লিগেসি

 

কে কি বিশ্বাস করত বা না করত তারচেয়েও বড় কথা ভারতীয়
উপমহাদেশ স্বাধীন হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে। যদি সেই তত্ত্বের ডাইরেক্ট প্রোডাক্ট হয় পাকিস্তান, ভারত হল তার বাইপ্রোডাক্ট। পাকিস্তান জন্ম নেয় দ্বিজাতি তত্ত্বকে সামনে রেখে, এই তত্ত্বকে জন্ম নিবন্ধন করে, ভারত না চাইলেও এই তত্ত্ব প্রয়োগের কারণেই জন্ম নেয়। এমনকি পরবর্তী কালে বাংলাদেশও সেই জন্মদাগ থেকে মুক্তি পায়নি। পাবে না। বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে মুক্তি পেলেও এই অঞ্চলের মূল দলগুলো বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ১৯৪৭ থেক ১৯৭১ পর্যন্ত কখনই দ্বিজাতি তত্ত্বকে অস্বীকার করেনি। সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা গ্রহণ করলেও জনগণের কাছে সেটা কখনই পরিষ্কার ভাবে ব্যাখ্যা করেনি। আমার ধারণা এ দেশের অধিকাংশ মানুষের কাছেই হিন্দু মুসলমান প্রশ্ন সেই ১৯৪৭ সালেই মীমাংসিত হয়ে গেছিল। ফলে কি একাত্তরের আগে কি তার পরে সাধারণ মানুষ কথায় কথায় ভারতকেই হিন্দুদের দেশ বলে উল্লেখ করত। শুধু তাই নয়, এটা তারা সর্বান্তকরণে বিশ্বাস করত, এখনও করে। বাঙালি জাতীয়তাবাদ এ দেশে আসলে বাঙালি মুসলমানের জাতীয়তাবাদে পরিণত হয়। সেটা হয় রাজনৈতিক ভাবেই। কারণ দ্বিজাতি তত্ত্ব ধর্মের নামে হলেও সেটা সব সময়ই রাজনৈতিক ইস্যু ছিল আর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্যই সেটা সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইসলাম তার জন্মলগ্ন থেকেই অন্যান্য ধর্মকে অস্বীকার করে এসেছে এবং সমস্ত মানুষকে ইসলামের পতাকা তোলে আনার লক্ষ্যে কাজ করে গেছে। সেদিক থেকে দ্বিজাতি তত্ত্ব কতটা ইসলামিক সেটাও প্রশ্ন সাপেক্ষ। তবে যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশের সব দেশই তাদের জন্মের জন্য এই তত্ত্বের কাছে ঋণী তাই আমাদের যুগ যুগ ধরে দ্বিজাতি তত্ত্বের লিগেসি বয়ে বেড়াতেই হবে। যতদিন পর্যন্ত না এই তিন দেশের মানুষ, তাদের নেতৃবৃন্দ সেই ঘটনার পর্যালোচনা করবে এবং পরস্পরের সাথে বন্ধুত্ব ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করার অঙ্গীকার করা সহ সেটা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেবে আর প্রতিটি দেশের সরকার জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সমস্ত নাগরিকের নাগরিক অধিকার রক্ষার জন্য এই তিন দেশের সরকার ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ হবে ততদিন এসব চলতেই থাকবে। আসলে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ সংখ্যাগরিষ্ঠের সবলতা নয়, এটা তাদের দুর্বলতা। যখন সংখ্যাগরিষ্ঠ বা সবল নিজের সমস্যা সমাধানে অক্ষম হয় তখনই সে তার নিজের ব্যর্থতার ঝাল মেটায় দুর্বলের উপর আঘাত করার মধ্য দিয়ে।

দুবনা, ১৭ জুলাই ২০২২



 

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা