Posts

Showing posts from May, 2020

শূন্যের দাম

Image
দীর্ঘ ৯ বছর পর গতকাল আমেরিকা থেকে নভোচারীদের নিয়ে SpaceX ইতিমধ্যেই বায়ুর সাগর পাড়ি দিয়ে ISS এ গিয়ে পৌঁছেছে। যে ব্যাপারটা নিয়ে সবাই প্রচণ্ড উত্তেজিত সেটা হল মহাশূন্যে এটাই প্রথম বানিজ্যিক ফ্লাইট। এটা ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মহাশূন্যে লোক পাঠানোর পরিকল্পনার পথে প্রথম পদক্ষেপ। "That's one small step for (a) man, but one giant leap for mankind." চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে নীল আর্মস্ট্রং একথা বলেছিলেন। অনেকের কাছে আজকের ঘটনাও তাই। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল ইউরি গ্য াগারিন যখন মহাশূন্যের দোর খুলে অজানার পথে পা বাড়ান সেটাও ছিল এমন একটিই পদক্ষেপ। কিন্তু তখন সেসব রাজনৈতিক ডামাডোলে হারিয়ে যায়, মহাশূন্য বা চন্দ্রবিজয় মানুষের জয় হিসেবে না দেখে দেখা হয় সমাজতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জয় পরাজয় হিসেবে। এখন হয়তো সেসব আদর্শিক লড়াই নেই। সব দেশের সব আদর্শের মানুষ আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে দীর্ঘ দিন ধরে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। এমন কি যখন রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে নতুন করে বৈরিতা শুরু হয়েছে, তখনও মহাকাশের উদার আশ্রয় তাদের একসাথে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আশা করা য

প্রশ্ন

Image
কয়েকদিন আগে এক বন্ধু প্রশ্ন করল আত্মা (soul) কী? আত্মার কি কোনো অস্তিত্ব আছে? কোনো ছবি? কোনো ভিডিও? যুক্তিপূর্ণ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আশা করি। কি উত্তর দেওয়া যায়? চাক্ষুস দেখাই কি শুধু কোন কিছুর অস্তিত্ব প্রমাণ করে? আমরা অনেক কিছুই দেখতে পাইনা, তার পরে বিভিন্ন ভাবে তাদের অস্তিত্ব অনুভব করি। আসলে কিছু প্রশ্নের উত্তর হয় না, মানে যে উত্তরই কেউ দিক না কেন সেটার সত্যতা/ সঠিকটা নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। আর এ ধরণের প্রশ্ন মানুষ মূলত করে আগে থেকেই নিজে তার একটা উত্তর তৈরি করে। আপনার উত্তর তার উত্তরের পক্ষে গেলে ভালো, না গেলে ঝামেলা। এসব যত না প্রশ্ন তার চেয়ে নিজের বিশ্বাসের পক্ষে সমর্থন যোগাড় করা নয়তো নিজে বিশ্বাসকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা। আমরা কি বাতাস দেখি বা বাতাসের ছবি? না। তবে বিভিন্ন ভাবে বাতাসের অস্তিত্ব অনুভব করি। তা সে বাঁশ ঝাড়ের শব্দই হোক আর ঝড়ের তাণ্ডব দেখেই হোক। তবে এসবই পরোক্ষ। যদি আরেকটু উপরর দিকে যাই কি দেখি? আমরা তো ডার্ক ম্যাটার বা ডার্ক এনার্জি দেখতে না। এমন কি দেখার কোন উপায়ও নেই। কেননা এরা স্বাভাবিক বস্তুর সাথে মিথস্ক্রিয়া মানে ইন্টার‌্যাকশন করে না। তারপরেও বিজ্ঞানী

শব্দ বিভ্রাট

Image
আমি কখনও কখনও কোন কোন শব্দ ভুলভাল পড়ি। মানে প্রথম অক্ষর দেখেই কিছু একটা মনে করে নিই, আর এ নিয়ে পরে হয় ঝামেলা। অনেক আগে, সেভা যখন ছোট ছিল একদিন ক্লিনিকে গেলাম লগোপেদ মানে স্পীচ থেরাপিস্টের কাছে। এখানে সবাইকে যেতে হয়। এটাই নিয়ম। কিন্তু দরজায় গিয়ে পড়লাম লুদোয়েদ মানে ক্যানিবল। আমার তো আত্মারাম খাঁচা ছাড়া। পরে ভালো করে তাকিয়ে দেখি অনেক আগেই চোখের মাথা খেয়ে বসে আছি। ক'দিন আগে সেভা জানাল ও জুনে দুবনা আসবে আর ওর বন্ধু স্তপার সাথে স্কেটিং (মানে স্কেটবোর্ডিং) করতে শিখবে। রুশে এটাকে বলে কাতাতসা না স্কেইটে। কেননা সে ঠিক করে ফেলেছে এখানে থাকা আর চলবে না, তাই আইসল্যান্ডে যাবে বসবাস করতে। কি আর করা। বললাম, ঠিক আছে। শেখ। আমি কেন জানি কাতাতসা না স্কেইটে না পড়ে পড়লাম কাতাতসা না স্কাইপে। ভাবলাম, স্কাইপে আবার স্কেটিং শেখে কিভাবে। মনে হল ওরা যেহেতু এখন সারাদিন নেটে থাকে, নিশ্চয়ই কোন মেথড আছে। গতপরশু গভীর রাতে ও আবার নক করল। জানাল ওর ইচ্ছার কথা। লিখল "আমি স্কেটিং করা শিখব। পরে বোর্ড কিনব। আপাতত মণিকারটা নেব। মনে হয় না না করবে।" আমার মাথায় যেহেতু স্কাইপ শব্দটা ছিল তাই আবারও পড়লাম স্কাইপে এসব হ

চলে যাওয়া

Image
আমার ছোটবেলায় তরা গ্রাম এখনকার মত না হলেও যথেষ্ট ঘনবসতি পূর্ণ ছিল। কিন্তু সেই সাথে মাঠ ঘাটেরও অভাব ছিল না। গ্রামে হিন্দু ও মুসলমান অধিবাসীর সংখ্যা ছিল প্রায় সমান সমান। হিন্দুদের বেশিরভাগ হয় তাঁত শিল্পের  নয়তো ব্যবসার সাথে জড়িত ছিল। তবে ব্যবসা করলেও এ পাড়ার ছেলেমেয়ারা সবাই চেষ্টা করত স্কুল কলেজে যেতে। চাকরি তেমন কেউই করত না। পড়াশুনা করে ব্যবসায়ে ঢুকত, আর দুএকজন যারা চাকরি করত তাও আসলে ওকালতি, মানে আইনি ব্যবসা। ওদিকে মুসলমান পাড়ায় কিছু কিছু ব্যবসায়ী থাকেলও অধিকাংশই জড়িত ছিল কৃষি কাজের সাথে। মোট কথা, গ্রামে চাকরির তেমন কদর ছিল না। যারা চাকরি করতেন তাঁরাও মূলত শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন। সেই সময় মুসলমান পাড়ায় হাতে গনা কিছু মানুষ পড়াশুনা করত। যদিও ও পাড়ায় অবস্থাপন্ন লোকের অভাব ছিল না, তবুও পড়াশুনাটাকে ঠিক তেমন গুরুত্ব দেওয়া হত না। এ নিয়ম ভেঙ্গে যে কয়জন মানুষ কলেজের দিকে পা বাড়ায় তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন আতাব আলী স্যার। একটু পরে মান্নান (মঈন উদ্দীন) ভাই, সালাহ উদ্দীন ভাই, হ্যামো (হোসেন আলী) ভাই, নুরু ভাই উল্লেখযোগ্য। পরবর্তীতে এদের প্রায় সবাই চাকরির সাথে জড়িত ছিলেন। এদের

বিজয়ের কথা

Image
আমার শৈশব আর কৈশোর কেটেছে বাংলাদেশের গ্রামে। তাই সেই জীবনে বড় কিছু খুব একটা দেখার সুযোগ হয়নি। বিজয় দিবস সহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালিত হত ছোট আকারে, স্কুলে বা ক্লাবে। তাতে আনন্দের কমতি ছিল না, কমতি ছিল না শ্রদ্ধার, তবে সেটা বিশালতায় পৌঁছেনি কখনও। বর্তমানে এসব উৎসব দেশে ঘটা করে পালিত হয়। জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠান মেলা মেলা মনে হয়। দেশ থেকে মস্কো আসার পর পরিচয় ঘটে এদেশের বিভিন্ন জাতীয় উৎসবের সাথে। সোভিয়েত আমলে খুব ঘটা করে পালিত হত মে দিবস আর অক্টোবর বিপ্লব দিবস। রেড স্কয়ারে এ উপলক্ষ্যে হত প্যারেড। পলিট ব্যুরোর সদস্যরা লেনিনের দরগায় মানে মাউসেলিউমে দাঁড়িয়ে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে হাত নাড়াতেন। আর আমরাও সেই আশীর্বাদে তুষ্ট হয়ে হৃষ্ট মনে বাড়ি ফিরতাম। অনেকে হয়তো এখানে দরগা শব্দের সাথে একমত হবেন না, তবে সেই সময় লেনিন দেবত্বের এমন এক স্তরে পৌঁছে গিয়েছিলেন যে একে দরগা না বলাটাই বরং বেমানান। সে সময় বিজয় দিবসে আমার যেতাম মূলত গোর্কি পার্কে। কখনও বা ক্রেমলিন সংলগ্ন আলেক্সান্দ্রভস্কি বাগানে, কখনও বলশয় থিয়েটারের সামনে কার্ল মার্ক্সের স্ট্যাচুর নীচে। এসব জায়গায় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সৈনিকরা

৮ মে ২০২০

Image
আজ আমার রবি বাবুর জন্মদিন! মেঘলা আকাশ। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ঠাণ্ডা। তার উপর করোনার উপদ্রব। এই বিরূপ আবহাওয়ায় উনি আজ দর্শন দেবেন বলে মনে হয় না। আমাদের কৈশোর আর যৌবনে রবি বাবুরা আসতেন দল বেঁধে। কাজী সাহেব আর কমরেড সুকান্তকে সঙ্গে নিয়ে। ইদানীং ব্যক্তিকেন্দ্রীক বিশ্বে কেউ আর সমষ্টির কথা তেমন ভাবে না। তাই সবাই আসে চুপি চুপি, একা একা। আর এবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যখন অতি জরুরি তখন একা আসাটা সামাজিক দায়িত্বও বটে। অন্যান্য বছর এদিন মস্কোর রবীন্দ্র প্রেমীরা জড়ো হয় রেচনই ভকজালে, যেখানে পার্ক দ্রুঝবিতে রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকেন রবিঠাকুর। গান বাজনা কবিতায় মেতে ওঠে পার্ক। এবার অবশ্য আমরা তাঁকে স্মরণ করব ঘরে বসে, স্মৃতির অ্যালবাম উল্টিয়ে। আর মন থেকে চাইব মনে মনে গাইব বরষ ধরা মাঝে শান্তির বারি দুবনা, ০৮ মে ২০২০

টোটন

Image
প্রায় দশ বছর মস্কোয় পড়াশুনা করে ১৯৯৪ সালের ১৮ মে আমি দুবনা আসি গবেষণা করতে। প্রথম দু বছর ফ্যামিলি মস্কো থাকায় সপ্তাহান্তে মস্কো যেতাম। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ওরা দুবনা চলে এলে আমার মস্কো যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে সেটা শুরু হয় ২০০৯ সালে ওরা মস্কো ফিরে গেলে। ২০১০ এ আমরা কিছু উৎসাহী ছেলেমেয়ে মিলে বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ রাশিয়া গড়ে তুলি। এর আগে আমার পরিচয় ছিল মূলত ছাত্রদের সাথে। ২০১০ এ এসে পরিচিত হলাম অনেকের সাথে যারা এখানে এসেছেন ব্যবসায়িক কাজে। ২০১০ সালের ৩০ মে একটা পিকনিকের আয়োজন করে মস্কোর বন্ধুরা একটা সংগঠন গড়ার ইচ্ছে নিয়ে। যার ফল স্বরূপ সে বছর ০৪ জুলাই জন্ম নেয় বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ। ৩০ মের সেই পিকনিকে অনেকের সাথে প্রথম পরিচয়। তাদের একজন সুব্রত রায় টোটন। এর পরে চারটে কমিটিতে এক সাথে কাজকর্ম করেছি। বিভিন্ন সময়ে ওর অফিসে হয়েছে সংগঠনের মিটিং। সদা হাসিখুশি। গত দশ বছরের সাংগঠনিক জীবনে হাতে গনা যে কয়েক জন লোকের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল টোটন তাদের একজন। গত জয়েক বছর হল কিডনির সমস্যায় ভুগছিল। কিডনি পরিবর্তনের কথাও ছিল, কিন্তু ডোনার না পাওয়ায় সেটা পিছিয়ে যায়। যখন পাওয়া যায় তখন ও

অবচেতন চেতনা

Image
ঘুম থেকে জাগতেই বিদ্যানন্দ নিয়ে একটা পোস্ট দেখলাম। বিদ্যানন্দ নিয়ে আমি যে খুব বেশি কিছু জানি সেটা নয়, তবে সেটা আমার অজ্ঞতা। ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যানন্দের কাজকর্মের কথা শুনেছি। কিছুদিন আগে পড়েছি এর প্রধান উদ্যোক্তা কিশোর কুমার দাস এর উপরে একটা আর্টিকেল। গর্বে বুক ফুলে উঠেছে এই ভেবে যে দেশে এখনও এমন মানুষ আছে, আমরা/আমি না পারলেও অন্য অনেকেই পারছে, করছে। ঠিক একই রকম গর্ব বোধ করেছিলাম অনেক আগে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডঃ আতিউর রহমানের গল্প শুনে। আজ দেখলাম বিদ্যানন্দকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাহান্নর অগ্নি পরীক্ষায় পাশ করা বাঙ্গালী বিদ্যানন্দে বাংলা খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানে শুধুই হিন্দুত্বের গন্ধ। যে মানুষটার জীবন সংগ্রাম হতে পারত সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু কিশোরদের আদর্শ, সে আজ বাঙ্গালী বা বাংলাদেশি নয়, সে একজন হিন্দু, একজন সংখ্যালঘু। অবাক হইনি। কারণ এই প্রক্রিয়া গতকাল শুরু হয়নি। এমনকি পঁচাত্তরেও নয়। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে এর শুরু যার ফলশ্রুতি ভারত বিভাগ, পাকিস্তানের জন্ম। পরবর্তীতে যতটা না দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তার চেয়ে বেশি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণে অ

আশিস দা

Image
১৯৮৩ সালে মস্কো এসে প্রথম বছর কাটে প্রস্তুতি পর্বে। এ সময় থাকতাম মিকলুখো মাকলায়ার ৬ নম্বর ব্লকে। ফাইনাল পরীক্ষার কয়েক দিন আগে আমাদের সিনিয়র টিচার আলেক্সেই ইভানোভিচ কাতকানভ বললেন আমাকে আমাদের ফ্যাকাল্টির হোস্টেলে মানে পাভলভস্কায়া যেতে হবে। অনেক হৈচৈ করেও যখন কিছু হল না ব্যাগ গুছিয়ে ট্যাক্সি ডেকে জালালকে নিয়ে চলে গেলাম ওখানে। যে রুমে থাকার পারমিশন ছিল, গিয়ে দেখি সেটা বন্ধ, মানে চাবিটা কাজ করছে না, ওখানকার অধিবাসীরা তালা বদলেছে। নীচে হোস্টেলের যিনি দায়িত্বে ছিলেন আমাকে টিচারদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর খুলে দিয়ে ওখানে আপাতত থাকতে বললেন, মানে ব্যাগ রাখতে। আর বললেন, আমি যেন অপেক্ষা করি ঐ ছাত্রদের ফেরার জন্য। সেদিন কয়েকবার গিয়েও কাজ হল না। খুব সম্ভব পরের দিন ওদের দেখা মিলল। ঘর খুলে বেরুলেন দুজন। আশিস দা আর কাঞ্জিলাল দা। এর আগে দেখা হয়নি। জানালেন দুজনেই ভারত থেকে, বাঙ্গালী। খুব সম্ভবত তখন চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। আশিস দা গণিতে, কাঞ্জি দা রসায়নে। বললেন, "দেখো, তোমার এখানে সিনিয়র ছাত্রদের সাথে থাকতে অসুবিধা হবে। ওদের বল তোমাকে অন্য ঘর দিতে।"  অন্য সময় হলে মাইন্ড করতাম। যেহেতু আমার ন