আশঙ্কা

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে টিটু রায়ের দশ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। আবার এর চেয়েও গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত একজন খালাস পেয়ে গেছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির অপরাধ সে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের একজন। আমার কেন যেন মনে হয় এসব ক্ষেত্রে আদালত ব্যক্তি মানুষের বিচার না করে গড় মানুষের বিচার করে। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের যেকোন মানুষের অপরাধ নগন্য হয়ে যায়। টিটু রায়ের উকিলের বক্তব্য অনুযায়ী টিটু রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে অসত্য সেই প্রমাণ হাজির করা সত্ত্বেও আদালত তাতে আমল দেয়নি। এর অর্থ দাঁড়ায় আদালত নিজেই আইন অমান্য করেছে।

টিটু রায়দের মত নিরীহ লোকদের শাস্তি দিয়ে বিচার বিভাগ দেখাতে চায় দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় সে অতন্দ্র প্রহরী। সমস্যা হল বিচার বিভাগ প্রায় সব সময়ই অসময়ে ঘুমায় আর অসময়ে জাগে। দুষ্ট লোকেরা বলে এটা ঘুম বা জাগরণের প্রশ্ন নয় - এটা শুধুই ভান করে থাকা। ফর্মালি এটাকে বিচার বললেও এই বিচার আসলে অবিচারের তালিকাকেই দীর্ঘায়িত করল।

আমরা সবসময় সব ব্যাপারে ইউরোপ আমেরিকার পদাঙ্ক অনুসরণ করি। আমেরিকায় এখন সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়াই কয়েক যুগ আগে ঘটে যাওয়া অপরাধের অভিযোগে অপছন্দের লোকজনদের শাস্তি দেয়া হয়। আর কেউ যদি শুধু নামেই গণতান্ত্রিক হয় তার সাতখুন মাপ হয়ে যায়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের সদস্য বাই ডিফল্ট পাক পবিত্র আর সরকারি দলের সদস্য একাত্তরে চেতনার মালিক। যদি আমাদের আদালত আমেরিকাকে আদর্শ হিসেবে নেয় তবে কিছুদিন পরে "সে তিনযুগ আগে আমার ধর্মীয় অনুভূতিতে এমন আঘাত করেছিল যে এখনও খাবার হজম হয় না" এমন অভিযোগেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক লোকজন স্বল্প বা দীর্ঘকালীন মেয়াদে রাষ্ট্রের অতিথি হিসেবে দিন কাটাবে এরকম আশঙ্কা অমূলক নয়।

আদালতের প্রতিটি পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থার ভিত্তি নাড়িয়ে দেয় যা দেশ ও জাতির জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে।

দুবনা, ২৮ মে ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা