টোটন

প্রায় দশ বছর মস্কোয় পড়াশুনা করে ১৯৯৪ সালের ১৮ মে আমি দুবনা আসি গবেষণা করতে। প্রথম দু বছর ফ্যামিলি মস্কো থাকায় সপ্তাহান্তে মস্কো যেতাম। কিন্তু ১৯৯৬ সালে ওরা দুবনা চলে এলে আমার মস্কো যাতায়াত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। নতুন করে সেটা শুরু হয় ২০০৯ সালে ওরা মস্কো ফিরে গেলে। ২০১০ এ আমরা কিছু উৎসাহী ছেলেমেয়ে মিলে বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ রাশিয়া গড়ে তুলি। এর আগে আমার পরিচয় ছিল মূলত ছাত্রদের সাথে। ২০১০ এ এসে পরিচিত হলাম অনেকের সাথে যারা এখানে এসেছেন ব্যবসায়িক কাজে। ২০১০ সালের ৩০ মে একটা পিকনিকের আয়োজন করে মস্কোর বন্ধুরা একটা সংগঠন গড়ার ইচ্ছে নিয়ে। যার ফল স্বরূপ সে বছর ০৪ জুলাই জন্ম নেয় বাংলাদেশ প্রবাসী পরিষদ। ৩০ মের সেই পিকনিকে অনেকের সাথে প্রথম পরিচয়। তাদের একজন সুব্রত রায় টোটন। এর পরে চারটে কমিটিতে এক সাথে কাজকর্ম করেছি। বিভিন্ন সময়ে ওর অফিসে হয়েছে সংগঠনের মিটিং। সদা হাসিখুশি। গত দশ বছরের সাংগঠনিক জীবনে হাতে গনা যে কয়েক জন লোকের সাথে ঘনিষ্ঠতা গড়ে উঠেছিল টোটন তাদের একজন। গত জয়েক বছর হল কিডনির সমস্যায় ভুগছিল। কিডনি পরিবর্তনের কথাও ছিল, কিন্তু ডোনার না পাওয়ায় সেটা পিছিয়ে যায়। যখন পাওয়া যায় তখন ও আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। আবার অপেক্ষার পালা।

আজ সকালে বন্ধু মহসীন ফোন করল। হাতে গনা যে দু একজন মানুষ আমাকে ফোন করে মহসীন তাদের একজন। গতকালই কথা হয়েছে। আজ ফোনটা ছিল অপ্রত্যাশিত। একটু দ্বিধা নিয়েই ফোন তুললাম।

- দাদা, সকাল বেলা একটা খারাপ খবর দিতে হচ্ছে, দুঃখিত।
- কি হল?
- আজ সকালে টোটন মারা গেছে।

জানতাম টোটন অসুস্থ, তবুও এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত। অনেকক্ষণ কথা হল আমাদের করণীয় নিয়ে। এই করোনা দিনে কিভাবে ওর শেষকৃত্য করা যায় এসব নিয়ে। চোখের সামনে ভেসে উঠল পরিচয়ের প্রথম দিন। মারিনো পার্ক। বারবিকিউ। গান বাজনা, গল্প আড্ডা আর সব শেষে সংগঠন গড়ার সিদ্ধান্ত। দেখলাম সেই দিনের ছবিগুলো। এই করোনা সময়ে বেশ কিছু পরিচিত মানুষকে হারিয়েছি। টোটন মারা গেছে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায়। তবে ওর করোনা জটিলতা ছিল কিনা সেটা জানতে আজ ওরা স্যাম্পল নিয়ে গেছে। দু একদিন পরে হয়তো জানা যাবে কারণ। কারণ যাই হোক ও আর ফিরে আসবে না। বিদায় টোটন!

দুবনা, ০৬ মে ২০২০


টোটন, মারিনো পার্ক, ৩০ মে ২০১০ 
 
 
 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি