Posts

বিজয় দিবস

Image
১৯৯৫ সালে মস্কো যখন মহা সমারোহে বিজয়ের ৫০ বছর পালনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল জার্মানি সহ পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশ তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল। নতজানু ইয়েলৎসিনের এটা দরকার ছিল কিছুটা হলেও জনগণের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য। অন্যদিকে ঠান্ডা যুদ্ধে নিজেদের বিজয়ী ভাবা পশ্চিমা বিশ্বের কাছে রুশদের এই বিজয় উৎসব ছিল চোখের কাঁটা।‌ সোভিয়েত ইউনিয়নে বিজয় দিবস এরকম আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে পালন করা হত না, পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ও ৭ নভেম্বর অক্টোবর বিপ্লব দিবসের কাছে বিজয় দিবস ম্লান হয়ে যেত। তবে নতুন রাশিয়ায় বিজয় দিবস সব ছাপিয়ে সামনে চলে আসে। সোভিয়েত আমলে বিজয় দিবস ছিল অনেকটা পারিবারিক উৎসব।‌ এ দেশে এমন কোন পরিবার ছিল না যাদের এই যুদ্ধ পাশ কাটিয়ে গেছে। বর্তমানে সেই পারিবারিক পরিবেশের সাথে যোগ হয়েছে রাষ্ট্রীয় আয়োজন। যেকোন জাতির জন্য এ রকম কিছু উৎসব থাকাটা জরুরি যাকে ঘিরে সবাই সব ভেদাভেদ ভুলে এক হতে পারে। আজ পেছন দিকে তাকিয়ে মনে হয় শত বিপত্তির মধ্যেও সেদিন বিজয় দিবস উদযাপন করার সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে রাশিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শু

প্রশ্ন

Image
ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনীতে দেবতা ও দানবেরা মিলে সমুদ্র মন্থন করে অমৃত মন্থন করেছিল। পরে দেবতারা কৌশলে সেটা নিজেরা নিয়ে অমরত্ব লাভ করে। স্বর্গ মানে কর্মহীন অলস জীবন, অন্তহীন ভোগবিলাস। পক্ষান্তরে নরক তার বিপরীত। অগ্নিকুণ্ডে বা অন্যান্য জায়গায় সীমাহীন দুর্ভোগ। এখন এটাকে যদি শোষক আর শোষিতের সাথে তুলনা করি তাহলে কী দেখি? দু' দল মিলে উৎপাদন করছে, একদল সমস্ত মুনাফা নিজের করে নিয়ে মহা সুখে জীবন যাপন করছে, অন্য দল নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থায় জীবনের ঘানি টানছে। কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক কে বলে তা বহুদূর মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর রুশরা বলে সব গল্পেই কিছুটা সত্য আছে, আছে ইঙ্গিত। সোভিয়েত আমলে যখন অনেক কিছুই প্রকাশ্যে বলা যেত না। তাই এরা বিভিন্ন আনেকডোট, বিভিন্ন কৌতুকের মাধ্যমে অনেক ঘটনার বর্ণনা দিত, গোপনকে প্রকাশ্যে নিয়ে আসত। পৌরাণিক কাহিনী সে সময়ের জীবনের এরকম বর্ণনা নয়তো? দুবনা, ০৮ মে ২০২৪

সমস্যা

Image
এক বন্ধুর স্ট্যাটাস দেখলাম। বিল গেটস লাইনে দাঁড়িয়ে বার্গার কেনেন। আম্বানীদের দাদা বৌদি ডাকা যায়। আর আমরা স্যার ম্যাডাম। সমস্যা? এটা আমাদের সংস্কৃতি। অতীতকে অস্বীকার করার সংস্কৃতি। গেটস, জবস এঁরা কত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গিয়েছেন সেটা বলতে লজ্জা পান না। শচীন, সামি, বুমরাহ, রোনালদো, মেসি এরা কেউ অতীতের অর্থ কষ্ট নিয়ে লজ্জা পান না। আমাদের তারকারা দেখাতে চায় এরা সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মেছে। আমাদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে আমরা গর্ব করতে চাই না, আবহমান কালের সংস্কৃতি বিধর্মীদের সংস্কৃতি বলে ত্যাগ করতে চাই। ১২০১ সালের আগে এ অঞ্চলে যে মানুষ ছিল, রাজ্য ছিল, ১৯৪৭ এর আগে যে এই মাটিতে অনেক গুনী মানুষের জন্ম হয়েছিল সেটা লুকাতে চাই। ইতিহাস অস্বীকার করা মানুষ মানসিক দৈন্যে ভোগে। আইডেন্টিটি ক্রাইসিস এদের চির সাথী। স্যার ম্যাডামের প্রশ্ন এসবের সাথে এক সূত্রে গাঁথা। এসব অনেকটা কাকের ময়ূর সাজার মত। দেশে পোশাক পরিচ্ছদে ইউরোপীয় বা আরব সাজলেও বাইরে আমরা ভাতের জন্য হাপিত্যেশ করি। বাঙালি সত্তাকে বর্জনের শত চেষ্টার পরেও সেটা থেকে মুক্তি পাই না। আবার বিদেশি হবার প্রবল আকাঙ্ক্ষা থাকলেও ওরা আমাদের গ্রহণ করে

বোধ

Image
শৃঙ্খল বিভিন্ন ধরনের। বলা হয় শুধু শিকল দিয়ে নয়, ভালোবাসা দিয়েও বাঁধা যায়। বাঁধা যায় একটু ভালো জীবনের আশা দিয়ে, ভালো চাকরি দিয়ে যা হারাতে মানুষ দশ বার ভাবে। উন্নত বিশ্বের স্বাধীনতা এই উন্নত জীবনের অদৃশ্য শিকলে বাঁধা। যতক্ষণ তুমি মেইন স্ট্রীমের সাথে গলা মিলিয়ে স্লোগান দিচ্ছ তোমার বাক স্বাধীনতা সমুন্নত। ভিন্ন স্লোগান তুলতে মানা নেই, তবে তাতে তোমার আগের সেই নিস্তরঙ্গ শান্ত জীবনে যে অশান্তি নেমে আসবে না সেটার কোন গ্যারন্টি নেই। অভিবাসীরা, যারা উন্নত বিশ্বে পুনর্জন্ম গ্রহণ করে তারা এটা বোঝে তাই কখন কী হজম করতে হবে সেটাও জানে। তারা নিজ নিজ জন্মভূমির সমালোচনায় যতটা সোচ্চার নতুন স্বর্গের বিষয়ে ততটাই তুষ্ট। মস্কো, ০৬ মে ২০২৪

ঝগড়ার জয় হোক

Image
আমাকে বন্ধুবান্ধবরা মাঝেমধ্যে ছেলেমেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করে। উত্তরে বলি ফোন যেহেতু করেনি নিশ্চয়ই ভালো আছে। সমস্যা হলে ঠিকই ফোন করত। তারমানে এই নয় যে আমি ওদের নিয়ে ভাবি না, খুব ভাবি, শুধু অযথা ফোন করে বিরক্ত করতে চাই না। আমি আসলে কাজ না থাকলে কাউকে ফোন করি না। আগে দরজায় চিরকুট রাখতাম এখন ফেসবুকে চিরকুট রাখি, যেমন এটা। শুধু জানাতে যে এখনও সবাইকে জ্বালাব, এত সহজে বন্ধুরা আমার হাত থেকে রক্ষা পাবে না। একটা জিনিস খেয়াল করেছি যখন কোথাও সমস্যা হয় ও লোকজন কারো সম্পর্কে দুর্নাম করতে চায়, অভিযোগ করতে চায় তখন ফোন করে। সবাই শুরু করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। নিজেকে শান্তির দূত, সঠিক সমাধান দেবার হোলসেল লাইসেন্সধারী হিসেবে জনগণের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু সব সমাধান যে সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নয়, মাছের জন্য ডাঙ্গা মোটেই নিরাপদ আশ্রয় নয় সেটা বেমালুম ভুলে গিয়ে। এটা ছেলেমেয়েদের মধ্যে খুব দেখেছি ওদের ছোটবেলায়। আজকাল তাই বলি নিজেদের সমস্যা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নিতে, কারণ ওরা সবাই আমার সমান প্রিয়, আর সবার প্রতি সমান ভালোবাসা দেখিয়ে সবাইকে খুশি করা যায় না। যাহোক ইদানিং বিশ্বের বিভিন্ন প্

ভিন্ন মত

Image
কোয়ান্টাম তত্ত্ব অনুযায়ী এক বিন্দু থেকে আরেক বিন্দুতে যাবার অসংখ্য পথ আছে আর কোন কণার এসব পথের যেকোন একটা দিয়ে যাবার ননট্রিভিয়াল বা অতুচ্ছ সম্ভাবনা আছে। একই ভাবে প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি প্রাণীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার সম্ভাব্য পথ অসংখ্য ও প্রতিটি পথ অনন্য। সব পথ সবার জন্য সমান কার্যকরী নয়, তবে পরিস্থিতির বিচারে প্রতিটি পথ অপটিমাল। অন্তত সেই পথ তাকে উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করতে পারে বলেই সে মনে করে এমনকি সারা বিশ্ব তার সাথে দ্বিমত পোষণ করলেও। যারা মূল স্রোতে হেঁটে অভ্যস্ত তারা অন্য পথের গুরুত্ব ও সৌন্দর্য বুঝতে বা মানতে চায় না কারণ তাদের সব কিছু বিচারের মাপকাঠি নিজেদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা। অন্য ভাবেও যে সফল হওয়া যায়, ভালো থাকা যায় এটা তাদের ধারণার বাইরে। মানুষের সমাজবদ্ধ জীব হওয়ার এই এক যন্ত্রনা। সে যতটা না নিজের তারচেয়ে বেশি সমাজের। তবে তাঁরা নিজের মত করে নিজের পথে চলতে চায় তাদের জন্য রবি বাবুর ডাক তো মিথ্যে নয় যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলরে  পথচলা আনন্দের হোক। দুবনা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪

আলপনা ও ইলিশের গল্প

Image
নববর্ষের আলপনার ক্ষতিকর দিক নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। নববর্ষের খাবারের পোস্ট দেখে প্যালেস্টাইনের অভুক্ত শিশুদের মুখ ভেসে উঠছে কারো কারো চোখে। অথচ গত একমাস ধরে ছিল ইফতারের খাবারের প্রাচুর্য। কেন আমরা দুদিনের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এক উৎসবের প্রতি প্রচন্ড সহনশীল অথচ অন্যটার প্রতি কটাক্ষ করি? কেন বাংলাদেশে বাঙালির একান্ত উৎসব নববর্ষ আজও সত্যিকার অর্থে সার্বজনীন হতে পারছে না? কারণ এখানে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে, এই সংস্কৃতি প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়।  ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে মুসলিম জাতি সত্তা বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা বাঙালি সত্তাকে পরাজিত করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। একাত্তরে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধর্মীয় পরিচয়কে পেছনে ফেলে সামনে চলে আসে। আমরা বাঙালি - এটাই হয় আমাদের প্রথম পরিচয়। পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকদের ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ও বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর আপোষের নীতি ধর্মীয় পরিচয়কে আবার সামনে আসতে সাহায্য করে। মুরগি না ডিমের মত এখানেও আমরা আগে মুসলমান না আগে বাঙালি এই বিতর্ক অসমাপ্ত থেকে যায় যদিও যেকোন চিন্তাশীল মানুষের জন্য এটা বিতর্কের কোন বিষয় নয়।