দেশ

তোমাদের ওখানে একটু আরাম করতে পারি?
ওয়েলকাম হোম।
থ্যাঙ্ক ইউ।

বুধবার আমি যখন সাঁতার কাটতে যাই, সাউনায় আমার বন্ধুরা থাকে না। অন্যেরা সেখানে থাকে। তাই ওখানে বসতে চাইলে অনুমতি নেই।

তুমি কোত্থেকে?
বাংলাদেশ থেকে।
সেখানে নিশ্চয়ই এমন ঠাণ্ডা পড়ে না।
পড়ে, তবে মাইনাস হয় না।
দেশে যাও?
কালেভদ্রে। আর তাই তো সাওনায় আসি। কিছুটা হলেও দেশের স্বাদ পাওয়ার জন্য।
সেজন্যেই তো আমি তোমাকে ওয়েলকাম হোম বললাম।

সাওনায় তাপমাত্রা থাকে ৯৫ থেকে ১০০ সেন্টিগ্রেড। যদিও দেশে এতটা গরম পড়ে না, তার পরেও কি যেন একটা মিল আছে। সরাইখানার মত এখানেও সবাই মন খুলে কথা বলে। যদি কাজে আমরা কাজ নিয়েই কথা বলি, এখানে বিভিন্ন রকমের কথা হয়। রাজনীতি থেকে শুরু করে সামাজিক অনেক বিষয়, টুকিটাকি চুটকি। এক কথায় সুইমিং পুল আর সাওনায় বেশ অন্য রকম পরিবেশ। তাছাড়া ওখানকার বর্ণহীন হোমোজেনাস পরিবেশে একটু রঙের ছোঁয়াচ লাগাই আমি। এইতো আজ এক ছোট বাচ্চা আমাকে দেখিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করছিল
মা, আঙ্কেল এত ময়লা কেন?
দাড়াও, স্নান করে নিই, দেখবে ধবধবে সাদা হয়ে গেছি। - অপ্রস্তুত মাকে উদ্ধার করতে আমি বললাম।

কিছুদিন আগে স্বপ্নে সাঁতার কাটছিলাম আর পাশে ছিল সোনালি এক সাপ। এখন সাঁতার কাটতে গেলেই ওর কথা মনে পড়ে। আর কেন যেন যখনই সাঁতার কাটতে যাই মনে পড়ে আহসানের মুখ। ওর ঝাঁকড়া চুল আর সিগারেট টানার দৃশ্য। আজ হঠাৎ করেই মনে পড়ল মুড়ির টিনের কথা। মুড়ির টিন - মান্ধাত্বা আমলের বাস। ঝকর ঝকর করে চলত আমাদের রাস্তায়। কেন মনে পড়ল জানি না। না, ওর জন্য কোন নস্টালজিয়া ছিল না। এক ধরণের বীতশ্রদ্ধা ছিল এই মনে পড়ায়।

সাওনা থেকে বেরিয়ে স্নান করে হলে ঢুকলাম। সামনে বিশাল আয়না। সেখানে নিজেকে দেখালাম জন্মদিনের পোশাকে। আঁকাবাঁকা হাড্ডিগুলো এখান সেখান থেকে উঁকি দিচ্ছে। দেখি পেছনে বসে আছে প্রাণ বাবাজী। হাসছে আমার দিকে তাকিয়ে, যেন বলতে চাইছে
তুমি মুড়ির টিনকে ঘেন্না করছ আর আমি বছরের পর বছর এই জীর্ণ শীর্ণ কুঁড়ে ঘরে জীবন যাপন করছি, সেটা ভেবে দেখেছ?
সেটাও ভাবার বিষয়। আর কিছুদিন অপেক্ষা কর। তারপর না হয় তোমার জন্য একটা নতুন বাসা বুকিং দেব। - আশ্বাস দিলাম আমি ভড়কে যাওয়া প্রাণকে।

দুবনা, ২০ জানুয়ারি ২০২২ 
 
 

 


Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি