সাম্প্রদায়িকতা

যদি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের দিকে তাকাই দেখব সাম্প্রদায়িকতা ছিল এর চালিকা শক্তি। উপমহাদেশে যে এর আগে সাম্প্রদায়িক সমস্যা ছিল না তা নয়, তবে পাকিস্তানের স্বপ্নদ্রষ্টারা এটাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। কোলকাতা কিলিং থেকে নোয়াখালী, লাহোর, দিল্লি ও অন্যান্য স্থানের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত, রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার। রাজনীতির বাজারে সাম্প্রদায়িকতা এখনও হট কেকের মত বিক্রি হয়। প্রায় সব রাজনৈতিক দলই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সাম্প্রদায়িকতা কেনাবেচা করে। শুধুমাত্র মৌলবাদী দল নয়, প্রায় সব দল পক্ষে বা বিপক্ষে বলে সাম্প্রদায়িকতা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করে, সাম্প্রদায়িকতা জীইয়ে রাখে। আওয়ামী লীগ হোক আর বিএনপি হোক, কংগ্রেস হোক আর বিজেপি হোক, পিপিপি হোক আর মুসলিম লীগ হোক - উপমহাদেশের সমস্ত প্রধান প্রধান দলই ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতা নিজেদের এজেন্ডায় রাখে। যুদ্ধ যেমন গঠনমূলক কাজে সমস্ত ব্যর্থতা, সমস্ত ধরণের করাপশন আড়াল করতে সাহায্য করে সাম্প্রদায়িক ইস্যুও তেমনি রাজনৈতিক দলগুলোর, তা সে ক্ষমতাসীন হোক আর বিরোধীই হোক, সমস্ত ধরণের ব্যর্থতা ঢাকতে সাহায্য করে। যুদ্ধ যেমন বিভিন্ন দেশের সরকারকে সমর্থনকারী বিভিন্ন বৃহৎ শিল্প বিশেষ করে মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যবসা প্রসারে সহায়তা করে সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র জাতীয়তা তেমনি পেছন থেকে সরকারকে সমর্থন করা বিভিন্ন প্রভাবশালী গোষ্ঠীর ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যতদিন পর্যন্ত যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতা এসব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ডিভিডেন্ড বয়ে আনবে ততদিন এসব থাকবে। এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসার একটাই পথ - ধর্ম বা জাতি নয়, শোষকের বিরুদ্ধে লড়াই করে, শোষণকে জয় করেই কেবলমাত্র নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব এই শিক্ষায় মানুষকে শিক্ষিত করা। অন্য যেকোনো পথ সমস্যার আংশিক সমাধান।


দুবনা, ১৮ জুলাই ২০২২




Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা