সুর অসুর
এ আর রহমান বিখ্যাত নজরুল গীতি কারার ঐ লৌহ কপাট গানে নতুন সুর আরোপ করেছেন। এই নিয়ে ফেসবুক তোলপাড়। একারণেই ইউটিউবে গানটি খুঁজে শুনলাম। মানুষ নতুন যে কোন জিনিস গ্রহণ করে তার অভিজ্ঞতার আলোকে। তাই চাই বা না চাই এ গানের মূল সুরের সাথে একটা তুলনা এমনিতেই চলে আসছিল। এই আপেক্ষিক মহাবিশ্বে আমরা তুলনা না করে কোন কিছু নিতে পারি না। এমনকি একই গান একাধিক শিল্পী গাইলে আমরা তাদের মধ্যেও তুলনা করি। এখানে তো একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষিত। নিজেকে প্রশ্ন করলাম যদি মূল সুরে গানটি শোনা না থাকত তাহলে এই সুর কেমন লাগত? যদি ভাষা না জানতাম হয়তো খারাপ লাগত না। কারণ গান শুধু সুর নয়, কথাও। সেই কথাগুলো কিভাবে বলছি তার উপর নির্ভর করে অর্থ। সুরের কারণে কিছু কিছু শব্দ একাধিক বার উচ্চারণ করায় আর ইনটোনেশন বা স্বর পরিবর্তন করায় বাক্যগুলো অর্থ হারিয়েছে বলে মনে হয়েছে। বাঙালি হিসেবে যে বিষয়গুলো আমার কাছে সামনে চলে এসেছে ভিনদেশীদের কাছে সেটা নাও হতে পারে। এ আর রহমানের অধিকার ছিল কি না এই গানে নতুন সুর আরোপ করার। আইনগত বাধা না থাকলে তিনি সেটা করতেই পারেন। দর্শক বা শ্রোতা গ্রহণ করবে কি না সেটা ভবিষ্যত বলতে পারবে। দিনের শেষে মানুষই ঠিক করে কোন সুর টিকে থাকবে আর কোনটা হারিয়ে যাবে। বর্তমান যুগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে কোন কিছু বাজার থেকে সরিয়ে ফেলা যায় না। বরং এধরণের ঘটনার মধ্য দিয়ে নজরুল বা রবীন্দ্রনাথ যদি আরেকটু বেশি মানুষের আলোচনায় চলে আসেন তাতে ক্ষতি কি? আমরা যদি যখন কেউ রবীন্দ্রনাথ বা নজরুল বা অন্য কারো গানে সুর আরোপ করে তখন প্রতিবাদ করি আর অন্য সময় তাদের সৃষ্টি রক্ষার ব্যাপারে, তা সে সুর বিকৃতিই হোক আর শব্দ পরিবর্তন হোক, নির্লিপ্ত থাকি, তাহলে শুধু এ আর রহমান নয়, পাড়ার যে কেউ সেটা করবে। আরও একটা কথা, কারার ঐ লৌহ কপাট গানের মধ্যেই আছে পরিবর্তনের আহ্বান, ভাঙার আহ্বান। সেটাও যেন আমরা ভুলে না যাই।
মস্কো, ১১ নভেম্বর ২০২৩
Comments
Post a Comment