করোনা ভাবনা
আজকাল অনেককেই দেখি লিখছে
"আর মাত্র দুদিন বা পাঁচদিন তারপরেই সব ঠিক হয়ে যাবে।" মা বলতেন
"মানুষ আশার দুয়ারে বান্দা খাটে।" হ্যাঁ, আশাবাদী হওয়া ভালো, তবে
আশাভঙ্গ হলে মানুষ যাতে হতাশ না হয়, সেটাও মনে রাখা দরকার।
আমি হতাশার কথা বলছি না। মানুষ হতাশ নয়। সবাই আলোর অপেক্ষায়। মনে পড়ে একাত্তরের কথা। বড়দের প্রায়ই বলতে শুনতাম, "ঝড় শেষ হয়, কিন্তু এ যুদ্ধের দেখি আর শেষ নেই।" সেই যুদ্ধও শেষ হয়েছিল, দীর্ঘ নয় মাস পরে। দীর্ঘ নয় মাস প্রসব বেদনার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে দীর্ঘ অপেক্ষার। এই দুর্যোগ একদিন কাটবেই। তখন আমাদের সৈনিক ছিল মুক্তিযোদ্ধারা আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ছিল সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর। এখন করোনা যুদ্ধের সৈনিক আমাদের ডাক্তার আর চিকিৎসা কর্মীরা। আমরা সাধারণ মানুষ ঘরে থেকে এই সৈনিকদের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারি, হতে পারি এই যুদ্ধে তাদের সত্যিকারের সহকর্মী।
যদি গত নভেম্বরকে এই বিশ্বযুদ্ধের শুরু হিসেবে ধরা হয়, এখন তার বয়স পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এর মোকাবিলা করা হচ্ছে। এ তো আর ক্ল্যাসিকাল যুদ্ধ নয়, গেরিলা যুদ্ধ। তাই স্থান কাল পাত্র ভেদে এর কৌশল ভিন্ন। চীন সহ বিভিন্ন দেশে ছিল শক্ত লক ডাউন। ইতালী, স্পেন, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকায় প্রথমে সব ছিল ঢিলেঢালা। ফলে খুব দ্রুত রুগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, বহু রুগী মৃত্যু বরণ করে। রাশিয়ায় খুব টাইট ফিট লক ডাউন প্রথমে ছিল না। এরা চেষ্টা করেছে পিক দ্রুত আসতে না দিয়ে সেটাকে দীর্ঘায়িত করতে। তাতে যেমন নতুন হাসপাতাল গড়ার সময় পাওয়া যাবে তেমনি রুগীর রাশ কন্ট্রোলের মধ্যে থাকলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সুবিধা হবে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ - ৬ হাজার করে নতুন রুগী আসছে। আজ পর্যন্ত (২৪ এপ্রিল) মোট টেস্ট হয়েছে ২৫২০৩৫। কেস পজিটিভ ৬৮৬২২, সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরেছে ৫৫৬৮, মারা গেছে ৬১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রুগীর সংখ্যা ৫৮৪৯, আরোগ্য লাভ করেছে ৬৭৭ জন, মারা গেছে ৬০ জন। এটা ভালো না মন্দ? টেস্টের দিক দিয়ে রাশিয়া এখন দ্বিতীয় স্থানে, আমেরিকার পরেই। টেস্টের সাথে সাথে বাড়ছে রুগীর সংখ্যা। এতে করে একটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল ছবি পাওয়া যাচ্ছে আর তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। তবে এটা ঠিক রুগী সনাক্ত করার একটাই উপায় – টেস্ট, বিশেষ করে যখন অনেকের দৃশ্যত কোন সিম্পটন নেই।
আমি হতাশার কথা বলছি না। মানুষ হতাশ নয়। সবাই আলোর অপেক্ষায়। মনে পড়ে একাত্তরের কথা। বড়দের প্রায়ই বলতে শুনতাম, "ঝড় শেষ হয়, কিন্তু এ যুদ্ধের দেখি আর শেষ নেই।" সেই যুদ্ধও শেষ হয়েছিল, দীর্ঘ নয় মাস পরে। দীর্ঘ নয় মাস প্রসব বেদনার মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল বাংলাদেশ। আমাদের অভিজ্ঞতা আছে দীর্ঘ অপেক্ষার। এই দুর্যোগ একদিন কাটবেই। তখন আমাদের সৈনিক ছিল মুক্তিযোদ্ধারা আর সেই মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ছিল সাধারণ মানুষের বাড়ি ঘর। এখন করোনা যুদ্ধের সৈনিক আমাদের ডাক্তার আর চিকিৎসা কর্মীরা। আমরা সাধারণ মানুষ ঘরে থেকে এই সৈনিকদের আশ্রয় হয়ে উঠতে পারি, হতে পারি এই যুদ্ধে তাদের সত্যিকারের সহকর্মী।
যদি গত নভেম্বরকে এই বিশ্বযুদ্ধের শুরু হিসেবে ধরা হয়, এখন তার বয়স পাঁচ মাস পেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এর মোকাবিলা করা হচ্ছে। এ তো আর ক্ল্যাসিকাল যুদ্ধ নয়, গেরিলা যুদ্ধ। তাই স্থান কাল পাত্র ভেদে এর কৌশল ভিন্ন। চীন সহ বিভিন্ন দেশে ছিল শক্ত লক ডাউন। ইতালী, স্পেন, ইংল্যান্ড, অ্যামেরিকায় প্রথমে সব ছিল ঢিলেঢালা। ফলে খুব দ্রুত রুগীর সংখ্যা বেড়ে যায়, বহু রুগী মৃত্যু বরণ করে। রাশিয়ায় খুব টাইট ফিট লক ডাউন প্রথমে ছিল না। এরা চেষ্টা করেছে পিক দ্রুত আসতে না দিয়ে সেটাকে দীর্ঘায়িত করতে। তাতে যেমন নতুন হাসপাতাল গড়ার সময় পাওয়া যাবে তেমনি রুগীর রাশ কন্ট্রোলের মধ্যে থাকলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সুবিধা হবে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৫ - ৬ হাজার করে নতুন রুগী আসছে। আজ পর্যন্ত (২৪ এপ্রিল) মোট টেস্ট হয়েছে ২৫২০৩৫। কেস পজিটিভ ৬৮৬২২, সুস্থ্য হয়ে ঘরে ফিরেছে ৫৫৬৮, মারা গেছে ৬১৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন রুগীর সংখ্যা ৫৮৪৯, আরোগ্য লাভ করেছে ৬৭৭ জন, মারা গেছে ৬০ জন। এটা ভালো না মন্দ? টেস্টের দিক দিয়ে রাশিয়া এখন দ্বিতীয় স্থানে, আমেরিকার পরেই। টেস্টের সাথে সাথে বাড়ছে রুগীর সংখ্যা। এতে করে একটা স্ট্যাটিস্টিক্যাল ছবি পাওয়া যাচ্ছে আর তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হচ্ছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। তবে এটা ঠিক রুগী সনাক্ত করার একটাই উপায় – টেস্ট, বিশেষ করে যখন অনেকের দৃশ্যত কোন সিম্পটন নেই।
অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগছে পিক
টাইম দীর্ঘায়িত করে লাভ হল না ক্ষতি হল? বিশেষ করে যখন দিনে ৫০ - ৬০ জন করে মারা যাচ্ছে। ইংল্যান্ডে প্রথমে লক
ডাউনের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে যাতে অনেক লোক দ্রুত অসুস্থ্য হয়ে সোশ্যাল ইমিউনিটি গড়ে
তুলতে পারে। এখানে উল্লেখ করা দরকার মানুষের শরীর অনেকটা নিউটনের তৃতীয় সূত্র মেনে
চলে, যদিও আক্ষরিক ভাবে নয়। তাই মানুষ যখন অসুস্থ্য বা ভাইরাস আক্রান্ত হয়, তার শরীর
অটমেটিক্যালি তার বিরুদ্ধে প্রতিরধ গড়ার চেষ্টা করে, অনেকটা আমাদের সেই যার যা আছে
তাই নিয়ে পাক বাহিনীকে রুখে দাঁড়ানোর মত। এভাবেই শরীরে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। এটাই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউন। বলে রাখি, আমি এ
ব্যাপারে বিশেষ ভাবে অজ্ঞ, তাই কথাটা বলছি পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে। তাই অসুস্থ্য
হয়ে সামাজিক ইমিউন তৈরি বেশ বিপদজনক। ভ্যাকসিন আসলে আমাদের শরীরে নিয়ন্ত্রিত ডোজে ভাইরাস
ঢুকিয়ে শরীরে প্রতিরধ ক্ষমতা গড়ে তোলা। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনকে বলা যায় যদি আমরা শত্রুর
আক্রমণের অপেক্ষা না করে আগে থেকেই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতাম। ফিরে আসি করোনা যুদ্ধক্ষেত্রে। যার যা আছে তাই নিয়ে
শত্রুর মোকাবিলার বিলেতি পদ্ধতি খুব সফল হয়েছে
বলে মনে হয় না। কিন্তু সমস্যা হল, যদি রাশিয়ায় শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা অনেক
বেশি হয়, মূল্যটা কি বেশি হবে না? কারণ আমরা প্রায় এক মাস কারেন্টেইনে। এটা এক
বিশাল মানসিক চাপ। অনেক মানুষই দিনের পর দিন ঘরে বসে থাকে, কিন্তু সেটা যখন তাকে
করতে হয় বাধ্য হয়ে তখন তার মানসিক চাপ প্রচণ্ড। এই চাপ থেকে সবাই কি সুস্থ্য ভাবে
বেরিয়ে আসতে পারবে? লক ডাউন যতই দীর্ঘ
হচ্ছে মানুষের অর্থনৈতিক আবস্থা ততই খারাপ হচ্ছে। শুধু মানুষ কেন, দেশেরও। সেটাও
মানুষকে চিন্তামুক্ত থাকতে দিচ্ছে না। আরও যে ব্যাপার মনে হয় কোন দেশই তেমন
গুরুত্বের সাথে নেয়নি প্রথম দিকে সেটা ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যাপক
সংক্রামণ। এক বা দুই মাসে নতুন হাসপাতাল গড়া যায়, ডাক্তার গড়া যায় না। যদি দীর্ঘ
সময় ধরে পিক আটকে বা নিয়ন্ত্রনে রাখা হয়, এতে প্রচুর ডাক্তার হারানোর সম্ভাবনা
থাকে। রাশিয়ায় এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা নগন্য, কিন্তু এরা যেহেতু হাই রিস্ক জোনে,
কতদিন সেটা ধরে রাখতে পারবে সেটাও ভাবার বিষয়। আর ডাক্তারদের হারালে সেটা যে
চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিপর্যয় ডেকে আনবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এসবের বাইরে আছে ভবিষ্যতের ভাবনা।
আজকাল অনেকেই, অনেক নামীদামী বিশেষজ্ঞরা পোস্ট করোনা সময়ের যে ছবি আঁকছেন তাতে
সাধারণ মানুষ আশার আলো কমই দেখছে। অনেকে চিন্তিত দেশে দেশে সরকার সর্বক্ষণ তাদের
গতবিধির উপর নজরদারি করবে। কিন্তু সেটা কি এখনই হচ্ছে না? আজকাল তো মনে হয় আপনি কি
চান সেটা নিজে যতটা না জানেন তার চেয়ে বেশি জানে গুগল বা অন্য কোন প্রোগ্রাম। হারারি
এই ম্যানিপুলেশনের একটা ভয়ানক চিত্র এঁকেছেন, কিন্তু প্রশ্নটা হল, তথাকথিত টোটাল
কন্ট্রোল ছাড়াই কি বর্তমান সরকার বা সরকারকে দিয়ে যারা নেপথ্য থেকে কলকাঠি
নাড়াচ্ছে তারা আমাদের মত সাধারণ মানুষের ভাগ্য
নিয়ন্ত্রণ করছে না? লোকজন ভগবান তাদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে বলে বিশ্বাস করে।
কিন্তু এই ভগবান কি আসলে পর্দার আড়ালে থাকা সেই কিছু মানুষ নয় যারা শুধু সাধারণ
মানুষের ভাগ্য নয়, দেশের, সমাজের ভাগ্য পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে?
একটা প্রশ্ন আজকাল প্রায়ই মনে
জাগে। বিগত কয়েক দশকে বিশেষ করে ০৯-১১ এর পর থেকে ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া সহ
বিভিন্ন দেশে কম মানুষ তো মরেনি। সাদ্দামের হাতে তুলনামুলক ভাবে কম লোক মারা যাবার
পরেও পশ্চিমা বিশ্ব যে সোরগোল তুলল সেটা কি মার্কিন বোমায় শত গুণ বেশি মানুষ মরার
পর হয়েছিল? তৃতীয় বিশ্বে সন্ত্রাসী হামলায় হাজার হাজার মানুষ মারা যায়, সেটা কেউ
দেখেও দেখে না। কিন্তু ইউরোপ অ্যামেরিকায় দু চার জন মারা গেলেই এ নিয়ে শুরু হয়
তুলকালাম কাণ্ড। কেন যেন মনে হয় করোনা যদি পথ ভুলে বা জাল ভিসা নিয়ে ইউরোপ
অ্যামেরিকায় না গিয়ে চীন হয়ে রাশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ইরান ইত্যাদি
দেশে সীমাবদ্ধ থাকত পশ্চিমা বিশ্ব করোনার অস্তিত্বই স্বীকার করত না, এটাকে এসব
দেশের শাসকদের অযোগ্যতা বলে চালিয়ে দিত। বিশেষ করে অ্যামেরিকা সব সময়ই ছিল ধরা
ছোঁয়ার বাইরে। ৯-১১ প্রথম বারের মত প্রমাণ করল অ্যামেরিকার দুর্বলতা বা
ভুলনেরেবিলিটি। এর জন্যে তখন বিশ্বকে কম মুল্য দিতে হয়নি। আফগানিস্তান, ইরাকের বাইরেও
ছিল আরব বসন্ত। কিন্তু ইরাক বা লিবিয়াকে গেলেও করোনাকে তো আর ড্রন বা সুপারসনিক
মিশাইল দিয়ে ধ্বংস করা যায় না! একে ধ্বংস করা যায় না অর্থনৈতিক এম্বার্গ আরোপ করে।
ফলে মহা শক্তিশালী দেশগুলোকেও লেজ গুটিয়ে নিতে হয়েছে। এটা নতুন করে প্রকাশ করেছে
এসব সিস্টেমের দুর্বলতা। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে থাকায় সে দেশের পতন দেখার
দুর্ভাগ্য হয়েছিল। এমন কি ১৯৯১ সালের ১৫ আগস্ট কেউ যদি বলত যে ১৯ তারিখে ক্যু হবে
সেটাকে সবাই পাগলের প্রলাপ বলে মনে করত। অন্তত সে দেশের সাধারণ মানুষ। দু মাস আগেও
যদি কেউ বলত ইতালী, স্পেন বা অ্যামেরিকায় হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মারা
যাবে, সেটাও কেউ বিশ্বাস করত না। এসব ঘটনা প্রমাণ করে সব সাম্রাজ্যই ভঙ্গুর।
পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে যুগের সাথে বদলাতে না পারলে কোন কিছুই টিকে থাকে না।
সোভিয়েত ব্যবস্থার পতনের মূল ছিল অনমনীয় আমলাতন্ত্র। সেটা অ্যামেরিকার ক্ষেত্রেও
আমরা দেখি। কূটনীতি নয় সামরিক, অর্থনৈতিক আর মাস মিডিয়ার শক্তি ব্যবহার করে
প্রতিপক্ষকে, ভিন্নমতকে সমূলে দমন করার যে নীতি পশ্চিমা বিশ্ব, বিশেষ করে
অ্যামেরিকা প্র্যাকটিস করছিল বিগত সময়ে সেটা প্রমাণ করে এসব দেশের রাজনীতির
দুর্বলতা। সেই দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে প্রথমে ট্রাম্পের আগমন আর পরে ট্রাম্পের হাত
ধরে এসেছে করোনা।
আজকাল আমরা প্রায়ই ধর্ম
ব্যবসায়ীদের পিণ্ড চটকাই এই বলে যে তারা যুগের সাথে বদলায় না। আর তাই এই কারও রগ
কাটে তো কারও হাত। এমন কি বেদম পিটিয়ে কাউকে কাউকে মেরেও ফেলে। সন্ত্রাসী হামলার কথা
নাই বা বললাম। এক সময় অবশ্য ধর্মের নামে শুনেছি লাখ লাখ মানুষ খুন হয়েছে।
সামন্তবাদ থেকে পুঁজিবাদে উত্তরণের সময় কম লোক প্রাণ হারায়নি। একই ঘটনা ঘটেছে
সমাজতন্ত্রের আগমনকে কেন্দ্র করে। এখন তো গণতন্ত্র রক্ষার জন্য ওয়াগন ওয়াগন জনগণ
মুহূর্তের মধ্যে পরকালে চালান করা হয়। আসলে আমাদের মানব সমাজ প্রায় সব দিক থেকে
সভ্যতার এমন এক পর্যায়ে অবস্থান করছে যে এখান থেকে নীচে পড়া প্রায় অসম্ভব। একটাই
ভরসা, করোনা যদি এখন আমাদের উপরে ওঠার রাস্তা করে দেয়।
উঁচু শ্রেনীর লোকজন সমাজতন্ত্রকে,
বিশেষ করে সাম্যবাদ মানে কম্যুনিজমকে বরাবরই খুব ভয় পায়। এজন্যেই করোনাকে নিয়ে
স্বর্গ রাজ্যে এত হুলস্থুল। করোনা সাম্যবাদের মতই ধনী গরীব সবাইকে এক করে দিয়েছে।
ভগবানকে পর্যন্ত ঘুষ দেওয়া যায় কিন্তু করোনাকে - কক্ষনো না। আর এতেই সব গণ্ডগোল।
তবে আমার কেন যেন মনে হয় এই করোনার লক ডাউন আমাদের জীবনকে নতুন করে দেখতে শেখাবে।
তবে সেটা পরের ব্যাপার। এখন দরকার বর্তমান অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা। এটা আর সব
কিছুর মতই। আমরা যখন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখি সেই স্বপ্নকে মাথায়
রেখে প্রতিদিন স্কুলের পড়াশুনা করি। একটু একটু করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাই
যতক্ষণ না ভবিষ্যতটা বর্তমানে পরিণত হয়। করোনা পরবর্তী সমস্যা সমাধানে আমাদের
প্রস্তুতি নিতে হবে ঠিকই কিন্তু এই মুহূর্তে প্রথম ও প্রধান কাজ এই সমস্যাটা পার
করে দেওয়া। এটা যে খুব সহজ তা নয়। বছরের এই সময় অসুখ বিসুখের সময়। সর্দিটা বা
কাশিটা যখন তখন আসে, যখন তখন চলে যায়। আগে মানুষ এ নিয়ে মাথাই ঘামাত না। কিন্তু এখন
সে একটু সতর্ক হয়, ভাবে ডাক্তার দেখাবে কি দেখাবে না। না দেখালেও নিজের অজান্তেই
নিজের শারিরীক অবস্থার প্রতি নজর রাখে। এখন মানুষ নিজের টাই বা মেক আপের সাথে সাথে
নিজের শরীরের দিকেও গুরুত্বের সাথে তাকায়। এভাবেই
করোনা প্রতিদিন আমাদের ব্যবহারে একটু একটু করে পরিবর্তন আনছে। তাই করোনা পরবর্তী
সময়ে মানুষ যে শুধু বিগ ব্রাদার্সের টোটাল কন্ট্রোলে পড়বে তাই নয়, সে নিজেকেও
নিজেই কন্ট্রোল করবে। আর এই পরিবর্তনটা যদি শাসক আর শাসিত নির্বিশেষে সবার মধ্যেই
আসে সেটা হারারি বর্ণিত চিত্র না হয়ে ভিন্ন চিত্রও হতে পারে। তবে পোস্ট করোনা বিশ্ব
যে আগের চেয়ে ভিন্ন হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেটা ভালো না মন্দ হবে তা
সম্পূর্ণ রূপে নির্ভর করে আমাদের উপর।
আমার এখনও মনে আছে একাত্তরের বিজয় পরবর্তী
সময়ের কথা। সবাই না হলেও সমাজের এক বিশাল অংশ যুদ্ধের আগুনে শুদ্ধ হয়ে নতুন মানুষ হিসেবে
স্বাধীন দেশে প্রবেশ করেছিল। করোনাও আমাদের সেই সুযোগ করে দিচ্ছে। আমাদের শেখাচ্ছে সহমর্মী হতে। একাত্তরের সেই আবেগ আমরা খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে ফেলে দেশকে উল্টো পথে চালিয়েছিলাম। আশা করি বর্তমান শিক্ষা আমাদের বহুদূর যেতে, বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ গড়তে সাহায্য করবে।
দুবনা, ২৪ এপ্রিল ২০২০
দুবনা, ২৪ এপ্রিল ২০২০
Comments
Post a Comment