লেখকস্ফীতি

ছোটবেলায় কবি সাহিত্যিকদের মনে হত ভিন্ন গ্রহের মানুষ। এদের জন্ম হত শহরে। গ্রামে তখন কবি সাহিত্যকদের চাষ হত বলে জানা ছিল না। তাই অন্য রকম এক বিস্ময় ছিল তাদের নিয়ে। এমনকি টুকিটাকি লিখলেও নিজেদের কখনই কবি বা লেখক মনে হত না। আমার অনেক বন্ধুই লেখালেখি করতেন। লতিফ সিদ্দকী তো ছিল খুব ভাল লেখক। তবে এমনকি কলেজে পড়াকালীন সময়েও আমার চোখে অধ্যাপক সৈকত আসগর ছিলেন একমাত্র জীবিত কবি যাকে চাক্ষুস দেখেছি।

আজকাল অবশ্য উন্নয়নের হাওয়া সব জায়গায়। অনেক কিছুর মত কবি সাহিত্যিকদেরও বাম্পার ফলন বাংলাদেশে। যে দিকে তাকাই শুধু কবি আর কবি, লেখক আর লেখক। এমনকি অনেকে তো নামের আগে কবি বা লেখক টাইটেল লাগান। তারপরেও অনেককে বলতে শুনি দেশে নাকি কবি সাহিত্যিকদের দাম নেই, মর্যাদা নেই। কেউ বই কিনে না। ১৭ কোটি মানুষের দেশে বই কেনতে কেউ আগ্রহী নয়। কেন? মনে হয় সবাই লেখে তাই কেউ পড়ে না। রুশ দেশে চুকচা বলে এক জাতি আছে। ওদের নিয়ে আছে বিভিন্ন চুটকি। তার একটা - চুকচা পাঠক নয়, চুকচা লেখক। মনে নয় আমরাও পাঠক নই, আমরা লেখক। অথবা এমন হতে পারে অতি ফলনে যেমন বাজারে শস্যের দাম কমে যায় লেখক কবির আধিক্যে বাজারে এদের মূল্য কমে গেছে, মুদ্রাস্ফীতির মত লেখকস্থীতি দেখা দিয়েছে বাংলাদেশে। তবে দুঃখের বিষয় একটাই। এত লেখক কবির পদচারণায় মঞ্চ কাঁপলেও বাংলা ভাষার উন্নতি ঘটছে না, আমরা বই ছাপাতে যত যত্নশীল ভাষার বিকাশে ততটা যত্নশীল নই। আশা করি কবি লেখকরা এ ব্যাপারে মনযোগী হবেন, লেখার পাশাপাশি জনগণ যাতে বাংলাটা শেখে সেদিকে নজর দেবেন।

দুবনা, ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা