স্রোত
উহানে মৃতের সংখ্যা হঠাৎ ৫০% বেড়ে গেছে। সঠিক তথ্য লুকানোর জন্য চীনকে দায়ী করা ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের কথা চারিদিকে।
অ্যানি নামে এক মহিলা নারীর অধিকার নিয়ে কথা বললেও নিজেই কাজের সহযোগীর উপর অত্যাচার করেছে। কার দোষ? নারীবাদের।
লক ডাউনে আটকে পড়া গরীবের সাহায্যে পাঠানো চাল চুরি। এরা কারা? বিএনপি বা জামাত সমর্থক। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী।
লক ডাউন উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের জানাজায় অংশগ্রহণ। কে দায়ী? মৌলবাদ।
পিপিই না পেয়ে ডাক্তাররা চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কে দায়ী? ডাক্তার।
..................
এ রকম হাজার হাজার খবরে ভরে গেছে পত্রপত্রিকা, সামাজিক মাধ্যমের টাইম লাইন।
আচ্ছা, বলুন তো, উহানে তিন হাজার না পাঁচ হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মার গেল সেটা কী খুব বেশি পার্থক্য নিয়ে আসত? তিন হাজার সংখ্যাটা কি এতই ছোট যে করোনা ঠেকাতে আগে থেকে প্রস্তুত হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি বিভিন্ন দেশের প্রশাসন? এটা কি নিজেদের দুর্বলতাকে অন্যের ঘাড়ে চাপানো নয়? চীনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে কিন্তু সেটা যেন আমাদের নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত না হয়।
অ্যানি নামে এক নারীর ছবি ও ভিডিও দেখলাম অনেকের টাইম লাইনে। এ ঘটনা দুঃখজনক, নিন্দনীয়। আর এটা নিন্দনীয় যেকোনো পরিস্থিতিতেই। সেটা অ্যানি নারীবাদীই হোক আর নারী বিরোধীই হোক। সে পুরুষই হোক আর নারীই হোক। কিন্তু অনেকের পোস্টে যতটা না অন্যায়ের নিন্দা করা হচ্ছে তার চেয়ে বেশি করে নিন্দা করা হচ্ছে নারীবাদ, বাম রাজনীতি ইত্যাদিকে। ভাবখানা এই অ্যানি নারীবাদী না হলে, বাম রাজনীতির সাথে জড়িত না থাকলে এসব কাজ জায়েজ হয়ে যেত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া আর বরগুনার দুই জানাজায় লক ডাউন উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষের সমাগম। কে দায়ী? ধর্ম, ধর্মীয় উন্মাদনা, আওয়ামী লীগ ইত্যাদি। কিন্তু কেন এটা হচ্ছে? আমরা নিজেরাই কি গত পঞ্চাশ বছরে ধরে আইনকে বুড়া আঙ্গুল দেখিয়ে আসিনি? আর এটা আমরা সবাই মিলেই করেছি। কী সরকার, কী বিরোধী দল, কী জনগণ - সবাই। মাত্র কিছুদিন আগে করোনার মধ্যে নির্বাচনের প্রহসন করেছি। দল বেঁধে মাস্ক বিতরণ করেছি। হাজার হাজার মানুষকে ঢাকায় নিয়ে এসেছি কাজের কথা বলে। আইন অমান্য করা করোনার মতই সংক্রামক। সময় মত বাধা না দিলে আরও বড় আকারে আইন ভাঙ্গা হয়। নির্বাচন করে, দল বেঁধে মাস্ক বিতরণ করে, সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকায় যারা এনেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে দেশ তো একটাই মেসেজ দিয়েছে - তোমরা যা খুশি করে যাও, প্রশাসন চোখ বন্ধ করে থাকবে।
রিলিফের চাল যারা চুরি করল সেই চুরির নিন্দা না করে আমরা চোরের ধর্ম-বর্ণ-জাতি-দল এসব নিয়ে ব্যস্ত আছি। ভাবটা এমন "চাল চোর সে কি চোর না অন্য দলের চর" সেটা প্রমাণ করাই আসল উদ্দেশ্য।
মন্ত্রনালয় সময় মত পিপিই সরবরাহ করতে পারল না। এ জন্যে রুগীরা চিকিৎসা না পেলে কে দায়ী? ডাক্তার। কেন মন্ত্রী নয়? তারা সমালোচনার ঊর্ধ্বে।
সব দেখে মনে হয় আমাদের সবার কাজ একটাই - দোষী খোঁজা, খুঁজে বের করে নিজের দোষটা অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমানো। যদি আমরা এই খেলা থেকে নিজেদের বের করে আনতে না পারি তবে এসব ঘটনা পূব আকাশে সূর্য ওঠার মতই দৈনন্দিন হয়ে উঠবে।
দুবনা, ২০ এপ্রিল ২০২০
Comments
Post a Comment