অধিকার

 

দ্রৌপদী মুর্মু (Draupadi Murmu) ভারতের পঞ্চদশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন। যদিও ভারতের ক্ষমতার প্যান্থেনিয়নে প্রধানমন্ত্রীই প্রধান তবুও রাষ্ট্রপতিই দেশের প্রথম নাগরিক। ভারতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন আর এক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ, আঞ্চলিকতা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বিজেপি হিন্দু মৌলবাদী দল হিসেবে পরিচিত হলেও অটল বিহারী বাজপাই এর শাসনামলেই এ পি জি আব্দুল কালাম ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন জাতি ধর্ম নির্বিশেষে প্রায় সমস্ত ভারতীয়দের অন্যতম প্রিয় রাষ্ট্রপতি। আবার এই বিজেপিই এবার আদিবাসী সাওতাল সম্প্রদায়ের একজনকে দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করল। জানি এর আগে ফখরুদ্দীন আহমেদ বা এ পি জি আবদুল কালাম নির্বাচিত হলেও ভারতীয় মুসলমানদের অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটেনি যেমন অবস্থার পরিবর্তন আফ্রো আমেরিকানদের বারাক ওবামা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াতে। তারপরেও এটাও এক ধরণের স্বীকৃতি। এটাও রাষ্ট্রের অন্তর্নিহিত চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। এমন মনে করার কারণ নেই যে প্রধানত উচ্চ বর্ণের ব্রাহ্মনদের দ্বারা শাসিত ভারতে অন্য কোন ধর্ম বা বর্ণের কাউকে দেশের প্রধান পদের অধিষ্ঠিত করার বিরোধীদের অভাব ছিল, তারপরেও বিজেপির মত একটা রাজনৈতিক দলের এ ধরণের পদক্ষেপ প্রমাণ করে যে সে তারা এ ধরণের সাহসী পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা বোধ করে না। এখানেই হয়তো মৌলবাদী বিজেপির সাথে সেক্যুলার আওয়ামী লীগের পার্থক্য। আওয়ামী লীগ কোন দিনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাউকে দেশের রাষ্ট্রপতি বানানোর সাহস করবে না। শুধু আওয়ামী লীগ কেন বাংলাদেশই করবে না। এটা করলে হিন্দু বা সংখ্যালঘুদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়তো হবে না, কিন্তু বাহ্যিক ভাবে হলেও দেশের চরিত্রের গুণগত পরিবর্তন এটা আনতে পারে। এখানে আরেকটা জিনিস খেয়াল করলাম যে দ্রৌপদী মুর্মুর এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রকমের স্ট্যাটাস দিচ্ছে লোকজন। কেউ কেউ আদিবাসী উপজাতির প্রতিনিধি হিসেবে এই নির্বাচনকে স্বাগত জানাচ্ছে আবার কেউ কেউ বিজেপির রাজনৈতিক চাল বলে ব্যাপারটাকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। কিন্তু তিনি যে একজন মানুষ, সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে একাকী লড়াই করে এতদূর পর্যন্ত উঠে এসেছেন সেটা কারও কথায় উঠে আসছে না। যেন তাঁর নিজের কোনই কৃতিত্ব নেই এতে, তাঁর নারীত্ব, তাঁর উপজাতীয় ব্যাকগ্রাউন্ড আর বিজেপির রাজনৈতিক চাল এটাই যেন সব। কিন্তু বাস্তবতা এই যে তাঁকেও কিন্তু প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ভারতীয় নারী বা ২০০ মিলিয়ন আদিবাসীদের সাথে প্রতিযোগিতা করে এখানে আসতে হয়েছে আর এটা তিনি করেছেন নিজের যোগ্যতার বলেই। ওনার এই বিজয় হয়তো ভারতের ২০০ মিলিয়ন আদিবাসীর অবস্থার তেমন কোন পরিবর্তন ঘটাবে না তারপরেও এই নির্বাচন একদিকে যেমন রাষ্ট্র হিসেবে ভারত যে এখনও একেবারে ইউ-টার্ন নেয়নি সেটা প্রমাণ করে একই সাথে তা ভারতের কোটি কোটি পিছিয়ে পড়া মানুষের মনে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাবে। আশা করি একদিন আমরাও এ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের দেশে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারব। শুধু ভারত নয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভুমিসন্তানেরা অবহেলিত। নিজ ভূমে তারা পরদেশী। আশা করব নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতির সাফল্য দেশে দেশে ভূমি সন্তানদের উদ্দীপ্ত করবে। এদের অনেকেই নতুন বাস্তবতাকে গ্রহণ করে নতুন জীবন গড়ে তুলবে। শুভকামনা!

দুবনা, ২৩ জুলাই ২০২২ 



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা