কীভাবে আমি অ্যামেরিকান হলাম

গত ডিসেম্বরে বাড়ি গেলাম বেড়াতে সাথে অন্য কিছু কাজ ছিল ইন্সটিটিউটের দেশে গেলে আমি বাড়িতেই কাটাই শুধু যখন কোন কাজ থাকে বাইরে যাই একদিন বসে আছি, দিদি এসে বসলো পাশে 
-       ভাই!
-       বল
-       আমি তোকে এবার কিছু টাকা দেবো
-       তা রতনকে দিয়ে দিস ওই তো কেনাকাটা করবে 
-       না, কেনাকাটার জন্য দেয়া আছে এমনিতে আরও কিছু টাকা
-       দিদি, আমার টাকার দরকার নেই যাকগে পরে কথা বলবো আমি একটু কাজ করছি
দেশে একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে বিদেশে থাকলে মানুষ প্রচুর টাকা কামাই করে প্রফেসর আবু সাঈদের মতে যারা উচ্চ শিক্ষিত তাদের ইনকাম প্রায় আকাশ ছোঁয়া সে ভাবে ভাবলে আমি হয় উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারিনি অথবা টাকা উপার্জন করতে শিখিনি আর এর ফলে ১৯৯৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৪ বছর বনবাসে কাটাতে হয়েছে দেশে আসবো, তেমন কোন সম্ভাবনাই ছিল না তখনই একদিন আহসানের ফোন
-       দেশে আসিস না কেন?
-       সময়, সুযোগ হয়ে ওঠে না কাজে কর্মেই দিন কাটে, তাই হয়ে ওঠে না
-       টাকা পয়সার সমস্যা?
-       সেটাও আছে
-       কিছু মনে করিস না আমি তোকে টিকেট পাঠাই বেড়িয়ে যা অনেক দিন তো হোল
-       ঠিক আছে আমি দেখি নিজে কিছু করতে পারি কি না না হলে তোকে বলবো
আহসান আমার মস্কো জীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওর কথায় দেয়ালে পিঠ থেকে গেলো মনে হোল কিছু একটা করার দরকার পরের দিনই আমাদের ডিরেক্টরের সাথে দেখা করে বললাম
-       প্রায় ১৪ বছর দেশে যাইনি কিছু করা যাবে?
-       ঠিক আছে ওখানে কোন ইউনিভার্সিটিতে থেকে ইনভাইটেশন লেটার আন আর ওখানে দু একটি টক দাও ব্যবস্থা করছি
২০১১ র ডিসেম্বরে দেশে গেলাম ছিলাম ৩ মাস বন্ধুরা বিভিন্নভাবে হেল্প করেছে বাড়িতেও একদিন রতন বলল
-       তা ভালো বেতন দেয় এমন কোথাও চাকরি নিলেই তো পারিস। যদি রাশিয়ায় ভালো বেতন না দেয় অন্য কোন দেশে চলে যা অনেকেই তো যাচ্ছে
-       দেখ, মানুষ ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হয় আর আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে ফিজিক্সে এলাম আমার কাছে যদি বেতনটাই বড় হতো, তাহলে তো সাবজেক্ট চেঞ্জ করতাম না
এরপর আর আমার বেতন নিয়ে বাড়িতে কোনদিন কোন কথা বার্তা হয়নি তবে সমস্যা পাড়া-প্রতিবেশীদের নিয়ে গ্রামের অল্প শিক্ষিত বা অশিক্ষিত লোকজন যখন আরব দেশে কাজ করে দেশের বাড়িতে দালানকোঠা তৈরি করছে, সেখানে আমি এক জামা কাপড়ে হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে দেশে এলাম – এটা তাদের মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না না বললেও ওদের আঁকার ইঙ্গিতে বুঝি “আমি নিশ্চয়ই বস্তা বস্তা টাকা নিয়ে দেশে এসেছি” তবে নিজের শৈশবকে খুঁজে পেতে আর তার ছবি তুলতে ব্যস্ত থাকায় আমার আর ঐ টাকার বস্তাগুলো খোঁজা হয়ে ওঠেনি
এখানে প্রফেসর আবু সাঈদের কথাটা আবার বলে নিই। উনি বলেছেন “যে সমস্ত উচ্চ শিক্ষিত বিশেষজ্ঞ দেশে রেমিট্যান্স পাঠাবে না তাদের যেন পাসপোর্ট বাতিল করা হয়।“ আচ্ছা স্যার, পাসপোর্ট বাতিল করে কী দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা বাতিল করতে পারবেন? টাকা পাঠাই না পাঠাই দেশটাকে তো কম ভালোবাসি না। আরেকটা কথা, বেশ কিছুদিন আগে লিখেছিলাম, আমাদের অনেকেই দেশপ্রেমকে খুব স্থূলভাবে দেখেন। দেশটা তো মা নয়, যেন বউ বা বান্ধবী। অবশ্য সরকারই যখন দেশের মাতৃ মূর্তিতে বিধর্মী প্রভাব দেখে সাধারণ মানুষ কী বা আর করতে পারে। তবে অধিকাংশ মানুষ যেখানে দেশকে দেখে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আর তার সুত্র ধরে দেশটাকে শাসন, শোষণ আর নির্যাতন করে নির্বিচারে, স্যার এটাকে দেখছেন নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, আয়ের একটা অংশ দেশে পাঠিয়ে দেশের সেবা করতে। হ্যাঁ, মাকে সাহায্য করতেই হয়, তবে সন্তান সেটা করে স্বেচ্ছায়। যখনই সেখানে বাধ্যবাধকতা চলে আসে ঘটনাটা অনেকটা বউ বা প্রেমিকার দাবির আকার নেয়। তবে আমার রোমাঞ্চকর মানে রোমান্সে টইটুম্বুর আর্থিক অবস্থায় কী বউ, কী মা, কী দেশমা কাউকেই খুশি করতে পারিনি। অপারগতার ক্ষেত্রে আমি আর যাই হোক সাম্যবাদ কায়েম করেছি নিজের জীবনে।         
২০১১ র পর দেশে গেলাম আবার ২০১৪ সালে এবার শুধু দেশেই নয়, ইন্ডিয়া গেলাম বিভিন্ন ইন্সটিটিউটে টক দিতে আর সেই সাথে আমাদের ইন্সটিটিউটের সাথে ওদের কোল্যাবোরেশনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে তাই সেবার দেশে গেলে দিদি সাথে সাথেই বলল
-       ভাই, রতনের কাছে টাকা দেয়া আছে তোর যা দরকার কিনে নিস
-       আমার তেমন কিছু দরকার নেই কিছু জামাকাপড় কিনতে হবে আর আচার তুই নিজেই করে দিস এছাড়া কিছু মশলা নেবো আর খেজুর গুঁড়, আমসত্ব এসব আর হ্যাঁ, মার্বেল, হাতী – ছবি তোলার জন্য।
তাই এবার দিদি যখন টাকার কথা বললো, আমি ভাবলাম এরকম কিছু একটা হবে। দিন যাচ্ছিল ভালই। এর মধ্যেই আমি একাত্তরের স্মৃতি লিখতে শুরু করেছিলাম, তাই সময় করে একাত্তরের দিনগুলো যেসব গ্রামে কেটেছিল সেখানে ঘুরে এলাম। একদিন ঘরে বসে কি একটা পড়ছি দিদি এলো।
-       ভাই, টাকাটা কিভাবে নিবি?
-       কোন টাকা?
-       কেন, আমি যে তোকে কিছু টাকা দেব বলেছিলাম?
-       ওহ। কত টাকা?
-       দশ লাখ।
-       মাথা খারাপ? আমি এতো টাকা দিয়ে কি করবো? আমার দরকার নেই।
-       নিয়ে যা কাজে দেবে।
-       দেখ দিদি, আমি খুব সাধারণ ভাবে চলি। যে বেতন পাই নিজে বাড়িভাড়া আর খাবারের পয়সা রেখে সবই গুলিয়াকে দিয়ে দেই। ওদের চলে যায়। কষ্টে, তবে চলে যায়। আমি টাকা রাখতে পারি না। এই টাকা নিলেই আমার ঘুম নষ্ট হবে কিভাবে এটা খরচ করা যায় সেটা ভেবে। আমার এসবের দরকার নেই।
-       বা রে, তোর দরকার না হলে বাচ্চাদের দিস। 
-       ওরা এখনো খুব ছোট এতো টাকা নেবার জন্য।
-       ভাই, পরে আর আমার টাকা থাকবে না। তুই নিয়ে যা। যা খুশি তাই করিস।
-       আপাতত নেব না। গুলিয়ার সাথে কথা বলি। ও যদি বাসার কাজে এটা লাগাতে চায় দেখা যাবে।
-       হ্যা তাই করিস।
-       বাসাটা কিন্তু আমার নয়। পরে কিছু হলে আবার বলিস না যেন।
-       নারে, কিছু বলব না। তাহলে রতনকে বলি টাকাটা তোকে দিতে?
-       না। আমি মস্কো ফিরি। গুলিয়ার সাথে কথা বলি। তারপর দেখব কিভাবে টাকা নেয়া যায়।
-       দেখ, যেটা ভালো মনে করিস।    
আমার দিদি স্কুলে পড়ায়। সেই ১৯৮৭ সাল থেকে, আমি মস্কো আসার পরে। এখন বাসে করে যেতে কষ্ট হয়। আমিই বলেছি চাকরি ছেঁড়ে দিতে। ২০১৭ র জানুয়ারী থেকে তাই করেছে। হয়তো দেশে অনেকের জন্য এটা খুব বেশী টাকা নয়, তবে দিদির জন্য এটা কমও নয়। এই টাকা যে খরচ করার জায়গা নেই, সেটা নয়। চাইলে ভালো একটা ক্যামেরা কেনা যেতো কয়েকটা লেন্সসহ বা ক্রিস্টিনার জন্য ভায়োলিন। তবে সেটা হতো দিদির শ্রমের প্রতি অন্যায়, বিশেষ করে ক্যামেরা কেনা।   
দেশ থেকে ফিরলাম ডিসেম্বরের শেষ দিকে  আর ২০১৭ ‘র জানুয়ারীর প্রথম দিকেই গুলিয়াকে বললাম
-       দিদি কিছু টাকা দেবে বলেছে। কোন আইডিয়া আছে কী করবে?
-       কত টাকা?
-       এখন দেশে ডলারের দাম কম, এখানে বেশ বেশী। তা  বর্তমান রেটে ৮ লাখ মত।            
-       তাহলে দুবনার বাসাটা ঠিক করে ফেলি।
-       ওটা ঠিক করে কি হবে? ওখানে কে থাকবে?
-       কেন? আমরা।
-       আমরা মানে?
-       আগামী বছর থেকে সেভা ওখানে স্কুলে যাবে। আমিও আসবো গালিয়াকে নিয়ে।
-       দেখো। আমি কিন্তু পুরানো বাসাতেই থাকবো। 
-       কেন?
-       একা থেকে অভ্যেস হয়ে গেছে। তাছাড়া তোমার সাথে ঝগড়া লাগলে একটা শেলটার তো চাই।
-       তুমি ঝগড়া না করলেই লাগবে না।
-       কোন দরকার নেই। ঐ বাসা ঠিক করতে চাও কর, তবে আমি আরও কয়েক বছর যেখানে আছি সেখানেই থাকব। এখন ভেবে দেখো।
-       দুটো বাসার ভাড়া দিতে হবে সেটা খেয়াল আছে?
-       সেটা দেব। স্বাধীনতার জন্য এটুকু স্যাক্রিফাইস তো করতেই হবে। তাহলে তুমি প্ল্যান রেডি কর, আমি দিদিকে বলি টাকার কথা।
-       এখন সময় নেই। মে পর্যন্ত সেভার ক্লাস। এর মধ্যে আমি বাসার প্ল্যান করে ফেলব। মে’র শেষ দিকে টাকা আনলেই চলবে।
এরপর শুরু হল সারাদিন কম্পিউটারে বসে বিভিন্ন প্ল্যান করা। আজ এটা পছন্দ তো কাল ওটা। প্রতিদিনই একেকটা নতুন নতুন নকশা পাই। শেষ পর্যন্ত মে’র মাঝামাঝি একটা খসড়া প্ল্যান রেডি হল। এর মধ্যে দেশে টাকার দাম কমলো, এখানে রুবলের দাম বাড়লো – নীট রেজাল্ট – প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার রুবল কম পেলাম। শুরুটা ভালই হল।  
এ দেশে এখন তিন ধরণের লোক দিয়ে কাজ করানো যায়। তাজিক বা মধ্য এশিয়ার লোক দিয়ে করালে সস্তা হয়, তবে মান ভালো হয় না। ইউক্রেইন বা মালদাভিয়ার ওরা একটু বেশী টাকা নিলেও কাজ ভালো করে। আর আছে রাশিয়ানরা, ওরা কাজ ভালো করে তবে ধীরে করে আর দাম বেশী নেয়।     
যাই হোক, আমাদের শেষ পর্যন্ত রাশিয়ানদের সাথেই চুক্তি করতে হল। যদিও রাশিয়া সরকারের সহায়তায় ফ্ল্যাটটা আমরা কিনেছি ২০০৮ সালে, বলতে গেলে এই প্রথম আমি ওখানে গেলাম।  এর আগে মাত্র এক বারই গিয়েছিলাম ওখানে ২০০৮ সালে, কেনার ক’দিন পরে। চারিদিকে লোহালক্কড়। শুরু হল হাঁচি, কোন রকমে পালিয়ে বাঁচি আর কি? এবার গেলাম মূলত যারা কাজ করবে ওদের সাথে কথা বলতে। বাসাটা কেনার পর ইউক্রেইনের যে লোকটা কাজ শুরু করেছিল সেই বাসায় থাকতো। কথা হয়েছিল ওই থাকবে আর টুকটাক কাজকর্ম করবে। প্রথম দিকে থাকতো এমনিতেই। পরে বাসার সার্ভিস চার্জ দিত আর মাসে মাসে কিছু টাকা। ও ছিল না। নতুন লোকেরা এল কাজ করতে। এদিক ওদিক খুচিয়ে বললও অনেক টাইলস খুলে পড়ার অবস্থা। সেটা নতুন করে লাগাতে হবে। পাশের বাসা থেকে আসা জলে একটা ওয়াল একেবারে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে। সেটা নতুন করে করতে হবে। যাই হোক, আমি নিজেই জিজ্ঞেস করলাম, কাজের জন্য ওরা কত নেবে। বলল ছয় লাখ। আমি কিছু বলার আগেই গুলিয়া রাজী হয়ে গেল।    
ওখান থেকে ফিরে জিজ্ঞেস করলাম
-       ছয় লাখ, এটা তো দিদি দেবে। কিন্তু মালমসলায় যাবে আরও ছয় সাত লাখ, সেটা কোথায় পাবে?
-       ভেবো না। গালিয়ার কাছ থেকে ধার নেব। পরে দিয়ে দেব মস্কোর বাসা বিক্রি করে।  
-       দেখো যেটা ভালো মনে কর।
শুরু হোল বাসার কাজ। এখন গুলিয়া প্রায়ই দুবনা আসে কাজের তদারকি করতে। দিদির টাকাটা ওখানে আছে বলে অনিচ্ছা সত্বেও আমাকে যেতে হয়। প্রায় প্রতি সপ্তাহেই গুলিয়া প্ল্যান চেঞ্জ করে। যারা কাজ করছে ওরা একটু প্রতিবাদ করে। এভাবেই ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে কাজ। এর মধ্যে ওরা বলে দেয় সাড়ে আট লাখের কমে ওরা কাজ শেষ করতে পারবে না। তবে আমার বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত সেটাও পেরিয়ে যাবে।
-       হাতের টাকা তো সব শেষ হয়ে গেল। একটু লোণ নিতে হবে।
-       নাও, না করছে কে?
-       আমাকে তো দেবে না। আমি তো কাজ করি না।
-       তা কাজ শুরু করলেই হয়। সমস্যা কোথায়। পঞ্চাশ বছর, এটা তো বাল্যকাল।
-       তোমার যা কথা। যাকগে লোণ তোমাকেই নিতে হবে।
-       আমাকে দেবে না।
-       কেন?
-       আমার রেজিস্ট্রেশন নেই।
এ দেশের নিয়ম অনুযায়ী সব নাগরিকের একটা স্থায়ী ঠিকানা থাকতে হয়। আমার যেহেতু কোন দিনই কোন কিছু ছিল না, তাই নাগরিকত্ব নেবার সময় রেজিস্ট্রেশন করা ছিল গুলিয়ার বাসায়। ২০০৮ সালে সম্পর্কে টানাপোড়ন দেখা দিলে আমি ওটা উইথড্র করি। এক তাতার মহিলা ছিলেন অফিসার। বললেন – এটা বেআইনি। অনেক বলে কয়ে করিয়েছিলাম। একমাত্র ব্যাঙ্কের দীর্ঘমেয়াদি লোণ নেয়া ছাড়া অন্য সমস্যা ছিল না।
-       আমার এখানে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দিচ্ছি।
-       দেখো। পরে আবার যেন বিলাপ করতে না হয়।
-       ভয় পেয়ো না। সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
-       আচ্ছা, বলতো তোমার এই বাসার কাজ শেষ করতে সব মিলিয়ে কত রুবল লাগবে?
-       তা আড়াই মিলিয়ন তো লাগবেই।
-       এ টাকা দিয়ে যে একটা বাসা কেনা যেতো।
-       হ্যাঁ, তবে আমার এই বাসাটাই দরকার।­­   
রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেল। কাজ শেষ করার কথা ছিল আগস্টে। সেভাকে তাই নিয়ে এলাম দুবনায়। এখানেই স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলাম। আমিও কাজ শুরু করলাম গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সময় করে একদিন ব্যাঙ্কে গেলাম লোণের ব্যাপারে কথা বলতে। জানলাম কি কি কাগজপত্র লাগবে। সব গুছিয়ে যখন আবার গেলাম, শুরু হোল বিভিন্ন প্রশ্ন। প্রশ্ন না বলে জেরা বলাই ভালো।
-       আপনার আয় কত?
-       ট্যাক্স কাটার পর এরকম একটা কিছু হাতে মানে বউএর হাতে থাকে।   
-       কোন এক্সট্রা আয় আছে?
-       হ্যাঁ, আমি কিছুদিন হোল ইউনিভার্সিটিতে পড়াতে শুরু করেছি।
-       কত বেতন দেয় সেখানে?
-       তা তো জানি না।
-       মানে?
-       এখনো বেতন পাই নি কিনা, তাই।
-       কত দেবে বলেছে?
-       জিজ্ঞেস করিনি।
-       তাহলে চাকরিতে ঢুকলেন কিভাবে?
-       আমার শিক্ষক বললেন চাকরির জন্য আবেদন করতে আর কাগজ পত্র জমা দিতে। ওনার হাতেই দিয়ে এসেছি। পরে এক সময় বললেন ক্লাস নিতে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহে ক্লাস নেই।   
-       খুব মজার মানুষ তো আপনি। যাকগে, আমরা আপনার আবেদন পত্র যাচাই করে দেখব। কয়েকদিনের মধ্যেই আমাদের সিদ্ধান্ত জানাব।
ওখানে থেকে বেরিয়ে এসে মনে পড়ল সুভাষের কথা। আমার চাকরির কথা শুনে ও এই একই প্রশ্ন করছিল। আমি একই উত্তর দিয়েছিলাম।
-       দেখিস, তোর দুবনা মস্কোর গাড়িভাড়া যেন উঠে।
-       দেখ, আমি কাজটা এঞ্জয় করছি। মস্কো তো এমনিতেই যাই, এখন না হয় পড়িয়ে আসবো।
-       পারিস ও তুই।
-       কি আর করা বল। কাউকে তো পারতে হবে।
নভেম্বর পেরিয়ে যাচ্ছে। বেতন এখনো পাই নি। আসলে আমার আবেদন পত্রে কি একটা গোলমাল ছিল। ওটা নতুন করে করতে হচ্ছে। তাই ফর্মালি চাকরি শুরু হবে ডিসেম্বর থেকে।
যাকগে, আমার লোণের আবেদনটা গৃহীত হয়েছে। অক্টোবর থেকে আমি প্রতিমাসে  একটা অ্যামাউন্ট টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে আসি। বন্ধুদের কাছে (বিশেষ করে যারা অ্যামেরিকায় আছে) মর্টগেজ জাতীয় বিভিন্ন শব্দ শুনেছি। এখন একটু একটু করে তার স্বাদ পাচ্ছি। রাশিয়ায় একটা কথা আছে – “ঋণ করে নাও অন্যের টাকা আর তা শোধ করতে দাও নিজের টাকা।“ কে জানে, নিজের কষ্টার্জিত টাকা দিতে হয় বলেই ঋণ শোধটা এতো কষ্টের মনে হয়।               

দুবনা, ১৪ – ২৩ নভেম্বর ২০১৭



Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

ছোট্ট সমস্যা

প্রায়োরিটি