ছাত্র শিক্ষক

আজ ক্লাসে গিয়ে দেখি গড়ের মাঠ। কাক পক্ষীর টিকিটি পর্যন্ত নেই কোথাও। ইউরি একা দাঁড়িয়ে। ও হলের দায়িত্বে। 

সকালে ছিল কয়েক জন। হয়তো খেতে গেছে। একজন ব্যাগ রেখে গেছে। আসবে নিশ্চয়ই।

আমি গ্রুপ ক্যাপ্টেনকে লিখলাম। ওদের আজ দুবনায় এক্সকারশন। চেয়েছিল আমি যেন থাকি। ওখানে ওদের কোলাইডার দেখাবে। ইচ্ছে ছিল। কিন্তু যেহেতু গ্রুপের খুব কম সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ওখানে যাবে তাই আমি মস্কো এসেছি ক্লাস নিতে। 

কি ব্যাপার? কোথায় সবাই?
আমরা কয়েকজন দুবনা যাচ্ছি। অন্যদের তো থাকার কথা। আপনি অপেক্ষা করুন। আমি বলছি ওদের।

প্রায় আধাঘণ্টা পরে এক ছেলে এল। নাইজেরিয়ার। ওর অবশ্য ইচ্ছে ছিল ব্যাগ নিয়ে চলে যাবার। কিন্তু আমি তো ছাড়বার পাত্র নই। 

কোন ভাষায় পড়াব? রুশ না ইংলিশ?
ইংলিশ। 

ক্লাস শেষ হল। ওদের সাথে আমার আরও দুটো ক্লাস। অন্য হলে।

তুমি ওখানে যাও। আমি আসছি।
আচ্ছা। 

কিছুক্ষণ পরে ক্লাসে গিয়ে দেখি কেউ নেই।  
আবার অপেক্ষার পালা ‌ আসলে আমাকে অপেক্ষা করতেই হবে। এরপর আমার পিএইচডি স্টুডেন্ট আসবে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যাচ্ছি ডিপার্টমেন্টের দিকে। দেখা হল ইনস্টিটিউটের ডাইরেক্টরের সাথে।

কি ব্যাপার, ওরা আজ দুবনা যায়নি?
গেছে কয়েকজন। বাকিরা পালিয়েছে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে।
আচ্ছা আমি দেখছি। 

উনি চলে গেলেন এর সুরাহা করতে। আমি ডিপার্টমেন্টে। কিছু দূর গিয়ে সেই ছেলের সাথে দেখা।
 
আমি আপনার জন্য ৫৩৩ নম্বরে অপেক্ষা করছিলাম। 
ক্লাস ছিল ৫৪৮ এ। ঠিক আছে চলো ক্লাস করা যাক। 
আমি আজ আর পারব না। সেই সকাল ৯ থেকে ক্লাসে। 
তাহলে কি করব?
আমার একটা প্রশ্ন ছিল। 
বল। 
আপনি আমাদের ক্লাস ইংলিশে নিলে সুবিধা হয়।
আমি তো প্রথম দিন এটা জানতে চেয়েছিলাম। ঠিক আছে। প্রথম ক্লাস রুশে কারণ ওখানে ছাত্র-ছাত্রী বেশি। তৃতীয় ক্লাসে তোমরা এলে আমি ইংলিশে ব্যাখ্যা করব। 
ঠিক আছে। আমি অন্যদের সাথে কথা বলে জানাব। 

মনে পড়ল ছাত্রজীবনের কথা। তখন মিনিমাম সুযোগেই ক্লাস ফাঁকি দিতাম আর শিক্ষকরা অপেক্ষা করতেন আমাদের জন্য। এখন রোল বদলে গেছে। আমি অপেক্ষা করছি। তবে এটা ঠিক তখন ক্লাস ফাঁকি দিলে লাইব্রেরীতে বসে সেদিনই পড়াটা কভার করতাম। আজকাল তেমন করে না। সবকিছুর পরেও এটা সত্য যে ছাত্ররা সব যুগেই ছাত্রর, শিক্ষকরা শিক্ষক। মানুষ বদলায় কিন্তু রোল, চরিত্র কমবেশি একই রকম থেকে যায়।

দুবনার পথে, ২০ মার্চ ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা