আইন ও অধিকার

ফেসবুকে এখন হিন্দু আইন নিয়ে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দেখছি। আগেই স্বীকার করে নিচ্ছি যে কোন বিষয়ে এ আইন বা সেখানে কি বলা হয়েছে সেটা জানি না। আমার অবস্থা অনেকটা সোভিয়েত আমলে দীর্ঘ লাইন দেখে দাঁড়িয়ে পড়ার মত। লাইনে যখন এত লোক নিশ্চয়ই ভালো কিছু বিক্রি হচ্ছে। আগে তো কিনি, পরে দেখা যাবে। আসলে আমার এই লেখার উদ্দেশ্য কিছু স্ট্যাটাস আর তাতে বিভিন্ন কমেন্ট দেখে। কেউ এই আইনকে স্বাগত জানাচ্ছে, কেউ বিরোধিতা করছে। স্বাগত জানানোর পেছনে বড় যুক্তি প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাস থেকে। কোন দেশেই এটা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালন করা হয় না মানে সব নাগরিক সমান অধিকার বা সুযোগ পায় না, তার পরেও আইনত অধিকার থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যারা বিরোধিতা করছে তারা এর ফলে হিন্দু মেয়েরা মুসলিম ছেলেদের শিকার হবে, ওরা সম্পত্তির লোভে হিন্দু মেয়ে বিয়ে করবে এই যুক্তি টানছে। এতে করে তারা যে সম্পত্তি ও মেয়ের মধ্যে অসম তুলনায় সম্পত্তিকে বড় করে দেখে মেয়েদের অসম্মান করছে সেটা বুঝছে না। কেউ কেউ আবার মুসলিম আইনে যেখানে সম্পত্তিতে মেয়েদের এক তৃতীয়াংশ ভাগ সেখানে হিন্দু মেয়েরা কেন সমান ভাগ পাবে সেই প্রশ্ন তুলছে। এটা যারা করছে তারা নিজেদের ধর্মের সাথে বেশি করে সম্পৃক্ত মনে করে। তাহলে তারা কেন ইসলামী আইনের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে? আমরা যদি নারী পুরুষ নির্বিশেষে সব নাগরিকের সমান অধিকারে বিশ্বাস করি সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রশ্নে সব সন্তানই সমান অধিকার পাবে সেটার পক্ষে কথা বলাই যৌক্তিক। আর যাতে নিজের সম্প্রদায়ের মেয়েরা অন্য সম্প্রদায়ের ছেলেদের বিয়ে না করে সে জন্যে নিজেদের যোগ্য পাত্র হিসেবে গড়ে তুলুন। আইন দিয়ে নিজের দুর্বলতাকে আর কতদিন আড়াল করবেন? অসম আইন কখনোই সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি করে না। তাই আসুন যে আইন সমান অধিকারের কথা বলে সেটা সমর্থন করি আর সেই অধিকার কিভাবে অর্জন করা যায় সে জন্যে লড়াই করি। ধর্মের নামে অসম আইনে না পাবেন আইন না পাবেন ধর্ম। 

দুবনা, ২০ মে ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা