অবচেতন চেতনা
ঘুম থেকে জাগতেই বিদ্যানন্দ নিয়ে একটা পোস্ট দেখলাম।
বিদ্যানন্দ নিয়ে আমি যে খুব বেশি কিছু জানি সেটা নয়, তবে সেটা আমার অজ্ঞতা।
ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যানন্দের কাজকর্মের কথা শুনেছি। কিছুদিন আগে
পড়েছি এর প্রধান উদ্যোক্তা কিশোর কুমার দাস এর উপরে একটা আর্টিকেল। গর্বে
বুক ফুলে উঠেছে এই ভেবে যে দেশে এখনও এমন মানুষ আছে, আমরা/আমি না পারলেও
অন্য অনেকেই পারছে, করছে। ঠিক একই রকম গর্ব বোধ করেছিলাম অনেক আগে বাংলাদেশ
ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর ডঃ আতিউর রহমানের গল্প শুনে।
আজ দেখলাম বিদ্যানন্দকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাহান্নর অগ্নি পরীক্ষায় পাশ করা বাঙ্গালী বিদ্যানন্দে বাংলা খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানে শুধুই হিন্দুত্বের গন্ধ। যে মানুষটার জীবন সংগ্রাম হতে পারত সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু কিশোরদের আদর্শ, সে আজ বাঙ্গালী বা বাংলাদেশি নয়, সে একজন হিন্দু, একজন সংখ্যালঘু।
অবাক হইনি। কারণ এই প্রক্রিয়া গতকাল শুরু হয়নি। এমনকি পঁচাত্তরেও নয়। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে এর শুরু যার ফলশ্রুতি ভারত বিভাগ, পাকিস্তানের জন্ম। পরবর্তীতে যতটা না দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তার চেয়ে বেশি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণে অতিষ্ঠ হয়, আরও খোলাখুলি বললে ক্ষমতার হালুয়া রুটিতে স্থানীয় এলিটরা ভাগ না পেয়ে বিদ্রোহ করে। জন্ম নেয় বাংলাদেশ। সেই সংগ্রামে প্রগতিশীল বামপন্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, ভারতের সার্বিক সহযোগিতা আর সর্বোপরি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জয়জয়কার বাধ্য করে বাহাত্তরের সংবিধান গ্রহণ করতে। তবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা যে এ ভূমিতে পাকিস্তানের ধারণার মত জনপ্রিয় ছিল না সেটা পরবর্তী ঘটনাবলীই প্রমাণ করে।
ভোট নামক এক অলীক চিন্তার কাছে আজ চেতনা পরাজিত। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামে আদর্শের যে মূর্তি আমরা গড়ে তুলেছিলাম, একটার পর একটা ছাড় দিতে দিতে সে চেতনা, সে আদর্শ আজ নগ্ন। লাখ শহীদের রক্তের অর্জিত সে আদর্শ ত্যাগ করে এ যেন সেই পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া, পুরনোকে আঁকড়ে ধরা।
বিদ্যানন্দ বা কিশোর কুমার দাস পেছনে ফেরার এই দুর্বার যাত্রায় প্রথম তো নয়ই, শেষ বলিও নয়।
দুবনা, ০৫ মে ২০২০
আজ দেখলাম বিদ্যানন্দকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাহান্নর অগ্নি পরীক্ষায় পাশ করা বাঙ্গালী বিদ্যানন্দে বাংলা খুঁজে পাচ্ছে না, সেখানে শুধুই হিন্দুত্বের গন্ধ। যে মানুষটার জীবন সংগ্রাম হতে পারত সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশু কিশোরদের আদর্শ, সে আজ বাঙ্গালী বা বাংলাদেশি নয়, সে একজন হিন্দু, একজন সংখ্যালঘু।
অবাক হইনি। কারণ এই প্রক্রিয়া গতকাল শুরু হয়নি। এমনকি পঁচাত্তরেও নয়। গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকে এর শুরু যার ফলশ্রুতি ভারত বিভাগ, পাকিস্তানের জন্ম। পরবর্তীতে যতটা না দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তার চেয়ে বেশি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণে অতিষ্ঠ হয়, আরও খোলাখুলি বললে ক্ষমতার হালুয়া রুটিতে স্থানীয় এলিটরা ভাগ না পেয়ে বিদ্রোহ করে। জন্ম নেয় বাংলাদেশ। সেই সংগ্রামে প্রগতিশীল বামপন্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ, ভারতের সার্বিক সহযোগিতা আর সর্বোপরি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের জয়জয়কার বাধ্য করে বাহাত্তরের সংবিধান গ্রহণ করতে। তবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার ধারণা যে এ ভূমিতে পাকিস্তানের ধারণার মত জনপ্রিয় ছিল না সেটা পরবর্তী ঘটনাবলীই প্রমাণ করে।
ভোট নামক এক অলীক চিন্তার কাছে আজ চেতনা পরাজিত। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামে আদর্শের যে মূর্তি আমরা গড়ে তুলেছিলাম, একটার পর একটা ছাড় দিতে দিতে সে চেতনা, সে আদর্শ আজ নগ্ন। লাখ শহীদের রক্তের অর্জিত সে আদর্শ ত্যাগ করে এ যেন সেই পুরনো ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া, পুরনোকে আঁকড়ে ধরা।
বিদ্যানন্দ বা কিশোর কুমার দাস পেছনে ফেরার এই দুর্বার যাত্রায় প্রথম তো নয়ই, শেষ বলিও নয়।
দুবনা, ০৫ মে ২০২০
Comments
Post a Comment