Posts

স্বাবলম্বী

Image
একান্নবর্তী পরিবার ভিন্ন হওয়া সবসময়ই ট্র্যাজেডি, তারপরেও পরিবার ভেঙে যায়। ভাঙে ভবিষ্যত নিয়ে বিভিন্ন সদস্যের বিভিন্ন ধারণা থেকে। আগে অধিকাংশ মানুষ নিজ নিজ এলাকার বাইরে নিজেকে নিয়ে তেমন ভাবতে পারত না, ফলে ভিন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া ছিল বেশ বেদনাদায়ক। এখন অধিকাংশ মানুষ কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় থাকে তাই ফর্মালি ভিন্ন হবার আগেই ভিন্ন হয়ে যায়। তারপরেও সম্পত্তি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই বিতর্ক বা মনোমালিন্য হয়। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনকি নিজে উদ্যোগী হয়ে ভিন্ন হলেও যে পৈত্রিক ভিটা ছেড়ে চলে যায় সে নিজেকে বঞ্চিত মনে করে। দেশ ভাগের ক্ষেত্রেও মনে হয় এটাই ঘটে। ভারত বিভক্ত হয়েছিল ধর্মীয় কারণে। যারা পাকিস্তান চেয়েছিল তারা সব জেনেই দিল্লির মসনদ ত্যাগ করেছিল। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে নতুন দেশ গড়েছিল অধিকাংশ মানুষের কাছে সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেছে। ফল স্বরূপ নিজেদের ব্যর্থতার জন্য সব দায় তারা চাপাতে চাইছে ভারতের ঘাড়ে। ভারতের মানুষ যে দুধে ভাতে আছে তাও না। সেখানেও নিজেদের ব্যর্থতার দায় আংশিক ভাবে চাপাচ্ছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের উপর। মজার ব্যাপার হল স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদে...

তোতা ও হাঁস

Image
অনেক আগে একসময় আমার খুব থুথু ফেলার বদভ্যাস ছিল। একদিন গ্রামের হাটখোলায় বসে বসে তোতার চাটাই বানানো দেখছি আর থুথু ফেলছি। - বিজন, তোমার মুখ তো দেখি হাঁসের পাছার মত। হাঁস যেমন একটু পর পর হাগে তুমি ঠিক সেভাবেই থুথু ফেলে যাচ্ছ। তোতার ঐ কথা ছিল ধন্বন্তরী ওষুধের মত। এরপর থুথু ফেলতে গেলেই তোতার মুখ আর হংসের পশ্চাৎদেশ চোখের সামনে ভেসে উঠতে।ওতেই আমার থুথু ফেলা বন্ধ হয়ে যায়। নির্বাচন ও আওয়ামী নিষিদ্ধ প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা দেখছি দুই দিন পর পর কথা বদলাচ্ছেন। তাই কেন যেন তোতার কথা আর হাঁসের পশ্চাৎদেশের কথা মনে পড়ল। উনিও হয়তোবা একই রোগের রুগী। মস্কো, ২৩ জুন ২০২৫

প্রশ্ন?

Image
ইরানের ভেতরে ইসরাইল যেভাবে নিজেদের নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে তাতে আবারও প্রমাণিত হয় সেখান সরকার বিরোধী শক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী। ইরানের শাসনব্যবস্থা যে পরিবর্তিত হওয়া উচিত এ বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। সেখানে সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান চর্চা এগিয়ে গেলেও ধর্মীয় শাসন মানবাধিকারের সাথে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক। আধুনিক বিশ্বে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু কথা হল এই অবস্থা থেকে মু্ক্তির উপায় কি? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের সহযোগিতায় মুক্তি আসে না, আসে পরাধীনতা। এদের হাতে ইরান ইসলামী শাসন থেকে মুক্তি পেলেও নব্য ঔপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে রক্ষা পাবে কিনা সে প্রশ্ন থেকেই যাবে। আর মুক্তি যদি পায় তাহলে ইরান তার বর্তমান ভৌগলিক সীমারেখা রক্ষা করতে পারবে নাকি বহুজাতিক এই অঞ্চলে একাধিক নতুন দেশ জন্ম নেবে সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মহাবিশ্বে এন্ট্রোপি শুধু বাড়তেই পারে তাই কোন দেশে শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা যে সার্বিক ভাবে বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি করবে না সে গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। আসলে ইরানের উপর আক্রমণ শুধু ইরানকে শিক্ষা দেবার জন্য নয় ইউনিপোলার বিশ্ব ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা...

চরিত্র

Image
শীত প্রধান দেশ হওয়ায় রাশিয়ার অধিকাংশ স্থাপনায় দুটো করে দরোজা থাকে। ফলে স্থাপনায় ঢোকার সময় কেউ একজন আপনার জন্য দরোজা খুলে দিলে আপনি প্রায় সাথে সাথে দ্বিতীয় দোরোজায় তার ঋণ শোধ করতে পারেন। এটা আসসালামুয়ালাইকুম ও ওয়ালাইকুম সালামের ১০ ও ৫ ছোঁয়াবের কথা মনে করিয়ে দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙনের পরে একদল নেতাকর্মী সিপিবি থেকে বেরিয়ে যায়, আরেক দল নতুন করে পার্টি গুছিয়ে অন্যদের সংশোধনবাদী ট্যাগ দেয়। এখন সেই গোষ্ঠীর মূল নেতারা সিপিবি ভাঙন যজ্ঞে ঘি ঢালছে বলে খবরে প্রকাশ। রোল চেজ্ঞের পালা। রোলের বাংলা চরিত্র। চরিত্র বদল। ছোটবেলায় পড়েছিলাম সমাজতন্ত্র হল পুঁজিবাদকে বাইপাস করে সাম্যবাদে পৌঁছুনর পথ। এ নিয়ে রিগ্যান গরবাচভকে নাকি বলেছিলেন যে সমাজতন্ত্র হল পুঁজিবাদে পৌঁছুনর প্রচণ্ড কঠিন ও ঘোরা পথ। আমাদের অনেক কমরেডদের(?) লেখা পড়লে মনে হয় তারা সিপিবির সংকুল পথে বেয়ে মৌলবাদে উত্তীর্ণ হবার বৃথা চেষ্টা করছে। বৃথা - কারণ এরা কখনোই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না। আর বিশ্বাসীরা বিশ্বাস না করলে সেখানে অবস্থান জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। দুবনা, ২০ জুন ২০২৫

গলা

Image
আমি কখনোই না সাদ্দাম হোসেনের, না মুয়াম্মার গাদ্দাফীর, না বাশার আল আসাদের, না শেখ হাসিনার - কারো ফ্যান ছিলাম না। বরং বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছি। অনেকেই ইরান আর ইসরাইলের যুদ্ধে ইরানের মোল্লাতন্ত্রের পতনের আভাস পেয়ে উচ্ছ্বসিত। আমি উল্টো ভীত। না, এ জন্যে নয় যে আমি এই মোলাতন্ত্রের সমর্থক। কিন্তু ঘরপোড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় আমারও সেই অবস্থা। সাদ্দামের পতনে অনেককেই খুশি হতে দেখেছি এক অত্যাচারী বিদায় নিল বলে। কিন্তু অত্যাচারীর সাথে সাথে কি অত্যাচার বিদায় নিয়েছে? নেয়নি। বরং ইসলামিক স্টেটের মত আরও ভয়ঙ্কর অত্যাচারী জন্ম নিয়েছে। গাদ্দাফীর বিদায়ে কি সেদেশের মানুষের অবস্থার এতটুকু উন্নতি ঘটেছে? মনে হয় না। বরং দেশটি আজ ধ্বংসের সম্মুখীন। একই অবস্থা সিরিয়ায়। আফগানিস্তানের কথা বাদই দিলাম। আমাদের দেশের দিকেই তাকালে কি দেখব? আবার সেই স্বৈরাচার। আগে ছিল এক জনের এখন একদল মানুষের। মবের স্বৈরাচার কিন্তু সর্বহারার একনায়কত্ব নয়। বর্তমানের শাসকদের দেশের প্রতি সামান্যতম মায়া আছে বলে মনে হয় না। এরা দেশের ইতিহাসের প্রতি নিজেদের দায়বদ্ধ বলে মনে করে না। যদি আগে তবুও দুই এক...

সন্ধি

Image
দেবতা আর দানবের মধ্যে সন্ধি হয় না। এমনকি দু'দল মিলে সমুদ্র মন্থন করে অমৃত আহরণ করলেও সেই অমৃতই হয় নতুন কলহের কারণ। সব সমস্যার মূলে তাই এক দলের নিজেদের দেবতা বলে ঘোষণা করে অন্যদের দৈত্য বলে ট্যাগ করা। ইউরোপ, আমেরিকা, ইসরাইল বা তাদের দোসররা যখন বেসামরিক লোক হত্যা করে সেটা হয় গণতন্ত্র দেবতার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি কিন্তু ইরান, রাশিয়া, চীন বা অন্য কোন দেশ সেটা করলে তা হয় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, হয় দানবীয় কাজ। যতদিন না তথাকথিত সভ্য সমাজ অন্যদের সভ্যতাকে শ্রদ্ধা করার মত সভ্য হবে ততদিন সভ্যতার এই দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে আর আমরা একটু একটু করে পারমানবিক আর্মাগেডনের দিকে অগ্রসর হব। আর যদি তেমনটা ঘটে তবে তার সিংহভাগ দায় সভ্য বিশ্বের। একই কথা বলা চলে মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান স্বৈরাচারী লালবদরি ট্যাগ দিয়ে সমাজকে বিভক্ত করলে। দুবনার পথে, ১৬ জুন ২০২৫

ঋণ

Image
আজ গেলাম তাগানস্কায়া। সেখানে কয়েক দিন আগে স্তালিনের প্রতিকৃতি স্থাপনের পর পরই যাব বলে ভেবেছিলাম। আজ মনিকার সাথে গেছিলাম ৎসারিৎসিনো মিউজিয়ামে। ফেরার পথে তাই তাগানস্কায়া হয়ে আসা। স্তালিন সম্পর্কে বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন মতামত আছে। আমি তাঁর অন্ধ ভক্ত যেমন নই, তেমনি নই তাঁর অন্ধ শত্রু। আমার অভিজ্ঞতা বলে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিশাল সংখ্যক মানুষের লেনিনের প্রতি অন্ধ ভক্তি আর স্তালিনের প্রতি অন্ধ ঘৃণা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। কারণ এতে করে তারা লেনিনের ভুলগুলো যেমন দেখতে পায়নি তেমনি এড়িয়ে গেছে রাষ্ট্র গঠনে স্তালিনের গঠনমূলক কাজ। আজ ভিন্ন পরিস্থিতিতে বসে আমরা তাদের সম্পর্কে যাই ভাবি না কেন, শুধু রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়, বিশ্ব ইতিহাসে তাঁরা নিজেদের নাম খোদাই করে রেখে গেছেন। তাদের ভুলের সমালোচনা করার পাশাপাশি দেশ গঠনে সাফল্য ও কৃতিত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েই আমরা উপযুক্ত উত্তরসূরী হতে পারব। এমনকি আমরা যদি তাদের আদর্শ ধারণ নাও করি শুধুমাত্র কালের পরিক্রমায় আমরা আমাদের বর্তমানের জন্য তাদের কাছে ঋণী। সব দেশেই, সব কালেই। মস্কো, ১৫ জুন ২০২৫