচালক বিভিন্ন কালজয়ী সিনেমা তৈরি করেছেন নতুন মানুষ গড়ার জন্য। মানুষের মত মানুষ, মানুষের ভাগ্য, যাও এবং দেখ ইত্যাদি অনেক ছবির কথা বলা যায় যা সোভিয়েত ইউনিয়নে যুদ্ধ বিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে। তবে শুধু সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়, হলিউডও নিজের মত করে সিনেমা ব্যবহার করেছে জনমত তৈরিতে, ভিন্ন মানসিকতার নতুন মানুষ গড়ে তুলতে। এই যে কথায় কথায় অস্ত্রের ব্যবহার, চারিদিকে যান্ত্রিক মানুষের ছড়াছড়ি সেটা কি হলিউডের সিনেমার ফসল নয়? দুবনা, ১৬ মে ২০২৩

পরাধীনতা

Image
গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল সাফল্য লাভের অসংখ্য পথ ও সেই পথ বেছে নেবার স্বাধীনতা। তবে পুঁজিবাদের গণতন্ত্রে এই স্বাধীনতা কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত এবং স্বল্প সংখ্যক মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ।  বর্তমানে মিডিয়ার দাপটে মানুষের চয়েস যত বেশি স্বাদ গ্রহণের আগ্রহ তত কম। সমাজের বেশিরভাগ মানুষ জীবনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে  বাইরের লোকজনের মতামত দ্বারা এতটাই প্রভাবিত যে নিজের সাথে পরামর্শ করার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করে না।  এতদিন পুঁজিবাদ আমাদের রান্না ঘর আর ড্রয়িং রুমে খবরদারি করত, এখন সে আমাদের মনোজগতের পাসওয়ার্ড হাতিয়ে নিয়েছে।  দুবনার পথে, ১৫ মে ২০২৩

গণতন্ত্র

Image
স্কুলে পন্ডিত স্যার বলতেন তোর শিলা তোর ণূড়া তোর ভাঙব দাঁতের গোড়া গণতন্ত্র এখন একই সাথে শিলা আর ণূড়া। সে গরীবের ও সাধারণ মানুষের ভোট দেবার অধিকার। কিন্তু এই অধিকার প্রয়োগ করে তারা যাদের হাতে নিজেদের ভালোমন্দের দায়িত্ব তুলে দেয় তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শোষকের ভূমিকা পালন করে। এ যেন শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেয়া। একই দোকানে বিক্রি হলেও বা একই ড্রাম থেকে ঢালা হলেও গণতন্ত্রের চরিত্র নির্ভর করে তার ক্রেতা বা বোতলের লেবেলের উপরে। শোষকের হাতে সে শোষণের হাতিয়ার, শোষিতের কাছে শোষণের কষাঘাতে সৃষ্ট ক্ষতে অকেজো মলমের প্রলেপ। অন্তত পুঁজিবাদ দ্বারা লালিত পালিত গণতন্ত্র আজ এমনটাই। মস্কো, ১৫ মে ২০২৩

মূল্য

Image
আমি ঝাল তেমন একটা খাই না। কালেভদ্রে কাঁচা মরিচ কিনি। সেটা মূলতঃ ডাল আর মামলেট রান্নার জন্য। তবে একটা জিনিস খেয়াল করেছি - ঝাল বেশি খেলে অনেক কিছুর সাথে কপালও পোড়ে।‌ বেশ কয়েক দিন এর রেশ থাকে।  সেদিন অফিস থেকে ফেরার পথে হঠাৎ মরিচের রাগী রাগী মুখটা মনের চোখে ভেসে উঠলো। মরিচ এখানে খুব একটা পাওয়া যায় না। কালেভদ্রে। তাও আবার ছোট দোকানে। ওরা বিক্রি করে পিস হিসেবে। একটা মরিচ ১০ বা ২০ রুবল করে। সুপার মার্কেটে দাম একটু কম তবে নিয়মিত পাওয়া যায় না।  যাহোক মরিচের খোঁজে দোকানে গিয়ে তার দেখা মিলল। তবে দাম দেখে আঁতকে উঠলাম। আড়াই হাজার রুবল বা ৩২ ডলার কেজি। ৫০ গ্রামের প্যাকেট ১২৫ রুবল করে। পাশেই ছিল ১২০ টাকা কেজি টকটকে লাল আপেল - ঠিক যেন নাদুসনুদুস ভুঁড়িওয়ালা মরিচ। আমি বেশি না ভেবে এক কেজি আপেল নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।  কার দাম কত সেটা তো আমাদের উপর নির্ভর করে। আমরা দাম দিলেই সে দামী, না দিলে মূল্যহীন। শোষকের হাতে বেচারা খাবারও শোষণের হাতিয়ার। দুবনা, ১৪ মে ২০২৩

মানুষ

Image
মাটির মুক্তি মানেই মানুষের মুক্তি নয়।‌ অধিকাংশ মানুষ বরাবরই পরাধীন। তার মালিক বদলায়। বিদেশী মালিকের জায়গা নেয় দেশী মালিক। এতে হয়তো তার জীবনযাত্রার মানে হেরফের হয় কিন্তু মানুষের ভাগ্যের কোনই পরিবর্তন হয় না। সে বরাবরের মতই অন্যের হাতের পুতুল। তাকে সব সময়ই কিছু মানুষের খামখেয়ালির শিকার হয়ে জীবন কাটাতে হয়। তাকে তো সারা জীবনই যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। কিন্তু জীবনযুদ্ধের সাথে যোগ হয় আরেক যুদ্ধ - অন্যের যুদ্ধ, অন্যের খামখেয়ালি পূরণ করার যুদ্ধ। কিন্তু দিনের শেষে সে যে সেই - নিজের হাজারো সমস্যার বোঝা নিয়ে একাকী মানুষ।  দুবনা, ১৩ মে ২০২৩

স্মৃতি

Image
রুশরা বলে প্রত্যক্ষদর্শী সবচেয়ে বড় মিথ্যুক। প্রথম শুনে অবাক হয়েছিলাম। পরে দেখলাম ঠিকই তো। কারণ প্রত্যক্ষদর্শী দেখে কোন নির্দিষ্ট জায়গা থেকে এবং যেহেতু নিজে দেখেছে তাই নিজের ভাষ্যকে একমাত্র সত্য বলে বিশ্বাস করে। এমনকি পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকের ভার্সন মেনে নিতে পারে না।  কবিগুরুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে ৯ মে মস্কোর বন্ধুত্ব পার্কে তাঁর পূর্ণাঙ্গ মূর্তির ছবি দিয়েছিলাম। ছাত্রজীবনে (১৯৮৩ - ১৯৯৪) এর পাশ দিয়ে সামারে পিকনিকে যেতাম বুখতা রাদোস্তি। আনন্দে বুক ভরে উঠত। তখন কে কবে এই স্ট্যাচু তৈরি করল এ নিয়ে ভাবিনি।  লোকজনের আগ্রহের কারণে উইকিপিডিয়া ঘেটে বের করলাম যে এই স্ট্যাচু ১৯৯১ সালে স্থাপন করা হয়। এটা ছিল ভাঙ্গনের সময়। মনে হয় এ কারণেই খুব একটা আগ্রহ দেখাই নি বা এখানে এসে ছবি তুলিনি। এক বন্ধু ঐ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল বলে দাবি করে লিখল এটা ১৯৮৮ সালে স্থাপিত। আরেক বন্ধু এতে সন্দেহ প্রকাশ করে লিখল ১৯৮৮ সালে ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তি স্থাপিত হয় ইউনিভার্সিটি হোটেলের সামনে ইন্দিরা গান্ধী স্কয়ারে। একটু উৎসাহিত হয়ে আবার ইউকিপিডিয়ার শরণাপন্ন হলাম। দেখলাম ইন্দিরা গান্ধীর মূর্তি স্থাপিত হয় ১৯৮৭ সা

গাধা

Image
মনে হয় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রতিষ্ঠাতারা প্রচন্ড দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ছিলেন আর সেজন্যই গাধাকে নিজেদের প্রতীক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। গাধা আমাদের দেশে বোকার প্রতিশব্দ হলেও অনেক দেশেই গাধা মানে একরোখা। বর্তমান আমেরিকায় গাধা একই সাথে বোকা ও একরোখা।  "যত খারাপ তত ভালো" গোগল, দস্তইয়েফস্কি - এদের রচনায় এই উক্তি থাকলেও লেনিনের হাত ধরেই সে বহুল প্রচার পেয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের লেনিন পড়ার কথা নয়। তবে অজ্ঞতা কোন অজুহাত নয়। ফলে ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে যতই আইনের জালে জড়াচ্ছে তার জনসমর্থন ততই বাড়ছে বলে খবরে প্রকাশ।  ইতিহাস কখনোই ভালো শিক্ষক ছিল না।  মস্কো, ১০ মে ২০২৩

প্রকৃতির ডাক

Image
যে আমেরিকা ক্লিনটন ও লিভেনস্কির বা হান্টার বাইডেনের সুপার হট এজেন্ডার সুরাহা করতে পারল না সেই দেশ চোখের পলকে সাতাশ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথিত অভিযোগে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করল। করল এত দ্রুততার সাথে আর সাক্ষী প্রমাণ ছাড়া যে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে রাজনৈতিক লাভ লোকসানের টানা হ্যাচড়ায় ন্যায় বিচারের জীবন সঙ্কট হবে কি না।   মীটু মনে হয় আমেরিকার ব্লাসফেমি ল-তে পর্যবসিত হচ্ছে। পাকিস্তানে যেমন ধর্ম, আমেরিকায় তেমনি মহিলা। অপূর্ব যুগলবন্দী। দু জনাই প্রতিপক্ষ নিধনে মোক্ষম অস্ত্র।  মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে। গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, ন্যায় বিচার এসবের পচন যে আমেরিকা থেকেই শুরু হবে এতে কি সন্দেহ আছে? সবই পচে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। মস্কো, ১০ মে ২০২৩

বিজয়ের শুভেচ্ছা

Image
আজ রাশিয়া মহান পিতৃভূমির যুদ্ধের ৭৮ তম বার্ষিক পালন করছে। যদিও এই যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সব রিপাবলিকের অংশগ্রহণ ছিল তবে রাজনৈতিক কারণে বেশ কিছু রিপাবলিক এখন আর এই উৎসবের দিনটি পালন করে না। সোভিয়েত আমলে অবশ্য বিজয় দিবস এত জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালন করা হত না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেনারা জড়ো হতেন পার্ক কুলতুরি, বলশয় থিয়েটার, মার্ক্সের মনুমেন্ট ও অন্যান্য জায়গায়। সাধারণ মানুষের ঢল নামত তাদের অভিনন্দন জানাতে। সে সময় ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস ও ৭ নভেম্বর অক্টোবর বিপ্লব দিবসের জাঁকজমকের কাছে বিজয় দিবস ম্লান হয়ে যেত। নতুন রাশিয়ায় বিজয় দিবস নতুন প্রাণ, নতুন অর্থ নিয়ে পালিত হচ্ছে। এই দিন এদের গর্বের দিন। এই দিন এদের অনুপ্রেরণার দিন। বিশেষ করে দেশে দেশে ফ্যাসিবাদ আবার যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তখন এই দিন নতুন গুরুত্ব বহন করে। আজ রেড স্কয়ারের উপর দিয়ে যখন "স্তাভাই স্ত্রানা আগ্রোমনায়া"র শক্তিশালী সুরের মূর্ছনার সাথে সাথে রাশিয়ার পতাকার পাশাপাশি বিজয়ের পতাকা, যা দেখতে অনেকটা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতাকার মত, মার্চ করে চলে যায় আর এক পর্যায়ে রুশ জাতীয় সঙ্গীত, যার

মন মোর মেঘের সঙ্গী

Image
আইনস্টাইনের তত্ত্ব অনুয়ায়ী স্থান-কাল ও বস্তু পরস্পরের উপর নির্ভরশীল। বস্তু যেমন স্থান-কালের বিবর্তনে প্রভাব ফেলে, স্থান-কাল তেমনি বস্তুর গতিবিধির উপর প্রভাব ফেলে। মানুষের ক্ষেত্রে সেই প্রভাব মনে হয় সাইকোলজিক্যাল। কোন সুন্দর জায়গায় ঘুরতে গেলে আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। আর এ কারণেই মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেশ বিদেশে যায়। অধিকাংশ স্যানেটরিয়াম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ। তবে এর বাইরেও কিছু কিছু জিনিস আছে যা আমাদের মনকে দোলা দেয়। মস্কোয় আমাদের জন্য এরকম একটা জায়গা বন্ধুত্ব পার্ক। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দাঁড়িয়ে আছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে তিনি দেখছেন পার্কে ঘুরে বেড়ানো মানুষজন। আর যারা এদিকে দিয়ে যাচ্ছেন তারাও কৌতূহল ভরে দেখছেন স্থির দাঁড়িয়ে থাকা এই বিশাল পুরুষকে। এখানে এলেই মনের মধ্যে কেমন যেন একটা দেশি দেশি ভাব জেগে ওঠে। তখন মনে হয় না আমি মস্কোয় আছি। মনে হয় এই জায়গাটা একান্তই আমাদের, আমাদের কবিগুরুর। তাঁর উপস্থিতি যেন এই জায়গাটুকুকে এক টুকরা বাংলা ভূমিতে পরিণত করে। হয়তো একারণেই তিনি জীবন মরণের সীমানা ছাড়িয়ে অমর হয়ে আছেন দাঁড়িয়ে। দুবনা, ০৯ মে ২০২৩

প্রশ্ন

Image
আমরা যারা বাইরে থাকি তাদের জন্য জাতীয় দিবস সহ আমাদের সংস্কৃতির সাথে জড়িত বিভিন্ন দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ এসব দিন আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যায় সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা বাংলার বুকে আর সেই বাংলা তখন সীমান্ত রেখা মুছে এক অবিভক্ত বাংলার রূপ ধারণ করে। ফলে এসব দিনে যখন পঞ্জিকার কারণে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দেয়াল ওঠে তখন বিষন্নতায় ভরে ওঠে মন।  এই যে এখন দুই দিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন পালন করে দুই বাংলায় সেটা কি ঠিক? কে বলল দুই দিন জন্মদিন পালনের করে? কে বলল মানে? ফেসবুক আজ ভরে গেছে কবি বন্দনায়। আগামীকাল আবার হবে। দেখ আজ যারা পালন করছে তারা পালন করে পঁচিশে বৈশাখ। পঞ্জিকা বদলিয়ে যদি কেউ পঁচিশে বৈশাখ একদিন এগিয়ে দেয় বহু আগে জন্ম নেয়া কারও জন্মদিন তাতে পরিবর্তিত হয় না। এরশাদ রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ থেকে এটা করেছেন। ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম ঘোষণা করে তিনি যেমন দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার কফিনে পেরেক ঠুকেছেন, পঞ্জিকা পরিবর্তন করে তিনি একই ভাবে বাংলার সংস্কৃতির বুকে ছুরি মেরেছেন। দুঃখজনক ব্যাপার হল আমাদের সাংস্কৃতিক সমাজ সেই টোপ বিনা বাক্যে গিলে ফেলেছে। দুবনা, ০৮ মে ২০২৩

রবি বাবু

Image
কুম্ভকর্ণ ছয় মাস ঘুমের পর একদিনের জন্য জেগে উঠত আর ঐ একদিনেই লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলত। বর্তমানের দ্রুত পরিবর্তনশীল যুগে কুম্ভকর্ণের আদর নেই। তবে মাঝে মধ্যে সে নিজের উপস্থিতির প্রমাণ দেয়। বাংলা দিনপঞ্জি সারা বছর অধিকাংশ মানুষের জন্য ঘুমিয়ে থাকে। তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় পয়লা বৈশাখ আর পঁচিশে বৈশাখ আর এগারোই জৈষ্ঠ্য। যদি প্রায় সব কিছুর মত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন আমরা ৭ মে পালন করতাম তাহলে সমস্যা ছিল না, কিন্তু আমরা যেহেতু সেটা ২৫ বৈশাখ পালন করি তাই সেটা সেই সময়ের প্রচলিত পঞ্জিকা অনুসারে হওয়াটাই যৌক্তিক। তবে বাংলার সাথে রবীন্দ্রনাথ এতটাই মিলেমিশে একাকার যে বছরের প্রতিটি দিনই তিনি নতুন নতুন রূপে ধরা দেন রবীন্দ্র প্রেমীদের কাছে। দুবনা, ০৮ মে ২০২৩

শিক্ষা

Image
কয়েক দিন হল বুশরা আফরিনের ঢাকার চিপ হিট অফিসার নিয়োগ নিয়ে সামাজিক মাধ্যম উত্তাল। প্রথম দিকে মূলতঃ নেগেটিভ মন্তব্য থাকলেও এখন অনেকেই পজিটিভ কথাবার্তা বলেছেন। এসব পোস্ট থেকে বোঝা যায় তিনি নিজের যোগ্যতা বলেই নিয়োগ পেয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্বের নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করে অধিকাংশ মানুষ যখন সেখানে ভাগ্য অন্বেষণে ব্যস্ত সেখানে তার ফিরে আসা সাহসী পদক্ষেপ। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি কতটুকু সফল হবেন সে ব্যাপারে অনেকেই সন্দিহান। কারণ আমাদের দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি। বুশারার উপর আক্রমণে অনেকেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কালো হাত দেখছেন। তবে এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ মনে হয় বুশারার পারিবারিক উত্তরাধিকার। তিনি মেয়রের মেয়ে। এটাই তার সমস্ত যোগ্যতাকে ম্লান করে দিয়েছে। কারণ আমাদের দেশে এখন খুঁটির জোর মানে উপরের তলায় বিশেষ যোগাযোগ ছাড়া কিছু যে হয় সেটা আর মানুষ বিশ্বাস করে না। ঢাকার উত্তরের মেয়র নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে প্রভাভশালী মানুষ। তার মেয়েকে যখন নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েও এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় সেটা এলিট শ্রেণীর জন্য মোটেও সুখকর নয়। তাদের রাজনীতি এতদিন সৎ, শিক্ষিত ও স্বাধীন

প্রশ্ন

Image
সমাজতন্ত্রকে বলা হত স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক। সমাজতন্ত্রের সময় মানুষ প্রথাগত ধর্মে তেমন একটা বিশ্বাস করত না। অনেকেই বলত এটা পার্টির নিষেধাজ্ঞার কারণে। এটা ঠিক যে পার্টি ও সমাজ সেই সময়ে যারা ধর্ম পালন করে তাদের বাঁকা চোখে দেখত, কিন্তু আমার মনে হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকার কারণ ভিন্ন। মানুষ ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয় অসহায় হলে। অসহায়ত্ব আসে বৈষম্য থেকে। সমাজে ব্যাপক বৈষম্য থাকলে মানুষ সাধারণত ন্যায় বিচারের আশা করে না, সে অসহায় হয়ে ঈশ্বরের কাছে নালিশ করে। যেহেতু সমাজতন্ত্রে বৈষম্য তুলনামূলক ভাবে কম ছিল তাই তাদের মাথা কুটার জন্য ঈশ্বরের দরকার পড়ত না। তাছাড়া পার্টি, কমসোমল এসব শেষ বিচারের অপেক্ষা না করে যেকোন সমস্যার দ্রুত বিচার করত আর সেটা করত অপরাধীকে সঠিক পথে ফেরানোর তাগাদা থেকে। সেদিক থেকে এসব পার্টি ও কমসোমল মিটিং ছিল খ্রিস্টান ধর্মের কনফেশনের মত। কনফেশনে পাদ্রী মানুষের অপরাধের বর্নণা বা অনুশোচনা ঈশ্বরের কাছে টেলিগ্রাফ করে, পার্টি মিটিং এ সেটার কোর্ট মার্শাল টাইপের বিচার হয়। সে কারণেও সোভিয়েত দেশের মানুষের তখন ঈশ্বরের দরকার পড়ত না। অন্যদিকে বিভিন্ন গণতান্ত

বিস্ময়

Image
গতকাল মুক্তা রানীর খুনির ছবি দেখলাম। খুব অল্প বয়সী। স্কুলের ছাত্র বলে মনে হয় দেখতে। এমন একটা ছেলে খুন করতে পারে সেটা কি ভাবা যায়? তবুও এরা খুন করে। এই ছেলের মত কম বয়সী অনেকেই আজকাল খুন করে। কেন? জানে ওদের কিছুই হবে না। হয় ধর্মের জোরে না হয় দলের জোরে অথবা টাকার জোরে ঠিক পার পেয়ে যাবে। রাষ্ট্র বহুদিন হয় দেশের তরুণ ও যুবসমাজকে পথ দেখাচ্ছে না - হয় পারছে না, না হয় অন্য কোন রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ থেকে করছে না। এই পথ না দেখানো বিপথে ঠেলে দেবার নামান্তর নয় কি? আজ যে দেশে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের চরম অভাব এটা কি রাষ্ট্রীয় নীতির অংশ নয়? এই যে এত এত যুবক প্রতিনিয়ত খুনি হচ্ছে তার জন্য রাষ্ট্র কি মোটেই দায়ি নয়? রাষ্ট্র অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফসল তুলতে ব্যস্ত। অস্বীকার করার উপায় নেই যে এক্ষেত্রে সে যথেষ্ট সফল। কিন্তু অর্থনীতির বাইরেও যে জীবন আছে, আছে সংস্কৃতি, নৈতিকতা, মানবতা - এসব ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার গ্লানি কি সে এড়াতে পারবে?  দুবনা, ০৪ মে ২০২৩

সমাধি

Image
অতীত কালে রাজ্য বা রাষ্ট্র গঠনের অন্যতম মূল কারণ ছিল নিরাপত্তা। আমরা যা কিছু করি সেটা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে। ফসল ফলাই, পড়াশুনা করি, বাড়িঘর তৈরি করি - এ সবই নিজের ও আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা ভেবে। রাষ্ট্র যখন সেই নিরাপত্তাটুকু দিতে ব্যর্থ হয় তখন তাকে রাষ্ট্র বলা যায় না। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় জঙ্গলের শাসন। এটা ঠিক, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনা ঘটে, অনেক লোক মারা যায়। কিন্তু যখন কোন আক্রমণ সিস্টেমেটিক আকার ধারণ করে সেটা সেটা উপেক্ষা করা যায় না। বলা হয়ে থাকে কোন ঘটনা যদি একবার ঘটে তবে সেটা হঠাৎ ঘটে যাওয়া, দু' বার হলে সেটা কোইনসিডেন্স আর তিন বা তার বেশি বার হলে সিস্টেমেটিক। দেশে সংখ্যালঘু, নারী, বিশেষ করে সংখ্যালঘু নারীদের উপর আক্রমণ সিস্টেমেটিক রূপ ধারণ করছে। আর সেটা হচ্ছে রাষ্ট্রের নীরব সমর্থনে। সমর্থন এ কারণে যে প্রায় কোন ঘটনারই সঠিক তদন্ত ও বিচার হচ্ছে না। এই বিচারহীনতাই দুর্বৃত্তদের অপরাধ করার ব্ল্যাঙ্ক চেক হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে। মুক্তা রানী হত্যা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার আরেকটা প্রমাণ। রাষ্ট্রের