আমরা কে?

আজকের প্রগতির যাত্রীতে নস্টালজিয়া নামে আমার লেখায় কথোপকথনের এক জায়গায় আছে - "আমার জন্ম বাংলাদেশে হলেও আমি নিজেকে ভারতীয় বলে মনে করি।" এটা আমার বক্তব্য নয়, যার সাথে কথা বলছিলাম তার কথা। তার পূর্বপুরুষরা পশ্চিম বঙ্গ থেকে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিলেন। একজন এ সম্বন্ধে লিখল আপনি বাংলাদেশে জন্ম নিয়ে নিজেকে ভারতীয় ভাবেন এটা খুবই লজ্জাজনক। আমি তাকে লেখাটা আরেকবার পড়ে দেখতে বললাম। আসলে আমার নাম অনেককেই এ ধরণের তড়িৎ সিদ্ধান্তে আসতে লালায়িত করে। পরে আমি ভাবলাম আমার নিজেকে ভারতীয় ভাবতে সমস্যা কি? না বর্তমানের খন্ড ভারতীয় নয়, অবিভক্ত ভারতের নাগরিক ভাবতে? ২০১৯ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে এক কনফারেন্সে অংশগ্রহণের সময় এক ভদ্রলোকের সাথে আলাপ। আমেরিকান নাগরিক। তবে গায়ের রং আর নাম (যদি ভুল না করি মিঃ করিম) বলছিল তিনি আমাদের এলাকার। "আপনি কি বাংলাদেশ থেকে?" জিজ্ঞেস করায় বললেন "আমি অবিভক্ত ভারতের নাগরিক।" এখন আমেরিকায় থাকেন। ঢাকা থেকে ১৯৬৪ সালে আমেরিকা যান। আমি অবাক হয়েছিলাম তাঁর উত্তর শুনে। আচ্ছা ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক, খাদ্য, গান, কবিতা - অনেক দিক থেকেই তো অবিভক্ত ভারতের বিভিন্ন জাতি আমাদের প্রভাবিত করেছে যেমন করেছি আমরা। প্রচুর মানুষ যদি নিজেদের বিশ্ব ইসলামী উম্মাহর অংশ বলে ভাবতে পারে শুধু ধর্মের কারণে তাহলে আমি কেন এত কিছু কমন থাকার পরেও নিজেকে অবিভক্ত ভারতের একজন মনে করতে পারব না? মহেঞ্জোদারো, অশোক স্তম্ভ, বিভিন্ন প্রাচীন মন্দির, মসজিদ, প্যাগোডা, তাজমহল এমন কি ইংরেজদের হাতে গড়া কোলকাতা, মুম্বাই, চেন্নাই, কোলকাতা বিশ্ববিদ্যাময়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - এসব কি আমাদের গর্বিত করে না? আমি কি আমার হাজার বছরের অতীতের উত্তরাধিকারী নই? রামায়ণ, মহাভারত, গীতগোবিন্দ, হাজার বছরের পুরাতন সব লোককথা এসব কি আমারও গর্বের জায়গা নয়? তিন শ বছরের আমেরিকার ইতিহাসকে আমরা মাথায় তুলে নাচতে পারি অথচ হাজার বছরের নিজেদের ঐতিহ্য আমরা হেলায় দু পায়ে সরিয়ে দিই। আসলে মানুষের বৈরিতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অতি সরল সত্যটুকু মেনে নিতেও আমরা দ্বিধা বোধ করি।

দুবনা, ১৯ মে ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা