Posts

বিদায়

Image
ঘুম ভাঙতেই দেখি ফেসবুক ভরে গেছে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদে। দীর্ঘ দিন যাবৎ গৃহবন্দী ও অসুস্থ বিধায় রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় ছিলেন না যদিও তাঁর নাম দিয়ে শত্রু মিত্র দুই পক্ষই রাজনীতিতে ফায়দা লাভের চেষ্টা করেছে। তিনি নিজে রাজনীতিতে আসার জন্য নিজেকে কখনো প্রস্তুত করেন নি, রাজনীতিই তাঁকে টেনে এনেছে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। অনেক ভুলভ্রান্তি থাকার পরেও তিনি যথেষ্ট যোগ্যতার সাথেই সেই দায়িত্ব পালন করেছেন সেটা বর্তমান শাসকদের দিকে তাকালে পরিষ্কার হয়ে যায়। ভালো লাগুক আর নাই লাগুক আমাদের একটাই ইতিহাস। আর সেখানে বিশেষ করে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের রাজনীতির একটা বড় দুর্বলতা পরাজয় মেনে নিতে না পারা ও বিভিন্ন দলের ও নেতাদের আপোষহীন মনোভাব। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য আপোষ করে চলা ও পরাজয়কে স্বীকার করা। এই দুটির অনুপস্থিতিই স্বৈরাচার ও একনায়কতন্ত্র জন্ম দেয়। সে ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ব্যতিক্রম ছিলেন না। এরশাদের পতনের পর বাংলাদেশের সামনে গণতান্ত্রিক পথে এগুনোর যে দ্বার খুলে যায় সেটা সঠিক ভাবে ব্যবহার না করতে কারণ বড় দুই দল ও দুই নেত্রী...

রঙিন

Image
আজ ইউনিভার্সিটিতে আসছি পরীক্ষা নিতে। ট্রাম থেকে নেমে দাঁড়িয়ে আছি গ্রীন সিগন্যালের অপেক্ষায়।  - আমি গত শনিবার ভার্সিটির সামনে পড়ে গেছি। পেছনে এক আফ্রিকান ছেলে বলছে এক রুশ মেয়েকে। মনে হয় ক্লাসমেট ওরা। শীতকালে রাশিয়ায় পড়াটা কমন ব্যাপার। আমি নিজেই গতকাল রেড স্কয়ারে পড়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস ক্যামেরা সামলাতে পেরেছিলাম। - ব্যথা পেয়েছিলে? মেয়েটি জিজ্ঞেস করল। - প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি। - কালসিটে আছে? - ওটা কি? - ঐ যে কালো বা নীলচে বা বেগুনি দাগ? - ওসব আমার হয় না। এরমধ্যে গ্রীন সিগন্যাল জ্বলে উঠবে। আমি দ্রুত পায়ে ভার্সিটির দিকে রওনা দেব। মনে পড়বে এক শ্বেতাঙ্গ ছেলের প্রতি তার আফ্রিকান বন্ধুর সেই বিখ্যাত উক্তি  - এই দেখ তুমি এখন ধবধবে সাদা, রাগলে, লজ্জা পেলে বা ড্রিংক করলে লাল, ঠান্ডা লাগলে বা মরে গেলে নীল, ভয় পেলে ফ্যাকাশে, চোট পেলে বেগুনী, জন্ডিস হলে হলুদ আর আমি শীত নেই বর্ষা নেই সবসময় কালো। অথচ তোমাদের চোখে আমি কালারড বা রঙিন। কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়! মস্কো, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

প্রশ্ন

Image
বিভিন্ন পোস্টে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ভোটে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। আচ্ছা, যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকজন ভোট বয়কট করে তাহলে কি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার উপস্থিত না হওয়ায় নির্বাচন বাতিল বলে ঘোষিত হবে যেমন অনেক দেশে হয়? যদি না হয় তবে প্রাপ্ত হ্যাঁ ভোটের ভিত্তিতে কি সংবিধানের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো গৃহীত হবে? যদি হয় তাহলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির উচিৎ হবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে না ভোট দেয়া। তাতে তাদের সংবিধান পরিবর্তনের চক্রান্ত রুখে দেয়ার সুযোগ থাকবে। আর তাদের হয়ে কেউ ইচ্ছামত ভোট দিতে পারবে না, দিলে সেটা সংবাদ মাধ্যমে এনে নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে। অন্যদিকে বর্তমান সরকার নিজেই নির্বাচন বাতিল করতে আগ্রহী নিজের ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য। এমনকি আওয়ামী লীগ ছাড়াও যদি নির্বাচন হয় তাতে দেশের সাংবিধানিক ট্র্যাকে ফিরে আসার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে। মব শাসনের হাত থেকে জনগণের উদ্ধার পাওয়ার পথ তৈরি হবে। এই মুহূর্তে ভোট বাতিল বা বয়কটের ডাক রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার পারিচায়ক বলেই মনে করি। অপশক্তিকে ওয়াক ওভার দেয়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্...

সমস্যা

Image
বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও নেতাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হল জনগণের পালস সঠিক ভাবে পড়তে না পারা। প্রগতিশীল ও বামপন্থীরা ধর্মকে মানব মুক্তির অন্যতম প্রধান বাধা মনে করে ধর্মের বিরোধিতা করে, ডানপন্থীরা ধর্মকে ক্ষমতায় উত্তরণের একমাত্র পথ ভেবে ধর্মকে প্রমোট করে। অথচ দেশের মানুষ চায় শান্তি, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও কাজের নিশ্চয়তা। শাহবাগ, নিরাপদ সড়ক বা চব্বিশের আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ সেটাই প্রমাণ করে। যদি ধর্ম জনগণের রাজনৈতিক জীবনে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ হত তাহলে জামায়াত বা হেফাজত নির্বাচন করেই ক্ষমতায় আসতে পারত। সেই বিবেচনায় শেখ হাসিনার হেফাজতকে তোষামোদ বা মদিনা সনদে বা তারেক জিয়ার নবীর পথে দেশ শাসনের ঘোষণা তাদের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার কথাই বলে। না হাসিনা না তারেক - কারোই আগ বাড়িয়ে ইসলাম প্রমোট করার প্রয়োজন ছিল না, কারণ এসব কথা দেশের অন্যান্য নাগরিকদের প্রতি তাদের দায়িত্বহীন মনোভাব প্রকাশ করে ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি তাদের অঙ্গীকার সম্পর্কে প্রশ্নের জন্ম দেয়। দুবনা, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

শান্তি

Image
রাশিয়া ফিনল্যান্ড আক্রমণ করেছে। ঠিক রাশিয়ানরা নয়, রাশিয়ান নেকড়ে বাহিনী। ফিনরা বলছে পূব দিক মানে রাশিয়া থেকে নেকড়েরা দল বেঁধে গিয়ে নাকি সান্তা ক্লাউসের হরিণ খেয়ে ফেলছে। আচ্ছা, প্রকৃতি যখন তোমাদের বিরুদ্ধে তখন কোন আক্কেলে তোমরা রাশিয়ার সাথে লাগতে আস? কিছু দিন আগেও ফিনল্যান্ড ছিল নিরপেক্ষ দেশ। রুশ দেশ থেকে স্বল্প মূল্যে কাঁচামাল কিনে শিল্পে বানিজ্যে উন্নতি করে, দেশের মানুষকে স্বর্গ সুখে রাখে। এখন নিজেরাই সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বেকার বাহিনীর জন্ম দিচ্ছে। প্রথম বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ। লোকজন শিক্ষিত। প্রচলিত অর্থে ধর্মীয় উন্মাদনা নেই। কিন্তু নিও লিবারেলিজমের ধর্মে দীক্ষিত এলিটরা আজ সমস্ত পৃথিবীকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে। লিবারেল মানে তো উদারপন্থী যারা অন্যের মতামতকে সম্মান করতে জানে বা জানার কথা। এ কোন লিবারেল এখন বিশ্ব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে যে কোন রকম ভিন্ন মত সহ্য পর্যন্ত করতে পারছে না? নিও লিবারেলিজম আধুনিক কালের মহা শান্তির ধর্ম। দুবনা, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

অসুখ

Image
বাংলাদেশ অসুস্থ। এই অসুখের নাম কালেক্টিভ ম্যাডনেস বা সামষ্টিক পাগলামি। দিন দিন আরও বেশি লোক এতে আক্রান্ত হচ্ছে। যারা হচ্ছে না তারা ভয়ে নিজেদের চার দেয়ালের মধ্যে আটকে রাখছে, অর্থাৎ কোন ধরনের সমালোচনা, প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ থেকে নিজেকে বিরত রাখছে। প্রতিষেধক এই ভ্যাকসিনের অনুপস্থিতিতে রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিটি মানুষ যাকে ধর্মীয়, মানসিক বা কোন না কোন ভাবে মূল স্রোতের অংশ বলে গণ্য করা হয় না, নিজেকে অনিরাপদ মনে করছে। আর এসবই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অনুমোদনে, তাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায়। যারা ভাবছেন বাংলাদেশ কখনোই ইরান বা আফগানিস্তান হবে না, তারা ভেতর থেকে টের পাচ্ছেন না দেশ কবেই ইরান বা আফগানিস্তান হয়ে গেছে। সব কিছুর শুরু মবের মাধ্যমে ভিন্ন মতকে দমন করে, কারণ তাহলে কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। আমরা এখন যাকে বলে ইনকুবেশন পেরিওডে আছি। রোগের জীবাণু শুধু প্রবেশ করেনি, সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগের চিহ্ন স্পষ্ট। কিন্তু কি এক অজ্ঞাত কারণে সেটা স্বীকার করার সৎ সাহস হারিয়ে ফেলেছে দেশ ও জাতি। মস্কো, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫

বাস্তবতা

Image
বাংলাদেশ জ্বলছে। কোথাও পুড়ছে সংবাদপত্র, কোথাও বাদ্যযন্ত্র আবার কোথাও বা হিন্দু শ্রমিক। যারা ভাবছেন এটা মতিউর রহমান বা মাহফুজ আনাম - তাদের বলব, এমনকি এই মব অপসংস্কৃতি উস্কে দেবার পরেও তাদের ঠ্যাঙানোয় আনন্দিত হবার কিছু নেই। কারণ সেখানে পুড়ছে আমার, আপনার বাকস্বাধীনতা। জাতীর জীবনে মৌণতার চেয়ে অপ্রিয় কথাও ভালো।‌ ছায়ানট পুড়ছে বলে যদি কেউ নিজেকে নিরাপদ ভাবেন তাদের মনে রাখা দরকার যে শুরুটা হয়েছিল বাউল দিয়ে। ছায়ানট শেষ নয়। একসময় ধান কাটতে কাটতে আপনার গাওয়া গানটিও রেহাই পাবে না। গান তো বটেই একদিন কথা বলারও অধিকার থাকবে না। যদি কেউ ভাবেন যাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হল সে তো হিন্দু শ্রমিক। না, সেও একজন মানুষ। আপনি যদি মানুষ হন, তাহলে আপনিও নিরাপদ নন।  এসবই হচ্ছে সরকারের প্রচ্ছন্ন সমর্থনে। সব করা হচ্ছে নিজেদের ক্ষমতায় থাকাটাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য। ইউক্রেনেও ঠিক এভাবেই ফ্যাসিবাদী শক্তি দেশ জুড়ে মবের শাসন কায়েম করেছিল। আজ জেলেনস্কি দেশবাসীর জীবন বিক্রি করে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করছে। যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যাতে নির্বাচন দিতে না হয়। আমরাও কি সে পথেই হাঁটছি? ইউক্রেনের মত বাংলাদেশেও বিরোধী...