হাড় ও হারের মল্লযুদ্ধ

একদা এক বাঘের গলায় হার ফুটিল।
বাঘের গর্জনে সমস্ত বন মুহুর্মুহু কাঁপিয়া উঠিল। ব্যাকুল প্রাণীকুল ভয়ে সন্ত্রস্ত হইয়া এদিক সেদিক দৌড়াইতে লাগিল। ইহাতেও যখন বাঘের তর্জন গর্জন বন্ধ হইল না, তাহারা একে একে বাঘপ্রাসাদের সামনে জড়ো হইতে লাগিল। অনেক বুদ্ধি পরামর্শ করিয়া একদল পশু করজোড়ে বাঘের সম্মুখে হাজির হইয়া কারণ কি জানিতে চাহিলে বাঘ হালুম বলিয়া চিৎকার করিল। ভীত প্রানী সকল চারিদিকে ছিটকাইয়া পড়িল। কিন্তু উহারা খেয়াল করিল বাঘের মুখ হইতে উজ্জ্বল জ্যোতি বাহির হইতেছে, তাই ভয় সত্বেও উৎসাহী পশুর অভাব হইল না। তাহারা হুমড়ি খাইয়া বাঘের মুখ গহ্বর নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। বাঘের গলায় মনি মুক্তা খচিত হার দেখিয়া তাহারা যার পর নাই আনন্দিত হইল। রাজার গৌরবময় কীর্তিতে তাহাদের বুক ফুলিয়া উঠিল, তাহারা বাঘের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হইয়া উঠিল। প্রশংসার তৈলে সিক্ত গলা ও মন কিছুটা নরম হইলে  বাঘ কিছুটা উপশম বোধ করিল। বাঘ শান্ত হইল। প্রানী সকল বাঘের গলার হারের মনি মুক্তার আকার, আকৃতি, রঙ, বর্ণালি ইত্যাদির বিশ্লেষণ করিয়া নিজেদের মধ্যে তুমুল বিতণ্ডা বাধাইয়া দিল। সময়ের সাথে সাথে বাঘের গলার ব্যাথা ফিরিয়া আসিল। বাঘ আবার তর্জন গর্জন শুরু করিল। ভীত প্রাণীকুল উহা হইতে শত হস্ত দূরে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ মনে করিল। আরও অনেকক্ষণ তর্জন গর্জন করিয়া ক্লান্ত বাঘ অবশেষে রনে ক্ষান্ত দিয়া কাতরাইতে লাগিল। এইবার প্রানীকুলের ভুল ভাঙ্গিতে শুরু করিল। উহারা বুঝিল বাঘের গর্জন আসলে বিজয়ের দম্ভ নহে, নিতান্তই আর্তের মিনতি। উহারা আবার বাঘপ্রাসাদে ফিরিয়া গেল। ভাবিতে লাগিল কীভাবে বাঘকে বিপদ হইতে উদ্ধার করা যায়। অনেক চিন্তার পর তাহারা শিয়াল মামার শরণাপন্ন হইল। শিয়াল মামা সমস্ত কিছু পর্যবেক্ষণ করিয়া কহিল

সমস্যা। মহা সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের কাজ একেবারে গোঁড়া হইতে শুরু করিতে হইবে। তাহা না করিলে শুধু বাঘরাজ নহে, আমাদের  প্রানীকুলের যে কেহই ভবিষ্যতে এমন সমস্যার সম্মুখীন হইতে পারে।

তাহা তো বুঝিলাম। তুমি বল আমাদের কি করিতে হইবে।

ব্যকরন শিখিতে হইবে। হারের সাথে হাড়ের পার্থক্য বুঝিতে হইবে। একমাত্র সঠিক শিক্ষাই তোমাদের বুঝাইতে সক্ষম হইবে হাড় হারাইলে বাঘরাজকে হারের কাছেও হার মানিতে হয়। তাই আসল কথা হইল কোন হার গলায় দিতে হইবে আর কোন হাড় খাইতে হইবে সেই ব্যাপারে কোন রকম ভুল না করা। তাই আস আমরা শুরু করি

একদা এক বাঘের গলায় হাড় ফুটিয়াছিল
এই হাড় যে খুলিতে পারিবে তাহাকে মনি মুক্তার হার উপহার দেওয়া হইবে বলিয়া বাঘ ঘোষণা করিল।

দুবনা, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ 


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি