হাসান আজিজুল হক


গত সোমবার থেকে টাইম লাইনে একের পর এক স্ট্যাটাস আসছে কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে। কিছু কিছু স্ট্যাটাসে তাঁর মত লেখকের ততটা জনপ্রিয় না হওয়ার কারণ হিসেবে পাঠকদের অপরিপক্কতাকে দোষারোপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে।

বাড়িতে সবার নিজ নিজ লাইব্রেরি ছিল, নতুন বই বেরুলেই সেটা কারও না কারও সংগ্রহে যোগ হত, তাই তাঁর বই যে বাড়িতে ছিল তাতে সন্দেহ নেই, তবে আগে তাঁর লেখা পড়েছি কিনা বা দেশে থাকতে তাঁর নাম বা লেখার সাথে পরিচিত ছিলাম কিনা
সেটা আমি ঠিক মনে করতে পারছি না ।   

হাসান আজিজুল হকের কথা অনেক শুনেছি (দ্বিজেন) কাকুর মুখে। হয়তো রাজশাহীর বন্ধুরা, মানে শাওন, সুস্মি ওরাও কখনও বলেছে, তবে কাকুর বলাটাকেই খুব ভাল ভাবে মনে আছে। কাকু তাঁকে হাসান বলে বলতেন আর আমি এই হাসান হাসান হাফিজুর রহমান কিনা সেটা জানতে চাইলে কাকু বলতেন, না, উনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসান আজিজুল হক। ২০১৬ সালে যখন কাকু একাত্তরের উপর আমার লেখা দেখে বই প্রকাশের কথা বলেন সেই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, তুমি লেখাটা শেষ কর, আমি হাসানকে বলব এর উপর কিছু লিখতে। তবে বইয়ের সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি কাকু দেখে যেতে পারেননি, বইটাও দেশ থেকে বের করা সম্ভব হয়নি।

ভারতবর্ষের ইতিহাস, বিশেষ করে  ভারত বিভাগের ইতিহাস আমাকে সমসময়ই খুব টানে, তাই এর উপর বই হাতে এলেই পড়ার চেষ্টা করি। ওদিকে বেড়াতে গেলে কেউ যখন জানতে পারে যে আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, তখন অনেকেই এসে তাদের ফেলা যাওয়া দিনের কথা, দেশের কথা বলতে শুরু করে। আর এসব কারণেই গত বছর একটা নোট লিখে জানতে চেয়েছিলাম পূর্ববাংলা থেকে দেশত্যাগী হিন্দুরা যেমন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে চলে আসা মুসলিমরাও তাদের ফেলে আসা দেশের জন্য নস্টালজিক হয় কিনা। কেননা তখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন মুসলমান লেখকের বই আমার পড়া ছিল না। সেই সুবাদেই অনেকে হাসান আজিজুল হকের আগুনপাখি পড়ার জন্য বলে। তাই বলতে গেলে আগুনপাখির মধ্য দিয়েই কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হকের সাথে আমার পরিচয়। তাঁর লেখা পড়েই দেশ ভাগের সময়ে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম সমাজের অবস্থার কথা অনেকটাই জানা হয়।

আমার পড়ার  বিষয় বা লেখক নির্বাচন বেশ স্পেসিফিক। দস্তয়েভস্কি, কাম্যু, কাফকা, সারত্রে – এদের লেখাই আমাকে বেশি টানে। তবে জীবনী, ঐতিহাসিক ঘটনার উপর লেখা এসবও গোগ্রাসে গিলি। এমনকি দেশ ভাগের ইতিহাসের উপর প্রচণ্ড আগ্রহ থাকার পরেও আগুনপাখি পড়তে বেশ অসুবিধা হয়েছিল। কিছু কিছু শব্দ, কিছু কিছু বাক্য আমি শেষ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। এর মানে এই নয় যে ওনার লেখা দুর্বোধ্য বা আগুনপাখির সাহিত্য মূল্য কোন অংশে কম। আসলে লেখকের যেমন নিজস্বতা আছে লেখায়, পাঠকেরও তেমনি স্বকীয়তা আছে পড়ায়। তাই জনপ্রিয়তা দিয়ে লেখকের মূল্য নির্ধারণ করা অর্থহীন।

আমাদের মত সাধারণ
মানুষের জীবন যদি  সময়ের অক্ষে শুধুমাত্র একটা রেখাংশ যা মৃত্যুর সাথে সাথেই শেষ হয়ে যায়, সৃজনশীল মানুষের ক্ষেত্রে এই রেখা মৃত্যুর পরেও এগিয়ে চলে, এগিয়েই চলে তাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে। আমার বিশ্বাস হাসান আজিজুল হক তাঁর নশ্বর জীবনের ইতি টানলেও অবিনশ্বর হয়ে থাকবেন তাঁর লেখায়। তিনি বেঁচে থাকবেন আগুনপাখি হয়ে। আর এখানেই একজন লেখকের বড় সার্থকতা।

 

দুবনা, ১৭ নভেম্বর ২০১৭ 

 


 

 

 

Comments

  1. উপসংহারটির তুলনা হয় না!

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ হামিদ ভাই!

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি