বুদ্ধি

১৯৯৪ সালের ১৮ মে আমি যখন দুবনায় কাজে জয়েন করি তখন এখনকার মত ঘরে ঘরে কম্পিউটার, সেলফোন বা স্মার্টফোন ছিল না। মস্কোয় বউ, বাচ্চাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যম ছিল টেলিফোন। তবে সেটা ছিল ব্যয় সাপেক্ষ।‌ আমাদের ইনস্টিটিউটে তখন কিছু কিছু টেলিফোন ছিল যেখান থেকে বিনে পয়সায় মস্কো ফোন করা যেত, তবে সেটা ছিল খুব কম অফিসেই। আমি তখন যে অফিসে বসতাম তার উল্টো দিকে ছিল প্রফেসর বিলায়েভের অফিস। ওনার ওখানে এরকম একটা টেলিফোন ছিল। কখনো কখনো আমি ওখান থেকে মস্কো বাসায় ফোন করতাম। 

সে বছর সামারে পের্ম থেকে কিছু কলিগ এল। আমরা বেশ রাতে ফিরতাম। একদিন দেখি ওরা বিলায়েভের অফিস থেকে ফোন করছে।

তোমরা এখানে ঢুকলে কি করে? 

ঐ রুমে তালা ছিল না, ছিল কোড। দীর্ঘ ব্যবহারে তিনটে নম্বর ঝকঝক করছে। বলল

দেখ, এখানে মাত্র ছয়টি কম্বিনেশন। তাই তালা খোলা মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার।

দুবনায় কখনো তেমন গরম পড়ে না। বছরে সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন তাপমাত্রা ২৫ ছাড়িয়ে যায়। এসব দিনে ইচ্ছে করে এসি চালাতে। কিন্তু কুকুরদের সর্দি লাগবে বলে গুলিয়া সেটা চালাতে দেয় না। কয়েক দিন আগে গুলিয়া নীচে বাগানে কাজ করতে গেলে আমি দিব্যি সেটা চালিয়ে দিলাম আর ওর আসার শব্দ পেয়ে এসি অফ করে ঘুরতে গেলাম ভোলগায়। তবে অপরাধের সব চিহ্ন মুছতে ভুলে গেছি। বাসায় ফেরার পর হৈচৈ। কুকুররা হাঁচি কাশি দিচ্ছে। দেখা গেল সব কটা জানালা বন্ধ। 

তুমি এসি চালিয়েছিলে? 

প্রচন্ড গরম।

যদি ওরা অসুস্থ হয় চিকিৎসার সব খরচ তোমার। 

পরের দিন গুলিয়া মস্কো গেল। দেখি রিমোট উধাও। আন্তনকে বললাম চেয়ারে দাঁড়িয়ে এসি অন করতে। এখন আর দোষ দিতে পারবে না। রিমোট নেই, এসি চালাব কীভাবে?

প্রফেসর বিলায়েভের কথা মনে পড়ে গেল অনেক দিন পরে।

দুবনা, ২৫ আগস্ট ২০২৩

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা