কথা বলুন

গভীর রাত। নির্জন বাসস্ট্যান্ড। সেখানে অপেক্ষা করছে দু'জন মানুষ। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা অপরিচিত। নিয়তি তাদের এই অন্ধকার দুর্যোগপূর্ণ রাতে এক জায়গায় মিলিত করেছে। খুব সম্ভব একই বাসে তারা যাবে। সে অর্থে কিছুটা হলেও একই পথের পথিক তারা। আবহাওয়ার মত সময়ও এখন খারাপ। চারিদিকে সন্দেহ। কি বলতে কি বলবে, কার অনুভূতিতে আঘাত করবে, কোন আইনের প্যাচে আটকে যাবে? তাই সবাই আজকাল মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। চোখকান খোলা রেখে চললেও ভান করে যেন সেসব বন্ধ ছিল। সে কিছু দেখেনি, কিছু শোনেনি।

লোকটা নিশ্চয়ই স্থানীয়। খারাপ হত না জেনে নিলে এখানকার অবস্থা কী রকম। কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, কোথায় ভালো খাওয়া যায়। - ভাবছে একজন।
দেখে তো আগন্তুক মনে হচ্ছে। এত রাতে কোথায় যাবে? কোথায় থাকবে? এসেছেই বা কেন? - ভাবছে আরেকজন।

এখন সময়ই এ রকম, সবাইকে সন্দেহ করা, সবার কাছ থেকে খারাপ কিছু আশা করা। দু' জনেই দু' জনের কথা ভাবছে কিন্তু সাহস করে আগ বাড়িয়ে কথা যে বলবে সেটা পারছে না।

ইস, যদি সিগারেট খেতাম - সিগারেট চাইবার উছিলায় কথা বলা যেত। শুভেচ্ছা বিনিময় করা যেত। ভাববে একজন।
হুম, মাঝে মঝে সিগারেট খাওয়া খারাপ নয়। নিজে ধরিয়ে ওকে সাধতে পারতাম, সেই সুযোগে শহরের খবর জেনে নিতে পারতাম। - অন্যজন মনে মনে নিজের সাথেই কথা বলছে।

দেখতে দেখতে বাস চলে আসবে। দু'জনেই উঠে বসবে। দু'জনেই ভাববে যদি একই স্টপেজে নামে তাহলে কথা বলবে। কিন্তু সব ভাবনা ভাবনাই থেকে যায়। একজন নেমে যায় এক স্টপেজে আর নামার আগে একটু হাসে অন্য জনের দিকে তাকিয়ে।

অন্য জন চলে গন্তব্যের দিকে আর ভাবে ফেলে আসা সেই লোকের কথা যে বন্ধু হতে পারত অথচ যাকে শত্রু বলে সন্দেহ করে কথা বলা হয়নি।

কথা বললে এরা একে অন্যের শত্রু হত কি না সেটা কেউ বলতে পারবে না, তবে কথা না বলায় তারা যে একে অন্যের বন্ধু হতে পারল না সেটা কিন্তু ঠিক।

দুবনা, ২৪ মে ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা