প্রশ্ন

সমাজতন্ত্রকে বলা হত স্বৈরাচারী, অগণতান্ত্রিক। সমাজতন্ত্রের সময় মানুষ প্রথাগত ধর্মে তেমন একটা বিশ্বাস করত না। অনেকেই বলত এটা পার্টির নিষেধাজ্ঞার কারণে। এটা ঠিক যে পার্টি ও সমাজ সেই সময়ে যারা ধর্ম পালন করে তাদের বাঁকা চোখে দেখত, কিন্তু আমার মনে হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের ঈশ্বরে বিশ্বাস না থাকার কারণ ভিন্ন। মানুষ ঈশ্বরের শরণাপন্ন হয় অসহায় হলে। অসহায়ত্ব আসে বৈষম্য থেকে। সমাজে ব্যাপক বৈষম্য থাকলে মানুষ সাধারণত ন্যায় বিচারের আশা করে না, সে অসহায় হয়ে ঈশ্বরের কাছে নালিশ করে। যেহেতু সমাজতন্ত্রে বৈষম্য তুলনামূলক ভাবে কম ছিল তাই তাদের মাথা কুটার জন্য ঈশ্বরের দরকার পড়ত না। তাছাড়া পার্টি, কমসোমল এসব শেষ বিচারের অপেক্ষা না করে যেকোন সমস্যার দ্রুত বিচার করত আর সেটা করত অপরাধীকে সঠিক পথে ফেরানোর তাগাদা থেকে। সেদিক থেকে এসব পার্টি ও কমসোমল মিটিং ছিল খ্রিস্টান ধর্মের কনফেশনের মত। কনফেশনে পাদ্রী মানুষের অপরাধের বর্নণা বা অনুশোচনা ঈশ্বরের কাছে টেলিগ্রাফ করে, পার্টি মিটিং এ সেটার কোর্ট মার্শাল টাইপের বিচার হয়। সে কারণেও সোভিয়েত দেশের মানুষের তখন ঈশ্বরের দরকার পড়ত না। অন্যদিকে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ ঈশ্বরের মাহাত্ম্য প্রচার করত, এ প্রশ্নে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করত। কিন্তু এরা ঈশ্বরকে যেভাবে সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান ইত্যাদি বিভিন্ন রূপে বর্ণনা করত, তাতে সেই ঈশ্বর একনায়ক না হয়ে পারেন না। কারণ একনায়ক মানের সমস্ত ক্ষমতার একমাত্র উৎস। আর একারণেই তিনি মরার সাথে সাথে পাপ পূণ্যের বিচার না করে সবাইকে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখেন। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষের এরকম স্বৈরাচারী ঈশ্বরের পূজা করা বা ঈশ্বরকে এরকম স্বৈরাচারী হিসেবে বর্ণনা করা কি স্ববিরোধিতা নয়? নাকি রাজা যেহেতু পৃথিবীতে ঈশ্বরের প্রতিনিধি আর ক্ষমতা মানেই অন্যের উপর খবরদারি, ঈশ্বরকে এভাবে বর্ণনা করে তারা নিজেদের স্বৈরাচারী চরিত্র জায়েজ করে?

দুবনা, ০৬ এপ্রিল ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা