আলপনা ও ইলিশের গল্প

নববর্ষের আলপনার ক্ষতিকর দিক নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি হচ্ছে। নববর্ষের খাবারের পোস্ট দেখে প্যালেস্টাইনের অভুক্ত শিশুদের মুখ ভেসে উঠছে কারো কারো চোখে। অথচ গত একমাস ধরে ছিল ইফতারের খাবারের প্রাচুর্য। কেন আমরা দুদিনের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত এক উৎসবের প্রতি প্রচন্ড সহনশীল অথচ অন্যটার প্রতি কটাক্ষ করি? কেন বাংলাদেশে বাঙালির একান্ত উৎসব নববর্ষ আজও সত্যিকার অর্থে সার্বজনীন হতে পারছে না? কারণ এখানে প্রশ্ন করার সুযোগ আছে, এই সংস্কৃতি প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়। 

১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে মুসলিম জাতি সত্তা বাঙালি জাতীয়তাবাদ তথা বাঙালি সত্তাকে পরাজিত করে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। একাত্তরে বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধর্মীয় পরিচয়কে পেছনে ফেলে সামনে চলে আসে। আমরা বাঙালি - এটাই হয় আমাদের প্রথম পরিচয়।

পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকদের ইতিহাসের মোড় ঘোরানো ও বর্তমান শাসকগোষ্ঠীর আপোষের নীতি ধর্মীয় পরিচয়কে আবার সামনে আসতে সাহায্য করে। মুরগি না ডিমের মত এখানেও আমরা আগে মুসলমান না আগে বাঙালি এই বিতর্ক অসমাপ্ত থেকে যায় যদিও যেকোন চিন্তাশীল মানুষের জন্য এটা বিতর্কের কোন বিষয় নয়।

আজ ঈদ ও নববর্ষ এই দুই উৎসব পাশাপাশি পালিত হয়েছে বলে আলপনা ইংলিশ নিয়ে যে বিতর্ক সেটা আসলে মুসলিম লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের লড়াইয়ের পুনরাবৃত্তি। বর্তমান আওয়ামী লীগের একাংশ যদি এখানে মুসলিম লীগের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে তাহলে এই লড়াইয়ে জেতা অসম্ভব না হলেও কষ্টসাধ্য হবে তাতে সন্দেহ নেই।

মস্কো, ১৫ এপ্রিল ২০২৪

Comments

Popular posts from this blog

২৪ জুনের দিনলিপি

প্রায়োরিটি

ছোট্ট সমস্যা