বিজ্ঞান

আমরা যারা বিজ্ঞানে বিশ্বাস করি তাদের অনেকের ধারণা বিজ্ঞান মানেই সঠিক, বিজ্ঞান মানেই সত্য। কথাটি কতটুকু সত্য? যদি সত্য হত তাহলে প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করতে বিভিন্ন সময় বিজ্ঞান বিভিন্ন মডেল ব্যবহার করে কেন? এরিস্টোটল, টলেমি এরা সবাই বিজ্ঞানী ছিলেন। আবার এরাই ভূ-কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের প্রবক্তা ছিলেন। অন্যদিকে কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও - এরা ভূকেন্দ্রিক মডেল অস্বীকার করে সৌরকেন্দ্রিক মডেল প্রণয়ন করেন। আর আইনস্টাইন এসে বলেন - মহাবিশ্বের কোন কেন্দ্র নেই, প্রতিটি বিন্দুই তার কেন্দ্র। তার মানে কি বিজ্ঞান মিথ্যা? না! বিজ্ঞানের ভিত্তি হল প্রশ্নে, সঠিক প্রশ্নে। সে সব সময় প্রশ্ন করে, উত্তর খোঁজে। প্রাপ্ত উত্তরের ভিত্তিতে সে মডেল গড়ে তোলে। কেননা কাজ করতে গেলে খসরা হলেও একটা নকশার দরকার হয়। আপনি আনুমানিক হলেও একটা বাজেট না করে কোন কাজে নামতে পারবেন না, একটা চলনসই ছক বা নকশা ছাড়া ঘর তৈরির কাজে হাত দিতে পারবেন না। যতক্ষণ পর্যন্ত বিজ্ঞান বিশ্বাস করে যে বর্তমান মডেল সাময়িক, কেউ শ্রেষ্ঠতর মডেল উপস্থাপন করলে সে সেটা গ্রহণ করতে দ্বিধা করবে না, ততক্ষণই সে বিজ্ঞান। কিন্তু যখনই বিজ্ঞান কোন মডেলকে সমস্ত যুক্তির বিপক্ষে সঠিক বলে আগলে বসে থাকে সে তখন ডগমা। তাঁর মানে আবার এই নয় কেউ কোন অযৌক্তিক তত্ত্ব বা তথ্য হাজির করলে সেটাকে বিজ্ঞান নির্দ্বিধায় মেনে নেবে। বিজ্ঞানের কাজ যাচাই করা। যাচাই করে সে যদি দেখে নতুন তত্ত্ব পুরানো তত্ত্বের চেয়ে আরও সঠিক ভাবে প্রকৃতি বা কোন ঘটনার বর্ণনা করছে সে সেটাকে গ্রহণ করবে। সেদিক থেকে বিজ্ঞানীকে হতে হবে খোলা মনের মানুষ যে অন্যের যুক্তি শুনতে ভয় পায় না, যুক্তি দিয়ে অন্যের যুক্তি খণ্ডনে ভয় পায় না আবার একই ভাবে অন্যের যুক্তি সঠিক হলে সেটা গ্রহণ করতেও ভয় পায় না। এখানে কোন বিষয়েই অন্ধত্বের স্থান নেই।

দুবনা, ১৭ মে ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা