ধর্মের রাজনীতি, রাজনীতির ধর্ম

আমাদের দেশগুলোয় রাজনীতি আর ধর্ম যাকে বলে সিয়ামিজ ট্যুইন্স মানে সংযুক্ত যমজ। যতই চেষ্টা করুক এদের আলাদা করা প্রায় অসম্ভব। কেন? এটাও মনে হয় আমাদের সংস্কৃতিতেই নিহিত। প্রাচীন কাল থেকেই ধর্ম প্রচারকরা ছিলেন গুরুর ভূমিকায়, তাঁদের কথা ছিল ঈশ্বর বাক্য, তা সে যে ধর্মই হোক না কেন। পরবর্তীতে রাজনৈতিক নেতারাও গুরুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন নিজেদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায়। বুদ্ধ, যিনি নিজে ঈশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন না আমাদের লোকজন তাকেই ভগবান বানিয়ে ছেড়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে পশ্চিমা শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক রাজনীতিবিদদের সাথেও। গান্ধী, নেহেরু, জিন্নাহ, সুভাষ বোস এরাও কি অনেকটা দেবতার মতই পূজিত নন। শেখ মুজিব, জিয়া এরাও তো এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। রাজনৈতিক নেতারা হয়ে যাচ্ছেন অবতার আর তাদের কথা বেদ বাক্য। আমরা নেতাদের দেবতার আসনে বসাচ্ছি, তাদের পূজা করছি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে। সেটা যে কোন নেতাকে যেভাবে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয় সেদিকে তাকালেই বোঝা যাবে। এমন কি যেসব ধর্মীয় নেতারা বা ধর্ম ব্যবসায়ীরা পূজা পার্বণের বিরুদ্ধে অনবরত বিষোদগার করে তারাও নিজেদের অজান্তেই সমর্থকদের ভক্তিতে আপ্লুত হয়ে দেবতার আসনই গ্রহণ করে। তাই ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, গুরু ভক্তি এসব আমাদের শিরায় শিরায়। মানুষ দেবতাকে প্রশ্ন করে না, তাঁর কাছে প্রার্থনা করে, তাঁর বাক্য বিনা প্রতিবাদে মেনে নেয়। এই যে হাজার হাজার মানুষ নেতাদের কথায় বিনা বাক্য ব্যয়ে হাজার হাজার মানুষকে মারছে, কাটছে সেটাই কি প্রমান করে না আমাদের সমাজ, আমাদের সাধারণ মানুষের মন ধর্মের দ্রবণে এমনভাবে দ্রবীভূত যে একে নতুন জ্ঞানে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে শুকোতে কয়েক প্রজন্ম পার হয়ে যাবে? বর্তমান অচলাবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে সমাজ নয়, মানুষকেই পাল্টাতে হবে।

দুবনা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি