আশিস দা

১৯৮৩ সালে মস্কো এসে প্রথম বছর কাটে প্রস্তুতি পর্বে। এ সময় থাকতাম মিকলুখো মাকলায়ার ৬ নম্বর ব্লকে। ফাইনাল পরীক্ষার কয়েক দিন আগে আমাদের সিনিয়র টিচার আলেক্সেই ইভানোভিচ কাতকানভ বললেন আমাকে আমাদের ফ্যাকাল্টির হোস্টেলে মানে পাভলভস্কায়া যেতে হবে। অনেক হৈচৈ করেও যখন কিছু হল না ব্যাগ গুছিয়ে ট্যাক্সি ডেকে জালালকে নিয়ে চলে গেলাম ওখানে। যে রুমে থাকার পারমিশন ছিল, গিয়ে দেখি সেটা বন্ধ, মানে চাবিটা কাজ করছে না, ওখানকার অধিবাসীরা তালা বদলেছে। নীচে হোস্টেলের যিনি দায়িত্বে ছিলেন আমাকে টিচারদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘর খুলে দিয়ে ওখানে আপাতত থাকতে বললেন, মানে ব্যাগ রাখতে। আর বললেন, আমি যেন অপেক্ষা করি ঐ ছাত্রদের ফেরার জন্য। সেদিন কয়েকবার গিয়েও কাজ হল না। খুব সম্ভব পরের দিন ওদের দেখা মিলল। ঘর খুলে বেরুলেন দুজন। আশিস দা আর কাঞ্জিলাল দা। এর আগে দেখা হয়নি। জানালেন দুজনেই ভারত থেকে, বাঙ্গালী। খুব সম্ভবত তখন চতুর্থ বর্ষে পড়তেন। আশিস দা গণিতে, কাঞ্জি দা রসায়নে। বললেন, "দেখো, তোমার এখানে সিনিয়র ছাত্রদের সাথে থাকতে অসুবিধা হবে। ওদের বল তোমাকে অন্য ঘর দিতে।"  অন্য সময় হলে মাইন্ড করতাম। যেহেতু আমার নিজেরই ইচ্ছে ছিল না এই সময়ে এখানে থাকতে, তাই কাতকানভকে গিয়ে বলায় তিনির পুরনো রুমেই আমাকে থাকতে দিলেন। ওরা আর আমি সবাই এই ব্যবস্থায় খুশি। পরীক্ষা শেষে আবার পাভলভস্কায়া ফিরলাম, অন্য রুমে। পড়াশুনার পরে ওখানে সময় কাটত পার্থ, রানা, কুমার, বিশ্বরূপ দা আর সঞ্জয়ের সাথে আড্ডা দিয়ে তাই ওদের খবর আর নেওয়া হয়নি। আর ছয়মাস পরে আমরা সবাই মিকলুখো মাকলায়া ফিরে আসি। এরপর তেমন আর যোগাযোগ ছিল না আশিস দার সাথে। ২০০৭ সালে  হঠাৎ আশিস দার ফোন। খুব সম্ভব অরুপের কাছ থেকে নম্বর পেয়েছিলেন। "আমি দুবনার ওদিকে যাচ্ছি। চল দেখা করা যাক।" আমরা জেসমিন নামে এক ক্যাফেতে বসে গল্প গুজব করলাম। এরপর মাঝে মধ্যে হাই হ্যালো হত। খুব ঘন ঘন যে সেটা নয়, তবে হত। আমাদের কোন অনুষ্ঠান থাকলে বলতাম। পুজায় গেলে জানাতাম, বলতাম "ওইদিন যাচ্ছি, পারলে এস, দেখা হবে।" এটাই মোটামুটি রুটিন। জন্মদিনে শুভেচ্ছা পেতাম, জানাতাম। মাত্র কয়েকদিন আগেই ওর জন্মদিন ছিল। যথারীতি শুভেচ্ছা জানিয়েছি। আজ বন্ধু সুমিতের স্ট্যাটাসে দেখলাম আশিস দা মারা গেছেন। ফোন করে জানলাম করোনায়। আমি সাধারণত কেউ মারা গেলেও তাদের কন্টাক্ট ডিলিট করি না। এটাও করব না। ওভাবেই থাকবে। ফেসবুক মনে করিয়ে দেবে জন্মদিনের কথা। কৌশিককে যেমন, তেমনি আশিস দাকেও আকাশের ঠিকানায় পাঠাবো জন্মদিনের শুভেচ্ছা।

দুবনা, ০১ মে ২০২০












Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি