গাধা ও মানুষ

অনেক দিন আগের কথা। তখন সমরখন্দের সুলতান ছিলেন প্রচণ্ড খামখেয়ালী। তবে তা হলে কি হবে, তিনি প্রতিভার দাম দিতে জানতেন। তার রাজ সভায় সে সময়ের অনেক জ্ঞ্যানীগুনী ব্যক্তির সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। তাঁর শুধু একটাই দুঃখ, প্রাণপ্রিয় গাধাটা গাধাই রয়ে গেল, মানুষ হল না। একদিন তাই তিনি সভাসদদের জিজ্ঞেস করলেন কেউ তাঁর গাধাকে মানুষ করতে পারবে কি না। কে নেবে এই দুরূহ কাজের ভার? ডাক পড়ল খোজা নাসরুদ্দীনের। খোজা সুলতানের কাছে পনেরো বছর সময় আর প্রতি বছর এক শ করে সোনার মোহর দাবি করলেন। একদিন এক বন্ধু সে কেন এই উদ্ভট কাজ হাতে নিল সেটা জিজ্ঞেস করলে খোজা নাসরুদ্দীন উত্তর দিলেন "পনেরো বছর বিশাল সময়। এর মধ্যে হয় সুলতান মারা যাবে না হয় গাধা মারা যাবে নয় তো সে নিজেই মারা যাবে।"
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার হয়েছে, হচ্ছে। এসব নিঃসন্দেহে খুশির খবর। এটা আমাদের মনে আশা জাগায় যে কোন অপরাধ এদেশে বিচার বহির্ভূত থাকবে না, কোন অপরাধী শাস্তি এড়াতে পারবে না। কিন্তু আমরা যদি শুধু সুদূর অতীতে ঘটে যাওয়া অপরাধের বিচার করেই সন্তুষ্ট থাকি তাহলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা কমাতে পারব না। কারণ অনেকেই তখন খোজা নাসরুদ্দীনের মত ভাববে যে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে দাঁড়াতে হয় সরকার বদলাবে নয়তো সে নিজেই মারা যাবে।
সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য চাল চোরদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা খুবই জরুরী। সেটা না হলে বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মোকাবেলায় প্রসাশন যে উদ্যোগটুকু নিয়েছে সেটা হিতে বিপরীত হবে।
দুবনা, ১৫ এপ্রিল ২০২০

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি