Posts

Showing posts from April, 2020

করোনা ভাবনা

Image
আজকাল অনেককেই দেখি লিখছে "আর মাত্র দুদিন বা পাঁচদিন তারপরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।" মা বলতেন "মানুষ আশার দুয়ারে বান্দা খাটে।" হ্যাঁ, আশাবাদী হওয়া ভালো, তবে আশাভঙ্গ হলে মানুষ যাতে হতাশ না হয়, সেটাও মনে রাখা দরকার। আমি হতাশার কথা বলছি না। মানুষ হতাশ নয়। সবাই আলোর অপেক্ষায়। মনে পড়ে একাত্তরের কথা। বড়দের প্রায়ই বলতে শুনতাম, "ঝড় শেষ হয়, কিন্তু এ যুদ্ধের দেখি আর শেষ নেই।" সেই যুদ্ধও শেষ হয়েছিল, দীর্ঘ নয় মাস পরে। দীর্ঘ নয় মাস প্রসব বেদনার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে দীর্ঘ অপেক্ষার। এই দুর্যোগ একদিন কাটবেই। তখন আমাদের সৈনিক ছিল মুক্তিযোদ্ধারা আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ছিল সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর। এখন করোনা যুদ্ধের সৈনিক আমাদের ডাক্তার আর চিকিৎসা কর্মীরা। আমরা সাধারণ মানুষ ঘরে থেকে এই সৈনিকদের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারি, হতে পারি এই যুদ্ধে তাদের সত্যিকারের সহকর্মী। যদি গত নভেম্বরকে এই বিশ্বযুদ্ধের শুরু হিসেবে ধরা হয়, এখন তার বয়স পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এর মোকাবিলা করা হচ্ছে। এ তো আর ক্ল্যাসিকাল যুদ্ধ নয়, গেরিলা যু

লেনিন - ১৫০

Image
লেনিনের প্রতি ভালবাসার শুরু খুব ছোটবেলায়, এতো ছোটবেলায় যে সময়টা মনেই নেই। এরপর যখন বাড়িতে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন রং বেরঙের পত্র পত্রিকা আসতে থাকে তখন ভালবাসা আরও বেড়ে যায়। মনে আছে স্কুলে পড়ার সময় একবার বড়দা বলেছিলেন, দেশি কৃষ্ণ থাকতে বিদেশি লেনিনের প্রতি এত প্রেম কেন? আমিও বলে দিলাম, তোমাদের কৃষ্ণ যেমন এখানে বিদেশি, লেনিনও তাই। এখনও মনে পড়ে  "চারণিক শিল্পীগোষ্ঠী"র নিবেদনে লেনিনের পালা । লেনিনের ভুমিকায় অমলেন্দু বিশ্বাসের অনবদ্য অভিনয়। পরে বাম রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে লেনিনের সম্পর্কে আগ্রহ বাড়তে থাকে। সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়তে এসে সে ভালবাসায় ভাটি পরে। সেটার জন্য লেনিন যতটা না দায়ী তার চেয়ে বেশি দায়ী লেনিন ভক্তরা। এদেশের রাস্তায় রাস্তায় তখন লেনিনের মূর্তি, অনেকটা ভারতে শিব লিঙ্গের মত। আমার রুমমেট এক দিন বলেই বসলো "যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস করতাম, লেনিন হতেন সেই ঈশ্বর।" সোভিয়েত দেশে অনেক ভালোর মধ্যে কিছু কিছু খারাপ দিকও দেখার সুযোগ হয়েছে। আর সেসব ছিল খুবই হাস্যকর। অনেক মানুষ আছে যারা জীবনে প্রচুর ভালো কাজ করে, কিন্তু ছোটোখাটো দোষের জন্য তাদের সব ভালো কাজই বৃথা যায়।

স্রোত

উহানে মৃতের সংখ্যা হঠাৎ ৫০% বেড়ে গেছে। সঠিক তথ্য লুকানোর জন্য চীনকে দায়ী করা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা চারিদিকে। অ্যানি নামে এক মহিলা নারীর অধিকার নিয়ে কথা বললেও নিজেই কাজের সহযোগীর উপর অত্যাচার করেছে। কার দোষ? নারীবাদের। লক ডাউনে আটকে পড়া গরীবের সাহায্যে পাঠানো চাল চুরি। এরা কারা? বিএনপি বা জামাত সমর্থক। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী। লক ডাউন উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের জানাজায় অংশগ্রহণ। কে দায়ী? মৌলবাদ। পিপিই না পেয়ে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কে দায়ী? ডাক্তার। .................. এ রকম হাজার হাজার খবরে ভরে গেছে পত্রপত্রিকা, সামাজিক মাধ্যমের টাইম লাইন। আচ্ছা, বলুন তো, উহানে তিন হাজার না পাঁচ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মার গেল সেটা কী খুব বেশি পার্থক্য নিয়ে আসত? তিন হাজার সংখ্যাটা কি এতই ছোট যে করোনা ঠেকাতে আগে থেকে প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি বিভিন্ন দেশের প্রশাসন? এটা কি নিজেদের দুর্বলতাকে অন্যের ঘাড়ে চাপানো নয়? চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে কিন্তু সেটা যেন আমাদের নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত

গাধা ও মানুষ

অনেক দিন আগের কথা। তখন সমরখন্দের সুলতান ছিলেন প্রচণ্ড খামখেয়ালী। তবে তা হলে কি হবে, তিনি প্রতিভার দাম দিতে জানতেন। তার রাজ সভায় সে সময়ের অনেক জ্ঞ্যানীগুনী ব্যক্তির সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর শুধু একটাই দুঃখ, প্রাণপ্রিয় গাধাটা গাধাই রয়ে গেল, মানুষ হল না। একদিন তাই তিনি সভাসদদের জিজ্ঞেস করলেন কেউ তাঁর গাধাকে মানুষ করতে পারবে কি না। কে নেবে এই দুরূহ কাজের ভার? ডাক পড়ল খোজা নাসরুদ্দীনের। খোজা সুলতানের কাছে পনেরো বছর সময় আর প্রতি বছর এক শ করে সোনার মোহর দাবি করলেন। একদিন এক বন্ধু সে কেন এই উদ্ভট কাজ হাতে নিল সেটা জিজ্ঞেস করলে খোজা নাসরুদ্দীন উত্তর দিলেন "পনেরো বছর বিশাল সময়। এর মধ্যে হয় সুলতান মারা যাবে না হয় গাধা মারা যাবে নয় তো সে নিজেই মারা যাবে।" বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। এসব নিঃসন্দেহে খুশির খবর। এটা আমাদের মনে আশা জাগায় যে কোন অপরাধ এদেশে বিচার বহির্ভূত থাকবে না, কোন অপরাধী শাস্তি এড়াতে পারবে না। কিন্তু আমরা যদি শুধু সুদূর অতীতে ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার করেই সন্তুষ্ট থাকি তাহলে সমাজে অপর

খেলা

Image
ছোটবেলায় আমরা বিভিন্ন ধরণের খেলা খেলাতাম। এদের একটা ছিল চারা খেলা। ভাঙ্গা মাটির হাড়ি বা কলসের (পরে অবশ্য বাড়িতে সুতার বাণ্ডিলে থাকা লোহার টুকরা ব্যবহার করতাম) টুকরা ছুঁড়ে দিতাম দূরে, একটা ছোট বৃত্তের ভেতরে দাঁড়িয়ে। একজন বাদে সবাই এটা করত। যে করত না, এটা ছিল তার দান। সে চাইলে অন্য খেলয়ারদের খেতে পারত, নইলে ঘরে ফিরতে বলত, মানে বৃত্তে ফেরা। এর মাঝে হত দরাদরি বা দান বা নিলাম। প্রত্যেকেই একেকটা ডাক দিত, মানে বলত যদি যার দান সে ওকে খেতে পারে, মানে চারা ছুঁড়ে ওর চারার আধ হাত বা চার আঙ্গুলের (এই দূরত্ব কতটুকু হবে সেটা খেলার এগেই ঠিক করা হত, এখন খেললে নিশ্চয়ই কোন স্কেল রাখতাম, কেন না বিভিন্ন মানুষের এই মাপ ভিন্ন। আমার হাত লম্বা, তাই আধ হাত হলে আমার সুবিধা হত, কিন্তু সরু বিধায় চার আঙ্গুলে আমি ঠকতাম)  মধ্যে আসতে পারে তাহলে সে কতগুলো সিগারেটের প্যাকেট পাবে। তাই এই খেলার আরেক নাম ছিল খোলা। বাড়িতে বা পরিচিত কেউ সিগারেট খেলে আগে থেকেই বলে রাখতাম প্যাকেট না ফেলতে। অনেক সময় ডাক বা নিলাম হত গোপনে মানে খেলোয়ার নিজের ইচ্ছেমত কিছু পরিমান খোলা এক হাতে ধরত আর অন্য হাত সামনে রাখত বা সরিয়ে রাখত

স্বর্গ রাজ্যে বিভেদ

Image
বেশ কিছুদিন আগে দেশে কথা হচ্ছিল। আমাদের ছোটবেলায়ও জানতাম আল্লাহ, ভগবান, গড সবই এক। তবে বর্তমান বাংলাদেশে সেটা আর কেউ বিশ্বাস করে না। দেখ, লোকজন এটা বিশ্বাস না করে খুব ভুল করে বলে মনে হয় না। মানে? তুমি কি মনে কর ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয় নন? আমি কিছুই মনে করি না। কারণ সেটা মনে করার জন্য ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে হয়। প্রথমেই বলি আস্তিক আর নাস্তিকের একটাই কমন পয়েন্ট - সেটা ঈশ্বর। একজন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, আরেকজন তাঁর অস্তিত্ব স্বীকার করে না। কিন্তু যারা বিশ্বাস করে তাদের মধ্যেও দলাদলি। কেউ হিন্দু, কেউ মুসলিম, কেউ বৌদ্ধ, কেউ খৃস্টান, কেউ বা অন্য ধর্মাবলম্বী। তাদের সবার আবার একটাই কমন পয়েন্ট - তারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী। এর পরেই শুরু হয় ভেদাভেদ। এটা অনেকটা খেলাধুলার মত। আমরা অনেকেই ক্রিকেট ভালবাসি। সেক্ষেত্রে আমরা এক নৌকার যাত্রী। কিন্তু যখনই কোন দলকে সমর্থনের প্রশ্ন আসে তখন আমরা একে অন্যের ঘোর শত্রু। একজন বাংলাদেশের সমর্থক, অন্যজন ইন্ডিয়া বা অস্ত্রেলীয়ার। তখন আর ক্রিকেট আমাদের এক করতে পারে না, যতক্ষণ না কেউ এসে ক্রিকেটের চেয়ে ফুটবল বড় বলে দাবী করে।

এক দুই তিন চার

কোন ঘটনা একবার ঘটলে বলে আকস্মিক বা হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা (accident), একই ঘটনা দু' বার ঘটলে বলে কাকতালীয় (coincidence), তিনবার ঘটলে বলে নিয়মিত ঘটনা (regularity), আর চার বার ঘটলে সেটা আইন (law)। Один раз случайность, два раза совпадение, три раза закономерность, а четыре раза закон. যদিও প্রথম নয় তবুও সরস্বতী পূজার দিন ভোটের আয়োজন ও পরে বাতিল ধরা যেতে পারে এমন এক এক্সিডেন্ট। করোনার মধ্যে ভোটের আয়োজন ও পরে কোন কোন জায়গায় বাতিল - সেটা কাকতালীয়। আর বর্তমানে করোনা কালে একের পর এক প্রথমে ছুটি ঘোষণা পরে লক ডাউন, লক ডাউন ভেঙ্গে সাধারণ মানুষকে ঢাকায় আসতে দিয়ে আবার কারখানা না খোলা এসব এত নিয়মিত ঘটছে যে অনিয়মটাই নিয়ম হয়ে গেছে। এসব আর অ্যাকসিডেন্ট থাকছে না, সুপরিকল্পিত ভাবে করা হচ্ছে যাতে মানুষের কল্যাণের জন্য গৃহীত যেকোনো পদক্ষেপ শেষমেশ মানুষের বিপক্ষে যায়, দেশের বিপক্ষে যায়, সরকারের বিপক্ষে যায়। এটাই যেন আজ আইন। আশির দশকে একাত্তরের শত্রুরা আমাদের একাত্তর ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল, এখন একাত্তরের স্থপতিরাই কোন রকম জোর জবরদস্তি ছাড়াই মানুষকে একাত্তর বিমুখ করছে। একমাত্র গানেই সম্ভব "তু

অবিশ্বাসের বিশ্বাস

আচ্ছা, তুমি ওকে চেন? বারে, চিনব না কেন? যোগাযোগ হয়? না। উনি রাবীন্দ্রিক মানুষ। আমার সাথে এদের তেমনটা যায় না। রাবীন্দ্রিক মানুষ? অনেকের মত আপনিও আবার তাঁর গুনগ্রাহী নাকি? বেশ বেশ! কারও গুন থাকলে আমাদের গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায়? যার সাথে কথা হচ্ছিল তিনিও উচ্চশিক্ষিত, সংস্কৃতিমনা মানুষ। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে চর্চা করেন এমন অনেক লোকের সাথে তাঁর ওঠা বসা, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। কিন্তু এই "রাবিন্দ্রীক মানুষ" কথাটায় এক ধরণের শ্লাঘা ছিল। আচ্ছা, কেন এমন হয়? যারা কোন মহান ব্যক্তিদের অনুসরণ করেন, তাঁদের দেখানো পথকে পাথেয় করে জীবন কাটান, তাঁদের অনেকের প্রতি মানুষ কেন এমন বিরূপ ধারণা পোষণ করে? রবীন্দ্রনাথ বা সে অর্থে কোন মানুষই পারফেক্ট বা নিখুঁত নন। কিন্তু মানুষ বরাবরই পারফেকশন খোঁজে। আর এই পারফেকশন খুঁজতে গিয়ে সে তার নিজের ঈশ্বরকে তৈরি করে। তার ভাষায় যত পজিটিভ বিশেষণ আছে তাই দিয়ে সে তার ঈশ্বরকে সাজায়। কল্পনায় ঈশ্বরের নিখুঁত আদল গড়ে তোলে। বিভিন্ন ধর্মে ঈশ্বরের রূপ বিভিন্ন। কোথাও তিনি নির্মোহ বিচারক, কোথাও শাস্তিদাতা, কোথাও বা করুনাসিন্ধু। বিভিন্

আধুনিকতা

Image
সচেতন, সুশিক্ষিত, আধুনিক মানুষের সাথে সংস্কারাচ্ছন্ন, বিশ্বাসান্ধ মানুষের পার্থক্য কি? প্রথমজন বাস করেন আইনস্টাইনের জগতে, দ্বিতীয় জন নিউটনের। ব্যাপারটা একটু খুলে বলা দরকার। নিউটনের মহাবিশ্বে স্পেস-টাইম আবসলিউট যার কোনই পরিবর্তন নেই। চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-নক্ষত্র সেখানে নাটকের অভিনেতা অভিনেত্রী মাত্র যারা স্পেস-টাইম নামক এই রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করে যাচ্ছে। নিউটনের জগতের মানুষও একই ভাবে মনে করে তারা এই পৃথিবীতে, এই প্রকৃতিতে শুধুই অভিনেতা। তারা নিজেদের প্রকৃতির অংশ বলে গন্য করে না। ফলে এরা নির্দ্বিধায় প্রকৃতি ধ্বংস করে। প্রকৃতির ধ্বংস যে তাদেরও ধ্বংস করবে সেটা তারা বুঝতে পারে না। আইনস্টাইনের বিশ্বে স্পেস-টাইম আর ম্যাটার পরস্পরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। একে অন্যের প্রভাবে প্রভাবিত, কেউ কারও থেকে মুক্ত নয়। এতে যারা বিশ্বাস করে তারা নিজেদের প্রকৃতির অংশ বলেই ভাবে। তারা জানে নিজেদের অস্তিত্বের জন্যই প্রকৃতিকে রক্ষা করা কতটা প্রয়োজন। এরাই আধুনিক মানুষ, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ, সত্যিকার অর্থে সুশিক্ষিত মানুষ। এরা পরিবর্তনে বিশ্বাসী, এমন কি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অন্ধভাবে গ্রহণ না করে নতুন বাস্তবতার পরশ