ক্ষমতা

গতকাল "তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি" নামে আনোয়ার ভাইয়ের (সাবেক ছাত্র নেতা আনোয়ারুল হক) একটি লেখা পড়লাম। তিনি সেখানে যথার্থ ভাবেই বৃহত্তর বাম ঐক্যের জন্য ডাক দিয়েছেন। সেই লেখা পড়ে আমার প্রতিক্রিয়া এরকম

ঘর ভাঙে যখন ঘরের মানুষের মধ্যে বোঝাপড়া থাকে না। দলও একই কারণে ভাঙে। যেখানে এক দলের মানুষই নিজেদের মধ্যে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছে না সেখানে বিভিন্ন দলের লোক পারবে কিভাবে? হ্যাঁ, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এক হয়েছিল কারণ শেখ হাসিনাকে সবাই শত্রু মনে করত। আর শত্রুর শত্রু বন্ধু এ তত্ত্ব তো বাজারে নতুন নয়। তাই এক্ষেত্রে এমনকি শয়তানের সাথেও আঁতাত করা যায়, করে। এটা রাজনীতিতে যেমন সত্য, তেমনি সত্য সমাজে। মানে শত্রুকে যেকোনো ভাবে পরাজিত করা জায়েজ। শত্রু নিশ্চিহ্ন করার জন্য, সেখানে পাবার কিছু নেই। কিন্তু যখন গড়ার প্রশ্ন আসে তখন সামনে কোন না কোন লক্ষ্য থাকে। লক্ষ্য কোন বিমূর্ত বিষয় নয়। এখানে থাকে ক্ষমতা ও সম্পদের হাতছানি। তখন কোন পথে এই লক্ষ্য অর্জন করব, কে এর নেতৃত্ব দেবে ইত্যাদি প্রশ্ন সামনে চলে আসে। তাই অবজেক্টিভ রিজন ও রিয়ালিটি থাকা সত্ত্বেও বাম ঐক্য অধরাই থেকে গেছে। তাছাড়া এই ঐক্যের জন্য যে নিউক্লিয়াস দরকার এখন সেটা নেই। তাই সবার আগে দরকার সিপিবির ভেতরের গ্রুপিং লবিং দূর করা। আমি নয় আমরা এই ফর্মুলায় ফিরে সর্ব শক্তি দিয়ে সংগঠন দৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করানো। বিভিন্ন গণসংগঠনের আভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ফেলা আর পাশাপাশি ছোট ছোট কিন্তু সফল কর্মসূচির মাধ্যমে বিভিন্ন বাম দলগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে তোলা।

যদিও এক বন্ধু বলেছে সিপিবির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আসলে আদর্শিক তাই মেটার সম্ভাবনা নেই - আমার কেন যে মনে হয় এটা অনেক বেশি ব্যক্তিগত। যশোবন্ত সিং তাঁর "জিন্নাহঃ ভারত বিভাগ - স্বাধীনতা" বইয়ে লিখেছেন সেই সময়ে নেহেরু, প্যাটেল ও অন্যান্য নেতাদের বয়স ৫০ পেরিয়ে গেছে, তাই তারা ক্ষমতার জন্য পাগল হয়ে উঠেছেন। আমার মনে হয় বর্তমানে সিপিবির আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মূলে আছে ক্ষমতার হাতছানি। এই প্রথম দুই দলের বাইরের শক্তির ক্ষমতার উপভোগ করার সুযোগ এসেছে। অনেকেই তাদের রাজনৈতিক জীবনের শেষ দিকে। তাই আদর্শ নয় ক্ষমতা অনেকটা নাগালের মধ্যে চলে এসেছে মনে করে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে ছুটছে মরীচিকার পেছনে।

দুবনা, ০৩ জুলাই ২০২৫

Comments

Popular posts from this blog

রিসেটের ক্ষুদ্র ঋণ

প্রশ্ন

রিংকু