শূন্যের দাম

দীর্ঘ ৯ বছর পর গতকাল আমেরিকা থেকে নভোচারীদের নিয়ে SpaceX ইতিমধ্যেই বায়ুর সাগর পাড়ি দিয়ে ISS এ গিয়ে পৌঁছেছে। যে ব্যাপারটা নিয়ে সবাই প্রচণ্ড উত্তেজিত সেটা হল মহাশূন্যে এটাই প্রথম বানিজ্যিক ফ্লাইট। এটা ইলন মাস্কের ব্যবসায়িক ভিত্তিতে মহাশূন্যে লোক পাঠানোর পরিকল্পনার পথে প্রথম পদক্ষেপ। "That's one small step for (a) man, but one giant leap for mankind." চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করে নীল আর্মস্ট্রং একথা বলেছিলেন। অনেকের কাছে আজকের ঘটনাও তাই। ১৯৬১ সালের ১২ এপ্রিল ইউরি গ্যাগারিন যখন মহাশূন্যের দোর খুলে অজানার পথে পা বাড়ান সেটাও ছিল এমন একটিই পদক্ষেপ। কিন্তু তখন সেসব রাজনৈতিক ডামাডোলে হারিয়ে যায়, মহাশূন্য বা চন্দ্রবিজয় মানুষের জয় হিসেবে না দেখে দেখা হয় সমাজতান্ত্রিক বা পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জয় পরাজয় হিসেবে। এখন হয়তো সেসব আদর্শিক লড়াই নেই। সব দেশের সব আদর্শের মানুষ আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে দীর্ঘ দিন ধরে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে। এমন কি যখন রাশিয়া ও আমেরিকার মধ্যে নতুন করে বৈরিতা শুরু হয়েছে, তখনও মহাকাশের উদার আশ্রয় তাদের একসাথে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আশা করা যায় গতকালের ফ্লাইট মানব জাতির জন্য সত্যিই বিশাল পদক্ষেপ। কিন্তু প্রশ্ন হল ইলন মাস্ক সব কিছুর উপর একজন ব্যবসায়ী। এটা তাঁর বানিজ্যিক পরিকল্পনার একটা অংশ মাত্র। আর সেটা যদি হয় সাধারণ মানুষ এতে কি পাবে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত একটু লাফানোর সুযোগ ছাড়া। অবশ্য এটাও ঠিক, এই সুযোগে বিলিয়ন ডলার ম্যানরা যদি পৃথিবী ছেড়ে চাঁদ বা মঙ্গলের উদ্দেশ্যে চিরতরে রওনা হয়, সেটা কিছুটা হলেও সাধারণ মানুষের জন্য শান্তি নিয়ে আসবে। আরও ভালো হয় যদি ইলন সাহেব রাজনীতি ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের ৫০% কনসেশন দিয়ে তাদেরও ভিন গ্রহে পাঠিয়ে দেন। তবে সেটা বড় কথা নয়। সমস্যা হল মাস্কের পথ ধরে এখন যদি অন্য ব্যবসায়ীরা মহাকাশ অভিযানে নামেন আর মহাকাশকে জানার বিভিন্ন মিশন যেমন চন্দ্র, হাবল, প্লাঙ্ক ইত্যাদিও বানিজ্যিক পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে নেন, তাহলে বিগত কয়েক দশক মহাকাশ পর্যবেক্ষণে যে আশাতীত উন্নতি হয়েছিল, সেটা ক্ষতিগ্রস্থ হতে মাধ্য। তাছাড়া অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে মহাকাশ ভ্রমণ বায়ুমণ্ডলের উপর কতটুকু প্রভাব ফেলবে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। এর মধ্যে অনেকেই প্রশ্ন করছেন, বায়ুমণ্ডলে কৃত্রিম উপগ্রহের জনসংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে কিছুদিনের মধ্যে মহাকাশ গবেষণার জন্য তথ্য সংগ্রহ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই মহাকাশের বুকে গতকালের বিশাল পদচিহ্ন দেবতার না দানবের সেটা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা কষ্ট।

দুবনা, ৩১ মে ২০২০



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি